কানাইঘাট উপজেলা

সিলেট জেলার একটি উপজেলা

কানাইঘাট উপজেলা বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের অধীনে সিলেট জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা[][]

কানাইঘাট
উপজেলা
মানচিত্রে কানাইঘাট উপজেলা
মানচিত্রে কানাইঘাট উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৫°১′১৫″ উত্তর ৯২°১৫′৬″ পূর্ব / ২৫.০২০৮৩° উত্তর ৯২.২৫১৬৭° পূর্ব / 25.02083; 92.25167 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগসিলেট বিভাগ
জেলাসিলেট জেলা
প্রতিষ্ঠা১৯৮৩
আয়তন
 • মোট৩৯১.৭৯ বর্গকিমি (১৫১.২৭ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট২,১৫,২৬০
 • জনঘনত্ব৫৫০/বর্গকিমি (১,৪০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৩২.৬২%[]
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৩১৮০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৬০ ৯১ ৫৯
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

ইতিহাস

সম্পাদনা

প্রাচীণকালে কানাইঘাট স্বাধীন সার্বভৌম জৈন্তা রাজ্যের অংশ থাকায় স্বাভাবিক কারণে শিক্ষা, সংস্কৃতি, পার্শ্ববর্তী অন্যান্য উপজেলা থেকে কিছুটা ভিন্ন। ব্রিটিশরা ভারত উপমহাদেশ দখলের প্রায় ৯০ বছর পর এই জৈন্তা রাজ্য তাদের আয়ত্তে নেয়। ১৮৩৫ সালে ১৬ মার্চ জৈন্তা ব্রিটিশ অধিকারে আসে। ফলে মুসলমানেরা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পায়। জৈন্তা রাজ্যের পতনের পর ১৮৩৬ সাল হতে কানাইঘাটসহ জৈন্তা সিলেট জেলা কালেক্টরেটের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। ব্রিটিশ সরকার শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ১৮৪১ সালে মুলাগুল পরগণার লক্ষিপুর মৌজার ঝর্ণা টিলায় থানা স্থাপন করেন। তখন থানাকে পুলিশ স্টেশন বলা হতো। ১৮৮০ সালে মুলাগুল হতে কানাইঘাট স্থানান্তরিত হওয়ার পর থানা ও অন্যান্য প্রশাসনিক অফিস ক্রমান্বয়ে বর্তমান কানাইঘাট সদরে গড়ে ওঠে।[][][]

১৮৭৪-পরবর্তী সময়কালে কানাইঘাট প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাযাত্রায় অংশগ্রহণ করে এবং দ্রুততম সময়ে ইসলামী শিক্ষায় বাংলাদেশের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে প্রস্ফুটিত হয়। ১৮৭৪ সালে ঝিঙাবাড়ি সিনিয়র ফাযিল মাদ্রাসা, ১৮৯৩ সালে কানাইঘাট ইসলামিয়া মাদরাসা বর্তমান দারুল উলুম কানাইঘাট মদরাসা,যা ১৯৫৬ সনে বাহরুল উলুম আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরী রাহি. পুণরায় সংস্কার করে এ নামে নামকরণ করেন, ১৮৯৮ সালে উমরগঞ্জ ইমদাদুল উলুম মাদ্রাসা, ১৯০১ সালে গাছবাড়ি জামিউল উলুম কামিল মাদরাসা, ১৯১৭ সালে সড়কের বাজার আহমদিয়া মাদরাসা সহ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-আন্দোলন শুরু হয়। দিল্লি, দেওবন্দ, কলকাতা ফেরত একদল তরুণ আলিম শিক্ষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।[]

১৯০৫ সাল হতে মাধ্যমিক স্কুল, মাদরাসা এবং মসজিদ নির্মাণ কানাইঘাটে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তখন থেকে অদ্যাবধি শক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে শিক্ষার হার অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৪ মার্চ ১৯৮৩ তারিখ হতে কানাইঘাট থানা উপজেলায় উন্নীত হওয়ার পর অত্র উপজেলায় শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষি, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অন্যান্য আর্থ সামাজিক অবস্থার উত্তেরোত্তর উন্নতি ঘটেছে।[][] ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর সূর্য উঠার আগেই পাক হানাদার বাহিনী এবং মুক্তিযুদ্ধাদের মধ্যে তীব্র যুদ্ধ হয় এবং শেষে পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করে। ঐদিন কানাইঘাট স্বাধীন হয়।[][]

নামকরণ

সম্পাদনা

বর্তমান কানাইঘাট বাজারের তীরবর্তী সুরমা নদীর ঘাটে কানাই নামক একজন মাঝির নামানুসারে ‘কানাইঘাট’ নামকরণ করা হয়।[] কানাইঘাট উপজেলার পুর্বতন নাম ‘কানাইঘাট’ থাকায় এ মতটিকে শক্তিশালী মনে হয়। মতান্তরে কানাইঘাট উপজেলার মুলাগুল এলাকার কানাই চৌঃ নামক জৈন্তা রাজ দরবারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির নামানুসারে কানাইঘাট উপজেলার নামকরণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এক সময় কানাইঘাট থানা সদর মুলাগুলে ছিল।

অবস্থান ও আয়তন

সম্পাদনা

কানাইঘাট উপজেলা বাংলাদেশের উত্তর-পূ্র্ব সীমান্তে অবস্থিত। এই উপজেলা ২৪º৫৩' ও ২৫º০৬' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২º০১' ও ৯২º২৬' পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এই উপজেলার উত্তরে জৈন্তাপুর উপজেলাভারতের মেঘালয়, দক্ষিণে বিয়ানীবাজার উপজেলাজকিগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে ভারতের আসাম, পশ্চিমে জৈন্তাপুর উপজেলাসিলেট সদর উপজেলা

প্রশাসনিক এলাকা

সম্পাদনা

কানাইঘাট উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম কানাইঘাট থানার আওতাধীন।[]

পৌরসভা
ইউনিয়নসমূহ

জনসংখ্যার উপাত্ত

সম্পাদনা

কানাইঘাটের জনসংখ্যা ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ২ লক্ষ ৫০ হাজার। জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশ মুসলিম এবং ৪.১০ শতাংশ হিন্দু এবং ০.২ শতাংশ খ্রিস্টান এবং উপজাতীয় ০.৩ শতাংশ।[]

শিক্ষা

সম্পাদনা

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ২৯.৬২%; পুরুষ ৩৪.৪৩%, মহিলা ২৪.৮৯%। কলেজ ৩, কারিগরি কলেজ ১, প্রাইমারি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১৩, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৮, কিন্ডার গার্টেন ১৪, মাদ্রাসা ১৫। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানঃ মসজিদ ৪৯১, মন্দির ৩০, গির্জা ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: কানাইঘাট জামে মসজিদ, মঙ্গলপুর প্রেসবিটারিয়ান চার্চ।[]

উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:[]

অর্থনীতি

সম্পাদনা

পাথরই কানাইঘাট উপজেলার একমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদ। লোভাছড়া পাথর কোয়ারী হতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সরকারি রাজস্ব আহরিত হয়। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৮.০৩%, শ্রমিক ১১.৪৯%, শিল্প ০.৪২%, ব্যবসা ৮.৯০%, পরিবহন ও যোগাযোগ ০.৯৫%, চাকরি ৪.৩০%, নির্মান ১.২৬%, ধর্মীয় সেবা ১.২০%, রেমিটেন্স ১২.৬১% এবং অন্যান্য ১০.৮৪%। প্রধান রপ্তানিঃ চা, পান পাতা, পাথর, বালু।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প: লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বেতশিল্প। উল্লেখযোগ্য বাজারঃ কানাইঘাট বাজার,গাছবাড়ী বাজার।

প্রধান ফল: কাঁঠাল, আনারস, কমলা, লেবু, বাতাবিলেবু, লটকন, তামাক, পাট, গম। প্রধান কৃষি ফসলঃ ধান, চা, আলু, তেজপাতা, পান, সুপারি, শাকসবজি, মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার।

দর্শনীয় স্থান

সম্পাদনা

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন

সম্পাদনা

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী

সম্পাদনা

মাসিক সীমান্তের ডাক, কানাইঘাট বার্তা।[]

সুরমা, লোভা, ধোনা, দেওছই।[]

