এগারসিন্দুর দুর্গ

মধ্যযুগের বাংলার একটি দুর্গ
(এগারসিন্ধুর দুর্গ থেকে পুনর্নির্দেশিত)

এগারসিন্দুর দুর্গ বা এগারসিন্ধুর দুর্গ[১] ছিল মধ্যযুগের বাংলার একটি দুর্গ। বর্তমান বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে এগারসিন্দুর গ্রামে অবস্থিত। বারো ভুঁইয়াদের নেতা ঈসা খান মুঘলদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই দুর্গ ব্যবহার করেছিলেন। বর্তমানে এই দুর্গের অস্তিত্ব নেই।[১] এগারসিন্দুরে দুর্গের পাশে রয়েছে বেবুথ রাজার দিঘি, সাদী মসজিদ, শাহ মাহমুদ মসজিদ। দুর্গটি ঈশা খাঁর শক্ত ঘাঁটি ছিল।

এগারসিন্দুর দুর্গ
এগারসিন্ধুর দুর্গ
মানচিত্র
বিকল্প নামসামন্তরাজা বেবুদের এগারসিন্ধুর দুর্গ
সাধারণ তথ্য
ধরনদুর্গ
স্থাপত্য রীতিমুঘল স্থাপত্য
অবস্থানপাকুন্দিয়া
ঠিকানাপাকুন্দিয়া উপজেলা
শহরকিশোরগঞ্জ
দেশবাংলাদেশ
স্বত্বাধিকারীবাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর
পরিচিতির কারণঈশা খাঁ

নামকরণ সম্পাদনা

দুর্গটি তৎকালীন সময়ে বানার, শীতলক্ষা, আড়িয়াল খাঁ, গিয়র সুন্দা ইত্যাদির সংযোগস্থলে অবস্থিত ছিল। এ থেকে এগারসিন্ধুর নামটি উদ্ভব হয়।[১]

১১টি নদীর মোহনায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে উঁচু শক্ত এঁটেল লাল মাটির এলাকা ব্যবসা-বাণিজ্য ও বসবাসের স্থান হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় গঞ্জের হাট নামে প্রসিদ্ধ ছিল। গঞ্জের হাট ১১টি নদীর সঙ্গমস্থলে বিধায় তখনকার জ্ঞানী-গুণীজন ঐ ১১টি নদীকে সিন্দু নদ নামে আখ্যায়িত করে স্থানটির নামকরণ করা হয় এগারসিন্দুর। এটি ইতিহাস সমৃদ্ধ জনপদ হিসেবে গড়ে উঠেছিল।

নির্মাণ সম্পাদনা

বেবুধ নামক এক কোচ উপজাতি প্রধান ষোড়শ শতাব্দীতে এই দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। তিনি একে রাজধানী করেন। বেবুধ রাজার দীঘি নামক একটি দীঘি এখানে অবস্থিত এবং এই দীঘির পাড়ে রাজপ্রাসাদ ছিল বলে ধারণা করা হয়।[১] ঈশা খাঁ বেবুধ রাজার কাছ থেকে দুর্গটি দখল করে নেন এবং একে শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করেন।

গঠন সম্পাদনা

দুর্গে প্রায় ৬০ ফুট চওড়া মাটির দেয়াল ছিল। এর তিন দিকে নদী দিয়ে ঘেরা ছিল এবং এক দিকে পরিখা খনন করে প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা ছিল।[১]

ঈসা খানের অধীন সম্পাদনা

বারো ভুঁইয়াদের প্রধান ঈসা খান এগারসিন্ধুর দুর্গ দখল করে শক্তিশালী সামরিক ঘাটিতে পরিণত করেন।[১] মুঘল বাদশাহ আকবর বাংলা জয়ের সময় ১৫৯৮ সালে তার সেনাপতি মানসিংহ দুর্গ আক্রমণ করেছিলেন।[১]

পরবর্তী অবস্থা সম্পাদনা

অহোম রাজ্য ১৭ শতাব্দীতে দুর্গটি দখল করে নেয়। সুবাদার ইসলাম খান তাদের পরাজিত করেন। তিনি দুর্গটি ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৮৯৭ সালে সংঘটিত ভূমিকম্পে দুর্গের বাকি অংশগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।[১] তবে দুর্গের ভেতরে উঁচু একটি ঢিবি পাওয়া যায়, যেখান থেকে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কামান দাগানো হতো।

দুর্গ না থাকলেও ১৭ শতাব্দীর দুটি মসজিদ টিকে রয়েছে। এগুলো হল ১৬৫২ সালে নির্মিত সাদী মসজিদ ও ১৬৯৭ সালে নির্মিত শাহ মোহাম্মদ মসজিদ। সাদী মসজিদ বর্গাকার এবং আট কোণাকার মিনারবিশিষ্ট।[২]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা