চাঁদপুর জেলা

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা

চাঁদপুর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। উপজেলার সংখ্যানুসারে চাঁদপুর বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণিভুক্ত জেলা।[১] পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে এ জেলা অবস্থিত। ইলিশ মাছের অন্যতম প্রজনন অঞ্চল হিসেবে চাঁদপুরকে "ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর" নামে ডাকা হয়। এছাড়া চাঁদপুর নদী বন্দর হিসাবে সুখ্যাত চাঁদপুরকে এককালে "গেট ওয়ে অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া" বলা হতো।

চাঁদপুর জেলা
জেলা
উপরের-বাম থেকে তালার দিকে: চাঁদপুর সেতুর বায়বীয় দৃশ্য, রূপসা জমিদার বাড়ি, চাঁদপুর বন্দর, লোহাগর মঠ, মেঘনা নদী, হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ
বাংলাদেশে চাঁদপুর জেলার অবস্থান
বাংলাদেশে চাঁদপুর জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৩°১২′৫০″ উত্তর ৯০°৩৮′১০″ পূর্ব / ২৩.২১৩৮৯° উত্তর ৯০.৬৩৬১১° পূর্ব / 23.21389; 90.63611 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগচট্টগ্রাম বিভাগ
প্রতিষ্ঠাকাল১৫ ফেব্রুয়ারি,১৯৮৪
সরকার
 • চেয়ারম্যানআলহাজ্ব ওসমান গনি পাটওয়ারী (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ)
 • জেলা প্রশাসকমোঃকামরুল হাসান
আয়তন
 • মোট১,৭০৪.০৬ বর্গকিমি (৬৫৭.৯৪ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০২২)
 • মোট২৬,৩৫,৭৪৮
 • জনঘনত্ব১,৬০২/বর্গকিমি (৪,১৫০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৭৮.০৫%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
পোস্ট কোড৩৬০০ উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
২০ ১৩
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

আয়তন ও অবস্থান সম্পাদনা

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২৩°০০´ থেকে ২৩°৩০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩২´ থেকে ৯১°০২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে চাঁদপুর জেলার অবস্থান।[২] রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ৯৬ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ২০৮ কিলোমিটার। চাঁদপুর জেলার মোট আয়তন ১,৭০৪.০৬ বর্গ কিলোমিটার। এ জেলার উত্তরে কুমিল্লা জেলা, মেঘনা নদীমুন্সীগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে লক্ষ্মীপুর জেলানোয়াখালী জেলা, পূর্বে কুমিল্লা জেলা, পশ্চিমে মেঘনা নদী, মুন্সীগঞ্জ জেলা, শরীয়তপুর জেলাবরিশাল জেলাপদ্মামেঘনা নদী দুটি চাঁদপুর শহরের কাছে এসে মিলেছে।

জনসংখ্যার উপাত্ত সম্পাদনা

২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী চাঁদপুর জেলার মোট জনসংখ্যা ২৬,৩৫,৭৪৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২,২৮,৭৭৪ জন এবং মহিলা ১৪,০৫,৬৮২ জন। মোট পরিবার ৬,৩৫,৪৫৮টি।[৩]

চাঁদপুর জেলায় ধর্মবিশ্বাস-২০২২

  ইসলাম (৯৪.৩৭%)
  অন্যান্য ধর্ম (০.০৮%)

ধর্মবিশ্বাস অনুসারে এ জেলার মোট জনসংখ্যার ৯৪.৩৭% মুসলিম, ৫.৫৫% হিন্দু, ০.০১% বৌদ্ধ এবং ০.০২% খ্রিষ্টান ও ০.০৫% অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। এছাড়া কিছু সংখ্যক ত্রিপুরা উপজাতি জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে এ জেলায়।[৪]

ইতিহাস সম্পাদনা

মধ্যযুগ সম্পাদনা

১৫৬০ খ্রিস্টাব্দের জীন্ ডি ব্যারোসের মানচিত্রে নদী তীরবর্তী ‘ট্রপো’র অবস্থান দেখানো হয়েছে। উক্ত ‘ট্রপো’ তৎকালীন ত্রিপুরা জেলা বা কুমিল্লা অঞ্চল। সুতরাং বর্তমান চাঁদপুরের ভৌগলিক অবস্থান নিকট ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে তৎকালীন ত্রিপুরা জেলার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে পাওয়া যায়। ১৬৫২ সালে পর্জুগীজ নাবিক স্যানসন দ্যা আবেভিল অঙ্কিত মানচিত্রে বান্দের নাম চিহ্নিত স্থানে একটি বড় নদী বন্দর ছিলো এবং সেটি চাঁদপুর বন্দর ছিলো। ১৭৭৯ খ্রি. ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজ জরিপকারী মেজর জেমস্ রেনেল তৎকালীন বাংলার যে মানচিত্র এঁকেছিলেন তাতে কেবলমাত্র ত্রিপুরা জেলাই দেখানো হয়নি-- চাঁদপুর ও কুমিল্লার সঠিক অবস্থানও চিহ্নিত করা হয়েছে।[৫]

প্রতিষ্ঠাকাল সম্পাদনা

১৮৭৮ সালে ত্রিপুরা জেলা (পরবর্তীতে যা কুমিল্লা নামে পরিচিত) যে তিনটি মহকুমা নিয়ে গঠিত হয়, তার মধ্যে চাঁদপুর অন্যতম। ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর জেলায় উন্নীত হয়।[৬]

নামকরণ সম্পাদনা

বার ভূঁইয়াদের আমলে চাঁদপুর অঞ্চল বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদরায়ের দখলে ছিল। এ অঞ্চলে তিনি একটি শাসনকেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। ঐতিহাসিক জে এম সেনগুপ্তের মতে, চাঁদরায়ের নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছে চাঁদপুর।

অন্যমতে, চাঁদপুর শহরের (কোড়ালিয়া) পুরিন্দপুর মহল্লার চাঁদ ফকিরের নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম চাঁদপুর। কারো মতে, শাহ আহমেদ চাঁদ নামে একজন প্রশাসক দিল্লী থেকে পঞ্চদশ শতকে এখানে এসে একটি নদী বন্দর স্থাপন করেছিলেন। তার নামানুসারে নাম হয়েছে চাঁদপুর।[৭]

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি সম্পাদনা

মুক্তিযুদ্ধের সময় চাঁদপুর ২নং সেক্টরের অধীনে ছিল। ১৯৭১ সালের ১২ মে পাকবাহিনী হাজীগঞ্জ উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের ৫০ জন লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। এ গণহত্যার পর মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালালে পাকবাহিনীর ১৭ জন সৈন্য নিহত এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। শাহরাস্তি উপজেলার নাওড়া, সূচীপাড়া এবং উনকিলার পূর্বাংশে বেলপুরের কাছে মিত্র বাহিনীর সাথে পাকবাহিনীর সংঘর্ষে মিত্র বাহিনীর ১৩ জন সৈন্য এবং পাকবাহিনীর ৩৫ জন সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় মতলব উত্তর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়।[৮]

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সম্পাদনা

  • মুক্তিযুদ্ধের স্মারক: অঙ্গীকার (ভাস্কর্য), ফরিদগঞ্জ উপজেলার শহীদদের নাম ও ঠিকানা উৎকীর্ণ স্মৃতিফলক আমরা তোমাদের ভুলব না, মতলবের দীপ্ত বাংলাদেশ, চান্দ্রাকান্দি স্মৃতিসৌধ (সাদুল্লাহপুর, মতলব)।
  • বধ্যভূমি: রঘুনাথপুর বাজার (হাজীগঞ্জ), হামিদিয়া জুট মিলস প্রাঙ্গণ, রায়শ্রী উত্তর ও দক্ষিণ।
  • গণকবর: নাসিরকোট (হাজীগঞ্জ)।[৯]

ব্র্যান্ডিং জেলা সম্পাদনা

দেশ-বিদেশে চাঁদপুরকে বিশেষভাবে উপস্থাপনের জন্য ২০১৫ সালের আগস্ট মাস হতে জেলা ব্র্যান্ডিং কার্যক্রম শুরু করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর মণ্ডল। ইলিশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এর ব্র্যান্ডিং নাম দেন ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রথম ব্র্যান্ডিং জেলা হিসেবে চাঁদপুরকে স্বীকৃতি দেয়। এ নামানুসারে একটি লোগো রয়েছে, যা অঙ্কন করেছেন এ জেলার সন্তান বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান। একইসাথে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর এর রূপকার হিসেবে স্বীকৃতি পান তৎকালিন (২০১৫-২০১৮) জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর মণ্ডল।[১০]

ভৌগোলিক পরিচয় সম্পাদনা

চাঁদপুর জেলার ভূ-তাত্ত্বিক গঠন হয়েছে প্লাইস্টোসিন ও হলোসীন যুগে। চাঁদপুর জেলার ভৌগোলিক ইতিহাসের সন্ধান পাওয়া যায় পার্গিটার রচিত পূর্ব-ভারতীয় দেশসমূহের প্রাচীনকালের মানচিত্রে। ওই মানচিত্রে আজকের বাংলাদেশের এই অঞ্চলের দক্ষিণে সাগরনূপের, উত্তরে প্রাগজ্যোতিষ ও পূর্ব ভাগের পাহাড়ের পাদদেশের অঞ্চল ‘কিরাতাস’ নামে অভিহিত ছিল। তৎকালীন লোহিত নদীর (আজকের ব্রক্ষ্মপুত্র নদী) পলি দ্বারা ‘কিরাতাস’ অঞ্চল গঠিত। ‘কিরাতাস’ অঞ্চলের অধিকাংশ স্থান নিয়েই তৎকালীন কুমিল্লা জেলা গঠিত হয়েছিল। অর্থাৎ চাঁদপুর জেলাও উক্ত ‘কিরাতাস’ অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। টমাস ওয়াটারের মানচিত্রে পূর্ব-ভারতীয় অঞ্চলের এ স্থানে তিতাস ও সম্ভবতঃ গোমতী নদীর গতিপথের দক্ষিণে ‘শ্রীক্ষেত্র’ নামক স্থানের অবস্থান দেখানো হয়েছে। বর্তমান চাঁদপুর জেলা এবং নোয়াখালী জেলার পশ্চিমাংশ নিয়ে তৎকালীন ‘শ্রীক্ষেত্র’ গঠিত হয়েছিল বলে অনেকে মনে করেন।[১১]

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ সম্পাদনা

চাঁদপুর জেলা ৮টি উপজেলা, ৮টি থানা, ৮টি পৌরসভা, ৮৯টি ইউনিয়ন, ১০৪১টি মৌজা, ১৩৬৫টি গ্রাম ও ৫টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।

উপজেলাসমূহ সম্পাদনা

চাঁদপুর জেলায় মোট ৮টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হল:[১২]

ক্রম নং উপজেলা আয়তন[২]
(বর্গ কিলোমিটারে)
প্রশাসনিক থানা আওতাধীন এলাকাসমূহ
০১ কচুয়া ২৩৫.৮১ কচুয়া পৌরসভা (১টি): কচুয়া
ইউনিয়ন (১২টি): সাচার, পাথৈর, বিতারা, পালাখাল, সহদেবপুর পশ্চিম, কচুয়া উত্তর, কচুয়া দক্ষিণ, কাদলা, কড়ইয়া, গোহট উত্তর, গোহট দক্ষিণ এবং আশরাফপুর
০২ চাঁদপুর সদর ৩০৮.৭৮ চাঁদপুর সদর পৌরসভা (১টি): চাঁদপুর
ইউনিয়ন (১৪টি): বিষ্ণুপুর, আশিকাটি, কল্যাণপুর, শাহ মাহমুদপুর, রামপুর, মৈশাদী, তরপুরচণ্ডী, বাগাদী, বালিয়া, লক্ষ্মীপুর, ইব্রাহিমপুর, চান্দ্রা, হানারচর এবং রাজরাজেশ্বর
০৩ ফরিদগঞ্জ ২৩১.৫৬ ফরিদগঞ্জ পৌরসভা (১টি): ফরিদগঞ্জ
ইউনিয়ন (১৫টি): বালিথুবা পশ্চিম, বালিথুবা পূর্ব, সুবিদপুর পূর্ব, সুবিদপুর পশ্চিম, গুপ্টি পূর্ব, গুপ্টি পশ্চিম, পাইকপাড়া উত্তর, পাইকপাড়া দক্ষিণ, গোবিন্দপুর উত্তর, গোবিন্দপুর দক্ষিণ, চর দুঃখিয়া পূর্ব, চর দুঃখিয়া পশ্চিম, ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ, রূপসা উত্তর এবং রূপসা দক্ষিণ
০৪ মতলব উত্তর ২৭৭.৫৩ মতলব উত্তর পৌরসভা (১টি): ছেংগারচর
ইউনিয়ন (১৪টি): ষাটনল, বাগানবাড়ী, সাদুল্লাপুর, দুর্গাপুর, কলাকান্দা, মোহনপুর, এখলাছপুর, জহিরাবাদ, ফতেপুর পূর্ব, ফতেপুর পশ্চিম, ফরাজিকান্দি, ইসলামাবাদ, সুলতানাবাদ এবং গজরা
০৫ মতলব দক্ষিণ ১৩১.৬৯ মতলব দক্ষিণ পৌরসভা (২টি): মতলব এবং নারায়ণপুর
ইউনিয়ন (৫টি): নায়েরগাঁও উত্তর, নায়েরগাঁও দক্ষিণ, খাদেরগাঁও, উপাদী উত্তর এবং উপাদী দক্ষিণ
০৬ শাহরাস্তি ১৫৪.৮৩ শাহরাস্তি পৌরসভা (১টি): শাহরাস্তি
ইউনিয়ন (১০টি): টামটা উত্তর, টামটা দক্ষিণ, মেহের উত্তর, মেহের দক্ষিণ, রায়শ্রী উত্তর, রায়শ্রী দক্ষিণ, সূচীপাড়া উত্তর, সূচীপাড়া দক্ষিণ, চিতোষী পূর্ব এবং চিতোষী পশ্চিম
০৭ হাইমচর ১৭৪.৪৯ হাইমচর ইউনিয়ন (৬টি): গাজীপুর, আলগী দুর্গাপুর উত্তর, আলগী দুর্গাপুর দক্ষিণ, নীলকমল, হাইমচর এবং চর ভৈরবী
০৮ হাজীগঞ্জ ১৮৯.৯০ হাজীগঞ্জ পৌরসভা (১টি): হাজীগঞ্জ
ইউনিয়ন (১১টি): রাজারগাঁও উত্তর, বাকিলা, কালচোঁ উত্তর, কালচোঁ দক্ষিণ, হাজীগঞ্জ সদর, বড়কুল পূর্ব, বড়কুল পশ্চিম, হাটিলা পূর্ব, গন্ধর্ব্যপুর উত্তর, গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ, হাটিলা পশ্চিম এবং দ্বাদশ গ্রাম

সংসদীয় আসন সম্পাদনা

সংসদীয় আসন জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[১৩] সংসদ সদস্য[১৪][১৫][১৬][১৭][১৮] রাজনৈতিক দল
২৬০ চাঁদপুর-১ কচুয়া উপজেলা সেলিম মাহমুদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
২৬১ চাঁদপুর-২ মতলব দক্ষিণ উপজেলা এবং মতলব উত্তর উপজেলা নূরুল আমিন রুহুল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
২৬২ চাঁদপুর-৩ চাঁদপুর সদর উপজেলা এবং হাইমচর উপজেলা ডা. দীপু মনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
২৬৩ চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ উপজেলা মুহম্মদ শফিকুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
২৬৪ চাঁদপুর-৫ হাজীগঞ্জ উপজেলা এবং শাহরাস্তি উপজেলা রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পাদনা

২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী চাঁদপুর জেলার সাক্ষরতার হার ৭৮.০৫%। [৩] এ জেলায় রয়েছে:

  • বিশ্ববিদ্যালয় : ১টি
  • মেডিকেল কলেজ : ১টি
  • সরকারি কলেজ : ৯টি
  • বেসরকারি কলেজ : ৩৪টি(২৭টি এম.পি. ভুক্ত)
  • স্কুল এন্ড কলেজ : ২৬টি
  • পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট : ৪টি
  • মেরিন ইনস্টিটিউট : ১টি
  • মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট : ১টি
  • টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ : ৪টি
  • মাধ্যমিক বিদ্যালয় : ২৪৯টি
  • প্রাথমিক বিদ্যালয় : ১১২০টি
  • মাদ্রাসা : ১২৫৭টি
  • শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট : ১টি
  • নার্সিং ইনস্টিটিউট : ৪টি
  • আইন(ল') কলেজ : ১টি
  • হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ : ১টি
  • ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ : ১টি।[১৯]

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পাদনা

অর্থনীতি সম্পাদনা

চাঁদপুর জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। নদী তীরবর্তী এলাকা বলে প্রায় ৩০% মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৎস্য শিল্পের সাথে জড়িত। এছাড়াও উল্লেখযোগ্যভাবে অনেক ব্যবসায়ী বিদ্যমান। জেলা সদরে অনেক মাছের আড়ত রয়েছে, যা জেলার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। চাঁদপুর সদর উপজেলার বাবুরহাটে বড় বড় বহু শিল্পকারখানা রয়েছে। এই জায়গাটিকে সরকার বিসিক শিল্প নগরী ঘোষণা করে।[২০] এই এলাকাটি শুধু চাঁদপুরের নয় পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প নগরী। মেঘনার ভাঙ্গনে প্রতি বছর চাঁদপুরের আয়তন কমে যায়। প্রতি বর্ষায় পানিতে ডুবে যায়, ফলে বর্ষাকালে চাঁদপুর মাছের মাতৃভূমি হয়ে যায়। জেলার প্রধান শস্য ধান, পাট, গম, আখ। রপ্তানী পণ্যের মধ্যে রয়েছে ভুট্টা, নারিকেল, চিংড়ি, আলু, ইলিশ মাছ, সবুজ শাক-সবজি, বিসিক নগরীর তৈরি পোশাক শিল্প।

যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পাদনা

চাঁদপুর জেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক হল ঢাকা-চাঁদপুর মহাসড়ক এবং চট্টগ্রাম-চাঁদপুর মহাসড়ক। শুধুমাত্র চাঁদপুর জেলার জন্য আলাদা একটি রেলপথ রয়েছে, যার মাধ্যমে প্রতিদিন চাঁদপুর-চট্টগ্রাম এবং চাঁদপুর-কুমিল্লার আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। এছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন জেলা শহর থেকে নৌপথে যোগাযোগের জন্যে রয়েছে চাঁদপুর নদী বন্দর[২১]

নদী সম্পাদনা

চাঁদপুর জেলা নদীর জেলা হিসেবে পরিচিত। এখানে জালের মতো বিস্তৃত আছে অনেক নদী। এ জেলার প্রধান ৪টি নদী হল মেঘনা, পদ্মা, ডাকাতিয়াধনাগোদা নদী

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সম্পাদনা

চাঁদপুর জেলায় স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবার জন্য রয়েছে:

  • জেনারেল হাসপাতাল : ১টি (২৫০ শয্যাবিশিষ্ট)
  • উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স : ৮টি
  • আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র -আইসিডিডিআর,বি : ১টি (icddr,b - বাংলাদেশের একমাত্র উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র)
  • মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র : ৭টি
  • চক্ষু হাসপাতাল : ৪টি
  • বক্ষব্যাধী হাসপাতাল : ১টি
  • ডায়বেটিক হাসপাতাল : ১টি
  • রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল : ১টি
  • রেলওয়ে হাসপাতাল : ১টি
  • বেসরকারি হাসপাতাল : ৭৩টি
  • বেসরকারি ডেন্টাল ক্লিনিক : ৭টি
  • ডায়গনস্টিক সেন্টার : ১০৭টি।

পত্র-পত্রিকা সম্পাদনা

  • দৈনিক: ১৬টি; চাঁদপুর কণ্ঠ, চাঁদপুর দর্পণ, চাঁদপুর জমিন, চাঁদপুর প্রবাহ, চাঁদপুর বার্তা, চাঁদপুর প্রতিদিন, চাঁদপুর সংবাদ, চাঁদপুর দিগন্ত, আলোকিত চাঁদপুর, চাঁদপুর খবর, মেঘনা বার্তা, ইলশেপাড়, মতলবের আলো, সুদীপ্ত চাঁদপুর, শাহরাস্তি বার্তা, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন জগত।
  • সাপ্তাহিক: ১৩টি; দিবাচিত্র, রূপালী চিত্র, রূপসী চাঁদপুর, হাজীগঞ্জ, দিবাকণ্ঠ, মানব সমাজ, আমাদের অঙ্গীকার, চাঁদপুর কাগজ, মতলব কণ্ঠ, নতুনের ডাক, চাঁদপুর সকাল, লাল সবুজের মেলা, শাহরাস্তি।
  • পাক্ষিক: ৩ টি; কচুয়া কণ্ঠ, কচুয়া বার্তা, চাঁদনগর।
  • মাসিক: ৩টি; ফরিদগঞ্জ বার্তা, পল্লী কাহিনী, হেরার পয়গাম।
  • অনলাইন পত্রিকা: ৭টি; চাঁদপুর টাইমস, চাঁদপুর নিউজ, ফোকাস মোহনা.কম, চাঁদপুর ওয়েব, চাঁদপুর রিপোর্ট, হাইমচর সংবাদ, জয় বাংলা সময় সংবাদ।

চাঁদপুর নিয়ে গ্রন্থ সমূহ সম্পাদনা

বইয়ের নাম - লেখক বা সম্পাদকের নাম
১. বিস্মৃতির চাঁদপুর - কাদের পলাশ , মুহাম্মদ ফরিদ হাসান ৮. মতলবের জানা অজানা কথা - বীর মুক্তিযোদ্ধা বশির উদ্দিন আহম্মেদ
২. চাঁদপুরে বঙ্গবন্ধু - পীযূষ কান্তি বড়ুয়া ৯. মতলব টু জাপান - শওকত হোসেন বাদল
৩. রবীন্দ্রনাথ ও চাঁদপুরের মানুষেরা - মুহাম্মদ ফরিদ হাসান ১০. ছোটকাকু সিরিজ : চাঁদপুরের চাঁদমারি - ফরিদুর রেজা সাগর
৪. চাঁদপুর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস - মোঃ শাহজাহান কবির (বীরপ্রতীক) ১১. আমাদের ফরিদগঞ্জ : ইতিহাস ও ঐতিহ্য - অমৃত ফরহাদ
৫. চাঁদপুরের চাঁদমুখ - আশিক বিন রহিম ১২. মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা - ড. মো: শাহ এমরান
৬. মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুর - ডা. মো: দেলোয়ার হোসেন খান ১৩. বাংলা একাডেমি বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালাঃ

চাঁদপুর - শামসুজ্জামান খান, মোঃ আলতাফ খান, আমিনুর রহমান সুলতান

৭. মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস : চাঁদপুর জেলা - রঞ্জন মল্লিক , আমিনুর রহমান সুলতা
১৪. এক নজরে চাঁদপুর জেলার পরিচিতি - আহমাদ হাসসীন।

দর্শনীয় স্থান সম্পাদনা

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "জেলাগুলোর শ্রেণি হালনাগাদ করেছে সরকার"। বাংলানিউজ২৪। ১৭ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০২০ 
  2. "চাঁদপুর জেলা - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org 
  3. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; ইউনিয়ন পরিসংখ্যান নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  4. "এক নজরে চাঁদপুর জেলা"চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের অফিসিয়াল সাইট। ৪ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০১৯ 
  5. "চাঁদপুর জেলা"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-২০ 
  6. "চাঁদপুর জেলা - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২১ 
  7. "চাঁদপুর জেলা"http (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-০৪-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২১ 
  8. "চাঁদপুর জেলা - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-১৬ 
  9. http://bn.banglapedia.org/index.php?title=%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%A6%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B0_%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE
  10. "জেলা ব্র্যান্ডিং - চাঁদপুর জেলা"তথ্য বাতায়ন। ৪ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  11. "ভৌগলিক পরিচয়"। Archived from the original on ২০২৩-০৯-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-২০ 
  12. "চাঁদপুর জেলা"http (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৯-১০-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২১ 
  13. "Election Commission Bangladesh - Home page"www.ecs.org.bd 
  14. "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (পিডিএফ)ecs.gov.bdবাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯ 
  15. "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  16. "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  17. "জয় পেলেন যারা"দৈনিক আমাদের সময়। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  18. "আওয়ামী লীগের হ্যাটট্রিক জয়"সমকাল। ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  19. "এক নজরে চাঁদপুর জেলা"http (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০২-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২১ 
  20. "বিসিক জেলা কার্যালয়, চাঁদপুর"। Archived from the original on ২০২২-০৬-১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০১-২০ 
  21. "যোগাযোগের ব্যবস্থা চাঁদপুর জেলা"চাঁদপুর জেলা তথ্য বাতায়ন। ৪ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  22. রহমান, মিরাজ (১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। "মাজার বরকতের স্থান বাণিজ্যকেন্দ্র নয় : ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ"প্রিয়.কম। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-১৫ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা