ডা. সুলেমান খান বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত একজন বাংলাদেশী চিকিৎসক এবং বাংলাদেশে শহীদ হিসেবে বিবেচিত হন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ডাকঘর তার ছবিসহ স্মরণীয় পোস্ট জারি করা হয়। [১][২]

শহীদ চিকিৎসক ও বুদ্ধীজীবী

ডা. সুলেমান খান
জন্ম১৯৪০
অন্তর্ধানসেকদী গ্রাম পারিবারিক কবরস্থান
মৃত্যু২৪ এপ্রিল ১৯৭১(1971-04-24) (বয়স ৩০–৩১)
মৃত্যুর কারণস্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
মাতৃশিক্ষায়তনঢাকা মেডিকেল কলেজ
পেশাচিকিৎসক
কর্মজীবন১৯৬৯-১৯৭১
পরিচিতির কারণস্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত শহীদ চিকিৎসক
আদি নিবাসচাঁদপুর জেলা
আন্দোলনপূর্ব পাকিস্তানে গণ আন্দোলন
পিতা-মাতা
  • মো. ইউসুফ খান (পিতা)
  • নূরেননেছা খান (মাতা)
সম্মাননা১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ডাকঘর তার ছবিসহ স্মরণীয় পোস্ট জারি

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

সুলেমান খান ১৯৪০ সালে পূর্ববাংলা, ব্রিটিশ ভারত, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করে। বাবার নাম মো. ইউসুফ খান। মা নূরেননেছা খান। তিনি ১৯৫৫ সালে চাঁদপুর হাসান সরকারি আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৫৮ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের এইচএসসি শেষ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন এবং কলেজে ইন্টার্নশীপের মেয়াদ শেষ করেন। শামসুন্নাহারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। [৩] তার ভাই বাংলাদেশের প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী হাশেম খান

পেশা সম্পাদনা

সুলেমান খান উনসত্তর পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নি ডাক্তার হিসেবে কাজ করার পর তিনি টঙ্গী জুট মিলের আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হন। টঙ্গীতে কাজ করার পাশাপাশি বিকেলে গোপীবাগে রাশেদ মেডিকেল নামে একটি ফার্মেসিতেও বসতেন। তিনি কমিউনিস্ট পার্টি ও সংস্কৃতি গ্রুপ উদীচির সদস্য ছিলেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ঢাকায় অবস্থিত সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তারঙ্গা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৬৯ পূর্ব পাকিস্তানের গণ বিদ্রোহে অংশ নেন। তার সম্পাদিত এবং প্রকাশিত বাঙালি সাপ্তাহিক পৃথিবী প্রকাশ হতো। [৩]

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, সুলেমান তার পরিবারের সাথে ঢাকার বাইরে চলে যান। তিনি চাঁদপুর জেলায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক বহিস্কারকৃত বুলেট দ্বারা আহতদের প্রাথমিক সহায়তা প্রদান করেছিলেন। তিনি মুসলিম লীগের সাথে দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হন, যা মুক্তি বাহিনীর সদস্যদের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক পাঠানো সরবরাহ লুট করেছিল। মধ্যস্থতার মাধ্যমে সরবরাহ সরবরাহ করার চেষ্টা করে খান। [৩]

মৃত্যু সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল সুলেমান খানের বাড়িতে পাকিস্তান বাহিনী হামলা করে তাকে, তার ছোট ভাই এবং তার মাকে আহত করে। চিকিৎসার জন্য চাঁদপুরে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান। তাকে ফরিদগঞ্জ উপজেলার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ডাকঘর তার ছবিসহ স্মরণীয় পোস্ট জারি করে। [৩]

ঘটনা সম্পাদনা

সুলেমানকে হত্যার ঘটনা সম্পর্কে ছোট ভাই শিল্পী হাশেম খান লিখেছেন,

‘...দরজা ভেঙ্গে ওরা ঘরে ঢুকল। [...] একজনের হাতে রাইফেল বাগিয়ে ধরা। তার মুখে মুখোশ। সে ধমক দিয়ে মনসুরকে বলল, টাকা দে। টর্চ হাতে অন্য ডাকাত টর্চটা ঘুরিয়ে বড় ভাইয়ের দিকে স্থির করে রাখল। তারপর রাইফেলের গোড়া ধরে রাইফেলটাও তাঁর দিকে ঘুরিয়ে দিতে দিতে বলল এই ‘দুগা না অন্য দুগা’। অর্থাৎ আমার কথা ও ডাক্তারের কথা বলা হচ্ছে। তারপরই ফিসফিসিয়ে রাইফেলধারীকে বলল, এ ডাক্তার, এটাই ডাক্তার। বড় ভাই উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, টাকা দিচ্ছি, কিন্তু মেয়েদের...। তার কথা শেষ হলো না। রাইফেল গর্জে উঠল। ওরা দাদাকে গুলি করেছে। আমাকেও। প্রচণ্ড আঘাতে হুমড়ি খেয়ে আমি পড়ে গেলাম বিছানায়।’ (স্মৃতি: ১৯৭১, প্রথম খণ্ড, প্রথম প্রকাশ ১৯৮৮, সম্পাদনা রশীদ হায়দার)[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Martyred Intellectuals Day Special"archive.thedailystar.net। The Daily Star। ৩ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৭ 
  2. গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান, শিল্পী হাশেম খান। স্কেচ: (১৯৯৬)। শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারক ডাকটিকিট (পঞ্চম পর্যায়) প্রকাশ উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা (১৯৯৬) থেকে। শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারক ডাকটিকিট: বাংলাদেশ ডাক বিভাগ 
  3. Khan, Muazzam Hussain। "খান, সুলেমান"বাংলাপিডিয়া (ইংরেজি ভাষায়)। Banglapedia। সংগ্রহের তারিখ ২ আগস্ট ২০১৭ 
  4. হায়দার, সম্পাদনা রশীদ (১৯৮৮)। স্মৃতি: ১৯৭১, প্রথম খণ্ড,। প্রথম প্রকাশ।