ময়মনসিংহ জিলা স্কুল
ময়মনসিংহ জিলা স্কুল ১৮৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত তৎকালীন ভারতের সর্ববৃহৎ জেলা ময়মনসিংহের একটি উচ্চ বিদ্যালয়।[১][২][৩] এটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম। কেবল ছেলেদের জন্য প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ের অবস্থান ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে; বিদ্যালয় সংলগ্ন সড়কটি দীর্ঘদিন যাবৎ জিলা স্কুল রোড নামে পরিচিত। এই সরকারি বিদ্যালয়টিতে ৩য় থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা প্রদান করা হয়। এনট্রেন্স তথা ম্যাট্রিক এবং বর্তমানের সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট বা এস এস সি পরীক্ষায় বিদ্যালয়ের ছাত্ররা যথাক্রমে পূর্ববঙ্গ, পূর্ব পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়ে এসেছে। পূর্ব এবং পশ্চিম বাংলার বহু গুণী ব্যক্তিত্ব এ বিদ্যালয়ে তাদের বাল্যকাল অতিবাহিত করেছেন।[৪]
ময়মনসিংহ জিলা স্কুল | |
---|---|
![]() ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের লোগো | |
ঠিকানা | |
![]() | |
জিলা স্কুল রোড , | |
তথ্য | |
ধরন | সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৮৫৩ |
ইআইআইএন | ১১১৮২৯ |
প্রধান শিক্ষক | অনিমা রানী সাহা |
শ্রেণি | ৩য় — ১০ম |
লিঙ্গ | বালক |
বয়সসীমা | ৮ — ১৬ |
ভাষা | বাংলা |
রং |
|
শিক্ষা বোর্ড | মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ময়মনসিংহ |
ওয়েবসাইট | mzs.edu.bd |
ইতিহাস
সম্পাদনাময়মনসিংহ জিলা স্কুল বাংলাদেশের প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম যা ৩ নভেম্বর ১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত হয়। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল একটি ঐতিহ্যবাহী এবং গৌরবমণ্ডিত বিদ্যাপীঠের নাম। এর রয়েছে দেড়শত বছরেরও অধিক সময়ের স্মরণীয় ও সুদীর্ঘ এক ইতিহাস। ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দে ‘নাসিরাবাদ’ নামে ময়মনসিংহ জেলার গোড়াপত্তন ঘটে ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তী বেগুনবাড়ীতে। ১৭৯১ খ্রিষ্টাব্দে ব্রহ্মপুত্রের করাল গ্রাসে বেগুনবাড়ি লুপ্ত হওয়ায় জেলা হেডকোয়ার্টার স্থানান্তরিত হয় সেহড়া গ্রামে। ১৮১১ খ্রিষ্টাব্দে এটি শহরের মর্যাদা লাভের পর এখানে উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। ১৮১৩ খ্রিষ্টাব্দের শিক্ষা সনদ, ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দের সাধারণ শিক্ষা কমিশন, ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দের অ্যাডাম কমিশন রিপোর্ট এবং ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দের লর্ড মেকলের ‘নিম্নগামী পরিস্রবন নীতি’র সুপারিশ ধরেই ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে তদনীন্তন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক নিযুক্ত কালেক্টর মিঃ এফ. বি. ক্যাম্প এর ভবন ও কাচারী সংলগ্ন স্থানে পুকুরের উত্তরে একটি লাল এক তলা দালানে ‘হার্ডিঞ্জ স্কুল’ নামে একটি ‘মিডল ইংলিশ স্কুল’ স্থাপন করেন। এখানে শুধু উচ্চবিত্তদের সন্তানরা পড়ার সুযোগ পেত। এই বিদ্যালয়টি হার্ডিঞ্জ স্কুল (১৮৪৬ থেকে ১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত) নামেও পরিচিত ছিল। বর্তমানে এখানে ৩য় থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। ১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম প্রধান শিক্ষকের আসন অলংকৃত করেন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসুর পিতা শ্রী ভগবানচন্দ্র বসু। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রথম মুসলিম প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জনাব মোঃ আব্দুস সামাদ।[৫] পরবর্তীকালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শিক্ষা বোর্ডের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।[৬]
১৮৫৭ সালে রানি ভিক্টোরিয়ার মাধ্যমে সরাসরি ইংল্যান্ড থেকে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহ শহর ‘পৌরসভা’ হিসেবে স্বীকৃতি পেলে বিদ্যালয়ের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য এবং ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে হান্টার কমিশনের সুপারিশ অনুসারে শ্রেণিকক্ষ আরো উন্নত করার লক্ষ্যে ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে পাকা ভিটওয়ালা বর্তমান ‘ময়মনসিংহ ল্যাবরেটরী স্কুল’ (বেসরকারী ল্যাবরেটরী স্কুল) ভবনে একে স্থানান্তর করা হয়। ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে জেলার প্রথম বাঙালি কালেক্টর রমেশ চন্দ্র দত্তের সময়ে জেলা বোর্ড গঠনের ফলে এবং ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে লর্ড কার্জনের সময়ে "শিমলা কনফারেন্স" এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নের উপর গুরুত্বারোপের ফলে ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান স্থানে জমি অধিগ্রহণ করে বিদ্যালয় ও ছাত্রাবাস ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে ৩০০ আসন বিশিষ্ট জিলা স্কুল এই নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হয়। জিলা স্কুলের মূল ভবন এই লাল দালানটি প্রথমে এমন ছিল না। বারান্দায় ইটের ভিটার উপর টিনের চালা ছিল। পরবর্তী ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে স্যাডলার কমিশন ও ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে সার্জেন্ট পরিকল্পনা অনুসারে এর মানোন্নয়নে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ব্রিটিশ বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনের কারণে বিদ্যালয়টিকে সাময়িকভাবে বিদ্যালয় গেটের উল্টোদিকে অবস্থিত ‘দারুল হাছানা’ ভবনে স্থানান্তর করা হয়।[৬]
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশ বিভাগের পর ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের আকরাম খাঁ শিক্ষা কমিশন এবং ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের আতাউর রহমান খান শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের আলোকে ময়মনসিংহের প্রথম ডেপুটি কমিশনার এস. এম. এ. কাজমীর সময়ে ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলকে "মাল্টিলেটারাল পাইলট স্কুল" এর মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে মানবিক ও বিজ্ঞান শাখার পাশাপাশি কারিগরি শাখা খোলা হয়। পাইলট স্কীমের আওতায় এবছর প্রচুর আসবাবপত্র প্রস্তুত করা হয়। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়ে বাণিজ্য শাখা খোলা হয়। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে নতুন করে সংস্কার কাজ শুরু হয়। মিঃ ড্রিল নামের একজন আমেরিকান বিজ্ঞান শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ইট বিছানো মেঝে, টিনের চালওয়ালা বারান্দা, প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের ভেতর চারটি করে মোটা পিলার, বিদ্যালয়ের উত্তর দিকে টিনের ঘের দেওয়া সার্ভিস ল্যাট্রিন অপসারণসহ সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়।[৬]
১৯৫৬–৫৭ খ্রিষ্টাব্দের দিকে জিলা স্কুল ছাত্রাবাসের টিনশেড অংশে টি. টি. কলেজ ময়মনসিংহ এর শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত জিলা স্কুল ছাত্রাবাসে ই.পি.আর ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করায় ছাত্রাবাসটি সাময়িকভাবে গুলকীবাড়ি রায়মণি লজে স্থানান্তর করা হয় এবং এটি "আঞ্জুমান মুসলিম হোস্টেল" নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দের ৪ আগস্ট ই.পি.আর. ছাত্রাবাসটি স্থানান্তর করা হয়।[৬]
মুক্তিযুদ্ধে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল
সম্পাদনা১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের এই অঞ্চলের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল ময়মনসিংহ জিলা স্কুল। বিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে ও ১৩ জন শিক্ষার্থী শহীদ হন।[৭]
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ময়মনসিংহ শহর ত্যাগ করার খবর নিশ্চিত হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা ব্রহ্মপুত্র নদের কাচারিঘাট দিয়ে শহরে প্রবেশ করেন। তাদেরকে বিশিষ্ট চক্ষু চিকিৎসক কে জামানসহ অনেকেই ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। শহরে প্রবেশের সময় শত শত জনতা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানায়। শহরের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে তারা ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে জমায়েত হন। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল ছাত্রাবাসে মুক্তিযোদ্ধাদের রাখা হয়।[৮]
প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা
সম্পাদনা১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বিদ্যালয়ে দুটি অধিবেশনে শিক্ষাদান কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো হলো প্রভাতী অধিবেশন এবং দিবাকালীন অধিবেশন। সকাল ৭.৩০ থেকে প্রভাতী অধিবেশন এবং দুপুর ১২.০০ থেকে দিবা অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হয়। এটি বালক বিদ্যালয় হলেও ১৯৯০–এর দশক থেকে এখানে পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও শিক্ষকতা করেন। প্রতি বছর এই বিদ্যালয়ে তৃতীয় এবং ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি করা হয়। আবার ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি শ্রেণিতে দুটি করে শাখা রয়েছে যথা 'ক' শাখা এবং 'খ' শাখা। অভিজ্ঞ এবং দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে উচ্চমানের শিক্ষা প্রদানকারী প্রাচীন বিদ্যালয়গুলির মধ্যে এটি একটি। পাশাপাশি, সরকারী বিদ্যালয় হওয়ায় লেখাপড়ার খরচও এখানে নিতান্ত কম।
ভর্তি প্রক্রিয়া
সম্পাদনাএই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়টিতে ৩য় থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা প্রদান করা হয়। সাধারণত ৩য় ও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি করা হয়। আসন খালি থাকা সাপেক্ষে কোন কোন বছর অন্যান্য শ্রেণিতেও ভর্তি করা হয়। ভর্তি পরীক্ষা দিতে কোন আলাদা যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না এবং যেসব ছাত্র ভর্তি পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করে তারাই ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়।
বেতন
সম্পাদনাসরকারি বিদ্যালয় হওয়ায় এতে বেসরকারী বিদ্যালয়ের তুলনায় খরচ অনেক কম। প্রতি মাসে বেতনের সাথে টিফিন ফি নেয়া হয়। ছাত্রাবাসের ছাত্রদের বেতনের সাথে ছাত্রাবাসের ভাড়াও দিতে হয়।
হাউজ প্রথা
সম্পাদনাপ্রতিষ্ঠানটিতে হাউজ প্রথা চালু আছে। তবে সকল প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে এর প্রচলন নেই। বিদ্যালয়ের প্রতি শ্রেণি ও শিফট মিলিয়ে একটি শ্রেণির জন্য মোট ৪টি শাখা চালু আছে। তবে প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণিপ্রতি ২টি শাখা চালু আছে।
তাই মূলত হাউজ প্রথা শুধু খেলাধুলাতেই দেখা যায়। ইনডোর গেমস ও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ছাত্ররা ৪ টি হাউজে ভাগ হয়ে খেলায় অংশ নেয়। হাউজগুলো হলোঃ
- শের–ই বাংলা হাউজ
- সোহরাওয়ার্দী হাউজ
- নজরুল হাউজ
- শহীদুল্লাহ হাউজ
ইউনিফর্ম ড্রেস
সম্পাদনা১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য সর্বপ্রথম ইউনিফর্ম ড্রেস এবং আইডেনটিটি কার্ড প্রবর্তন করা হয়। বর্তমান ইউনিফর্ম ড্রেস নিম্নরূপ:
- ফুল হাতা সাদা শার্ট
- খাকি রঙের ফুল প্যান্ট
- সাদা মোজা ও জুতা (কেডস বা পাম্প শু)
- নেভী ব্লু সোয়েটার (শীতকালে)
- লাল রঙের নেমপ্লেট (প্রভাতী শাখা) ও সবুজ রঙের নেমপ্লেট (দিবা শাখা)
- বাম পকেটের ওপর বিদ্যালয়ের মনোগ্রাম
- আইডেনটিটি কার্ড
শিক্ষা সুবিধাসমূহ
সম্পাদনাএই বিদ্যালয়ে একটি উঁচুমানের বিজ্ঞানাগার, একটি সুপরিসর লাইব্রেরি, একটি কম্পিউটার ল্যাবরেটরি, একটি ব্যায়ামাগার ও কর্মশালা রয়েছে। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও জীববিদ্যার প্রায়োগিক পাঠসমূহ সাধারণত বিজ্ঞানাগারে পড়ানো হয়। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর নিয়ন্ত্রিত শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। প্রতি কক্ষেই মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের সুব্যবস্থা রয়েছে।
বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণ "সিসিটিভি ক্যামেরা" নিয়ন্ত্রিত। এছাড়াও বিদ্যালয় পিউরিফায়ার সহ বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রয়েছে। বিদ্যালয়ে একটি ঘাট বাঁধানো পুকুর রয়েছে যাতে প্রতি বছর সাঁতার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বিদ্যালয়ের মূল ভবনে বড় একটি হলঘর আছে যেখানে সভা–সমিতি এবং প্রতি বছর ইনডোর গেমসের আয়োজন করা হয়। এছাড়া দূরবর্তী ছাত্রদের অধ্যয়নের সুবিধার্থে বিদ্যালয়ের অদূরে একটি ছাত্রাবাস রয়েছে। বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস মাঠে প্রতিবছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এছাড়া বিদ্যালয়ে জাতীয় কিছু সংস্থার শাখা চালু রয়েছে। যথাঃ-
- বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর - বিএনসিসি
- স্কাউট
- রেড ক্রিসেন্ট
- জিলা স্কুল বিতর্ক দল[৯]
- বিজ্ঞান ক্লাব: ইয়ুথ সায়েন্স ফোরাম
খেলাধুলা ও সহপাঠ্যকর্ম
সম্পাদনাময়মনসিংহ জিলা স্কুল আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে খেলাধুলা ও অন্যান্য বিষয়ে অসংখ্য সাফল্য অর্জন করেছে। জাতীয় মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী পুরস্কার পেয়েছে। এছাড়া আবৃত্তি, গান ইত্যাদি বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য রয়েছে। গণিত অলিম্পিয়াডের উচ্চ পর্যায়েও ছাত্রদের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। খেলাধুলায় বিদ্যালয়টি অনেক এগিয়ে। ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবল, হ্যান্ডবল, কাবাডি, দাবা, হকি, টেবিল টেনিস সহ প্রায় সকল খেলাতেই এই বিদ্যালয়ের দলীয় ও একক সাফল্য রয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সহ বিভিন্ন খেলার বিভিন্ন খেলোয়াড় এই স্কুলের ছাত্র।
বিভিন্ন জাতীয়, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেরাই গড়ে তুলেছে কিছু সংগঠন। বিজ্ঞানমনষ্ক শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে গড়ে তোলা "ইয়ুথ সায়েন্স ফোরাম" যার মাঝে অন্যতম।
খ্যাতিমান শিক্ষকবৃন্দ
সম্পাদনা১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু এর পিতা ভগবান চন্দ্র বসু । ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রথম মুসলিম প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জনাব মোঃ আব্দুস সামাদ। পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন শিক্ষা বোর্ডের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি নিযুক্ত হয়েছিলেন।[১০]
১৮৫৮ সালে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে শিক্ষকতা করার সময়েই গিরিশ চন্দ্র সেন প্রথম পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। এই কাজের জন্য ব্রাহ্মণরা তাকে ভাই আর মুসলমানরা মওলানা উপাধি দেন।
উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন ছাত্র
সম্পাদনা- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (১৮৬৩–১৯১৫) — প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক
- জগদীশ চন্দ্র বসু (১৮৫৮–১৯৩৭) — প্রখ্যাত বিজ্ঞানী
- আনন্দমোহন বসু (১৮৪৭–১৯০৬)[১১] — ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাবেক প্রেসিডেন্ট
- নুরুল আমিন (১৮৯৩–১৯৭৪) — পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী
- আবদুল মোনেম খান (১৮৯৯–১৯৭১)[১২] — পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর
- জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা (১৯২০–১৯৭১)[১৩]
- সৈয়দ নজরুল ইসলাম (১৯২৫–১৯৭৫) — বাংলাদেশের ১ম উপরাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি
- এম আর আখতার মুকুল (১৯৩০–২০০৪) — স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের চরমপত্রের পরিচালক, লেখক ও কথক ছিলেন
- আবু সাঈদ চৌধুরী (১৯২১–১৯৮৭) — বাংলাদেশের ২য় রাষ্ট্রপতি
- আবুল কাসেম ফজলুল হক (১৯৪০–) — ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রাষ্ট্রচিন্তক
- কাজী কাদের নেওয়াজ (১৯০৯–১৯৮৩) — কবি ও শিশু সাহিত্যিক
- আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ (১৯৩৪–২০০১) — কবি
- আতাউস সামাদ (১৯৩৭–২০১২) — প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট
- রাশেদ খান মেনন (১৯৪৩–) — রাজনীতিবিদ
- এ. কে. এম. মোশাররফ হোসেন (১৯৩৭–২০২০) — সাবেক জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী
- বিচারপতি আবদুর রউফ (১৯৩৪–) — সুপ্রিম কোর্টের বিচারক
- ড. শাহ মোহাম্মদ ফারুক (–২০২১) — বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি
- রিয়ার এডমিরাল সুলতান আহমেদ (১৯৩৮–২০১২) — নৌবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান
- ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ (১৯৩২–২০০৩)[১৪] — আইনজীবী, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
- ড. আশরাফ সিদ্দিকী (১৯২৭–২০২০) — প্রখ্যাত লোক বিজ্ঞানী
- এহসান খান, স্থপতি[১৫]
- মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (১৯৮৬–) — ক্রিকেটার, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল[১৬]
- মোশতাক আহমেদ রুহী (১৯৭৪–) — রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য[১৭]
- বাহারুল আলম[১৮] — পুলিশের ৩১তম মহাপরিদর্শক
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীদের ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত"। বণিক বার্তা। ২০ এপ্রিল ২০২৩।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৯ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০২৩।
- ↑ "প্রবেশপত্রে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলকে 'ডিস্ট্রিক্ট স্কুল' লিখল রেলওয়ে"। RTV Online। ৬ আগস্ট ২০২২।
- ↑ "প্রতিষ্ঠান পরিচিতি"। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল। ৩ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "প্রাক্তন প্রধান শিক্ষকগণ"। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল। ৩ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৪।
- ↑ ক খ গ ঘ মো. ইউনুছ ফারুকী (২০১২)। "ময়মনসিংহ জিলা স্কুল"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ "সাবেক দুই রাষ্ট্রপতি যে স্কুলের ছাত্র"। জনকণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৭, ২০১৮।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "ময়মনসিংহে বিজয়"। সমকাল। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৭, ২০১৮।
- ↑ "সেরাদের সেরা ময়মনসিংহ জিলা স্কুল"। দৈনিক প্রথম আলো। ২৭ জানুয়ারি ২০২৪। Archived from the original on ২ মার্চ ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০২৪।
- ↑ "ইতিহাস"। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ৭, ২০১৮।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Banerjea, Surendranath (১৯২৫)। A Nation in Making: Being the Reminiscences of Fifty Years of Public Life। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 38।
- ↑ মুহম্মদ আবদুস সালাম (২০১২)। "খান, আবদুল মোনেম"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ কায়সার হক (২০১২)। "গুহঠাকুরতা, জ্যোতির্ময়"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ Kamal, Mustafa (১২ জুলাই ২০০৮)। "Ishtiaq: An extraordinary legal mind"। দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৭।
- ↑ "এহসান খানের স্থাপত্য ভুবন"। আনন্দ আলো। ১০ মে ২০১৭। ৩ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫।
- ↑ "কৃতি শিক্ষার্থী"। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল। ৩ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০১৪।
- ↑ "খোলাকাগজের উপদেষ্টা সম্পাদক হলেন তরুন রাজনীতিবিদ মোশতাক আহমেদ রুহী"। www.jagrotabangla.com। সংগ্রহের তারিখ জুন ১১, ২০১৯।
- ↑ "আইজিপির দায়িত্ব গ্রহণ করলেন ডা. বাহারুল আলম"। medivoicebd.com। ২১ নভেম্বর ২০২৪। Archived from the original on ২২ নভেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০২৪।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- উইকিমিডিয়া কমন্সে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।