বাংলাদেশের উপজেলা

বাংলাদেশের তৃতীয় স্তরের প্রশাসনিক ব্যবস্থা

উপজেলা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ একক। কয়েকটি গ্রামের সমন্বয়ে একটি ইউনিয়ন, কয়েকটি ইউনিয়ন মিলে একটি উপজেলা গঠিত হয় এবং কয়েকটি উপজেলা নিয়ে একটি জেলা গঠিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের অন্তর্গত ৬৪টি জেলায় মোট ৪৯৫ টি উপজেলা রয়েছে।[১] সর্বশেষ গঠিত উপজেলাগুলি হলো মাদারীপুরের ডাসার ৪৯৩তম উপজেলা, সুনামগঞ্জের মধ্যনগর ৪৯৪তম উপজেলা ও কক্সবাজারের ঈদগাঁও ৪৯৫তম উপজেলা।

উপজেলা
সংখ্যা৪৯৫ (২০২৩ অনুযায়ী)
সরকার
  • উপজেলা প্রশাসন

উপজেলা শব্দটি সংস্কৃত ও আরবি ভাষার সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছে।

গঠন ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৮২ সালের ৭ই নভেম্বর স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা পুনর্গঠন) অধ্যাদেশ ১৯৮২ বলে প্রথমে উন্নীত থানা পরিষদ গঠন করা হয় এবং থানা পর্যায়ে বিকেন্দ্রীভূত প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। পরবর্তীকালে উন্নীত থানা পরিষদকে উপজেলা পরিষদে রূপান্তরিত করা হয়। এ সময়ে বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত উপজেলাকে পূর্ণাঙ্গ প্রশাসনিক কেন্দ্রে রূপ দেয়া হয়। এই অধ্যাদেশটি ১৯৯১ সালে বাতিল করা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৯৮ সালে জাতীয় সংসদে উপজেলা অধ্যাদেশ ১৯৯৮ পাস করে পুনরায় উপজেলা ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়। কার্যালয় আদেশের মাধ্যমে ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ থেকে এই অধ্যাদেশ কার্যকরী হয়। সর্বশেষ ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ আইন সংশোধন হয়। [২]

উপজেলার প্রধান সম্পাদনা

আইন বিভাগ সম্পাদনা

সংসদ সদস্যগণ বাংলাদেশের উপজেলাতে আইন এবং নির্বাহী বিভাগের প্রধান। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ব্যবস্থা সংসদীয় পদ্ধতির। এই ব্যবস্থায় সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন প্রধানমন্ত্রী। বহুদলীয় গণতন্ত্র পদ্ধতিতে এখানে জনগণের সরাসরি ভোটে সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত হন। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে। সংসদ সদস্যগণ উপজেলাতে আইন বিভাগের প্রধান হিসেবে ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। যেহেতু এমপিরাই মন্ত্রীপরিষদের সদস্য সেহেতু তারাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বা তার প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলা পর্যায়ে নির্বাহী বিভাগ বা শাসন বিভাগ পরিচালনা করে। উল্লেখ্য, এক বা একাধিক উপজেলা নিয়ে একটি জাতীয় সংসদ আসন গঠিত হয়। বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের পদক্রম ১২ নং ক্রমিকে অবস্থিত।

বিচার বিভাগ সম্পাদনা

সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাংলাদেশের উপজেলার প্রধান ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে উপজেলা বা থানার আমলী আদালতের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি উপজেলার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের প্রধান বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান মোতাবেক প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে উপজেলার পুলিশ, প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও বিভাগগুলো ক্ষমতার অপব্যবহার করছে কিনা বা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে কিনা তা নজরদারি করেন। মোটকথা, উপজেলার সমস্ত বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের[৩] বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদমর্যাদা উপসচিব এর সমান।[৪][৫][৬]

সিনিয়র সহকারী জজ বাংলাদেশের উপজেলার প্রধান জজ। তিনি উপজেলা দেওয়ানি আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা। বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী সিনিয়র সহকারী জজের পদমর্যাদা উপসচিব এর সমান।[৭] সিনিয়র সহকারী জজ দেওয়ানি কার্যবিধি, ১৯০৮ এর বিধান মোতাবেক উপজেলার মধ্যে যেকোনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, দাপ্তরিক আদেশ বা নির্মাণকাজ অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বন্ধ করে দিতে পারেন।[৮]

নির্বাহী বিভাগ সম্পাদনা

উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন বাংলাদেশের উপজেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী। সংশোধিত উপজেলা পরিষদ (কার্যক্রম বাস্তবায়ন) বিধিমালার ১৪(১) উপবিধি অনুযায়ী উপজেলার দপ্তরগুলোর কর্মকর্তা উপজেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তরিত বিষয়ে সব কাগজপত্র ও নথি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে অনুমোদনের জন্য পেশ করবেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হলেন উপজেলার মুখ্য আমলা এবং উপজেলা পরিষদের সচিব। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার) এর একজন সদস্য। বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুসারে ইউএনও সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার একটি পদ।[৯]

অফিসার ইন চার্জ (ওসি) পুলিশ থানার মুখ্য কর্মকর্তা। তিনি প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডার অফিসার। পুলিশ ইন্সপেক্টর পদের কর্মকর্তারা অফিসার ইনচার্জের দায়িত্ব পালন করেন।

পদমর্যাদা সম্পাদনা

বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের পদক্রম ১২ এবং সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/সিনিয়র সহকারী জজ/উপজেলা চেয়ারম্যান/উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এর পদক্রম ২৫।

উপজেলা পরিষদ সম্পাদনা

একটি উপজেলার প্রশাসনিক দায়িত্বে নিয়োজিত স্থানীয় জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত পরিষদ উপজেলা পরিষদ নামে পরিচিত। উপজেলা পরিষদের মেয়াদকাল মিটিংয়ের দিন থেকে ৫ বছর। সরকার কর্তৃক মনোনীত একজন সরকারি কর্মকর্তা বা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এই পরিষদের সচিব হিসেবে সমস্ত নির্বাহী দায়িত্ব পালন করেন।[১০]

উপজেলা পর্যায়ের সমস্ত কার্যাবলীকে মূলত সংরক্ষিতহস্তান্তরিত এই দুইভাগে ভাগ করা হয়। সংরক্ষিত দায়িত্বের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিচার, রাজস্ব প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ, বৃহৎ শিল্প, খনন কার্য এবং খনিজ সম্পদের উন্নয়ন ইত্যাদি দায়িত্ব অন্যতম।

অন্যদিকে হস্তান্তরিত দায়িত্বের মধ্যে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, আন্তঃ উপজেলা সড়ক নির্মাণ ও সংরক্ষণ, কৃষি সম্প্রসারণ ও কৃষি উপকরণ সরবরাহ ও সেচ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ ও পয়ঃ নিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রণয়ন ইত্যাদি কার্যক্রম অন্তর্ভূক্ত।

উপজেলাসমূহের তালিকা সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "নতুন আরো তিনটি উপজেলা গঠনের সিদ্ধান্ত"দৈনিক ইনকিলাব। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুলাই ২০২১ 
  2. এ.এম.এম শওকত আলী (২০১২)। "উপজেলা পরিষদ আইন, ২০০৯"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  3. "ফৌজদারি কার্যবিধি" 
  4. "জেলা জজের পদমর্যাদা সচিব ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদমর্যাদা সচিব মর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের সমান" 
  5. "পদমর্যাদার ক্রম রিটের সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ"। ১৫ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০২২ 
  6. "দশ পদের পদমর্যাদা পরিবর্তন" 
  7. "পদমর্যাদা ক্রম মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রকাশ" 
  8. "দেওয়ানি কার্যবিধি" 
  9. "উপজেলা নির্বাহী অফিসার" 
  10. বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের ওয়েবসাইট ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ জুন ২০১৩ তারিখে