কিশোরগঞ্জ জেলা

বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের জেলা

কিশোরগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত ঢাকা বিভাগের সর্বাধিক উত্তর-পূর্বে অবস্থিত একটি জেলা। উপজেলার সংখ্যানুসারে কিশোরগঞ্জ বাংলাদেশের 'এ' শ্রেণীভুক্ত জেলার অন্তর্গত।[২] কিশোরগঞ্জ জেলার পরিচিতি বাক্য হলো “উজান-ভাটির মিলিত ধারা, নদী-হাওর মাছে ভরা”।[৩] এটি ঢাকা বিভাগের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা। হাওর অঞ্চলের জন্য এই জেলা বিখ্যাত।

কিশোরগঞ্জ
জেলা
নীতিবাক্য: উজান-ভাটির মিলিত ধারা, নদী-হাওর মাছে ভরা
বাংলাদেশে কিশোরগঞ্জ জেলার অবস্থান
বাংলাদেশে কিশোরগঞ্জ জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°২৫′০.০১২″ উত্তর ৯০°৫৭′০.০০০″ পূর্ব / ২৪.৪১৬৬৭০০০° উত্তর ৯০.৯৫০০০০০০° পূর্ব / 24.41667000; 90.95000000 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগঢাকা বিভাগ
আয়তন
 • মোট২,৬৮৯ বর্গকিমি (১,০৩৮ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[১]
 • মোট৩০,২৮,৭০৬
 • জনঘনত্ব১,১০০/বর্গকিমি (২,৯০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৬৫.৩%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড২৩০০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ৪৮
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

ইতিহাস সম্পাদনা

 
বঙ্গদেশের প্রাদেশিক মানচিত্রটি ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত থাকা বৃহত্তর ময়মনসিংহ জিলা (টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জের সাথে বর্তমান বিভাগ) প্রদর্শন করছে

কিশোরগঞ্জের ইতিহাস সুপ্রাচীন। এখানে প্রাচীনকাল থেকেই একটি সুগঠিত গোষ্ঠী আছে এবং এখনোও তা বিরাজ করছে। ষষ্ঠ শতকে বত্রিশ এর বাসিন্দা কৃষ্ণদাস প্রামাণিকের ছেলে নন্দকিশোর ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে একটি গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন; এ গঞ্জ থেকেই কালক্রমে নন্দকিশোরের গঞ্জ বা 'কিশোরগঞ্জ'-এর উৎপত্তি হয়। একাদশ ও দ্বাদশ শতকে পাল, বর্মণ ও সেন শাসকরা এ অঞ্চলে রাজত্ব করে। তাদের পর ছোট ছোট স্বাধীন গোত্র কোচ, হাজং, গারো এবং রাজবংশীরা এখানে বসবাস করে। ১৪৯১ সালে ময়মনসিংহের অধিকাংশ অঞ্চল ফিরোজ শাহ-এর অধীনে থাকলেও কিশোরগঞ্জ সেই মুসলিম শাসনের বাইরে রয়ে যায়। পরবর্তীতে মুঘল সম্রাট আকবরের সময়কালে বেশিরভাগ অঞ্চল মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে থাকলেও জঙ্গলবাড়ি ও এগারসিন্দুর কোচ ও অহম শাসকদের অধীনে রয়ে যায়। ১৫৩৮ সালে এগারসিন্দুরের অহম শাসক মুঘলদের কাছে ও ১৫৮০ সালে জঙ্গলবাড়ির কোচ শাসক ঈসা খাঁর কাছে পরাজিত হয়। ১৫৮০ সালে বার ভূঁইয়াদের প্রধান ঈসা খাঁ এগারসিন্দুরে আকবরের সেনাপতি মান সিংহকে পরাজিত করেন। ঈসা খাঁর মৃত্যুর পর জঙ্গলবাড়ি ও এগারসিন্দুর তার পুত্র মুসা খাঁর অধীনে আসে কিন্তু ১৫৯৯ সালে তিনি মুঘলদের কাছে পরাজিত হন।

অবস্থান ও আয়তন সম্পাদনা

কিশোরগঞ্জের ভৌগোলিক আয়তন প্রায় ২,৬৮৯ বর্গ কিলোমিটার। এই আয়তনে ১৩টি উপজেলা রয়েছে। এই জেলার উত্তরে নেত্রকোণা জেলাময়মনসিংহ জেলা, দক্ষিণে নরসিংদী জেলাব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলাহবিগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলাগাজীপুর জেলা

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ সম্পাদনা

কিশোরগঞ্জ জেলায় ১৩টি উপজেলা, ৮টি পৌরসভা এবং ১০৮টি ইউনিয়ন রয়েছে।

উপজেলা সমূহ পৌরসভা সমূহ ইউনিয়ন সমূহ
  1. দেওঘর ইউনিয়ন
  2. কাস্তুল ইউনিয়ন
  3. অষ্টগ্রাম ইউনিয়ন
  4. বাংগালপাড়া ইউনিয়ন
  5. কলমা ইউনিয়ন
  6. আদমপুর ইউনিয়ন
  7. খয়েরপুর-আব্দুল্লাপুর ইউনিয়ন
  8. পূর্ব অষ্টগ্রাম ইউনিয়ন
  1. রায়টুটি ইউনিয়ন
  2. ধনপুর ইউনিয়ন
  3. মৃগা ইউনিয়ন
  4. ইটনা ইউনিয়ন
  5. বড়িবাড়ী ইউনিয়ন
  6. বাদলা ইউনিয়ন
  7. এলংজুড়ি ইউনিয়ন
  8. জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন
  9. চৌগাংগা ইউনিয়ন
কটিয়াদী পৌরসভা
  1. বনগ্রাম ইউনিয়ন
  2. সহশ্রাম ধুলদিয়া ইউনিয়ন
  3. করগাঁও ইউনিয়ন
  4. চান্দপুর ইউনিয়ন
  5. মুমুরদিয়া ইউনিয়ন
  6. আচমিতা ইউনিয়ন
  7. মসূয়া ইউনিয়ন
  8. লোহাজুরী ইউনিয়ন
  9. জালালপুর ইউনিয়ন
করিমগঞ্জ পৌরসভা
  1. কাদিরজঙ্গল ইউনিয়ন
  2. গুজাদিয়া ইউনিয়ন
  3. কিরাটন ইউনিয়ন
  4. বারঘরিয়া ইউনিয়ন
  5. নিয়ামতপুর ইউনিয়ন
  6. দেহুন্দা ইউনিয়ন
  7. সুতারপাড়া ইউনিয়ন
  8. গুনধর ইউনিয়ন
  9. জয়কা ইউনিয়ন
  10. জাফরাবাদ ইউনিয়ন
  11. নোয়াবাদ ইউনিয়ন
কিশোরগঞ্জ পৌরসভা
  1. রশিদাবাদ ইউনিয়ন
  2. লতিবাবাদ ইউনিয়ন
  3. মাইজখাপন ইউনিয়ন
  4. মহিনন্দ ইউনিয়ন
  5. যশোদল ইউনিয়ন
  6. বৌলাই ইউনিয়ন
  7. বিন্নাটি ইউনিয়ন
  8. মারিয়া ইউনিয়ন
  9. চৌদ্দশত ইউনিয়ন
  10. কর্শাকড়িয়াইল ইউনিয়ন
  11. দানাপাটুলী ইউনিয়ন
কুলিয়ারচর পৌরসভা
  1. উছমানপুর ইউনিয়ন
  2. রামদী ইউনিয়ন
  3. গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন
  4. সালুয়া ইউনিয়ন
  5. ছয়সূতি ইউনিয়ন
  6. ফরিদপুর ইউনিয়ন
  1. তালজাঙ্গা ইউনিয়ন
  2. রাউতি ইউনিয়ন
  3. ধলা ইউনিয়ন
  4. জাওয়ার ইউনিয়ন
  5. দামিহা ইউনিয়ন
  6. দিগদাইর ইউনিয়ন
  7. তাড়াইল-সাচাইল ইউনিয়ন
  1. নিকলী ইউনিয়ন
  2. দামপাড়া ইউনিয়ন
  3. কারপাশা ইউনিয়ন
  4. সিংপুর ইউনিয়ন
  5. জারইতলা ইউনিয়ন
  6. গুরই ইউনিয়ন
  7. ছাতিরচর ইউনিয়ন
পাকুন্দিয়া পৌরসভা
  1. জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন
  2. চন্ডিপাশা ইউনিয়ন
  3. চরফরাদি ইউনিয়ন
  4. এগারসিন্দুর ইউনিয়ন
  5. হোসেন্দী ইউনিয়ন
  6. বুরুদিয়া ইউনিয়ন
  7. নারান্দী ইউনিয়ন
  8. পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়ন
  9. সুখিয়া ইউনিয়ন
বাজিতপুর পৌরসভা
  1. মাইজচর ইউনিয়ন
  2. দিলালপুর ইউনিয়ন
  3. গাজীরচর ইউনিয়ন
  4. হুমায়ুনপুর ইউনিয়ন
  5. দিঘীরপাড় ইউনিয়ন
  6. হালিমপুর ইউনিয়ন
  7. সরারচর ইউনিয়ন
  8. বলিয়ার্দী ইউনিয়ন
  9. হিলচিয়া ইউনিয়ন
  10. কৈলাগ ইউনিয়ন
  11. পিরিজপুর ইউনিয়ন
ভৈরব পৌরসভা
  1. আগানগর ইউনিয়ন
  2. কালিকাপ্রাসাদ ইউনিয়ন
  3. গজারিয়া ইউনিয়ন
  4. শিবপুর ইউনিয়ন
  5. শিমুলকান্দি ইউনিয়ন
  6. শ্রীনগর ইউনিয়ন
  7. সাদেকপুর ইউনিয়ন
  1. গোপদিঘী ইউনিয়ন
  2. মিঠামইন ইউনিয়ন
  3. ঘাগড়া ইউনিয়ন
  4. ঢাকী ইউনিয়ন
  5. কেওয়ারজোর ইউনিয়ন
  6. কাটখাল ইউনিয়ন
  7. বৈরাটি ইউনিয়ন
হোসেনপুর পৌরসভা
  1. গোবিন্দপুর ইউনিয়ন
  2. সিদলা ইউনিয়ন
  3. জিনারী ইউনিয়ন
  4. আড়াইবাড়ীয়া ইউনিয়ন
  5. শাহেদল ইউনিয়ন
  6. পুমদী ইউনিয়ন