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

সম্পাদনা
  • ইসমাঈল আলম (১৮৬৮-১৯৩৭) - বাংলাভাষী উর্দু কবি, স্বাধীনতা-সংগ্রামী এবং ভাষাবিদ।
  • ইবরাহীম আলী তশনা (১৮৭২-১৯৩৩) - সমাজ-সংস্কারক, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রসৈনিক ও খিলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা;[]
  • ইব্রাহীম চতুলী- একজন খ্যাতিমান আলেম, রাজনীতিক ও সমাজ সংস্কারক ছিলেন। ১৯৩৮ সালে জমিয়তে উলানায়ে হিন্দ থেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসাম প্রাদেশিক পরিষদের শিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।[১১][১২]
  • মকবুল হোসেন (সিলেটের রাজনীতিবিদ) পূর্ব বাংলা আইন পরিষদ সদস্য
  • আল্লামা মুশাহিদ বায়ামপুরী (১৯০৭-১৯৭১) পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (সংসদ সদস্য), আলেম, রাজনীতিবিদ ও সমাজ সংস্কারক।
  • আব্দুস সালাম মিনিস্টার (১৯০৬-১৯৯৯)- পূর্ব পাকিস্তানের রাজস্ব ও ভূমি প্রশাসন মন্ত্রী
  • হাবিবুর রহমান (তোতা মিয়া) –স্বাধীন বাংলাদেশের ১৯৭৩ সালের প্রথম নির্বাচনের সাংসদ।
  • মাওলানা ওলিউর রহমান (১৯১৬-২০০৬)- একজন আলেম, সমাজ সংস্কারক, লেখক ও মুসলিম নারীশিক্ষা আন্দোলনের অগ্রদূত। নারীশিক্ষা আন্দোলনে তার ব্যাপক অবদান রয়েছে।
  • ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী - ইসলামি রাজনীতিবিদব্যবসায়ী। ২৩৩ নং (সিলেট-৫) আসন থেকে অষ্টম জাতীয় সংসদ-এর নির্বাচিত সংসদ সদস্য
  • হারিস চৌধুরী- একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধা ও ব্যবসায়ী ছিলেন।
  • শফিকুল হক- (১৮৯৮-১৯৫৮) তিনি একজন ইসলামি পণ্ডিত ও স্বাধীনতা সংগ্রামী। ভারতের আসাম প্রদেশে ইসলামি শিক্ষা বিস্তারে তার ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে, ১৯৫৫ সালে তিনি ‘অল-আসাম তনজিম-ই-মাদারিস কৌমিয়া’ শিক্ষাবোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন।
  • শফীকুল হক আখতার আকুনী-শিক্ষাবীদ,ও সাবেক শায়খুল হাদিস,পূর্ব সিলেট আযাদ দ্বীনি বোর্ডের সাবেক সভাপতি।
  • মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস লক্ষীপুরী-ওলীকুল শীরমনি,দারুল কানাইঘাট মাদরাসার মোহতামিম ও শায়খুল হাদিস।
  • আলিমুদ্দিন দূর্লভপুরী-শিক্ষাবিদ, সংস্কারক,শায়খুল হাদিস দারুল উলুম কানাইঘাট।
  • শিহাবুদ্দীন চতুলী-প্রাক্তন শায়খুল হাদিস রেঙ্গা মাদ্রাসা।
  • মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী-হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক কেন্দ্রীয় নাইবে আমীর,দারগাহে হজরত শাহ জালাল সিলেটের শায়খুল হাদিস ও মোহতামিম।

চিত্রশালা

সম্পাদনা

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "কানাইঘাট উপজেলা - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১০ 
  2. "কানাইঘাট উপজেলা"kanaighat.sylhet.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১০ 
  3. http://www.kanaighatnews.com/2020/02/blog-post_11.html
  4. ডাক্তার মোহাম্মদ শামসুদ্দিন লিখিত 'এক নজরে কানাইঘাট'
  5. কিশোর কানাইঘাট, সরওয়ার ফারুকী, ISBN 978-984-97836-0-2
  6. হিফজুল কুরআন পরিক্রমা, লেখকঃ সরওয়ার ফারুকী
  7. কিশোর কানাইঘাট, সরওয়ার ফারুকী
  8. "ইউনিয়নসমূহ - কানাইঘাট উপজেলা"kanaighat.sylhet.gov.bd। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ৮ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  9. হিফজুল কুরআন পরিক্রমা (জৈন্তা-কানাইঘাট), সরওয়ার ফারুকী
  10. "মৌনমুখর 'লোভাছড়া'"NTV Online। ২০১৯-০৬-২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৬-১০ 
  11. কামাল উদ্দিন আহমেদ। করিমগঞ্জের ইতিহাসভারত। পৃষ্ঠা ২৫২। 
  12. ফয়েজ উদ্দীন (২৫ নভেম্বর ২০১৮)। "সিলেটের তিনটি আসন পুনরুদ্ধারে তৎপর জমিয়ত"আওারইসলাম২৪.কম। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০২২ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা