মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ
মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ (জন্ম: ২ জানুয়ারি, ১৯২৭ - মৃত্যু: ২৭ নভেম্বর, ২০০৪) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]
মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ | |
---|---|
জন্ম | ২ জানুয়ারি, ১৯২৭ |
মৃত্যু | ২৭ নভেম্বর ২০০৪ | (বয়স ৭৭)
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত) পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনামোহাম্মদ তবারকউল্লাহর জন্ম চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার এখলাসপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মো. বসরত আলী মাস্টার এবং মায়ের নাম রাবেয়া বেগম। তার স্ত্রীর নাম আলফাতুন নেছা। তার তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। [২]
কর্মজীবন
সম্পাদনাইপিআরে চাকরি করতেন মো. তবারক উল্লাহ। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন যশোর ইপিআর সেক্টরের অধীন কালীগঞ্জে। তিনি ছিলেন একটি কোম্পানির অধিনায়ক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে ৮ নম্বর সেক্টরের হাকিমপুর সাবসেক্টরে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সম্পাদনা১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার অন্তর্গত বালিয়াডাঙ্গায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি মুক্তিবাহিনীর একটি দল ভারত থেকে এসে নিজেদের শিবির স্থাপন করে। এই দলের সহ-দলনেতা ছিলেন মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ। তারা বালিয়াডাঙ্গায় অবস্থান করে আশপাশের পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ চালান। বালিয়াডাঙ্গার অদূরে হঠাৎগঞ্জে ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান। সেখানে প্রতিরক্ষায় ছিল বালুচ রেজিমেন্টের একটি কোম্পানি। মুক্তিবাহিনীর ক্রমাগত গেরিলা আক্রমণে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দিশেহারা হয়ে যায়। ১৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর্টিলারির সহায়তা নিয়ে মুক্তিবাহিনীর বালিয়াডাঙ্গার অবস্থানে পাল্টা আক্রমণ করে। মোহাম্মদ সফিক উল্লাহ ও মো. তবারক উল্লাহর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি আক্রমণ মোকাবিলা করতে থাকেন। কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনী ওই এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের উচ্ছেদ করার জন্য গোলাবর্ষণ করতে থাকে। প্রচণ্ড গোলাবর্ষণের মধ্যেও মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান ধরে রাখেন। ১৮ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ তবারক উল্লাহর অধিনায়ক আহত হলে সাময়িক সময়ের জন্য যুদ্ধের নেতৃত্ব এসে পড়ে তার ওপর। যুদ্ধ চলতে থাকে। পরে অধিনায়ক হিসেবে যোগ দেন মাহাবুব উদ্দীন আহমেদ (বীর বিক্রম)। তিনিও এ যুদ্ধে আহত হন। দুজন অধিনায়ক আহত হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়ায় ফায়ার পাওয়ার কিছুটা কমে যায়। এ সুযোগে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। সহযোদ্ধাদের নিয়ে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন মো. তবারক উল্লাহ। প্রায় ৩৪ জন মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণে শহীদ হন। অনেকে আহত হন। আহতদের বেশির ভাগ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। একপর্যায়ে তবারক উল্লাহ একা হয়ে যান। তখন তিনি একাই যুদ্ধ করেন। পাকিস্তানি সেনারা তার অজান্তে তাকে ঘিরে ফেলে। পরে আহত অবস্থায় তাকে পাকিস্তানি সেনারা আটক করে। আটক তবারক উল্লাহকে পাকিস্তানিরা ব্যাপক নির্যাতন করার পর জেলে পাঠায়। ১৬ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পান। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৪-০৩-২০১২"। ২০১৭-০৯-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০১-৩১।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪২৬। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ২৮৬। আইএসবিএন 9789849025375।
পাদটীকা
সম্পাদনা- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।