চাঁদপুর পৌরসভা
চাঁদপুর পৌরসভা বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার অন্তর্গত একটি পৌরসভা।
চাঁদপুর | |
---|---|
পৌরসভা | |
চাঁদপুর পৌরসভা | |
বাংলাদেশে চাঁদপুর পৌরসভার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°১৩′২৬″ উত্তর ৯০°৩৯′৫″ পূর্ব / ২৩.২২৩৮৯° উত্তর ৯০.৬৫১৩৯° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | চট্টগ্রাম বিভাগ |
জেলা | চাঁদপুর জেলা |
উপজেলা | চাঁদপুর সদর উপজেলা |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১ অক্টোবর, ১৮৯৬ |
সরকার | |
• পৌর মেয়র | জিল্লুর রহমান জুয়েল (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) |
আয়তন | |
• মোট | ২৫.৬১ বর্গকিমি (৯.৮৯ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১,৫৯,০২১ |
• জনঘনত্ব | ৬,২০০/বর্গকিমি (১৬,০০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৬৭.৪% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৩৬০০ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
আয়তন
সম্পাদনাচাঁদপুর পৌরসভার আয়তন ২৬.৮২ বর্গ কিলোমিটার।[১]
জনসংখ্যার উপাত্ত
সম্পাদনা২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চাঁদপুর পৌরসভার জনসংখ্যা ১,৫৯,০২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭৯,৭৯৯ জন এবং মহিলা ৭৯,২২২ জন। মোট পরিবার ৩৩,৩২২টি।[১]
অবস্থান ও সীমানা
সম্পাদনাচাঁদপুর সদর উপজেলার মধ্যাংশে চাঁদপুর পৌরসভার অবস্থান। চাঁদপুর জেলা শহর এ পৌরসভায় অবস্থিত। এ পৌরসভার উত্তরে ও পূর্বে তরপুরচণ্ডী ইউনিয়ন, দক্ষিণ-পূর্বে বালিয়া ইউনিয়ন, দক্ষিণে লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন ও ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন এবং পশ্চিমে মেঘনা নদী ও রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন অবস্থিত।
ইতিহাস
সম্পাদনাব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজ জরিপকারী মেজর জেমস রেনোল তৎকালীন বাংলাদেশের যে মানচিত্র অঙ্কন করেছিলেন তাতে চাঁদপুর নামে একটি জনপদের সন্ধান পাওয়া যায়। তখন চাঁদপুরের দক্ষিণে বর্তমান নদীগর্ভে বিলীন নরসিংহপুরে ছিল চাঁদপুরের অফিস আদালত। তখন পদ্মা-মেঘনা সংগমস্থল ছিল বর্তমান চাঁদপুর শহরের ষাট মাইল দক্ষিণে। ধীরে ধীরে নদী সমগ্র এলাকাকে গ্রাস করে। ১৭৭৯ সালে রেনোলের মানচিত্রে ত্রিপুরা জেলার সাথে নরসিংহপুরস্থ চাঁদপুরের অবস্থান সঠিকভাবে চিহ্নিত করা হয়।
নামকরণ
সম্পাদনাচাঁদপুরের নামকরণ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। বার ভূঁইয়াদের আমলে চাঁদপুর অঞ্চল ছিল বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদ রায়ের দখলে। এই অঞ্চলে তিনি একটি শাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ঐতিহাসিক জেএম সেনগুপ্তের মতে চাঁদ রায়ের নামানুসারে এই অঞ্চলের নাম হয় চাঁদপুর। অন্যমতে, চাঁদপুর শহর সংলগ্ন কোড়ালিয়া গ্রামের চাঁদ ফকিরের নাম অনুসারে এই অঞ্চলের নাম হয় চাঁদপুর।
প্রতিষ্ঠাকাল
সম্পাদনা১৮৭৮ সালে তৎকালীন ত্রিপুরা জেলার অংশ বিশেষ নিয়ে চাঁদপুর মহকুমা গঠিত হয়। রেলওয়ে বিভাগের সাহেবদের আনাগোনা, ২২টি বিখ্যাত পাট কোম্পানির ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ইত্যাদি কারণে মেঘনা-ডাকাতিয়ার মোহনার উভয় প্রান্তে চাঁদপুর লোকালয়ে তারা একটি পৌরসভা স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল। তারই ফলশ্রুতিতে মহকুমা স্থাপনের ১৮ বছর পর ও আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের শাখা লাইনটি স্থাপনের ১১ বছর পর সরকারি আদেশে ১৮৯৬ সালের ১ অক্টোবর চাঁদপুর প্রথমে গ শ্রেণীর পৌরসভা হিসেবে যাত্রা শুরু করে। প্রথমে ৯ জন সদস্য নিয়ে (৪ জন ইংরেজ ও ৫ জন স্থানীয় গণ্যমান্য নাগরিক) পৌর পরিষদ গঠিত হয়। তাদের সবাই ইংরেজ ভাইসরয় কর্তৃক নিযুক্ত হতেন। পরবর্তী সময়ে শুধুমাত্র হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানকারীগণের সরাসরি ভোটে পৌর পরিষদ নির্বাচিত হত। তার কিছু সময় পর হোল্ডিংয়ে বসবাসকারী আবাসিকদের মধ্যে যারা ন্যূনতম এন্ট্রান্স পাশ ছিলেন তারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হন এবং ভোট প্রদান করতে পারতেন। ১৯২০ সালের আগে কোনো ভোটের ব্যবস্থা ছিল না। পৌর পরিষদ ইংরেজ ভাইসরয় কর্তৃক নিযুক্ত হত। পৌরসভা নির্বাচিত নাগরিক, যাদের ভোটাধিকার ছিল তাদের ভোটে ১৯২০ সনেরমনীমোহন রায় প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চাঁদপুর পৌরসভাকে ১৯৮৪ সালের ১ নভেম্বর খ শ্রেণীতে এবং ১৯৮৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ক শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়। ২০০৮ সালের ১৪ মে চেয়ারম্যান পদবী পরিবর্তন করে মেয়র নামকরণ করা হয় এবং কমিশনার পদবী পরিবর্তন করে কাউন্সিলর করা হয়। প্রথম মেয়র হিসেবে জনাব নাছির উদ্দিন আহমেদ দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ ১১৯ বছরের বিশেষ সময়ে কয়েকজন প্রশাসক দায়িত্ব পালন করেন। ১১ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ১২তম নির্বাচনে ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল ১ম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ঐতিহ্য
সম্পাদনাঐতিহ্যগতভাবেই চাঁদপুরকে প্রাচ্যের ড্যান্ডি বলা হত। নদীমাতৃক বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর নদী বন্দর ও প্রসিদ্ধ বাণিজ্য নগরায়ন হিসেবে এই মহকুমার খ্যাতি ছিল পৃথিবী ব্যাপী। রূপালী ইলিশের রাজধানী হিসেবে চাঁদপুরের সুনাম এখনও বহমান।
প্রশাসনিক এলাকা
সম্পাদনাচাঁদপুর পৌরসভায় ১৫টি ওয়ার্ড রয়েছে।[১] এ পৌরসভার প্রশাসনিক কার্যক্রম চাঁদপুর সদর থানার আওতাধীন। এটি জাতীয় সংসদের ২৬২নং নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুর-৩ এর অংশ।
শিক্ষা ব্যবস্থা
সম্পাদনা২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চাঁদপুর পৌরসভার সাক্ষরতার হার ৮০.০৫%।[১] এ পৌরসভায় ৪টি কলেজ, ১৭টি স্কুল এন্ড কলেজ, ১৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৪৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
সম্পাদনা- বিশ্ববিদ্যালয়
- কলেজ
- চাঁদপুর সরকারি কলেজ
- চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ
- চাঁদপুর মেডিক্যাল কলেজ
- আল আমিন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ
- পুরান বাজার ডিগ্রী কলেজ
- চাঁদপুর ইউনানী তিব্বিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
- ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ
- চাঁদপুর রেসিডেন্সিয়াল কলেজ
- চাঁদপুর সিটি কলেজ
- কালেক্টরেড স্কুল এন্ড কলেজ
- মাধ্যমিক বিদ্যালয়
- চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
- গনি মডেল হাই স্কুল
- ডিএন উচ্চ বিদ্যালয়
- টেকনিক্যাল হাই স্কুল
- টেকনিক্যাল স্কুল এবং কলেজ (ভকেশোনাল)
- মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- লেডি প্রতিমা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- লেডি দেহলভী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
- আক্কাস আলী রেলওয়ে একাডেমি
- পুরান বাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- চাঁদপুর নুরিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়
- পুরান বাজার এমএইচ উচ্চ বিদ্যালয়
- চাঁদপুর পৌর শহীদ জাবেদ উচ্চ বিদ্যালয়
- পীর মহসিন উদ্দিন পৌর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
- হাফেজ মাহমুদা পৌর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
যোগাযোগ ব্যবস্থা
সম্পাদনাচাঁদপুর শহরে দুটি রেলস্টেশন আছে। এই দুইটি স্টেশন থেকে লাকসাম ও চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ট্রেন ছেড়ে যায়। শহরে দুইটি বাস টার্মিনাল আছে একটি স্বর্ণখোলা জেলা বাস টার্মিনাল।এখান থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, সিলেট, খাগড়াছড়ি, গাজীপুর, নোয়াখালী, রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, লক্ষীপুর ও ফেনীর উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়।অন্যটি বাবুরহাট বাস টার্মিনাল, যেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। শহরের মাদ্রাসা রোডে দেশের অন্যতম ব্যস্ত ও বৃহত্তম চাঁদপুর নদী বন্দর অবস্থিত। এখান থেকে সরাসরি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সুরেশ্বর ও হাটুরিয়ার উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছেড়ে যায়। এছাড়া লোকালে বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর জেলার উদ্দেশ্যে লঞ্চ ছেড়ে যায়।
অর্থনীতি
সম্পাদনামূলত কৃষি, ব্যবসা এবং বৈদেশিক রেমিটেন্সের উপর এই পৌরসভার অর্থনীতি নির্ভরশীল।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
সম্পাদনা- আব্দুল করিম পাটওয়ারী –– চাঁদপুর পৌরসভার প্রাক্তন (১৯৭৪-১৯৮২) মেয়র।
- মিজানুর রহমান চৌধুরী –– বাংলাদেশের প্রাক্তন (১৯৮৬ -১৯৮৮) প্রধানমন্ত্রী।
জনপ্রতিনিধি
সম্পাদনা- পৌর মেয়র: জিল্লুর রহমান জুয়েল
- চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান/মেয়রগণের তালিকা
ক্রম | নির্বাচিত চেয়ারম্যান/মেয়র | সময়কাল |
---|---|---|
১ | রমনী মোহন রায় | ৪ জুন ১৯২০ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯২৬ |
২ | মধুসূদন রায় | ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯২৬ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪২ |
৩ | অক্ষয় কুমার দে সরকার | ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৪২ থেকে ১২ অক্টোবর ১৯৪৬ |
৪ | ক্ষিরোদ চন্দ্র ঘোষ | ১২ অক্টোবর ১৯৪৬ থেকে ১২ অক্টোবর ১৯৫২ |
৫ | মোহাম্মদ আব্দুস সালাম (মোক্তার) | ১৫ নভেম্বর ১৯৫২ থেকে ০৯ নভেম্বর ১৯৫৬ |
৬ | মোহাম্মদ আব্দুল করিম পাটওয়ারী | ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪ থেকে ১৭ অক্টোবর ১৯৮২ |
৭ | মোহাম্মদ সামছুদ্দিন আহম্মেদ বিএ | ৮ মার্চ ১৯৮৪ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৮৮ |
৮ | মোহাম্মদ নুরুল হক বাচ্চু মিয়াজী | ১৪ মার্চ ১৯৮৯ থেকে ৩০ ডিসেম্বর ১৯৯১ |
৯ | মোহাম্মদ ইউছুফ গাজী | ৭ মার্চ ১৯৯৫ থেকে ৭ নভেম্বর ২০০০ |
১০ | মোহাম্মদ শফিকুর রহমান ভূঁইয়া | ৭ নভেম্বর ২০০০ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ |
১১ | নাছির উদ্দিন আহমেদ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ থেকে ১৪ মে ২০০৮ |
১২ | নাছির উদ্দিন আহমেদ | ১৪ মে ২০০৮ হতে অক্টোবর ২০২০[২] |
১৩ | জিল্লুর রহমান জুয়েল | অক্টোবর ২০২০ হতে বর্তমান |
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ "ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য" (পিডিএফ)। web.archive.org। Wayback Machine। Archived from the original on ৮ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০১৯।
- ↑ এক নজরে চাঁদপুর পৌরসভা, পৌর ইনফো, ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ইং, সংগ্রহের তারিখ 2017-02-26 এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনাএই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |