মেঘনা নদী

বাংলাদেশের নদী

মেঘনা নদী বা মেঘনা আপার নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুরভোলা জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৫৬ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩৪০০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। মেঘনা চাঁদপুরের মোহনা থেকে শুরু করেই সবথেকে বেশি খরস্রোতা হয়েছে এবং মেঘনা ভোলার শুরু থেকে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ১০০কি:মি: প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক মেঘনা আপার নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী নং ১৭।[] মেঘনা বাংলাদেশের গভীরতম ও প্রশস্ততম নদী এবং অন্যতম বৃহৎ ও প্রধান নদী।[]

মেঘনা নদী
মেঘনা নদীর দৃশ্য
মেঘনা নদীর দৃশ্য
মেঘনা নদীর দৃশ্য
দেশ বাংলাদেশ
অঞ্চলসমূহ চট্টগ্রাম বিভাগ, ঢাকা বিভাগ, বরিশাল বিভাগ
জেলাসমূহ কিশোরগঞ্জ নরসিংদী নারায়ণগঞ্জ মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা ব্রাহ্মণবাড়িয়া চাঁদপুর লক্ষ্মীপুর ভোলা
উৎস বরাক নদী
মোহনা মেঘনা লোয়ার নদী
দৈর্ঘ্য ১৫৬ কিলোমিটার (৯৭ মাইল)
মেঘনা নদীসহ বাংলাদেশের মানচিত্র
মেঘনা নদীসহ বাংলাদেশের মানচিত্র
মেঘনা নদীসহ বাংলাদেশের মানচিত্র

উৎপত্তি ও গতিপ্রকৃতি

সম্পাদনা

আসামের পার্বত্য অঞ্চল থেকে 'বরাক' নদী আসামের শেরপুরের কাছে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। তারপর সিলেট জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সুনামগঞ্জহবিগঞ্জ জেলার সীমান্তে মারকুলীতে এই দুই নদী এক হয়ে কালনি নামে কিছুদূর অগ্রসর হয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রামের ইকুরদিয়া নামক গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভৈরব বাজারের কাছে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে মিলিত হয়ে মেঘনা নাম ধারণ করেছে। তারপর আরো দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয়ে চাঁদপুরের কাছে পদ্মা নদীতে এসে মিলিত হয়েছে। আরো দক্ষিণে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ভোলা দ্বীপের মধ্য দিয়ে মেঘনা নদী মেঘনা লোয়ার নদী নামে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। সুরমাসহ মেঘনা নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৫০ মাইল। চাঁদপুরের কাছে পদ্মা-মেঘনার মিলিত ধারাটি মোহনা নামে পরিচিত। এখান থেকে আনুমানিক ৯০ মাইল দক্ষিণে চারটি মোহনা পথে মেঘনা বঙ্গোপসাগরে মিলেছে। এগুলোর স্থানীয় নাম তেঁতুলিয়া, শাহবাজপুর, সন্দ্বীপ ও হাতিয়া। বাংলাদেশের সবচেয়ে গভীরতম এবং দীর্ঘতম নদীও মেঘনা।[]

অন্যান্য তথ্য

সম্পাদনা
 
গঙ্গা, ব্রক্ষপুত্র সহ মেঘনা নদীর অববাহিকা (সবুজ অংশ)

মেঘনা পৃথিবীর বড় নদীগুলোর মতোই অনেক বেশি বৃষ্টির পানি বহন করে। এই নদী সুরমা, কুশিয়ারা, খাসিয়া-জয়ন্তীয়া পাহাড়, শিলং উপত্যকা ও চেরাপুঞ্জির বৃষ্টির পানি বহন করে আনে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টির বিপুল জলরাশির জন্য সিলেটে বড় বড় বিল বা হাওর তৈরি হয়েছে। আর এ কারণে মেঘনা খুব গভীর ও খরস্রোতা। ঢল বা বন্যার জন্য মেঘনা বিখ্যাত। বৃষ্টির পানি যখন খুব দ্রুত মোহনার কাছে পৌঁছাতে পারে না তখনই এর দু'কূল ছাপিয়ে বন্যা হয়। চাঁদপুরের কাছে পদ্মা-মেঘনার মিলনস্থলে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যায়। এই ইলিশ অত্যন্ত সুস্বাদু। এজন্য চাঁদপুরের ইলিশ বিশ্ববিখ্যাত। কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দিতে মেঘনা নদীর উপর সুদীর্ঘ মেঘনা-গোমতী সেতুর অবস্থান। এছাড়াও ভৈরব ও আশুগঞ্জ রেলওয়ে সেতু এ নদীর উপর একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু।[]

সুরমা নদীর তীরে কানাইঘাট, গোলাপগঞ্জ, সিলেট, ছাতক, সুনামগঞ্জ, দিরাই, মারকুলী প্রসিদ্ধ শহর ও বাণিজ্যকেন্দ্র। কুশিয়ারার তীরে জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, আজমীরগঞ্জ, শাল্লা, ভৈরব বাজারচাঁদপুর মেঘনার তীরে বিখ্যাত শহর ও বন্দর।[]

সাহিত্যে মেঘনা নদী

সম্পাদনা

মেঘনা তার দু'তীরের মানুষকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তাই বাংলা সাহিত্যে গান-কবিতা-কথায় অনিবার্যভাবে মেঘনার প্রসঙ্গ এসেছে। কবি আহসান হাবিবের একটি বিখ্যাত কবিতা।

মেঘনা পারের ছেলে

 
বিকেলে মেঘনা নদীর দৃশ্য

লেখক হুমায়ুন কবিরের মেঘনার ঢল একটি বিখ্যাত কবিতা। এ কবিতায় মেঘনার প্রাসঙ্গিকতা এসেছে চমৎকারভাবে।


শামসুর রাহমান তাঁর প্রিয় স্বাধীনতা কবিতায় লিখেছেন,

চিত্রশালা

সম্পাদনা

মেঘনা নদীর চরসমূহ

সম্পাদনা

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। "দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের নদী"। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি (প্রথম সংস্করণ)। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৩০৭-৩০৮। আইএসবিএন 984-70120-0436-4 
  2. বাংলাদেশের নদীঃ মোকাররম হোসেন; পৃষ্ঠা ৮০, ৮১ ও ৮২; কথাপ্রকাশ; দ্বিতীয় সংস্করণঃ আগস্ট ২০১৪