নীহাররঞ্জন রায়
নীহাররঞ্জন রায় (জন্ম : ১৪ই জানুয়ারি, ১৯০৩ - মৃত্যু : ৩০শে আগস্ট, ১৯৮১) ছিলেন বাঙালি ইতিহাসবিদ, সাহিত্য সমালোচক ও শিল্পকলা-গবেষক পণ্ডিত। দেশবরেণ্য ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মনীষী ছিলেন তিনি।
নীহাররঞ্জন রায় | |
---|---|
![]() নীহাররঞ্জন রায় | |
জন্ম | |
মৃত্যু | আগস্ট ৩০, ১৯৮১ | (বয়স ৭৮)
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় (১৯০৩-১৯৪৭) ভারতীয় (১৯৪৭-১৯৮১) |
পেশা | ইতিহাসবেত্তা, সাহিত্য সমালোচক |
দাম্পত্য সঙ্গী | মণিকা রায় (১৯০৪ - ১৯৯১) |
সন্তান | দুই পুত্র ও এক কন্যা |
আত্মীয় | চার পৌত্র-পৌত্রী ও দৌহিত্রী |
পুরস্কার | পদ্মভূষণ, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার |
স্বাক্ষর | |
![]() |
জন্ম ও পরিবারসম্পাদনা
১৯০৩ সালের ১৪ জানুয়ারি ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মহেন্দ্রচন্দ্র রায়। তিনি মণিকা রায় নামীয় এক রমণীকে বিয়ে করেন। রায় দম্পতির সংসারে দুই পুত্র এবং এক কন্যা রয়েছে।[১]
শিক্ষাজীবনসম্পাদনা
প্রাথমিক শিক্ষা ময়মনসিংহে সম্পন্ন হয়। সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্সসহ বি.এ পাস করেন ১৯২৪ সালে। পরে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৬ সালে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের শিল্পকলা শাখায় এম.এ পাস করে রেকর্ড মার্ক-সহ প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯২৭ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ ফেলো হিসাবে নিযুক্ত হয়ে গবেষণায় ব্রতী হন। বৃত্তি নিয়ে ১৯৩৫ সালে ইউরোপ যান এবং হল্যান্ড-এর লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি এবং লন্ডন থেকে গ্রন্থাগার পরিচালনা বিষয়ে ডিপ্লোমা নেন।
কর্মজীবনসম্পাদনা
প্রাচীন ভারতে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৩৭ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গ্রন্থাগারিক নিযুক্ত হন। ১৯৪৬ সালে শিল্পকলা বিষয়ে রানী বাগেশ্বরী অধ্যাপক পদে বৃত হন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েই। ১৯৬৫ সালে অবসর গ্রহণের পর ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তাকে প্রফেসর এমিরেটস করা হয়। সিমলায় প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্স স্টাডিজ প্রতিষ্ঠানের প্রথম পরিচালক হয়ে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ঐ পদ অলঙ্কৃত করে ছিলেন। ইউনেস্কো-এর প্রতিনিধিরূপে ব্রহ্মদেশ সরকারের সংস্কৃতি ও ইতিহাস-বিষয়ক উপদেশক ছিলেন ১৯৭৩-৭৬ সাল পর্যন্ত।
এছাড়াও, বিভিন্ন সময়ে -- লাইব্রেরি অ্যাসোশিয়েশন অফ গ্রেট ব্রিটেন, লন্ডন; রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটি অফ গ্রেট ব্রিটেন, লন্ডন; রয়েল সোসাইটি অফ আর্টস, লন্ডন; ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোশিয়েশন অফ আর্টস, জুরিখ; এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতা'র ফেলো নির্বাচিত হন।
অবৈতনিক কর্মসম্পাদনা
- সম্পাদক : এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতা, ১৯৪৮-৫০।[২]
- মূল সভাপতি : নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন, লখনউ অধিবেশন, ১৯৫৩ ও জামশেদপুর অধিবেশন, ১৯৮০।
- সদস্য : উপদেষ্টা পরিষদ, ভারতীয় পুরাতত্ত্ব আধিকারিক।
- মূল সভাপতি : ভারতীয় ইতিহাস কংগ্রেস, পাটিয়ালা, ১৯৬৭।
- মূল সভাপতি : ভারতীয় পি-ই-এন কংগ্রেস, পাটিয়ালা, ১৯৬৯।
- সভাপতি : অল ইন্ডিয়া ওরিয়েন্টাল কনফারেন্স, শান্তিনিকেতন, ১৯৮০।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অধ্যাপক : কেরল বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিবান্দাম, ১৯৬৩; মহারাজা সয়াজীরাও বিশ্ববিদ্যালয়, বরোদা, ১৯৬৬ ও পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়, চণ্ডীগড়, ১৯৭২।
রাজনৈতিক জীবনসম্পাদনা
ছাত্রবস্থা থেকেই তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। এক সময়ে রাজনীতি ও সাংবাদিকতা করেছেন : আকৃষ্ট হয়েছিলেন অনুশীলন সমিতির প্রতি, অসহযোগ আন্দোলন-এ অংশ নিয়েছিলেন, সুভাষচন্দ্র বসু প্রতিষ্ঠিত ইংরেজি লিবার্টি পত্রিকার সাহিত্য বিভাগ পরিচালনা করেছেন। আর এস পি (রিভ্যলুশনারী সোশ্যালিস্ট পার্টি) দলের সঙ্গে যুক্ত হন এবং দলের মুখপত্র ক্রান্তির পরিচালনা মণ্ডলীতে ছিলেন। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড় আন্দোলন-এ অংশ নেওয়ায় কারাবরণ করেন।
সাহিত্য সম্পাদনাসম্পাদনা
- বাঙ্গালীর ইতিহাস : আদি পর্ব (১৯৪১) (১৯৫০ সালে রবীন্দ্র পুরস্কারপ্রাপ্ত)
- রবীন্দ্র-সাহিত্যের ভূমিকা (১৯৪১)
- কৃষ্টি কালচার সংস্কৃতি (১৯৭৯)
- বাংলার নদ-নদী (১৩৫৪)
- বাঙালী হিন্দুর বর্ণভেদ (১৩৫৪)
- প্রাচীন বাংলার দৈনন্দিন জীবন (১৩৫৪)
- Brahminical Gods in Burma (1932)
- Sanskrit Buddhism in Burma (1936)
- Maurya and Sunga Art (1947)
- Theravada Buddhism in Burma (1946)
- An Artist in Life (1967) (১৯৬৯ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত)
- Idea and Image in Indian Art (1973)
- An Approach to Indian Art (1974)
- Mughal Court Painting (1974)
- The Sikh Gurus and The Sikh Society (1975)
- Maurya and Post-Maurya Art (1976)
- Eastern Indian Bronzes (1986)
পুরস্কার ও সম্মাননাসম্পাদনা
- ১৯২৮ সালে প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি প্রাপক গবেষক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
- ১৯৩০ সালে মোয়াট স্বর্ণপদক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
- রবীন্দ্র পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার, ১৯৫০।
- সরোজিনী স্বর্ণপদক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬০।
- ১৯৬৯ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।
- তার কর্ম কুশলতা ও সাংস্কৃতিক অবদানের স্বীকৃতিতে ভারত সরকার তাকে ১৯৬৯ সালে পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত করেন।[১]
- বিমলাচরণ লাহা স্বর্ণপদক, এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতা, ১৯৭০।
- প্রফুল্লকুমার সরকার (আনন্দ) পুরস্কার, কলকাতা, ১৯৮০।
বিদেশী সম্মাননাসম্পাদনা
- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে ভূমিকা জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ২০১২ সালে 'বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা' প্রদান করা হয়।[৩]
মৃত্যুসম্পাদনা
১৯৮১ সালের ৩০শে আগস্ট কলকাতায় তার বাসভবনে লোকান্তরিত হন।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ ক খ Ray, Niharranjan (1993). Bangalir Itihas: Adiparba, Kolkata: Dey's, আইএসবিএন ৮১-৭০৭৯-২৭০-৩, pp.761-3
- ↑ Chakrabarty, Ramakanta (ed.) (2008). Time Past and Time Present, Kolkata: The Asiatic Society, p.28
- ↑ সম্মান আরো ৬১ বিদেশি বন্ধুকে, বিডিনিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম, ২০ অক্টোবর ২০১২