জেলা ও দায়রা জজ
জেলা ও দায়রা জজ বাংলাদেশের জেলার প্রধান বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা। তিনি একাধারে জজ কোর্টের অধিকর্তা, জেলার বিচার বিভাগীয়[১] কর্মকর্তাদের প্রধান, জেলার দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের[২] কর্ণধার, জেলার বিচার বিভাগের[৩] প্রধান এবং জাস্টিস অব পিস বা শান্তি রক্ষাকারী বিচারপতি।[৪][৫][৬] ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসারে জেলা ও দায়রা জজের পদমর্যাদা সরকারের সচিবের সমান।[৭][৮] জেলা ও দায়রা জজ পদে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে দায়িত্বরত থাকলে তিনি সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ হন এবং তখন তার পদমর্যাদা সিনিয়র সচিবের সমান। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুসারে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজের পদমর্যাদা সিনিয়র সচিবের সমান।[৯]
সম্বোধনরীতি | বিজ্ঞ, মাননীয়, মান্যবর |
---|---|
সংক্ষেপে | জেলা জজ, ডিস্ট্রিক্ট জজ |
এর সদস্য | বাংলাদেশের বিচার বিভাগ |
যার কাছে জবাবদিহি করে | বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, আইন মন্ত্রণালয় |
আসন | জেলা সদর দপ্তর |
নিয়োগকর্তা | বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি |
মেয়াদকাল | ৩ বছর |
গঠনের দলিল | বাংলাদেশের সংবিধান |
গঠন | ১৯৭২ |
জেলা ও দায়রা জজের রয়েছে আপীল এখতিয়ার।[১০] তিনি জেলার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সহ প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটদের এবং জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের আপীল কর্তৃপক্ষ (অ্যাপেলেট অথরিটি)। ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫ ধারার বিধান মোতাবেক জেলা ও দায়রা জজ এবং চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদাধিকার বলে নিজ অধিক্ষেত্রের মধ্যে জাস্টিস অব পিস বা শান্তি রক্ষাকারী বিচারপতি হিসেবে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার নিমিত্ত ত্বরিত সিদ্ধান্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য দায়িত্ব ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত। জেলা ও দায়রা জজ জেলাতে রাষ্ট্রপতি[১১] ও প্রধান বিচারপতির[১২] সাথে যোগাযোগের অনুমতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
জেলা ও দায়রা জজকে সংক্ষেপে জেলা জজ নামে অভিহিত করা হয়। তবে জেলা জজ শব্দটি ডিস্ট্রিক্ট অ্যান্ড সেশন জজ শব্দের বঙ্গানুবাদ নয়, বরং দুটো আলাদা পরিচিতিকে নির্দেশ করে। বর্তমান বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায়[১৩] জেলা জজ শব্দটির সর্বব্যাপী প্রয়োগ সুপ্রতিষ্ঠিত ভাবে লক্ষ করা যায়। বিশেষত সরকারি দপ্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলকভাবে গৃহীত হওয়ার কারণে কেবলমাত্র ডিস্ট্রিক্ট জজ-এর কাজের ক্ষেত্রেই নয়, সেশন জজ-এর সামগ্রিক কাজের ক্ষেত্রে একক বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে জেলা জজ এর ব্যবহার প্রায়োগিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।[১৪] বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রমে অনুযায়ী জেলা ও দায়রা জজের অবস্থান ১৬ নম্বরে।[১৫][১৬]
এখতিয়ার ও ক্ষমতা
সম্পাদনাজেলা ও দায়রা জজ যখন ফৌজদারি এখতিয়ার প্রয়োগ করেন তখন তিনি দায়রা জজ এবং যখন দেওয়ানি এখতিয়ার প্রয়োগ করেন তখন তিনি জেলা জজ হিসেবে অভিহিত হন।
ফৌজদারি এখতিয়ার: দায়রা জজ আদালত মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সহ আইনে উল্লেখিত সকল প্রকারের দন্ড প্রদান করতে পারেন।
দেওয়ানি এখতিয়ার: জেলা জজ আদালতের রিভিশন এখতিয়ার হচ্ছে দেওয়ানী বিষয়বস্তুর আপীল যার মূল্যমান সর্বোচ্চ ৫ কোটি টাকা।
জেলা ও দায়রা জজ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সহ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের আদেশের আপীল ও রিভিশন শোনেন। জেলা জজ আপীল কর্তৃপক্ষ হাইকোর্ট ।[১৭][১৮][১৯]
নিয়োগ
সম্পাদনাজেলা ও দায়রা জজ বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের[২০] প্রথম গ্রেডের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের[২১] ১১৫ ও ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জেলা ও দায়রা জজ নিয়োগ দিয়ে থাকেন।[২২] আইন মন্ত্রণালয়[২৩][২৪] সুপ্রীম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে জেলা ও দায়রা জজদের পদায়ন ও বদলি করে থাকে।[২৫]
পদমর্যাদা
সম্পাদনাবাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুসারে জেলা ও দায়রা জজকে ১৬ নম্বর ক্রমিকে রাখা হয়েছে। [২৬]
জাস্টিস অব পিস
সম্পাদনাফৌজদারি কার্যবিধির ২৫ ধারার বিধান মোতাবেক জেলা ও দায়রা জজ পদাধিকার বলে নিজ অধিক্ষেত্রের মধ্যে জাস্টিস অব পিস বা শান্তি রক্ষাকারী বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[২৭]
জেলা লিগ্যাল এইড কমিটি
সম্পাদনাজেলা ও দায়রা জজ পদাধিকার বলে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির সভাপতি যাতে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, র্যাব এর কোম্পানি কমান্ডার, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সরকারি কৌঁসুলি (জিপি), পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এবং জেল সুপার সহ জেলার সকল গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীগণ সদস্য।
বিচার বিভাগীয় সম্মেলন
সম্পাদনাজেলা ও দায়রা জজের সভাপতিত্বে ত্রৈমাসিক বিচার বিভাগীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, নির্বাহী প্রকৌশলী (গণপূর্ত), র্যাব এর কোম্পানি কমান্ডার, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সরকারি কৌঁসুলি (জিপি) এবং পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) সহ জেলার সকল গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থাকেন।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "বিচার বিভাগ জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে"।
- ↑ "বিচার বিভাগের ইতিবৃত্ত"।
- ↑ "বিচার বিভাগ"।
- ↑ "ফৌজদারি কার্যবিধি"।
- ↑ "বিচার বিভাগ প্রভাবমুক্ত"।
- ↑ "দশ পদের পদমর্যাদা পরিবর্তন"।
- ↑ "জেলা জজের পদমর্যাদা সচিব ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদমর্যাদা সচিব মর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের সমান"।
- ↑ "পদমর্যাদার ক্রম রিটের সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ"। ১৫ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০২২।
- ↑ "ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স রিটের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ"।
- ↑ "বাংলাদেশের আদালতসমূহ"। ২০১৫-০৯-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৭।
- ↑ "বিচার বিভাগ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল"।
- ↑ "নতুন প্রধান বিচারপতি হলেন হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী"।
- ↑ "বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন ও প্রভাবমুক্ত"।
- ↑ "বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা"।
- ↑ "জেলা ও দায়রা জজের পদমর্যাদা এখন ৮ ধাপ ওপরে"।
- ↑ "জেলা ও দায়রা জজের পদমর্যাদা ১৬ তে উন্নীত"।
- ↑ "দন্ডবিধি, ১৮৬০"।
- ↑ "দেওয়ানি কার্যবিধি"।
- ↑ "বিচার বিভাগীয় বাতায়ন"। ২৩ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০২২।
- ↑ "ন্যায়বিচার মানুষের প্রাপ্য"।
- ↑ "বাংলাদেশের সংবিধান"।
- ↑ "বাংলাদেশের সংবিধানে বিচার বিভাগ"।
- ↑ "বিচার বিভাগের সমস্যা সমাধানে কার্পণ্য করবে না সরকার"। ৯ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০২২।
- ↑ "বিচার বিভাগকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে সরকার"।
- ↑ "গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান"।
- ↑ "পদমর্যাদার ক্রম মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের রায় প্রকাশ"। ১ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০২২।
- ↑ "বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ"।