দুর্নীতি দমন কমিশন (বাংলাদেশ)
দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন, নিয়ন্ত্রণ, ও দুর্নীতি প্রতিরোধে গঠিত একটি কমিশন। এটি ২০০৪ সালের ৯ মে মাসের দুর্নীতি দমন আইন অনুসারে কার্যকর হয়েছে। একজন চেয়ারম্যান ও দুজন কমিশনার নিয়ে গঠিত দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয় ঢাকার সেগুনবাগিচায় অবস্থিত। এ সংস্থার লক্ষ্য হচ্ছে দেশে দুর্নীতি ও দুর্নীতিমূলক কাজ প্রতিরোধ করা। যে কোনো ব্যক্তি অথবা সংস্থার বিরুদ্ধে কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত বিষয়ে কোনো অভিযোগ সমন্বিত জেলা কার্যালয়, বিভাগীয় অথবা সেগুনবাগিচা, ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয় প্রেরণ করা যাবে। বর্তমানে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ।[২]
![]() দুর্নীতি দমন কমিশনের সীলমোহর | |
সংক্ষেপে | দুদক |
---|---|
গঠিত | ৯ মে ২০০৪ |
অবস্থান |
|
দাপ্তরিক ভাষা | বাংলা |
চেয়ারম্যান | মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ[১] |
কমিশনার (তদন্ত) | মো. জহুরুল হক |
কমিশনার (অনুসন্ধান) | মোছাৎ আছিয়া খাতুন |
সচিব | মোঃ মাহবুব হোসেন |
ওয়েবসাইট | www |
ইতিহাস সম্পাদনা
গঠন এবং প্রাথমিক বছর (২০০৪–২০০৭) সম্পাদনা
সংসদ কর্তৃক পাসকৃত দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪, এর মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। আইনটি দুর্নীতি নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উপর এর প্রভাবকে মোকাবেলা করেছে। বাংলাদেশে দুর্নীতি দমনে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দুদকের গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত। প্রাথমিক বছরগুলোতে দুদক সম্পদের অভাব, সীমিত ক্ষমতা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপসহ বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল। তা সত্ত্বেও, কমিশন হাই-প্রোফাইল মামলাগুলোর তদন্ত ও বিচারের জন্য তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে এবং দুর্নীতি কমাতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
শক্তিশালীকরণ এবং সম্প্রসারণ (২০০৭-২০১১) সম্পাদনা
২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুদকের স্বাধীনতা, কার্যকারিতা এবং ম্যান্ডেট বাড়ানোর লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে একাধিক সংশোধনী প্রবর্তন করে। সংশোধনীগুলো দুদককে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান করেছে, যেমন সরাসরি আদালতে মামলা দায়েরের ক্ষমতা, দুর্নীতির সংজ্ঞা প্রসারিত করা হয়েছে এবং কমিশনের কার্যক্রমকে সুগম করার জন্য একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সময়ের মধ্যে, দুদক তদন্ত, প্রসিকিউশন এবং পুনরুদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি করে তার কার্যক্রম সম্প্রসারিত করে। কমিশন দুর্নীতির বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং স্বচ্ছতা উন্নীত করতে সুশীল সমাজ সংস্থা, মিডিয়া এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার দিকেও মনোনিবেশ করেছে।
সাম্প্রতিক কার্যক্রম (২০১১-বর্তমান) সম্পাদনা
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেই দুদকের ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। যার ফলশ্রুতিতে দুদক ক্রমাগত বিকশিত হয়েছে। কমিশন এর দক্ষতা ও কার্যকারিতা বাড়াতে বেশ কিছু কৌশলগত উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছে। কিছু মূল উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম প্রবর্তন, অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচি প্রসারিত করা।
বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক অভিযোগকৃত পদ্মা সেতু দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে নামে দুদক এবং তদন্তকালীন এই অভিযোগের বেশ কিছু ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে কানাডার একটি আদালত এই অভিযোগটি মিথ্যা, বানোয়াট ও গুজব বলে রায় ঘোষণা করে।[৩] পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন। এরপর ২০২২ সালের ২৫ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।[৪]
কার্যাবলি সম্পাদনা
(ক) তফসিলে উল্লিখিত অপরাধসমূহের অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনা;
(খ) অনুচ্ছেদ (ক) এর অধীন অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালনার ভিত্তিতে এই আইনের অধীন মামলা দায়ের ও পরিচালনা;
(গ) দুর্নীতি সম্পর্কিত কোন অভিযোগ স্বউদ্যোগে বা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তাহার পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক দাখিলকৃত আবেদনের ভিত্তিতে অনুসন্ধান;
(ঘ) দুর্নীতি দমন বিষয়ে আইন দ্বারা কমিশনকে অর্পিত যে কোন দায়িত্ব পালন করা;
(ঙ) দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য কোন আইনের অধীন স্বীকৃত ব্যবস্থাদি পর্যালোচনা এবং কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ পেশ করা;
(চ) দুর্নীতি প্রতিরোধের বিষয়ে গবেষণা পরিকল্পনা তৈরি করা এবং গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে করণীয় সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ পেশ করা;
(ছ) দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে সততা ও নিষ্ঠাবোধ সৃষ্টি করা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা গড়িয়া তোলার ব্যবস্থা করা;
(জ) কমিশনের কার্যাবলি বা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এমন সকল বিষয়ের উপর সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, কর্মশালা ইত্যাদি অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা;
(ঝ) আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রকার দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করা এবং তদানুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ পেশ করা;
(ঞ) দুর্নীতির অনুসন্ধান, তদন্ত, মামলা দায়ের এবং উক্তরূপ অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে কমিশনের অনুমোদন পদ্ধতি নির্ধারণ করা;
(ট) দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় বিবেচিত অন্য যে কোন কার্য সম্পাদন করা[৫]
চেয়ারম্যান ও অন্যান্য কমিশনারগণ সম্পাদনা
বর্তমানে চেয়ারম্যানের অধীন ২ জন নিয়ে মোট ৩ সদস্যের একটি দল কমিশনের দায়িত্ব পালন করছে। সাথে সচিবালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন একজন সচিব। তারা হলেন:
অফিস | নাম | ভূমিকা | নিয়োগ |
---|---|---|---|
চেয়ারম্যান | মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ | চেয়ারম্যান | ১৩ মার্চ ২০২১ |
কমিশনার | মো. জহুরুল হক | তদন্ত | ১৩ মার্চ ২০২১ |
কমিশনার | মোসাৎ আছিয়া খাতুন | অনুসন্ধান | ২ জুলাই ২০২৩ |
কমিশনের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি পদমর্যাদা, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা এবং কমিশনারগণ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি পদমর্যাদা, বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন।
রাষ্ট্রপতি তিনজন কমিশনারের মধ্যে হতে একজনকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করে থাকেন। চেয়ারম্যান কমিশনের সকল সভার সভাপতিত্ব করেন এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত কোনো কমিশনার সভায় সভাপতিত্ব করেন। চেয়ারম্যানসহ দুই জন কমিশনারের উপস্থিতিতে সভার কোরাম গঠিত হয়। তারা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ৭ ধারা অনুযায়ী গঠিত বাছাই কমিটির সুপারিশক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ৫ বছর মেয়াদের জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত হন। কমিশন আইনে কমিশনারদের মেয়াদ কালের নিশ্চয়তা বিধান করে বলা হয়েছে, “সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক যেরূপ কারণ ও পদ্ধতিতে অপসারিত হইতে পারেন, সেইরূপ কারণ ও পদ্ধতি ব্যতীত কোন কমিশনারকে অপসারণ করা যাইবে না”। চেয়ারম্যান ও অন্যান্য কমিশনারগণ রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে পদত্যাগ করতে পারেন।[৬]
কমিশন সচিবালয় সম্পাদনা
দুর্নীতি দমন কমিশন সচিবালয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচায় অবস্থিত। কমিশনের আলাদা সচিবালয় রয়েছে। সচিবালয়ের প্রধান সরকারের একজন সচিব। বর্তমানে সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন মোঃ মাহবুব হোসেন।[৭][৮]
তথ্যসূত্র সম্পাদনা
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব; ডটকম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর। "সাবেক সচিব মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ দুদকের নতুন চেয়ারম্যান"। bangla.bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-০৪।
- ↑ "দুর্নীতি দমন কমিশন"। acc.portal.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৪-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১৫।
- ↑ রিপোর্ট, স্টার অনলাইন (২০১৭-০২-১১)। "পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পায়নি কানাডার আদালত"। The Daily Star Bangla (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১৫।
- ↑ "পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেন শেখ হাসিনা, ঢাকার সাথে সড়কপথে যুক্ত হল এক তৃতীয়াংশ বাংলাদেশ"। BBC News বাংলা। ২০২২-০৬-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১৫।
- ↑ "দুর্নীতি দমন কমিশন"। www.acc.org.bd (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৪-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১৫।
- ↑ "দুর্নীতি দমন কমিশন"। acc.portal.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৪-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১৫।
- ↑ "দুর্নীতি দমন কমিশন"। acc.portal.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৪-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১৫।
- ↑ "দুদকের সচিব হিসেবে যোগদান মাহবুব হোসেনের"। SAMAKAL (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১৫।
বহিঃসংযোগ সম্পাদনা
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |