চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা প্রধান জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিম্ন আদালতের প্রধান ম্যাজিস্ট্রেটনিম্ন আদালতের প্রধান বিচার বিভাগীয়[১] কর্মকর্তা, জেলা ম্যাজিস্ট্রেসির কর্ণধার[২] ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স মোতাবেক চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদমর্যাদা জেলা প্রশাসকের নিচে অবস্থিত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এর সমান।[৩][৪]

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
Government Seal of Bangladesh.svg
বাংলাদেশ সরকারের সীল

Chief শব্দের অর্থ প্রধান। Magistrate শব্দটি ল্যাটিন Magistratus শব্দ থেকে এসেছে যার মানে Administrator বা শাসক।।‌‌‌‌[৫] জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, সর্বত্র শান্তি রক্ষা করা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তার দায়িত্ব।[৬] ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান মোতাবেক প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেলার পুলিশ[৭] ও স্বাস্থ্য বিভাগ, শিক্ষা বিভাগসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও বিভাগগুলো ক্ষমতার অপব্যবহার করছে কিনা বা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে কিনা তা দেখভাল করেন।[৮][৯] প্রধান বিচারপতির[১০][১১] চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০(১) ধারা অনুযায়ী তার এখতিয়ারাধীন অঞ্চলে সংঘটিত যেকোনও অপরাধ আমলে নিতে পারেন। তিনি তার অধিক্ষেত্রের মধ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং অপরাধ দমন করার জন্য যেকোনও আদেশ দিতে পারেন। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেলার প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটদের আমলী আদালতের অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করেন। তিনি ক্রিমিনাল রুলস এন্ড অর্ডারস, ২০০৯ এর ৮৫(৩) বিধি মোতাবেক প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে মাসে একবার জেলার সমস্ত থানা পরিদর্শন করেন।[১২] তার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটগণ জেলাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। তিনি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে জেলা ও দায়রা জজ এর অধীনস্থ।

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায়[১৩] চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি পদাধিকার বলে মাসিক পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্সের সভাপতি যাতে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসক, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, র‍্যাব এর কোম্পানি কমান্ডার, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, সরকারি কৌঁসুলি (জিপি), পাবলিক প্রসিকিউটর (জিপি) সহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীগণ সদস্য।[১৪] পুলিশ, র‍্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত সহ আইনের প্রয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যকলাপের বিবরণ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক নির্ধারিত আমলী আদালতের অধিক্ষেত্রের প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দাখিল করে। জেলা পুলিশের পক্ষে পুলিশ সুপার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধের তদন্ত ও আইনের প্রয়োগ সহ যাবতীয় কার্যকলাপের জন্য চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট জবাবদিহি করেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫ ধারার বিধান মোতাবেক চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদাধিকার বলে নিজ অধিক্ষেত্রের মধ্যে জাস্টিস অব পিস বা শান্তি রক্ষাকারী বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ।[১৫][১৬]

ইতিহাস ও উৎপত্তিসম্পাদনা

২০০৭ সালের ১লা নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের[১৭][১৮] ফলে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পদের উৎপত্তি হয়।[১৯] এর মাধ্যমে ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ সংশোধন পূর্বক জেলা প্রশাসকের সকল প্রকার বিচারিক ক্ষমতা পৃথক করে সুবৃহৎ পরিসরে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে অর্পণ করা হয়।[২০][২১][২২]

নিয়োগসম্পাদনা

চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের দ্বিতীয় গ্রেডের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশের সংবিধান[২৩] এর ১১৫ ও ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি[২৪] অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ নিয়োগ দিয়ে থাকেন।[২৫][২৬] আইন মন্ত্রণালয়[২৭] সুপ্রীম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজদের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পদায়ন ও বদলি করে থাকে।[২৮][২৯][৩০]

এখতিয়ার ও ক্ষমতাসম্পাদনা

ফৌজদারী কার্যবিধির ২৯(গ) ধারায় বলা হয়েছে, সরকার হাইকোর্ট বিভাগের সাথে পরামর্শক্রমে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অথবা চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটকে মৃত্যুদন্ড ছাড়া সকল অপরাধের বিচার করার ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবে। উক্ত আইনের ৩৩(ক) ধারায় উল্লেখ আছে যে, ২৯(গ) ধারা ক্ষমতাবলে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ৭ বছরের অধিক কারাদণ্ড ব্যতীত আইনে অনুমোদিত যেকোনও কারাদণ্ড প্রদান করতে পারবেন।[৩১][৩২]

পদমর্যাদাসম্পাদনা

বাংলাদেশের ওয়ারেন্ট অফ প্রেসিডেন্স অনুযায়ী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর অবস্থান জেলা প্রশাসকের নিচে অবস্থিত ৬ জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এর যে কোন একজনের সমপর্যায়ে।[৩৩][৩৪][৩৫]

রিমান্ডসম্পাদনা

বাংলাদেশের সংবিধান এর ৩৩(২) অনুচ্ছেদ এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৬১ ধারা অনুযায়ী পুলিশ কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের সময় হতে ২৪ ঘন্টার মধ্যে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক নির্ধারিত আমলী আদালতের অধিক্ষেত্রের প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের সম্মুখে উপস্থাপন করবে।[৩৬] তিনি গুরুতর বা সূত্রবিহীন (Clueless) অপরাধের ক্ষেত্রে আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭(১) ধারা মোতাবেক ১৫ দিন পর্যন্ত রিমান্ডে প্রদান করতে পারেন।

স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অপরাধ আমলে গ্রহণসম্পাদনা

ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০(১)সি ধারা অনুসারে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোনো অভিযোগ ছাড়াই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে (suo moto) যেকোনো অপরাধ আমলে নিতে পারেন‌।

আরও দেখুনসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "বিচার বিভাগের অর্জন" 
  2. "ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮"  অজানা প্যারামিটার |।<ref= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  3. "জেলা জজের পদমর্যাদা সচিব ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদমর্যাদা সচিব মর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের সমান" 
  4. "পদমর্যাদার ক্রম রিটের সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ" 
  5. "বাংলাদেশের আদালত" 
  6. "বিচার বিভাগ জনগণের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে" 
  7. "Bangladesh Police"। Archived from the original on ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুন ২০২২ 
  8. "শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে" 
  9. "Legal system of Bangladesh"। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৬ 
  10. "২৩তম প্রধান বিচারপতি হলেন হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী" 
  11. "ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থা" 
  12. "ক্রিমিনাল রুলস এন্ড অর্ডারস, ২০০৯" [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  13. "বিচার বিভাগ জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে" 
  14. "দশ পদের পদমর্যাদা পরিবর্তন" 
  15. "বাংলাদেশের বিচার প্রশাসন" 
  16. "বিচার বিভাগের ইতিহাস" 
  17. "Separation of Judiciary" 
  18. "বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ" 
  19. "বিচার বিভাগের বড় বড় অর্জন বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যার শাসনামলে" 
  20. "বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা"। ২০১৫-০৯-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৭-০৭ 
  21. "বিচার বিভাগের উন্নয়নে শেখ হাসিনার অবদান" 
  22. "বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় শেখ হাসিনা সরকারের অবদান" 
  23. "ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের তিন বিভাগের সমন্বয় প্রয়োজন" 
  24. "সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে" 
  25. "বিচার বিভাগ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনা" 
  26. "বাংলাদেশের সংবিধানে বিচার বিভাগ" 
  27. "শেখ হাসিনা বিচার বিভাগকে আপন করে নিয়েছেন" 
  28. "বিচার বিভাগ" 
  29. "আইন ও বিচার বিভাগ" 
  30. "গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান" 
  31. "বিচার বিভাগীয় বাতায়ন" 
  32. "দন্ডবিধি, ১৮৬০" 
  33. "চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদমর্যাদা ১৭ তে উন্নীত" 
  34. "জেলা জজের পদক্রম ১৬ এবং চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদক্রম ১৭ তে উন্নীত" 
  35. "সাংবিধানিক পদ সর্বাগ্রে থাকবে" 
  36. "গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান" 

বহিঃসংযোগসম্পাদনা