বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান

রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের আইনবিভাগ, শাসনবিভাগ ও বিচারবিভাগের সকল শাখার আনুষ্ঠানিক প্রধান এবং বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক (কমান্ডার ইন চিফ)। রাষ্ট্রপতির দণ্ডিত ব্যক্তির দণ্ডাদেশ স্থগিত, হ্রাস বা দণ্ডিতকে ক্ষমা করার অধিকার রয়েছে। বর্তমানে রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে থাকেন। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হওয়ার পূর্বে রাষ্ট্রপতি সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হতেন। রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর। অতীতে দেখা গিয়েছে যে, শাসক দলের মনোনীত প্রার্থীই রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। অনেকেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপতি পুনরায় নির্বাচনে লড়তে পারেন।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সিলমোহর
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির ব্যবহৃত পতাকা
দায়িত্ব
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন

২৪ এপ্রিল ২০২৩ থেকে
সম্বোধনরীতিমহামান্য (বাংলাদেশে)
মান্যবর (কূটনৈতিক; বাংলাদেশের বাইরে)
বাসভবনবঙ্গভবন
নিয়োগকর্তাজাতীয় সংসদ
মেয়াদকালপাঁচ বছর, একবার নবায়নযোগ্য।
সর্বপ্রথমশেখ মুজিবুর রহমান
গঠন২৬ মার্চ ১৯৭১
ওয়েবসাইটbangabhaban.gov.bd

প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধনী ভাষণটি দেন রাষ্ট্রপতি। বছরের প্রথম সংসদীয় অধিবেশনের প্রথম উদ্বোধনী ভাষণটিও তিনিই দেন। তার এই ভাষণটি আসলে নতুন সরকারি নীতির রূপরেখা মাত্র। জাতীয় সংসদে পাস হওয়া প্রতিটি বিল রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে আইনে পরিণত হয়।

নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পাদনা

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ রাষ্ট্রপতিশাসিত ও সংসদীয় উভয় পদ্ধতিতে পরিচালিত হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানের দ্বিতীয় তফসিল অনুসারে রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের গোপন ভোটে নির্বাচিত হতেন। পরবর্তীকালে সংবিধানে চতুর্থ সংশোধনী অনুসারে প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান প্রবর্তিত হয়। সংবিধানের ১২তম সংশোধনীতে সংসদীয় পদ্ধতি চালু হলে পরোক্ষ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান করা হয়। বর্তমানে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮ অনুসারে সংসদ-সদস্যদের দ্বারা রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

যোগ্যতা সম্পাদনা

বাংলাদেশের সংবিধান রাষ্ট্রপতি হবার যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নির্ধারণ করে।[১] রাষ্ট্রপতি হতে হলে এই মানদণ্ড অবশ্যই পূরণ করতে হয়। কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি-

(ক) পঁয়ত্রিশ বৎসরের কম বয়স্ক হন; অথবা
(খ) সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হবার যোগ্য না হন; অথবা
(গ) কখনও সংবিধানের অধীন অভিশংসন দ্বারা রাষ্ট্রপতির পদ হইতে অপসারিত হয়ে থাকেন।

পদের মেয়াদ সম্পাদনা

সংবিধানের ৫০ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী:

  • রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ হতে পাঁচ বৎসরের মেয়াদে তার পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন: তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তার উত্তরাধিকারী-কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন।
  • একাদিক্রমে হোক বা না হোক-দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোন ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকবেন না।
  • স্পীকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি স্বীয় পদত্যাগ করতে পারবেন।
  • রাষ্ট্রপতি তার কার্যভারকালে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হবার যোগ্য হবেন না, এবং কোন সংসদ-সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে রাষ্ট্রপতিরূপে তার কার্যভার গ্রহণের দিনে সংসদে তার আসন শূন্য হবে।

নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পাদনা

যখনই রাষ্ট্রপতির আসন খালি হয়ে যায়, নতুন রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন।

শপথ বা প্রতিজ্ঞা সম্পাদনা

রাষ্ট্রপতিকে স্পিকারের (অথবা তার অনুপস্থিতিতে, ডেপুটি স্পিকারের) উপস্থিতিতে শপথ নিতে হয়। রাষ্ট্রপতি সংবিধান রক্ষা, সংরক্ষণ এবং রক্ষায় নিম্নরূপে শপথ নেন:

আমি, .............. ,
সশ্রদ্ধচিত্তে শপথ (বা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা) করিতেছি যে, আমি আইন-অনুযায়ী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি-পদের কর্তব্য বিশ্বস্ততার সহিত পালন করিব;
আমি বাংলাদেশের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস ও আনুগত্য পোষণ করিব;
আমি সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তাবিধান করিব;
এবং আমি ভীতি বা অনুগ্রহ, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হইয়া সকলের প্রতি আইন-অনুযায়ী যথাবিহীত আচরণ করিব।[২]

ক্ষমতা ও কর্তব্য সম্পাদনা

নিয়োগের ক্ষমতা সম্পাদনা

রাষ্ট্রপতি নিম্নলিখিত পদে নিযুক্ত করতে পারেন:[৩]

  • সংবিধানের ৫৬ (২) ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীদিগকে নিয়োগ দান করবেন। তবে শর্ত থাকে যে, তাদের সংখ্যার অন্যূন নয়-দশমাংশ সংসদ-সদস্যগণের মধ্য হতে নিযুক্ত হবেন এবং অনধিক এক-দশমাংশ সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হবার যোগ্য ব্যক্তিগণের মধ্য হতে মনোনীত হতে পারিবেন।
  • সংবিধানের ৯৫ ধারা অনুসারে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করবেন।
  • সংবিধানের ১১৮ ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করবেন।

ক্ষমা প্রদর্শন সম্পাদনা

সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের বিশেষাধিকার রয়েছে। সেই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোন আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে−কোন দণ্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মঞ্জুর করার এবং যে−কোন দণ্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকবে।[৪]

আইনি ক্ষমতা সম্পাদনা

সংবিধানের ৮০ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ কর্তৃক কোন বিল গৃহীত হলে সম্মতির জন্য তা রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করতে হবে। রাষ্ট্রপতির নিকট কোন বিল পেশ করার পর পনেরো দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি তাতে সম্মতিদান করবেন কিংবা অর্থবিল ব্যতীত অন্য কোন বিলের ক্ষেত্রে বিলটি বা তার কোন বিশেষ বিধান পুনর্বিবেচনার কিংবা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্দেশিত কোন সংশোধনী বিবেচনার অনুরোধ জ্ঞাপন করে একটি বার্তাসহ রাষ্ট্রপতি বিলটি সংসদে ফেরত দিতে পারবেন (রাষ্ট্রপতি তা করতে অসমর্থ হলে উক্ত মেয়াদের অবসানের পর রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সম্মতিদান করেছেন বলে গণ্য হবে)।

রাষ্ট্রপতি যদি বিলটি অনুরূপভাবে সংসদে ফেরত পাঠান, তাহলে সংসদ রাষ্টপতির বার্তাসহ তা পুনর্বিবেচনা করবে; এবং সংশোধনীসহ বা সংশোধনী ব্যতিরেকে সংসদ পুনরায় বিলটি গ্রহণ করলে সম্মতির জন্য তা রাষ্ট্রপতির নিকট উপস্থাপিত হবে এবং অনুরূপ উপস্থাপনের সাত দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সম্মতিদান করবেন (রাষ্ট্রপতি তা করতে অসমর্থ হলে উক্ত মেয়াদের অবসানের পর রাষ্ট্রপতি বিলটিতে সম্মতিদান করেছেন বলে গণ্য হবে)।

সংসদ কর্তৃক গৃহীত বিলটিতে রাষ্ট্রপতি সম্মতিদান করলে বা তিনি সম্মতিদান করেছেন বলে গণ্য হলে তা আইনে পরিণত হবে এবং সংসদের আইন বলে অভিহিত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর সম্পাদনা

চ্যান্সেলর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে একটি পদমর্যাদা, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৯২-এর ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি এই পদে অধিষ্ঠিত।[৫]

রাষ্ট্রপতির বাসভবন ও অফিস সম্পাদনা

ঢাকায় অবস্থিত বঙ্গভবন হচ্ছে রাষ্ট্রপতির প্রধান বাসভবন। এছাড়া নাটোর জেলায় উত্তরা গণভবন নামে রাষ্ট্রপতির আরেকটি বাসভবন রয়েছে।

রাষ্ট্রপতিদের তালিকা সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা