ঈদগাহ
ঈদগাহ (উর্দু: عید گاہ) দক্ষিণ এশীয় ইসলামী সংস্কৃতিতে ব্যবহৃত একটি শব্দ যা দ্বারা খোলা আকাশের নিচে ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার নামাজ আদায়ের জন্য সাধারণত শহরের বাইরে বা শহরতলীতে বড় ময়দানকে বোঝানো হয়। বছরের অন্যান্য সময়ে এই জায়গায় নামাজ পড়া হয় না। সুন্নত অনুযায়ী ঈদের দিন সকালে মুসলমানগণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে, পারতপক্ষে নতুন পোশাক পরে ঈদগাহে জমায়েত হয়। যদিও ঈদগাহ একটি হিন্দুস্তানি শব্দ, বিশ্বের অন্যান্য অংশে ঈদের নামাজ পরার জন্য যেকোনো খোলা স্থানকে বুঝানোর ক্ষেত্রে এ শব্দ ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যেহেতু ইসলামী পরিভাষায় এর কোন নির্দিষ্ট আরবি শব্দ নেই।

শরীয়তে তাৎপর্যসম্পাদনা
ঈদগাহে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে শরীয়তের কিছু সুস্পষ্ট বিধান আছে।
- মসজিদের ঈদের নামাজ পড়লে হবে কিন্ত্য ঈদগাহে নামাজ পড়া হচ্ছে সুন্নত।[১]
- সুন্নত অনুসারে, শহরে ঈদের নামাজ পড়ার চেয়ে শহরের বাইরে উন্মুক্ত আকাশের নিচে খোলা মাঠে ঈদের নামাজ পড়া উত্তম এবং পূণ্যের কাজ[২]
- ঈদের মাঠে জমায়েত হওয়ার মাধ্যমে সৌহাদ্য, সম্প্রীতি এবং ভ্রাতৃত্তবোধ বৃদ্ধি পায়। সেজন্য অনেকগুলো ছোট ঈদগাহের তুলনায় সম্ভাব্য বড় ঈদগাহ তৈরী করা উচিত।[৩]
- ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। কিন্তু ইসলামী চিন্তাবিদগণ মত প্রকাশ করেন যদি ঈদগাহের দূরত্ব অনেক বেশি হয় অথবা কেউ বৃদ্ধ বা অসুস্থ থাকেন তাহলে নিকটস্থ মসজিদে ঈদের নামাজ পড়তে পারবেন।[৪]
বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ঈদগাহসম্পাদনা
শোলাকিয়া ঈদগাহসম্পাদনা
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান।[৫] প্রতিবছর এ ময়দানে ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। কালের স্রোতে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানটি পরিণত হয়ে উঠেছে একটি ঐতিহাসিক স্থানে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় এখানে। এ ময়দানের বিশাল জামাত গৌরবান্বিত ও ঐতিহ্যবাহী করেছে কিশোরগঞ্জকে। বর্তমানে এখানে একসঙ্গে তিন লক্ষাধিক মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শুরুর আগে শর্টগানের ফাঁকা গুলির শব্দে সবাইকে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সঙ্কেত দেওয়া হয়। কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্বে নরসুন্দা নদীর তীরে এর অবস্থান।
মুঘল ঈদগাহসম্পাদনা
ঢাকার ধানমন্ডি থানায় অবস্থিত ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহ বা মুঘল ঈদগাহ। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। ১৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার সুবাদার সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজার প্রধান অমাত্য নীর আবুল কাসেম ধানমন্ডির শাহী ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন।[৬][৭]
শাহী ঈদগাহসম্পাদনা
সিলেট শহরের উত্তর সীমায় শাহী ঈদগাহ বা সিলেট শাহী ঈদগাহ মাঠের অবস্থান। বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক স্থাপনা সমুহের মধ্যে ১৭০০ সালের প্রথম দিকে নির্মিত সিলেটের শাহী ঈদগাহকে গণ্য করা হয়। [৮]
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ (Fatwa Darul Uloom, Vol. 5, P.2261)
- ↑ (Fatwa Darul Uloom, Vol 5, P. 208)
- ↑ (Ahsanul Fatwa, Vol. 4, P. 119)
- ↑ (Fatwa Rahimiyah, Vol. 1, P.276)
- ↑ Eid-ul Fitr ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ মে ২০১৩ তারিখে; Banglapedia; Retrieved on 2007-08-26.
- ↑ "৩৭২ বছরের পুরনো শাহী ঈদগাহ মাঠ"। দৈনিক সংগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ 22.09.2016। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] - ↑ "প্রত্নস্হলের তালিকা"। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। সংগ্রহের তারিখ 23.09.2016। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ সিলেট বিভাগের ইতিবৃত্ত। মোহাম্মদ মুমিনুল হক। প্রাকাশনায় - সেন্টার ফর বাংলাদেশ রিসার্চ ইউ. কে. গ্রন্থ প্রকাশকাল, সেপ্টেম্বর ২০০১।