হারুন-উর রশিদ (বীর প্রতীক)

বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

হারুন-উর রশিদ (জন্ম: ১৯৫৫) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১]

হারুন-উর রশিদ
জন্ম১৯৫৫
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

হারুন-উর রশিদ-এর জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর ‍উপজেলায়। তার বাবার নাম সুলতান ভূঁইয়া এবং মায়ের নাম উমরিচান বেগম। তার স্ত্রীর নাম হীরাঝিল বেগম। এ দম্পতির তিন ছেলে ও এক মেয়ে। [২]

কর্মজীবন সম্পাদনা

১৯৭১ সালে হারুন-উর রশিদ টাঙ্গাইলের মির্জাপুর সংলগ্ন গড়াইয়ে একটি বস্ত্র কারখানায় চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি নিজ এলাকা বাজিতপুরে চলে যান। ভারতে ইকো ওয়ান ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর মেজবাহ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে দেশে আসেন। তার দলনেতা ছিলেন মুজিবুর রহমান মাস্টার। হারুন-উর রশিদ কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার ছয়ছটি, কুলিয়ারচর, নরসিংদী জেলার হাঁটুভাঙ্গা ও বেলাবসহ আরও কয়েকটি স্থানে যুদ্ধ করেন। বেলাব যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই যুদ্ধে তিনি যথেষ্ট কৃতিত্ব দেখান।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ২০ অক্টোবর গণবাহিনীর দেড় শ মুক্তিযোদ্ধা তিন দলে বিভক্ত হয়ে রাতের অন্ধকারে নিঃশব্দে এগিয়ে চলেছেন। তারা ঘড়ির কাঁটায় রাত সাড়ে তিনটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে সরারচর রেলস্টেশন ও পার্শ্ববর্তী পাকিস্তানি অবস্থানে আক্রমণ করবেন। মুক্তিযোদ্ধা হারুন-উর রশিদও একটি দলের সঙ্গে রয়েছেন। সরারচরের অবস্থান কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই রেলস্টেশনের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। পরিকল্পনামতো মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল মাইনের সাহায্যে নিকটবর্তী ঝুমাপুর রেলসেতু ধ্বংস করে। দ্বিতীয় দল বিস্ফোরণের শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে সরারচর রেলস্টেশনে অবস্থানরত রাজাকারদের ওপর আক্রমণ করে। তৃতীয় দল একই সময়ে পার্শ্ববর্তী শিবনাথ স্কুলে অবস্থানরত পাকিস্তানি ৭০ উইং রেঞ্জার্স ফোর্সের ওপর আক্রমণ করে। সে সময় রেঞ্জার্স ফোর্স পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। সরারচর রেলস্টেশনে দুজন রাজাকার নিহত হয়। অন্যরা আহত অবস্থায় পালিয়ে যায়। শিবনাথ স্কুলে কয়েকজন রাজাকার ও রেঞ্জার্স ফোর্সের একজন নিহত হয়। পরের দিন ও সারা রাত সব মুক্তিযোদ্ধা মিলে শিবনাথ স্কুলে অবস্থানরত পাকিস্তানি রেঞ্জার্স ও রাজাকারদের অবরোধ করে রাখেন। তখন এখানে তুমুল যুদ্ধ হয়। শেষ রাতে পাকিস্তানি রেঞ্জার্স ও রাজাকাররা সরারচর থেকে পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ছয়জন শহীদ ও কয়েকজন আহত হন। সরারচরের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা হারুন-উর রশিদ যথেষ্ট সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। এ যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বীর প্রতীক খেতাব পান। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], দৈনিক প্রথম আলো, তারিখ: ২৯-০৪-২০১১
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪১৭। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩১৯। আইএসবিএন 9789843338884 

পাদটীকা সম্পাদনা

  • এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা