রৌশন আরা বেগম( ১ জানুয়ারি ১৯৬২- ৫ মে ২০১৯) ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি)। তিনি রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পদক প্রাপ্ত একজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম নারী পুলিশ সুপার হিসেবে মুন্সীগঞ্জ জেলায় দায়িত্ব পালন করেছেন।[২]

রৌশন আরা বেগম
২০১৯ সালে রৌশন আরা বেগম
বাংলাদেশ পুলিশ
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮
পূর্বসূরীফাতেমা বেগম
কাজের মেয়াদ
১৯৮৮–২০১৯
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মরৌশন
(১৯৬২-০১-০১)১ জানুয়ারি ১৯৬২
রায়শ্রী,শাহরাস্তি, চাঁদপুর বাংলাদেশ
মৃত্যু৫ মে ২০১৯(2019-05-05) (বয়স ৫৭)
কিনশাসা, কঙ্গো
জাতীয়তা বাংলাদেশ
দাম্পত্য সঙ্গীমো. শফিকুল আলম চৌধুরী
সন্তানআরা মুনাহা চৌধুরী (মেয়ে)
পিতামাতাইসমাইল হোসেন (পিতা)
আমেনা বেগম (মাতা)
বাসস্থানঢাকা
শিক্ষাবিএসএস (অনার্স) সমাজবিজ্ঞান
এমএসএস সমাজবিজ্ঞান.
প্রাক্তন শিক্ষার্থীটিএন্ডটি উচ্চ বিদ্যালয়
ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাঅতিরিক্ত মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ
যে জন্য পরিচিতবাংলাদেশের প্রথম নারী পুলিশ সুপার (মুন্সীগঞ্জ)[১]
পুরস্কাররাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক
২য় সর্বোচ্চ প্রধান নারী পুলিশ কর্মকর্তা

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

রৌশন আরা বেগম ১ জানুয়ারি ১৯৬২ সালে চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের শেখ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মাতা আমেনা বেগম। জন্মস্থান চাঁদপুরে হলেও ঢাকায় বসবাস করতেন। তার স্বামী মো. শফিকুল আলম চৌধুরী ব্যবসায়ী ও তার শ্বশুর নুরুল্লা চৌধুরী মহাখালী কলেরা হাসপাতালের প্রাক্তন প্রধান অণুজীববিজ্ঞানী ছিলেন।[২]

কর্মক্ষেত্র সম্পাদনা

রৌশন আরা বেগম বিসিএস ৭ম ব্যাচে উত্তীর্ণ হয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮ পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেন। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী, সারদা, রাজশাহী হতে মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ঢাকায় শিক্ষানবিস সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন। এরপর রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমি, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এ কর্মরত ছিলেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে কক্সবাজার, টাঙ্গাইল, কুমিল্লাচট্টগ্রামে কর্মরত ছিলেন। (১৯৯৪-১৯৯৮) ৩ ডিসেম্বর ১৯৯৮ সালের তিনি বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম নারী পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। এরপর এনবিআর, ঢাকায় উপ-পরিচালক, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি) ঢাকায় বিশেষ পুলিশ সুপার, কেএমপি, খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও ভারপ্রাপ্ত কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন (১৯৯৮-২০০৭)। ১২ ডিসেম্বর ২০০৭ সালে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন (২০০৭-২০০৮)। পরে ঢাকায় ডিটিএস, সিআইডি’র কমান্ড্যান্ট (অতিরিক্ত ডিআইজি), বিশেষ ইন্টেলিজেন্স এন্ড ইনভেস্টিগেশন, সিআইডি ঢাকায় ডিআইজি ও ২০১৩-২০১৪ সালে ডিআইজি হিসেবে ফরেনসিক, সিআইডি ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। তিনি ৬ নভেম্বর ২০১৮ খ্রি. তারিখে অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পান এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রেক্টর (অতিরিক্ত আইজিপি) হিসেবে পুলিশ স্টাফ কলেজে কর্মরত ছিলেন (২০১৮-২০১৯)।[৩]

শান্তি রক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ সম্পাদনা

জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশন (কসোভো) ১৬ জুলাই ২০০২ সালের থেকে ১৫ জুলাই ২০০৩ পর্যন্ত ক্রাইম এনালাইসিস অফিসার ও ৩০ এপ্রিল ২০০৮ থেকে ২৯ নভেম্বর ২০০৯ পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন (সুদান) ইউএন পুলিশের বাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৩]

প্রশিক্ষণ ও বিদেশ ভ্রমণ সম্পাদনা

যুক্তরাজ্যের পুলিশ স্টাফ কলেজ ব্রামশিল থেকে কৌশলগত পরিকল্পনা (স্ট্রাটেজিকপ্লানিং) কোর্স এবং লীডারশিপ কোর্স ফর ফিমেল লিডার’স ইন ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। তিনি আন্তর্জাতিক নারী পুলিশ সংস্থা (IAWPs) (রিজিওন-১৬) সেকেন্ড এর ৫০তম বার্ষিক প্রশিক্ষণ সম্মেলন, নিউফাউন্ডল্যান্ড, কানাডা, ৫১তম বার্ষিক প্রশিক্ষণ সম্মেলন, ডারবান, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং (IAWPs) (রিজিওন-১৬) সেকেন্ড রিজিওনাল কনফারেন্স, আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে যোগ দেন। তিনি ২০১৫ সালে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ বাংলাদেশ থেকে জাতীয় নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ (এনডিসি) সম্পন্ন করেন।[৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

বাংলাদেশে পুলিশ বাহিনীতে 'রৌশন আরা বেগমের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দু’বার আইজিপি ব্যাচপ্রাপ্ত হন এবং সাহসী দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম), ১৯৯৮ সালে তিনি মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার থাকাকালীন ‘অনন্যা শীর্ষ দশ-১৯৯৮’ পুরস্কার ও ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক নারী পুলিশ সংস্থা থেকে বৃত্তি পদক লাভ করেন।

মৃত্যু সম্পাদনা

রৌশন আরা বেগম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন কার্যক্রম পরিদর্শন এবং মেডেল প্যারেডে অংশ নিতে ৩ মে ২০১৯ ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে ৪ মে ২০১৯ কঙ্গো পৌঁছান।[২][৪] কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসায় দায়িত্ব পালনকালে ৫ মে ২০১৯ সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় তাকে বহনকারী গাড়িকে একটি লরি এসে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "রৌশন আরা বলেছিলেন, 'বেঁচে থাকা অনিবার্য নয়, মৃত্যু অনিবার্য"। Amader Shomoy। ১৫ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০২০ 
  2. "দেশে-বিদেশে রৌশন আরা'র ছিলো নানা অর্জন"চ্যানেল আই। সংগ্রহের তারিখ ২৫ এপ্রিল ২০২০ 
  3. "সড়ক দুর্ঘটনায় অতিরিক্ত আইজিপি রৌশন আরার মৃত্যু"। পরিবর্তন ডট কম। ৬ মে ২০১৯। ৯ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০১৯ 
  4. "মিশনে পৌঁছার পরদিনই প্রাণ গেল দেশের প্রথম নারী এসপির"জাগো নিউজ। ৬ মে ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০১৯ 
  5. "কঙ্গোতে সড়ক দুর্ঘটনায় অতিরিক্ত আইজিপি রৌশন আরার মৃত্যু"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ৬ মে ২০১৯। ৯ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মে ২০১৯