আমেনা বেগম

বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ

আমেনা বেগম (১৯২৫ – ৭ই এপ্রিল ১৯৮৯), পূর্ব পাকিস্তানের একজন সাবেক সংসদ সদস্য, যিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ। স্বায়াত্বশাসনের দাবিতে আওয়ামী লীগ কর্তৃক ছয় দফা দাবির খসড়া তৈরির সময় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৬ সালের ৭ই জুন মিজানুর রহমান চৌধুরীর সাথে মিলে তিনি সাধারণ ধর্মঘট সংগঠিত করেন। এই ধর্মঘটটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জুুড়ে ব্যাপক সাড়া ফেলে ও স্বাধীনতা যে ঘনিয়ে আসছে এমন একটি বার্তা দিয়েছিল। তিনি পরবর্তিতে জাতীয় লীগের সভাপতি পদ গ্রহণ করেন। ১৯৮৯ সালের ৭ই এপ্রিল ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।[১]

আমেনা বেগম
জন্ম১৯২৫
মৃত্যু৭ এপ্রিল ১৯৮৯(1989-04-07) (বয়স ৬৩–৬৪)
ঢাকা, বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাংলাদেশী
পেশারাজনীতিবিদ

শিক্ষা এবং প্রাথমিক কর্মজীবন সম্পাদনা

আমেনা বেগম ১৯৪০ সালে ফয়জুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করেন ও ১৯৪২ সালে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। ১৯৫০ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদে ইউনাইটেড ফ্রন্টের তৎকালীন কুমিল্লা-সিলেট আসন থেকে নারীদের সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের নারী বিষয়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন ও একই পদে তিনি ১৯৭০ পর্যন্ত ছিলেন।

শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের যখন গ্রেফতার করা হয় সেসময় ১৯৬৬ সালের ২৭শে জুলাই আমেনা বেগমকে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দলের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমেনা বেগম স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার চাপ সৃষ্টি করেন ও আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তোলেন। তিনি ছয় দফা কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন ও দলের তৃনমূল আন্দোলনকারীদের সাথেও যোগাযোগ রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৮ সালের এগারো দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯ সালের আইয়ুব বিরোধী সমাবেশেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[২][৩]

তিনি তার দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগে তার গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেন ও ১৯৭০ এর সমাবেশে সাধারণ সম্পাদকের পদ দাবি করেছিলেন কিন্তু তাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়নি। পরবর্তিতে তিনি আওয়ামলীগ থেকে পদত্যাগ করেন ও আতাউর রহমান খান কর্তৃক নির্মিত নতুন দল জাতীয় লীগে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালের ২০শে আগস্ট তাকে জাতীয় লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত করা হয়। আমেনা বেগম ১৯৭০ সালের নির্বাাচনে ঢাকা নয় আসন থেকে জাতীয় লীগের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন।

স্বাধীনতা পরবর্তি সম্পাদনা

১৯৭৬ সালে স্বাধীনতার পর আমেনা বেগম জাতীয় লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেন ও রাজনীতিতে পুনরায় ফিরে আসনে জাতীয় লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে। সাত দলের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তিনি এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন, কিন্তু ১৯৮৪ সালে তার দলের সভাপতি আতাউর রহমান খান এরশাদের মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। পরবর্তিতে তিনি জাতীয় লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেন ও দলকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান (২০১২)। "বেগম, আমেনা"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  2. "Six-Point Demands: Roadmap For Bangladesh's Emancipation" (ইংরেজি ভাষায়)। Bangladesh Awami League। ১০ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ২৫, ২০১৬ 
  3. Syed Badrul Ahsan (জুন ৭, ২০১২)। "Recalling Six Points"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ মে ২৫, ২০১৬