ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী
ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী (ইংরেজি: Trailokyanath Chakravarty) (১৮৮৯– ৯ আগস্ট, ১৯৭০) ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের বিপ্লবী।
ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী Trailokyanath Chakravarty | |
---|---|
![]() ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী | |
জন্ম | ৫ মে ১৮৮৯ ইং কাপাসাটিয়া গ্রাম, উছমানপুর ইউনিয়ন, কুলিয়ারচর উপজেলা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত(বর্তমানে বাংলাদেশ) |
মৃত্যু | ৯ আগস্ট ১৯৭০ |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারতীয় (১৮৮৯-১৯৪৭) পাকিস্তানি (১৯৪৭-১৯৭০) |
আন্দোলন | ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন |
জন্ম ও শিক্ষাজীবনসম্পাদনা
ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলার কাপাসাটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম দুর্গাচরণ চক্রবর্তী এবং মাতার নাম প্রসন্নময়ী। এঁদের পঞ্চম সন্তান ছিলেন ত্রৈলোক্যনাথ। [১] তার পিতাও স্বদেশী আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন। ১৯০৫ সালে ত্রৈলোক্যনাথ বছরখানেক ধলা হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। ১৯০৬ সালে স্বদেশী আন্দোলনের সময় তার অনুজ চন্দ্রমোহন চক্রবর্তী তাকে সাটিরপাড়া হাই স্কুলে ভর্তি করে দেন। সেসময় সাটিরপাড়া স্কুলে দুজন শিক্ষক ছিলেন মহিম চন্দ্র নন্দী এবং শীতল চক্রবর্তী। মহিম চন্দ্র নন্দী বিলাতী লবণ ফেলার অপরাধে ঢাকা জেলে বন্দি ছিলেন কিছুদিন। ১৯০৯ সালে ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী প্রথমবার জেল থেকে ছাড়া পেলে জেলগেটে শীতল চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন।[২]
কর্মজীবনসম্পাদনা
প্রবেশিকা পরীক্ষার ঠিক আগে ১৯০৮ সালে বিপ্লবী কাজের জন্য গ্রেপ্তার হলে প্রথাগত শিক্ষার ইতি হয়। ১৯০৬ সালে অনুশীলন সমিতিতে যোগ দেন। জাতীয়ভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্যায়াম প্রতিষ্ঠান গঠন করে নিজ জেলায় বিপ্লবী ঘাঁটি তৈরি করতে থাকেন। ১৯০৯ সালে ঢাকায় আসেন এবং ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলায় পুলিশ তার সন্ধান শুরু করলে আত্মগোপন করেন। এ সময়ে আগরতলায় উদয়পুর পাহাড় অঞ্চলে গিয়ে ঘাঁটি তৈরি করেন। ১৯১২ সালে গ্রেপ্তার হন। পুলিশ একটি হত্যা মামলায় জড়ালেও প্রমাণের অভাবে মুক্তি পান। ১৯১৩-১৪ সালে মালদহ, রাজশাহী ও কুমিল্লায় ঘুরে গুপ্ত ঘাঁটি গড়তে থাকেন।[৩]
আন্দামান জেলসম্পাদনা
১৯১৪ সালে পুলিশ তাকে কলকাতায় গ্রেপ্তার করে বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলার আসামিরূপে আন্দামানে সেলুলার জেলে পাঠায়। পুলিনবিহারী দাস এবং তিনি উভয়েই ছিলেন অনুশীলন সমিতির প্রথম যুগের নেতা যারা সেলুলার জেলে বন্দি ছিলেন। ত্রৈলোক্যনাথ ১৯২৪ সালে জেল থেকে মুক্তি পান।[৪]
মুক্তির পর দেশবন্ধু চিত্ত রঞ্জন দাশের পরামর্শে দক্ষিণ কলকাতা জাতীয় বিদ্যালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯২৭ সালে গ্রেপ্তার হয়ে বার্মার মান্দালয় জেলে প্রেরিত হন। ১৯২৮ সালে তাকে ভারতে এনে নোয়াখালী হাতিয়া দ্বীপে অন্তরীণ করে রাখা হয়। ঐ বছরই মুক্তি পেয়ে উত্তর ভারতে যান এবং চন্দ্রশেখর আজাদ প্রমুখের সংগে হিন্দুস্তান রিপাবলিকান আর্মিতে যোগ দেন। পরে বিপ্লবী দলের আদেশে বার্মার বিপ্লবীদের সংগে যোগাযোগের উদ্দেশ্যে বার্মায় যান। ১৯২৯ সালে লাহোর কংগ্রেসে যোগ দেন। ১৯৩০ সালে গ্রেপ্তার হয়ে ১৯৩৮ সালে মুক্তি পান।[৩]
সুভাষ চন্দ্র বসু এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কাজসম্পাদনা
তিনি সেই বছরেই সুভাষ চন্দ্র বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করে রামগড় কংগ্রেসে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সিপাহি বিদ্রোহ ঘটাবার চেষ্টায় ভারতীয় সৈন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও সুবিধা করতে পারেননি। এ সময়ে চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হন। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়ে গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৪৬ সালে মুক্তি পান।[৩]
পাকিস্তানকালীন কর্মজীবনসম্পাদনা
১৯৪৬ সালেই নোয়াখালীতে সংগঠন গড়বার চেষ্টা করেন। স্বাধীনতালাভের পর পূর্ব পাকিস্তানে নাগরিক হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন। ১৯৫৪ সালে সংযুক্ত প্রগতিশীল দলের প্রার্থী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান এসেম্বলিতে নির্বাচিত হন। কিন্তু ১৯৫৮ সালে তার নির্বাচন অগ্রাহ্য হয় এবং রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ এমনকি সামাজিক কাজকর্মেও তার ওপর বাধা আরোপ করা হয়। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় খোদ নিজের নিজের দেশের সরকারই এই বৃদ্ধ বিপ্লবীকে আবার কারারুদ্ধ করে। সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর হওয়া বৈমাতৃসুলভ ব্যবহারের বিস্মৃত ও ব্যথিত হন তিনি। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত স্বগ্রামে প্রকৃতপক্ষে নির্জনবাস করেন। চিকিৎসার জন্য ভারতে আসেন। সেসময় চাতরায় 'সংগঠনী'র কর্মীদের সঙ্গে কয়েকদিন কাটিয়ে কলকাতা হয়ে দিল্লি যান ও ভারতের পার্লামেন্টে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেন,যা আজ এক ঐতিহাসিক দলিল। দিল্লিতে সংবর্ধনা পান। অবশেষে সেখানেই ৯ই আগস্ট তারিখে তার জীবনাবসান হয়।[৩]
প্রকাশিত গ্রন্থসমূহসম্পাদনা
- জীবন স্মৃতি
- জেলে ত্রিশ বছর - ব্রিটিশ :পাক-ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস [২][৩]
- ভারতের বিপ্লব সংগ্রাম [১]
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ ক খ ""বিপ্লবী ত্রৈলোক্য মহারাজকে স্মরণে কেন বাঙালীর কৃপণতা""। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০২০।
- ↑ ক খ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, জেলে ত্রিশ বছর, ধ্রুপদ সাহিত্যাঙ্গন, ঢাকা, ঢাকা বইমেলা ২০০৪, পৃষ্ঠা ২৫-২৬, ৪৬-৪৭।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ২৭৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
- ↑ চিন্মোহন সেহানবীশ গণেশ ঘোষ ও অন্যান্য, মুক্তির সংগ্রামে ভারত, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা দ্বিতীয় সংস্করণ ডিসেম্বর ২০১০ পৃষ্ঠা ৫৬