ওয়ালী উল্লাহ নওজোয়ান
ওয়ালী উল্লাহ নওজোয়ান (জানুয়ারি ১৯১৩ - ১ জানুয়ারি ১৯৭৫) ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের একজন রাজনীতিবিদ, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা। নিজ উপজেলায় উন্নয়নে তার ব্যাপক অবদান রয়েছে। তার উদ্যোগে পাকিস্তান শাসনামলে ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, অনেক রাস্তাঘাট, স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছিল। [১]
ওয়ালী উল্লাহ নওজোয়ান | |
---|---|
জন্ম | জানুয়ারি ১৯১৩ চররামপুর, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।
চাঁদপুর জেলা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি,ব্রিটিশ ভারত ( বর্তমান বাংলাদেশ) |
মৃত্যু | ১ জানুয়ারি ১৯৭৫ |
মৃত্যুর কারণ | উচ্চ রক্তচাপ |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | গবেষক, রাজনীতিবিদ, ১৯৫২ ভাষা আন্দোলনের সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, সংবিধান রচয়িতা, শিক্ষক |
রাজনৈতিক দল | যুক্তফ্রন্ট, আওয়ামী মুসলিম লীগ |
সন্তান | তিন ছেলে পাঁচ মেয়ে |
পিতা-মাতা | পিতা : ওয়াজউদ্দিন সরদার |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাওয়ালী উল্লাহ নওজোয়ান বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার চররামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ছিল ওয়াজ উদ্দিন সরদার। [১]
শিক্ষা জীবন
সম্পাদনাতিনি তৎকালীন চাঁদপুর কলেজ থেকে ১৯২৪ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে কুমিল্লা কলেজ থেকে ১৯৩৩ সালে আইএসসি পাশ করেন। আইএসসি পাশ করার পর বরিশাল ব্রজমোহন কলেজে বিএসসিতে ভর্তি হন এবং একই বছর কলকাতা বঙ্গবাসী কলেজে ভর্তি হন। পরবর্তীতে ১৯৩৬ সালে তিনি বিএসসি পাশ করেন। [১]
কর্মজীবন
সম্পাদনাতিনি তার প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন কলকাতা শিল্প গবেষণা পদ দিয়ে। উক্ত পদে চাকরিকালীন সময়ে তিনি কচুরিপানা থেকে কীভাবে হার্ডবোর্ড তৈরি করা যায় তা গবেষণা করে আবিষ্কার করেন। এছাড়াও তিনি রাজনীতি, সংবিধান রচনা, শিক্ষকতা ও বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক সংস্থার হয়ে কাজ করেছেন। তিনি চাঁদপুর রিলিফ কমিটির ১৯৭২-৭৩ পর্যন্ত চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি চাঁদপুর জেলার স্বনামধন্য দুটি স্কুল হাসান আলী ও গণি মডেল হাইস্কুলে গণিত বিষয়ের উপর শিক্ষকতা করেন এবং চাঁদপুর নূরিয়া মাদ্রাসাকে বিজ্ঞান ল্যাবরেটরিসহ বাই লেটারেল হাইস্কুলে উন্নীত করে জীবনের শেষ ১০ বছর এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।[১]
রাজনৈতিক জীবন
সম্পাদনাতিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। প্রথমে তিনি কুমিল্লা জেলা বোর্ড মেম্বার হিসাবে ফরিদগঞ্জ উপজেলা হতে ১৯৪৭ সালে নির্বাচিত হন। রাজনীতিতে থাকা অবস্থায় তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল যুক্তফ্রন্ট আওয়ামী মুসলিম লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসনিক পরিষদের এম,পি নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে আবার ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ এলাকার আসনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হয়ে আইডিপি প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে তিনি জয়ী হন। [১]
সমাজসেবা মূলক কাজ
সম্পাদনাতিনি রাজনীতি করার পাশাপাশি একজন সমাজসেবকও ছিলেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকে বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক সংস্থার সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি বেওয়ারিশ লাশ দাপনের জন্য চাঁদপুরে গোরস্থান এবং আঞ্জুমানে খাদেমুল ইসলাম নামে একটি সংগঠন তৈরি করেন। তিনি চাঁদপুর মুসলিম সমিতি নামে ভারতের কলকাতায় একটি সেবামূলক সংগঠন গড়ে তোলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করার জন্য যুবসম্প্রদায়কে নিয়ে তিনি বঙ্গীয় নওজোয়ান পার্টি নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন এবং সেই সংগঠনের নেতৃত্বও দেন। সংগঠনটির কাজ ছিল দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষদের পাশে দাড়ানো। এছাড়াও তিনি তার রাজনৈতিক জীবনে ফরিদগঞ্জের হয়ে এম,পি নির্বাচিত হওয়ার পর ফরিদগঞ্জ উপজেলার বেশ উন্নয়ন করেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলার রাস্তাঘাট, ফরিদগঞ্জ কমিউনিটি কেন্দ্র, সাব রেজিস্ট্রি অফিস ও হাসপাতালসহ বিভিন্ন ধরনের ভবন তৈরি করেছিলেন। [১]
বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অবদান
সম্পাদনাতিনি প্রথমত ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের একজন লড়াকু সৈনিক এবং দ্বিতীয়ত তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। [১]
সম্মাননা
সম্পাদনাফরিদগঞ্জে তার এবং কৃতিত্বপূর্ণ আরো দুই সন্তানের স্মৃতিস্বরূপ একটি ভাস্কর্য তৈরি করা হয়। তিনিসহ ফরিদগঞ্জেরর আরো দুইজন কৃতিত্বপূর্ণ সন্তানের মুখের আদলে তৈরি করা হয় এই ভাস্কর্যটি। যার নাম ওনুয়া স্মৃতি ভাস্কর্য। [১]
মৃত্যু
সম্পাদনাওয়ালী উল্লাহ নওজোয়ান চাঁদপুর শহরের নিজ বাস ভবন নওজোয়ান মঞ্জিলে উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৭৫ সালের ১লা জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। [১]