ইসমাঈল আলম
আবুল আযীজ মোহাম্মদ ইসমাইল আলী (১৮৬৮-১৯৩৭) একজন বাংলাভাষী মুসলিম উর্দু কবি, সুবক্তা, তার্কিক ও খিলাফত আন্দোলন-এর সক্রিয় কর্মী। তার কাব্যনাম আলম। দিওয়ান-ই-আলম কাব্যের জন্য তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ১৯১০ সালে 'বাংলার তুতা' উপাধি প্রাপ্ত হন।[১]
আবুল আযীজ মোহাম্মদ ইসমাইল আলী | |
---|---|
উপাধি | আলম |
জন্ম | ১৮৬৮ |
মৃত্যু | নিজ বাড়ী, কানাইঘাট উপজেলা, সিলেট |
জাতিভুক্ত | ব্রিটিশ ভারত |
মাজহাব | হানাফি |
শাখা | সুন্নি |
মূল আগ্রহ | হাদীস, কবিতা |
লক্ষণীয় কাজ | ওয়াজ নসিহত, ও কাব্য |
যাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন | |
যাদেরকে প্রভাবিত করেছেন |
জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি
সম্পাদনাআবুল আযীজ মোহাম্মদ ইসমাইল আলী ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার বাটইআইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[২][৩] [৪] তার পিতা মাওলানা আব্দুর রহমান কাদেরি ছিলেন একজন আলেম ও মুফতি। ইসমাঈল আলমের ছোট ভাই মরমি কবি ইবরাহীম আলী তশনা। তার পূর্বপুরুষ শাহ তাকী-উদ-দীন ছিলেন শাহজালালের সফরসঙ্গী।[৫][৬][৭]
শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাবাল্যকালে পিতা আব্দুর রহমান কাদরীর কাছে প্রাথমিকের পাঠ সমাপ্তির পর ইসমাঈল আলম ভর্তি হন তৎকালীন সিলেট তথা আসাম অঞ্চলের প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফুলবাড়ি আজিরিয়া মাদ্রাসায় ।[৮] সেখানে আরবি-ফার্সিতে ভালো ফলাফল করে উচ্চশিক্ষার জন্যে ভর্তি হন কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় এবং ১৮৯৭ সালে শিক্ষা সমাপ্তির পর দেশে ফিরেন।[৬]
কর্ম জীবন
সম্পাদনাইসমাঈল আলম আরবী, ফার্সি, উর্দু ভাষায় বক্তব্য দিতেন। ব্রিটিশবিরোধী খেলাফত আন্দোলনে ভুমিকা রাখেন এবং উজ্জীবনী অনেক সঙ্গিত রচনা করেন। তিনি বিচারিক কাজ করতেন।"[৯] তিনি ফজলুর রহমান গঞ্জে মুরাদাবাদীর মুরিদ ছিলেন।[৯]
রচনাবলী
সম্পাদনামাওলানা মোহাম্মদ ইসমাইল আলী উর্দু এবং ফার্সিতে কবিতা লিখেছেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই উর্দু-ফারসি শায়েরির প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন এবং সে সময়ের বড় আলেমদের একজন। [১০] তিনি ছিলেন সহজাত কবি।[৯] তাঁর রচিত কেতাবের মধ্যে দিওয়ান-ই-আলম অন্যতম। দিওয়ান-ই-আলম কাব্যের জন্য কলকাতা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়-এর তৎকালীন প্রিন্সিপাল উইলিয়াম হেমিল্টন হার্লি[১১] তাকে 'বাংলার তুতা' উপাধি প্রদান করেন।[৬] দিওয়ান-ই-আলম-এর প্রকাশকাল: ১৩২৮ হিজরি, ১৯১০খ্রিস্টাব্দ; কাইয়ুমী, ওয়াকিয়ী মহল্লা, টিকাপুর, জেলা: কানপুর, উত্তরপ্রদেশ, ভারত থেকে। এ কাব্য ফারসি-উর্দুর সমন্বয়ে মহানবী (সঃ)-এর সীরাত ও উচ্চাঙ্গের না’ত সমৃদ্ধ। বাংলাভাষী উর্দু কবি মাওলানা আনজব আলী শওক বলেন "মাওলানা ইসমাঈল আলম আমার কাব্যগুরু”।[১২] আলমের অনুদিত কাব্যরূপঃ
“ | যখন তোমার উচ্চকিত নাম শুনেছি জাহান্নামের ভয়ভীতি সব দূর হয়েছে |
” |
“ | তোমার কেশের আশে নির্ঘুম রাত পাড়ি দেই অজস্র বোধের সাগর হে নবী তোমার প্রেমে আলমের বুক |
” |
মৃত্যু
সম্পাদনাজীবনের শেষ তেরো বছর ইসমাঈল আলম অন্ধ ছিলেন। ১৩৪৪ বাংলা, ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে নিভৃতচারী এ মনিষী মৃত্যুবরণ করেন।[৯] মুরিদানের ভালবাসার দাবীতে নিজবাড়ী থেকে বিশ কিলোমিটার দূর সড়কেরবাজার, [[কানাইঘাট]] ঈদগাহ-গোরস্তানে দাফন করা হয়।[১৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ স্মৃতির পাতায় জালালাবাদ, লেখক: শহিদ চৌধুরী, প্রকাশক: জালালাবাদ ফোরাম, জাপান, ১৯৯৪
- ↑ দৈনিক সিলেটের ডাক,২৬আগস্ট,২০০৮
- ↑ সিলহেট মে উর্দু, আবদুল জলিল বসমিল, আনজুমান-এ-তারাক্কি উর্দু, ১৯৮০-১৯৮১ করাচি
- ↑ https://www.rekhta.org/ebooks/salhat-mein-urdu-mohammad-abdul-jaleel-bismil-ebooks
- ↑ হায়াতে তাইয়্যিবা, লেখক: মুফতি মোহাম্মদ রহমতুল্লাহ, প্রকাশকাল: ১৯৮৫
- ↑ ক খ গ মাসিক মদিনা, ফেব্রুয়ারি ২০০৯
- ↑ মাশায়েখে আসাম, লেখক: আব্দুল জলিল রাগবি, প্রকাশক: নুরি ইসলামিক ফাউন্ডেশন, নওয়াগাও, আসাম, ভারত
- ↑ কানাইঘাটের উলামায়ে কেরাম, প্রথম খণ্ড, মুহাম্মদ আব্দুর রহিম, পাণ্ডুলিপি প্রকাশন, প্রকাশকাল: মার্চ ২০১৮
- ↑ ক খ গ ঘ সিলহেট মে উর্দু, আনজুমান-এ-তারাক্কি উর্দু, ১৯৮০-১৯৮১ করাচি
- ↑ উর্দু ভাষা ও সাহিত্য উৎস ও ক্রমবিকাশ, সৈয়দ মবনু, পৃ: ১২৬, চৈতন্য, প্রকাশকাল: জুলাই ২০১৭
- ↑ মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার ইতিহাস, মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমদ, প্রকাশক: ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ফেব্রুয়ারি ২০০৪
- ↑ বাংলাদেশের সূফী সাধক, ড. গোলাম সাকলায়েন, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা ১৯৮২, পৃৃ: ১১১-৪
- ↑ দৈনিক সিলেটের ডাক,২৯ এপ্রিল,২০১৮
- ↑ স্মৃতির পাতায় জালালাবাদ, সম্পাদক: শহীদ চৌধুরী, প্রকাশনায়: জালালাবাদ এসোসিয়েশন, জাপান