আতহার আলী
আতহার আলী (১৮৯১ - ৬ অক্টোবর ১৯৭৬) ছিলেন একজন বাঙালি ইসলামি চিন্তাবিদ, রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য। নেজামে ইসলাম পার্টির সাবেক সভাপতি। তার নেতৃত্বে নেজামে ইসলাম ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদে তিনিসহ ৪টি জাতীয় পরিষদে ৩৬ আসন লাভ করে। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এবং আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলন ছাড়াও তিনি প্রতিটি জাতীয় সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেন।[১][২][৩] পাকিস্তানের উভয় অংশ থেকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপনকারী প্রথম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আতহার আলী।[৪]
মাওলানা আতহার আলী | |
---|---|
![]() | |
উপাধি | ইসলামী চিন্তাবিদ, রাজনীতিবিদ, পার্লামেন্ট সদস্য |
ব্যাক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ১৮৯১ ঘুঙ্গাদিয়া গ্রাম, বিয়ানীবাজার উপজেলা, সিলেট জেলা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ![]() (বর্তমান ![]() |
মৃত্যু | ৬ অক্টোবর ১৯৭৬ |
জাতিসত্তা | বাঙালি |
অঞ্চল | ব্রিটিশ ভারত, পূর্ব পাকিস্তান, বাংলাদেশ |
ধর্মীয় মতবিশ্বাস | সুন্নি |
প্রধান আগ্রহ | শিক্ষকতা, রাজনীতি |
যেখানের শিক্ষার্থী | দারুল উলুম দেওবন্দ |
কাজ | শিক্ষকতা |
ঊর্ধ্বতন পদ | |
যাদের প্রভাবিত করেন |
প্রারম্ভিক জীবনসম্পাদনা
আতহার আলী ১৮৯১ সালে ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত সিলেটের বিয়ানীবাজারের ঘুঙ্গাদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মৌলভি আজিম খান। আতহার আলী ঝিঙ্গাবাড়ি আলিয়া মাদ্রাসায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেছেন। এরপর তিনি মুরাদাবাদ কাসেমিয়া, রামপুর আলিয়া মাদ্রাসা, মাজাহেরে উলুম সাহারানপুর ও দারুল উলুম দেওববন্দে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেছেন। তিনি মাওলানা আশরাফ আলি থানভির ছাত্র ছিলেন।[২]
কর্মজীবনসম্পাদনা
শিক্ষাগ্রহণ শেষে আতহার আলী দেশে ফিরে শিক্ষকতায় যোগ দেন। তিনি সিলেট ঝিঙ্গাবাড়ি আলি মাদ্রাসা ও কুমিল্লার জামিয়া মিল্লিয়াসহ অন্যান্য মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। ১৯০৯ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ মসজিদের ইমাম নিযুক্ত হন।[২]
রাজনীতিসম্পাদনা
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে আতহার আলী অংশগ্রহণ করেছেন। নবগঠিত পাকিস্তানে যোগ দেয়ার প্রশ্নে অনুষ্ঠিত সিলেট গণভোটে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।[২] এই ভোটের ফলে আসাম থেকে সিলেট বিচ্ছিন্ন হয়ে পূর্ব বাংলায় যোগ দেয়।
১৯৫২ সালে তিনি নেজামে ইসলাম দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বে নেজামে ইসলাম ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদে ৪টি ও জাতীয় পরিষদে ৩৬টি আসন লাভ করে। প্রাদেশিক পরিষদের উক্ত ৪টি আসনের একটিতে তিনি প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন।[৫] ১৯৬৫ সালে আইয়ুব খানের সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পূর্বে তিনি মুক্তি পান। এরপর ওয়াজনসিহতমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।[২]
শিক্ষাবিস্তারসম্পাদনা
আতহার আলী ১৯৪৫ সালে জামেয়া এমদাদিয়া মাদ্রাসা স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ময়মনসিংহ দারুল উলুম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।[২]
কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত শহীদী মসজিদের নবায়ন তার মাধ্যমেই হয়।জীবনের শেষ লগ্নে তিনি নূর মসজিদের ও নবায়ন করেন। এ ছাড়া জামিয়া ইসলামিয়া সেহড়া মোমেনশাহী সহ আরও বিভিন্ন ইসলামী প্রতিষ্ঠান তাঁর মাধ্যমে হয়।
রচনাকর্মসম্পাদনা
তার লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে-
- পর্দা ও ইসলাম,
- আল-ওজরু ওয়ান নুযরু,
- ইসলামী শাসন কেন চাই?,
- বাস্তব ক্ষেত্রে সমাজতন্ত্র,
- ইসলামে অর্থবন্টন ব্যবস্থা।[২]
মৃত্যুসম্পাদনা
১৯৭৬ সালের ৬ অক্টোবর ময়মনসিংহ দারুল উলূম মাদ্রাসায় আতহার আলী মৃত্যুবরণ করেন।[২] তারই প্রিয় প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়ার প্রাঙ্গণে তাকে সমাহিত করা হয়। তার জানাজার নামাজ পড়ান আল্লামা ফয়জুর রহমান। যিনি ময়মনসিংহ বড় মসজিদের ইমাম/খতিব ছিলেন।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ পরিষদ, সম্পাদনা (জুন ১৯৮২)। সংক্ষিপ্ত ইসলামি বিশ্বকোষ ১ম খণ্ড। শেরেবাংলা নগর, ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা ১২। আইএসবিএন 954-06-022-7।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ আ.ব.ম সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী (২০১২)। "আলী, মওলানা আত্হার"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১৪।
- ↑ মনিবুর রহমান, মোহাম্মদ (২০১৯)। (মাওলানা আতহার আলী রহ.) । বাংলার আলেম সংসদ সদস্য (১৯৩৭ -২০১৮)। একাত্তর প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৯৪। আইএসবিএন 9789848094372।
- ↑ শিবলি, শাকের হোসাইন (২০২১)। একুশের মাওলানারা। বাংলাবাজার, ঢাকা-১০০০: মাহফিল প্রকাশন। পৃষ্ঠা ২১৬। আইএসবিএন 978-984-90095-4-2।
- ↑ Legislature, Pakistan Constituent Assembly (1947-1954) (১৯৫৬)। Debates. Official Report (ইংরেজি ভাষায়)। পৃষ্ঠা 61।
গ্রন্থপঞ্জিসম্পাদনা
- রিজভী, সৈয়দ মেহবুব (১৯৮১)। History of Darul Uloom Deoband [দারুল উলুম দেওবন্দের ইতিহাস]। ২। এফ. কুরাইশি, মুরতাজ হুসাইন কর্তৃক অনূদিত। দেওবন্দ: ইদারায়ে এহতেমাম। পৃষ্ঠা ১০১–১০২। ওসিএলসি 20222197।
- শিবলি, শাকের হোসাইন (২০২১)। একুশের মাওলানারা। বাংলাদেশ: মাহফিল/দিলরুবা/সুবাহসাদিক। পৃষ্ঠা ২১৬–২২৩।
- আলম, মোঃ মোরশেদ (২০১৪)। হাদিস শাস্ত্র চর্চায় বাংলাদেশের মুহাদ্দিসগণের অবদান। পিএইচডি অভিসন্দর্ভ (গবেষণাপত্র)। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃষ্ঠা ১৩৫–১৩৭। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০২১।
- আজমী, নূর মুহাম্মদ (২০০৮)। হাদিসের তত্ত্ব ও ইতিহাস। বাংলাবাজার, ঢাকা: এমদাদিয়া পুস্তকালয়। পৃষ্ঠা ২২৫–২২৬।
- মোহাম্মদ কাওছার, আলী ফজল (২০১৯)। সিলেটি পীর আউলিয়ার জীবনী। ঢাকা: বাংলাদেশ রাইটার্স গিল্ড। পৃষ্ঠা ৮৭। আইএসবিএন 9789849356417।