জঙ্গলবাড়ি দুর্গ
জঙ্গলবাড়ি দুর্গ বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলায় অবস্থিত ঈশা খাঁর স্মৃতিবাহী একটি স্থাপনা। মসনদে-আলা-বীর ঈশা খাঁ ছিলেন বাংলার বার ভূঁইয়াদের প্রধান। ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি প্রকৃতপক্ষে ঈশা খাঁর দ্বিতীয় রাজধানী ছিল।[১] বর্তমানে এটি বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর কর্তৃক তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলাধীন কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের জঙ্গলবাড়ি গ্রামে নরসুন্দা নদীর তীরে দুর্গটির অবস্থান।[২]
জঙ্গলবাড়ি দুর্গ | |
---|---|
বিকল্প নাম | ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দুর্গ |
সাধারণ তথ্যাবলী | |
ধরন | দুর্গ |
স্থাপত্যশৈলী | মুঘল স্থাপত্য |
অবস্থান | করিমগঞ্জ |
ঠিকানা | জঙ্গলবাড়ি, কাদিরগঞ্জ, করিমগঞ্জ উপজেলা |
শহর | কিশোরগঞ্জ |
দেশ | বাংলাদেশ |
স্বত্বাধিকারী | বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর |
ভূমিমালিক | দেওয়ান ফতেহ আলী দাদ খাঁ |
পরিচিতি | ঈশা খাঁ |
অন্যান্য তথ্য | |
কক্ষসংখ্যা | ১০-১২ |
ইতিহাস
সম্পাদনাঈশা খাঁর আদি নিবাস আফগানিস্তান। মুঘল ও ইংরেজদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ বাংলার জমিদারগণ তাকে গোয়েন্দা মারফতে বাংলায় আসার সংবাদ পাঠালে তিনি ১৪০০ ঘোড়সওয়ার, ২১টি নৌবিহার ও গোলাবারুদ নিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যে পৌঁছান।[৩] ১৫৮৫ সালে তৎকালীন কোচ রাজা লক্ষ্মণ হাজরা ও রাম হাজরাকে পরাজিত করে জঙ্গলবাড়ি দুর্গ দখল করেন।[৪] কোচ রাজা লক্ষ্মণ হাজরা বা ঈশা খাঁর কেউ এই দুর্গের স্থপতি নয়। এটি প্রাক-মুসলিম যুগে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়। তবে ঈশা খাঁ দুর্গ দখল করার পর এর ভিতরে কিছু স্থাপনা নির্মাণ করেন।[৫] এই দুর্গ থেকে পরে তিনি একে একে তিনি সোনারগাঁওসহ মোট ২২টি পরগণা দখল করেন। ১৫৯৭ সালে তিনি পাকুন্দিয়ার এগারসিন্দুরে মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি মানসিংকে পরাজিত করেন।[৩]
বিবরণ
সম্পাদনাদুর্গটিতে বর্তমানে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ইটের পাঁচিল দিয়ে ভাগ করা দুটি চত্বর রয়েছে। স্থানীয়রা পাঁচিলটি পরিচিত 'প্রাসাদ প্রাচীর' নামে। দক্ষিণ দিকে একটি তোরণ আছে। তোরণটির সামনের দিকে 'করাচি' নামে একটি পূর্বমূখী একতলা ভবন রয়েছে। তোরণের পিছনে 'অন্দর মহল' নামে এক তলা দক্ষিণ মুখী একটি ভবন রয়েছে। পুরো ইটের দেওয়াল চুনকামসহ লেপন দিয়ে ঢাকা।[৩] দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তর দিকে গভীর পরিখা খনন করা আছে। পরিখাটিকে পূর্বদিকে নরসুন্দা নদীর সাথে সংযুক্ত করা হয়। বাড়ির সামনে ঈশা খাঁর সময়ের খনন করা একটি দীঘি আছে। তার পাশেই আছে একটি তিনগম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। ধারণা করা হয়, ঈশা খাঁই মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। মসজিদটিতে রয়েছে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর ছাপ।[৬] মসজিদের পাশেই ঈশা খাঁর বংশধরদের বাঁধানো কবর রয়েছে। ২০০৫ সালের ১২ জুন দুর্গের ভিতরের দরবারগৃহটি সংস্কার করে স্থানীয় প্রশাসন 'ঈশা খাঁ স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগার' স্থাপন করে। সেখানে ঈশা খাঁর বিভিন্ন ছবি, তার বংশধরদের তালিকা এবং বিভিন্ন নিদর্শন রয়েছে।[২]
চিত্রশালা
সম্পাদনা-
জঙ্গলবাড়ি দুর্গের সম্মুখভাগ
-
জঙ্গলবাড়ি দুর্গের পশ্চিম দিক
-
জঙ্গলবাড়ি দুর্গের অভ্যন্তরভাগ
-
জঙ্গলবাড়ি দুর্গের ভিতরের দেয়ালের কারুকার্য
-
জঙ্গলবাড়ি দুর্গের প্রধান প্রবেশদ্বার
-
জঙ্গলবাড়ি দুর্গের পিছনের দরজা
-
জঙ্গলবাড়ি দুর্গের পিছনের দেয়াল
-
জঙ্গলবাড়ি দুর্গের এক কোণ
-
জঙ্গলবাড়ি দুর্গের সম্মুখভাগের প্রবেশদ্বার
-
জঙ্গলবাড়ি দুর্গের পশ্চিম দিকের প্রবেশদ্বার
-
জঙ্গলবাড়ি দুর্গের জাদুঘরের প্রধান প্রবেশদ্বার
-
জঙ্গলবাড়ি দুর্গের পাঠাগার
-
জঙ্গলবাড়ি দুর্গের মসজিদ
-
জঙ্গলবাড়ি দুর্গের পূর্বদিক
-
জঙ্গলবাড়ি দুর্গের সামনের দিঘী
-
ঈশা খাঁর উত্তরসূরিদের কবর
-
ঈশা খাঁর উত্তরসূরিদের কবর একাংশ
-
জঙ্গলবাড়ি দুর্গের মসজিদ
-
বিজ্ঞপ্তিসংক্রান্ত সাইনবোর্ড
-
জঙ্গলবাড়ি শাখা ডাকঘর
-
ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দুর্গের অভ্যন্তরভাগ
-
ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দুর্গের সম্মুখভাগ
-
ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দুর্গের অভ্যন্তরভাগ
-
ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দুর্গের মসজিদ
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ মোহাম্মদ আবদুল সেলিম। "ঈশা খাঁর দ্বিতীয় রাজধানী"। দৈনিক সংগ্রাম। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ক খ "ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি"। আজকের পত্রিকা। ১১ নভেম্বর ২০১৫। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৬।
- ↑ ক খ গ রুমন চক্রবর্ত্তী (১৮ জুন ২০১৫)। "ঈশা খাঁর জঙ্গলবাড়ি দূর্গ"। রাইজিংবিডি। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৬।
- ↑ রীতা ভৌমিক (৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। "ইতিহাস খুঁজে ফেরা"। দৈনিক যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৬।
- ↑ "জঙ্গলবাড়ি দুর্গ"। কিশোরগঞ্জ ডট কম। জুন ২৩, ২০১০। ২১ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৬।
- ↑ "কিশোরগঞ্জে ঈশা খাঁর স্মৃতি নিশ্চিহ্নের পথে"। বণিক বার্তা। ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]