ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট
ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত হলো বাংলাদেশের জেলাতে ও মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত আদালত।[১] জেলা পর্যায়ে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতকে সংক্ষেপে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বলা হয়।[২][৩] অন্যদিকে, মেট্রোপলিটন এলাকায় চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতকে একত্রে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট বলে। ২০০৭ সালে সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধির ৪ক ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট বলতে শুধুমাত্র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে বোঝাবে।[৪][৫]
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেলার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের প্রধান।[৬] অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের দ্বিতীয় প্রধান ম্যাজিস্ট্রেট বা সেকেন্ড ইন কমান্ড। এছাড়াও এক বা একাধিক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলার প্রধান হিসেবে আমলী আদালতের দায়িত্ব পালন করেন। জেলার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিভিন্ন পর্যায়ের ম্যাজিস্ট্রেটগণ হচ্ছেন:
- ১) চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
- ২) অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
- ৩) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/ প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট
- ৪) জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
অপরদিকে, চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেট্রোপলিটন এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের প্রধান ম্যাজিস্ট্রেট। অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহানগরের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেট। পাশাপাশি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটগণ বিভিন্ন আমলী আদালতের দায়িত্ব পালন করেন।[৭] মেট্রোপলিটন এলাকার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিভিন্ন পর্যায়ের ম্যাজিস্ট্রেটগণ হচ্ছেন:
পদমর্যাদা
সম্পাদনাবাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের পদক্রম ১৭, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের পদক্রম ২১ এবং সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের পদক্রম ২৫ নম্বরে অবস্থিত।[৮][৯][১০] উল্লেখ্য, জেলার ও মেট্রোপলিটন এলাকার উল্লেখযোগ্য শীর্ষ কর্মকর্তাগণের মধ্যে জেলা ও দায়রা জজ/মহানগর দায়রা জজের পদক্রম ১৬, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ/অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজের পদক্রম ১৭, বিভাগীয় কমিশনার, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ/যুগ্ম মহানগর দায়রা জজের পদক্রম ২১, উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) এর পদক্রম ২২, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের পদক্রম ২৩, জেলা প্রশাসক (ডিসি)/পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শকের পদক্রম ২৪ এবং সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/সিনিয়র সহকারী জজ/পুলিশ সুপার (এসপি)/উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এর পদক্রম ২৫ নম্বরে অবস্থিত।[১১][১২][১৩]
অপরাধ আমলে গ্রহণ
সম্পাদনাচীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক নির্ধারিত আমলী আদালতের অধিক্ষেত্রের প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০(১) ধারার বিধান মোতাবেক তার এখতিয়ারাধীন অঞ্চলে সংঘটিত যেকোনও অপরাধ আমলে নিতে পারেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমল যোগ্য অপরাধের সংবাদ পেলে তাকে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করেন। আমল অযোগ্য অপরাধ হলে সেটার জন্য সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয় এবং সংশ্লিষ্ট প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট অনুমতি দিলে পুলিশ তদন্ত করতে পারে। অন্যদিকে, আদালতে কেউ সরাসরি অভিযোগ নিয়ে আসলে এবং সেটা গুরুতর প্রকৃতির হলে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৬(৩) ধারা অনুযায়ী এজাহার হিসেবে রুজু করার জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিতে পারেন। ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারা অনুসারে অভিযোগকারীকে পরীক্ষা করে অপরাধ আমলে নিতে পারেন বা ২০২ ধারা মোতাবেক পুলিশ বা অন্য যে কাউকে তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন। রিপোর্ট প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট ধারায় অপরাধ আমলে গ্রহণ করতে পারেন।
এখতিয়ার ও ক্ষমতা
সম্পাদনাচীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করতে পারেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ২৯(গ) ধারায় বলা হয়েছে, সরকার হাইকোর্ট বিভাগের সাথে পরামর্শক্রমে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে মৃত্যুদন্ড ছাড়া সকল অপরাধের বিচার করার ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবে। উক্ত আইনের ৩৩(ক) ধারায় উল্লেখ আছে যে, ২৯(গ) ধারা ক্ষমতাবলে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ৭ বছরের অধিক কারাদণ্ড ব্যতীত আইনে অনুমোদিত যেকোনও কারাদণ্ড প্রদান করতে পারবেন। অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের সাজা প্রদানের ক্ষমতা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের সমান। অর্থাৎ তারাও সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করতে পারেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ৫ বছর পর্যন্ত কারাদন্ডের আদেশ দিতে পারেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ডে প্রদানে সক্ষম। অপরদিকে, জেলা প্রশাসক সহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ২ বছরের বেশি কারাদণ্ড দিতে পারেন না।[১৪][১৫]
রিমান্ড
সম্পাদনাবাংলাদেশের সংবিধান এর ৩৩(২) অনুচ্ছেদ এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারা অনুযায়ী পুলিশ কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের সময় হতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমলী আদালতের অধিক্ষেত্রের প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে উপস্থাপন করবে। সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট গুরুতর বা সূত্রবিহীন অপরাধের ক্ষেত্রে আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭(১) ধারা মোতাবেক ১৫ দিন পর্যন্ত পুলিশ রিমান্ডের আদেশ দিতে পারেন।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ"।
- ↑ "বিচার বিভাগ"।
- ↑ "বিচার বিভাগ জনগণের আস্থা অর্জন করেছে"।
- ↑ "ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮"।
- ↑ "বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা"।
- ↑ "বাংলাদেশের আদালতসমূহ"। ২০১৫-০৯-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৭।
- ↑ "Legal system of Bangladesh"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৬।
- ↑ "দশ পদের পদমর্যাদা পরিবর্তন"।
- ↑ "জেলা জজের পদমর্যাদা সচিব ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদমর্যাদা সচিব মর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের সমান"।
- ↑ "পদমর্যাদার ক্রম রিটের সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ"। ১৫ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০২২।
- ↑ "পদমর্যাদার ক্রমে জেলা জজ ১৬ এবং চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১৭ তে উন্নীত"।
- ↑ "জেলা ও দায়রা জজের পদমর্যাদা এখন ৮ ধাপ ওপরে"।
- ↑ "ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত প্রকাশ"।
- ↑ "বিচার বিভাগীয় বাতায়ন"। ২৩ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০২২।
- ↑ "দন্ডবিধি, ১৮৬০"।