অর্থনীতি সম্পাদনা

কিশোরগঞ্জের অর্থনীতির চালিকা শক্তি অনেকটা হাওরের উপর নির্ভরশীল। যেমন: হাওরে প্রচুর মাছ পাওয়া যায় যা দেশের মাছের চাহিদার অধিকাংশই পূরণ করে। তাছাড়া, কিশোরগঞ্জে পাট, ধান এবং অন্যান্য অনেক সবজি উৎপাদিত হয়ে থাকে যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। এখানে প্রচুর মৎস্য এবং পোল্ট্রি খামার রয়েছে। বেশ কিছু ছোট বড় কলকারখানা রয়েছে। এছাড়া ভৈরব এর জুতা শিল্প দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পখাত।

চিত্তাকর্ষক স্থান সম্পাদনা

জঙ্গলবাড়ি দূর্গ

জঙ্গলবাড়ি দুর্গ ছিল বারো ভূঁইয়াদের প্রধান ঈসা খাঁর দ্বিতীয় রাজধানী। এটি কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের জঙ্গলবাড়ি গ্রামে অবস্থিত। দুর্গের ভিতরে ঈসা খাঁ কয়েকটি স্থাপনা গড়ে তোলেন। ১৮৯৭ সালে ভুমিকম্পে দুর্গের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এগারসিন্দুর দূর্গ

এগারসিন্দুর দুর্গ পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর গ্রামে অবস্থিত। গ্রামটি ব্রহ্মপুত্র নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত। ইতিহাসবেত্তা আবুল ফজল রচিত আকবরনামা গ্রন্থে এই গ্রামের নাম উল্লেখ রয়েছে। এটি ছিল অহম শাসকদের রাজধানী। ১৫৩৮ সালে মুঘলরা অহমদের পরাজিত করে এ অঞ্চল দখল করে। এখানেই ১৫৮০ সালে বার ভূঁইয়াদের প্রধান ঈসা খাঁ মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মান সিংহকে পরাজিত করে।

শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার পূর্ব প্রান্তে প্রায় ৬.৬১ একর জমিতে অবস্থিত বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। প্রতিবছর এ ময়দানে ঈদ-উল-ফিতরঈদ-উল-আযহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ইয়েমেন থেকে আগত শোলাকিয়া 'সাহেব বাড়ির' পূর্বপুরুষ সুফি সৈয়দ আহমেদ তার নিজস্ব তালুকে ১৮২৮ সালে নরসুন্দা নদীর তীরে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন।[৪][৫][৬] ওই জামাতে ইমামতি করেন সুফি সৈয়দ আহমেদ নিজেই। অনেকের মতে, মোনাজাতে তিনি মুসল্লিদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে 'সোয়া লাখ' কথাটি ব্যবহার করেন। আরেক মতে, সেদিনের জামাতে ১ লাখ ২৫ হাজার (অর্থাৎ সোয়া লাখ) লোক জমায়েত হয়। ফলে এর নাম হয় 'সোয়া লাখি'। পরবর্তীতে উচ্চারণের বিবর্তনে শোলাকিয়া নামটি চালু হয়ে যায়।[৫] আবার কেউ কেউ বলেন, মোগল আমলে এখানে অবস্থিত পরগনার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। উচ্চারণের বিবর্তনে সোয়া লাখ থেকে সোয়ালাখিয়া, সেখান থেকে শোলাকিয়া। পরবর্তিতে ১৯৫০ সালে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ এই ময়দানকে অতিরিক্ত ৪.৩৫ একর জমি দান করেন।[৭]

পাগলা মসজিদ পাগলা মসজিদ বা পাগলা মসজিদ ইসলামি কমপ্লেক্স বাংলাদেশের একটি প্রাচীন মসজিদ যা কিশোরগঞ্জ সদরের নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। তিনতলা বিশিষ্ট মসজিদটিতে একটি সুউচ্চ মিনার রয়েছে। মসজিদ কমপ্লেক্সটি ৩ একর ৮৮ শতাংশ জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত।১৯৭৯ সালের ১০ মে থেকে ওয়াকফ্ স্টেট মসজিদটি পরিচালনা করছে। পাগলা মসজিদটি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার হারুয়া নামক স্থানে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত। জনশ্রুতি অনুসারে, ঈসা খান-র আমলে দেওয়ান জিলকদর খান ওরফে জিল কদর পাগলা নামক একজন ব্যক্তি নদীর তীরে বসে নামাজ পড়তেন। পরবর্তীতে স্থানটিতে মসজিদটি নির্মত হয়। জিল কদর পাগলার নামানুসারে মসজিদটি ‘পাগলা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিতি পায়। অপর জনশ্রুতি অনুসারে, তৎকালীন কিশোরগঞ্জের হয়বতনগর জমিদার পরিবারের ‘পাগলা বিবি’র নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয়।

শহীদী মসজিদ কিশোরগঞ্জ জেলা শহরে অবস্থিত আধুনিক স্থাপত্যের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন “শহীদী মসজিদ”। মসজিদটির নাম ‘শহীদী মসজিদ” এ নামকরণ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে কৌতূহলের অন্ত নেই। মূল শহরের প্রাণকেন্দ্রে মসজিদটির অবস্থান। শহীদী মসজিদের ইতিহাস খুব পুরনো না হলেও এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। মসজিদটিকে আধুনিকরূপে নির্মাণের ক্ষেত্রে যিনি অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি হলেন হযরত মাওলানা আতাহার আলী (রহঃ)। মাওলানা আতাহার আলী পুরান থানার এ মসজিদে আসেন ১৯৩৮ সালে। মসজিদের নির্মাণ সমাপ্তির পর তিনি ১৩৬৪ বাংলা সনের ৮ই কার্তিক মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে এক অভূতপূর্ব বিশাল সুউচ্চ পাঁচতলা মিনারের ভিত্তি স্থাপন করেন। এরপরই মসজিদটি ঐতিহাসিক মসজিদে রূপান্তরিত হয় এবং নামকরণ করা হয় “শহীদী মসজিদ” নামে।

চন্দ্রাবতী মন্দির

চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত প্রথম বাঙালি মহিলা কবি স্মৃতিবিজরিত শিবমন্দির। এটি কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে মাইজখাপন ইউনিয়নের কাচারীপাড়া গ্রামে ফুলেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত।

দিল্লীর আখড়া

দিল্লীর আখড়া মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে নির্মিত। এটি মিঠামইন উপজেলায় অবস্থিত।

আওরঙ্গজেব মসজিদ

এক গম্বুজবিশিষ্ট প্রায় ৩৫০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক আওরঙ্গজেব মসজিদটি কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার নারান্দী ইউনিয়নের শালংকায় অবস্থিত। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে এটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে এর নাম তৎকালীন সম্রাটের নামানুসারেই রাখা হয়েছে।

মানব বাবুর বাড়ি

মানব বাবুর বাড়ি হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের গাঙ্গাটিয়া গ্রামে অবস্থিত। ১৯০৪ সালে জমিদারির পত্তন হলে ব্রিটিশ জেপি ওয়াইজের কাছ থেকে জমিদারি কিনে নেন গাঙ্গাটিয়ার ভূপতিনাথ চক্রবর্তী। সেখানেই তিনি এই বাড়িটি নির্মাণ করেন।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু

সড়কপথে ভৈরব ও আশুগঞ্জের মধ্যে অবাধ যোগাযোগের জন্য মেঘনা নদীর উপর নির্মিত নান্দনিক এক সেতুর নাম সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু। ১৯৯৯ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২০০২ সালে শেষ হয়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবস্থিত ১.২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৯.৬০ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট এই সেতুটিতে ৭টি ১১০ মিটার স্প্যান এবং ২টি ৭৯.৫ মিটার স্প্যান রয়েছে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর পূর্ব নাম ছিল বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য মৈত্রী সেতু, যা ২০১০ সালে পরিবর্তন করা হয়। যদিও স্থানীয়দের কাছে সেতুটি ভৈরব ব্রিজ নামে অধিক পরিচিত।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু বা ভৈরব ব্রীজের ঠিক পাশেই রয়েছে ১৯৩৭ সালে নির্মিত রাজা ৬ষ্ঠ জর্জ রেল সেতু, যার অন্য নাম হাবিলদার আব্দুল হালিম রেলসেতু। বর্তমানে জর্জ রেল সেতুর পাশে আরো একটি নতুন রেল সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর নিচে মেঘনা নদীর তীরে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীদের আগমণ ঘটে। নদী তীরকে তাই নানান প্রাকৃতিক উপকরণে সাজানো হয়েছে। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশে মুক্ত হাওয়ায় সময় কাটানোর জন্য সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু বিপুল জনপ্রিয় এক স্থানে পরিণত হয়েছে।

তালজাঙ্গা জমিদার বাড়ি

তালজাঙ্গা জমিদার বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার তাড়াইল উপজেলার এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। তালজাঙ্গা জমিদার বাড়িটি প্রায় একশ বছর আগে জমিদার বাড়ি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। জমিদার বাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জমিদার রাজ চন্দ্র রায়। যিনি ছিলেন শিক্ষিত জমিদার, তখনকার সময়ের এম. এ. বি. এল. ডিগ্রিপ্রাপ্ত উকিল ছিলেন। তিনি ১৯১৪ সালে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করার পর প্রায় ৩৩ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত জমিদারি করেন। তার জমিদারি শেষ হয় তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। তারপর এই জমিদার বাড়ির জমিদার হন তার ছেলে মহিম চন্দ্র রায়। মহিম চন্দ্র রায়ও বাবার মত ছিলেন শিক্ষিত এবং এম.এ.বি.এল ডিগ্রিপ্রাপ্ত একজন উকিল। তিনি কলকাতা থেকে ডিগ্রী নেওয়ার পর ময়মনসিংহ জজ কোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন এবং সেখানকার সভাপতিও ছিলেন।

নিকলীর বেড়িবাঁধ

নিকলী হাওর কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলায় অবস্থিত। কিশোরগঞ্জ সদর থেকে নিকলি উপজেলার দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। পানিতে দ্বীপের মত ভেসে থাকা ছোট ছোট গ্রাম, স্বচ্ছ জলের খেলা, মাছ ধরতে জেলেদের ব্যস্ততা, রাতারগুলের মত ছোট জলাবন ও খাওয়ার জন্যে হাওরের তরতাজা নানা মাছ। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার এটিকে টুরিস্টস্পট হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

নদ-নদী সম্পাদনা

 
কিশোরগঞ্জ শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নরসুন্দা নদী

যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পাদনা

রাজধানী ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জের সড়ক পথে দূরত্ব ৯৫ কিলোমিটার ও রেলপথে কিশোরগঞ্জের দূরত্ব ১৩৫ কিলোমিটার।[৮] সড়ক অথবা রেলপথের মাধ্যমে ভ্রমণ করা যায়। স্থানীয় প্রশাসন আরএইচডি, এলজিইডি ও পৌরসভা সকল রাস্তা তদারকি করে থাকে।

উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পাদনা

 
আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার প্রাঙ্গণ
 
পাকুন্দিয়া আদর্শ মহিলা কলেজের একাংশ

গণমাধ্যম সম্পাদনা

দৈনিক

  • দৈনিক আজকের দেশ
  • দৈনিক আমার বাংলাদেশ
  • গৃহকোণ
  • ভাটির দর্পণ
  • প্রাত্যহিক চিত্র
  • কিশোরগঞ্জ নিউজ
  • পাকুন্দিয়া প্রতিদিন

সাপ্তাহিক সম্পাদনা

  • আর্যগৌরব (১৯০৪)
  • কিশোরগঞ্জ বার্তাবাহ (১৯২৪)
  • আখতার (উর্দু, ১৯২৬)
  • কিশোরগঞ্জ বার্তা (১৯৪৬)
  • প্রতিভা (১৯৫২)
  • নতুন পত্র (১৯৬২)

পাক্ষিক সম্পাদনা

  • নরসুন্দা (১৯৮১)
  • গ্রামবাংলা (১৯৮৫)
  • সৃষ্টি (১৯৮৬)
  • সকাল (১৯৮৮)
  • সূচনা (১৯৯০)
  • কিশোরগঞ্জ পরিক্রমা (১৯৯১)
  • মনিহার (১৯৯১)
  • কিশোরগঞ্জ প্রবাহ (১৯৯৩)
  • বিবরণী (কুলিয়ারচর, ১৯৯৩)

মাসিক সম্পাদনা

  • জীবনপত্র (২০১৮)

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে কিশোরগঞ্জ"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ১ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৪ 
  2. "জেলাগুলোর শ্রেণি হালনাগাদ করেছে সরকার"। বাংলানিউজ২৪। ১৭ আগস্ট ২০২০। ১৬ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০২০ 
  3. প্রতিবেদক, নিজস্ব। "'জীবন-জীবিকা খাইয়া ফালাইছে করোনা'"দৈনিক প্রথম আলো। ২০২১-০৭-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-২০ 
  4. দৈনিক আজকের খবর[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "সরকারি ওয়েবসাইট"। ১০ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৬ 
  6. "ময়মনসিংহ জেলায় ইসলাম, লেখকঃ মোঃ আবদুল করিম, প্রকাশকঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠাঃ ১২৫-১২৮"। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৬ 
  7. দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  8. "ঢাকা-কিশোরগঞ্জে প্রথম এসি বাস চালু"Barta24 (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৮-০৬-১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-১১-১৪ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা