আশেক আলী খান (১ জুলাই ১৮৯১ - ২ আগস্ট ১৯৭৪) ছিলেন একজন বাঙালি মুসলিম শিক্ষাবিদ। তিনি ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, ফরিদপুর জিলা স্কুল, বরিশাল জিলা স্কুলে ও সর্বশেষ ঝালকাঠি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি চাঁদপুর জেলার প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট ও সেকালের ইংরেজি জানা বাঙালী সাহেব নামেও পরিচিত ছিলেন। [২]

আশেক আলী খান

শিক্ষাবিদ
শিক্ষাবিদ আশেক আলী খান (১৯৭১)
জন্ম(১৮৯১-০৭-০১)১ জুলাই ১৮৯১
গুলবাহার, কচুয়া, চাঁদপুর
মৃত্যু২ আগস্ট ১৯৭৪(1974-08-02) (বয়স ৮৩)
মৃতদেহ আবিস্কারগুলবাহার খান বাড়ির পারিবারিক কবরস্থান
জাতীয়তাবাংলাদেশ
নাগরিকত্বপূর্ব পাকিস্তান,  বাংলাদেশ
মাতৃশিক্ষায়তনকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা কলেজ
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ
পেশাশিক্ষকতা
কর্মজীবন১৯১২-১৯৭৪
পরিচিতির কারণচাঁদপুর জেলার প্রথম মুসলিম গ্র্যাজুয়েট
আদি নিবাসচাঁদপুর
সন্তানমহিউদ্দিন খান আলমগীর (পুত্র) বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর (পুত্র) মেজবাহ উদ্দিন খান (পুত্র)
পিতা-মাতা
  • আইনউদ্দিন খান (পিতা)
  • আলেকজান বিবি (মাতা)
আত্মীয়মুনতাসীর মামুন (নাতি)
ড. জালাল আলমগীর (নাতী) [১]
পরিবারখান পরিবার

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

আশেক আলী খান ১৮৯১ সালে চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার গুলবাহার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তখন গুলবাহার গ্রামের নাম ছিলো গোয়ালভাওর। তার পিতা আইনউদ্দিন খান ও মাতা আলেকজান বিবি ওরফে টুনি বিবি। আশেকের চার মেয়ে ও চার ছেলে। তার বড় ছেলে মেজবাহ উদ্দিন খান সাবেক সংসদ সদস্য। ২য় সন্তান শিক্ষাবিদ ড. বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। ড. বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক। ৩য় ছেলে বাংলাদেশ সরকারের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর। ড. মহীউদ্দিন খান আলমগীর চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে পরপর তিনবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ৪র্থ ছেলে ড.হেলাল উদ্দিন খান শামসুল আরোফীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। [৩]

শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

১৯১০ সালে ব্রিটিশ ভারতে সর্বপ্রথম ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার প্রচলন হয়। আশেক আলী খান এ প্রচলনের ২য় বছর ১৯১১ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনামলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলা শহরে অবস্থিত বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। তৎকালিন সময়ে ওই বিদ্যালয়ে তার শ্রেণিতে তিনিই ছিলেন একমাত্র মুসলিম। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ১৯১৩ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। পরিবারে অভাব-অনটনের মধ্যে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পরপরই ঢাকা কলেজে ইংরেজি বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। কিন্তু শুরু করেও শেষ করতে পারেননি। পড়ায় বিরতি দিয়ে পর পর দুটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। পরে কলকাতায় সিটি কলেজে বিএ ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করে ১৯১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯১৯ সালে বিটি পড়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন। [৩]

কর্ম জীবন সম্পাদনা

নিজ গ্রামে গুলবাহারে আশেক আলী খান উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৫ সালে এই স্কুল সরকারী অনুমোদন পায়। আশেক আলী ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, ফরিদপুর জিলা স্কুল, বরিশাল জিলা স্কুলে ও সর্বশেষ ঝালকাঠি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। জন্মস্থান গুলবাহার গ্রামে স্কুলের পাশে ডাকঘর প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রামীণ রাস্তাঘাট উন্নয়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধ জাগ্রত রাখতে মসজিদ গড়েছেন। হাঁস-মুরগি পালনের জন্য উন্নত পদ্ধতি, কৃষিক্ষেত্রে ভাল ফলনের জন্য বিভিন্ন জৈবসারের ব্যবহার, উন্নতমানের বীজের সরবরাহ, পল্লী বিদ্যুৎ আনয়ন, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, রাস্তার পাশে গাছ রোপণ, মৎস্য চাষে উদ্বুদ্ধকরণ ইত্যাদি কাজেও তার অবদান ছিলো। [৩]

মৃত্যু সম্পাদনা

আশেক আলী খান ২ আগস্ট ১৯৭৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "হাশেম খান-মুনতাসীর মামুন চাঁদপুরের সন্তান"দৈনিক জনকণ্ঠ। ২৭ মে ২০১৬। ১৩ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৯ 
  2. বাংলা একাডেমী চরিতাভিধানবাংলা একাডেমি। পৃষ্ঠা পৃঃ সংখ্যা-৭৬। 
  3. "শ্রদ্ধাঞ্জলি ॥ আশেক আলী খান শিক্ষাসেবী ও গ্রামোন্নয়নের কর্ণধার"। দৈনিক জনকণ্ঠ। ১৪ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৯