আইনুন নিশাত
আইনুন নিশাত (জন্ম ২৯ এপ্রিল ১৯৪৮) হলেন বাংলাদেশী ইমেরিটাস অধ্যাপক, এবং পানি সম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ। তিনি ২০০৯ সালে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনসহ আরও কিছু আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনে বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০১৭ সালে বাংলা একাডেমি তাকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে।[১]
আইনুন নিশাত | |
---|---|
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য | |
কাজের মেয়াদ ২০১০ – ২০১৪ | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ, পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) | ২৯ এপ্রিল ১৯৪৮
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
শিক্ষা | পিএইচডি (পুরকৌশল) |
প্রাক্তন শিক্ষার্থী | বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্ট্রাথক্লাইড বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | ইমেরিটাস অধ্যাপক |
যে জন্য পরিচিত | পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনে জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ |
পুরস্কার | বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাআইনুন নিশাত ১৯৪৮ সালের ২৯ এপ্রিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা গাজী শামছুর রহমান ছিলেন একজন স্বনামধন্য বাংলাদেশী আইনবিদ ও আইন সংস্কারক। তার জন্মের সময় তার পিতা বাজিতপুরে সহকারী জর্জ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার শৈশবে তার বাবা বদলি হন জামালপুর, মুন্সীগঞ্জ ও পঞ্চগড়ে। এই সময়ে তিনি কোন বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেননি। তার বাবা পঞ্চগড়ে বদলি হওয়ার পর তিনি সেখানে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একেবারে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। এই স্কুলে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার পর তার বাবার বদলি হয় বগুড়ায়।
বগুড়া জিলা স্কুলে তিনি তিন-চার মাস পড়াশোনা করেন। পরে তার বাবার বদলি হয় নোয়াখালী জেলায়। নোয়াখালী জিলা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির পাঠ শেষ করেন। পরে তার বাবা বদলি হন সিলেটে। সিলেট থেকে আসেন ঢাকায়। ঢাকায় ছয়মাস থাকাকালীন পড়াশোনা করেন ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুলে। ঢাকা থেকে বদলি হন দিনাজপুরে। সেখানে দুই বছর পড়াশোনা করেন দিনাজপুর জিলা স্কুলে। সেখান থেকে আবার ঢাকা আসেন এবং নিশাত ভর্তি হন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে। এই স্কুল থেকে ১৯৬৩ সালে তিনি মেট্রিক পাশ করেন।[২]
মেট্রিক পাস করে ভর্তি হন নটর ডেম কলেজে ভর্তি হন। কলেজে একাদশ শ্রেণিতে থাকাকালীন একটি পরীক্ষামূলক বোর্ড পরীক্ষা হয়। নিশাতদের ব্যাচই একমাত্র ব্যাচ যারা নবম, দশক, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে বোর্ডে পরীক্ষা দিয়েছে। একাদশ শ্রেণির পরীক্ষার পর তার বাবার ফরিদপুর জেলায় বদলি হয়। নটর ডেম কলেজের হোস্টেলের বেহাল অবস্থার জন্য তিনি ফরিদপুর চলে যান এবং রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে ১৯৬৫ সালে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন।[২] পরে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরকৌশল বিষয়ে বিএসসি এবং পানি সম্পদ প্রকৌশল বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮১ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর স্ট্রাথক্লাইড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরকৌশল বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।[৩]
কর্মজীবন
সম্পাদনানিশাত তার কর্মজীবন শুরু করেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে। পরে তিনি ১৯৭২ সালে তার নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগে লেকচারার পদে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে তিনি পানি সম্পদ প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং ১৯৮৫ সালে পূর্ণ অধ্যাপক হন।[৩]
১৯৯৮ সালে নিশাত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘে যোগ দেন।[৪] তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন।[৫] তিনি ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন।[২]
অন্যান্য কাজ
সম্পাদনানিশাত বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ও ফিলিপাইনে বিশ্ব ব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু যমুনা সেতু নির্মাণকালে এর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য ছিলেন।[৩]
তিনি বাংলাদেশ জাতীয় পানি কাউন্সিল, ইন্দো-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন, বাংলাদেশ জাতীয় কৃষি কমিশন, এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কাউন্সিলের সদস্য। তিনি ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানি চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।[৩][৪]
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনানিশাতের স্ত্রী সামিনা সুলতানা। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপিকা ছিলেন। তার বড় কন্যা বুশরা নিশাত একজন পানিবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ। তিনি একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। মেজ মেয়ে সাজিয়া নিশাত পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ। তিনি কানাডায় থাকেন। ছোট কন্যা উজমা নিশাত কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। তিনি একটি মার্কিন কোম্পানিতে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার নিয়ে কাজ করছেন।[২]
প্রকাশনা
সম্পাদনা- বাংলাদেশ ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশন প্ল্যান ফর সাসটেনেবল এনভায়রনমেন্ট গভর্ন্যান্স, রাকিবুল আমিন, মনোয়ার ইসলাম, ডঃ হাসিব মোঃ ইরফানুল্লাহ সহযোগে।
- রিজিওনাল ওয়ার্কশপ প্রোসেডিংস অব দ্য ন্যাশনাল বায়োডায়ভারসিটি স্ট্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান, মীর ওয়ালিউজ্জামান সহযোগে।
- প্রোসেডিংস অব দি ওয়ার্কশপ অন দ্য শরীফ ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ: ফেসিং দ্য চেলেঞ্জ অব গ্লোবালাইজেশন, একে এনামুল হক সহযোগে।
- লিংকিং পিপল উইথ ন্যাচার: বায়োডায়ভারসিটি কনসারভেশন স্ট্যাটেজি ফর দ্য হিমেল রিজন, মীর ওয়ালিউজ্জামান সহযোগে।
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনা- ২০১৬: শেলটেক পদক[৬][৭]
- ২০১৭: বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রদত্ত ফেলোশিপ[৮]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "বাংলা একাডেমির সম্মানসূচক ফেলোশিপ পেলেন যারা"। দৈনিক যুগান্তর। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।
- ↑ ক খ গ ঘ আহমেদ, ফারুক (১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। "পানি, জলবায়ু এবং একজন আইনুন নিশাত"। দৈনিক ইত্তেফাক। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ ক খ গ ঘ "Curriculum Vitae - Ainun Nishat" (পিডিএফ)। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৭।
- ↑ ক খ "IUCN Bangladesh - Who's Who"। অক্টোবর ১৩, ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ৬, ২০১১।
- ↑ "North South University - Faculty Detail"। সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ৬, ২০১১।
- ↑ "সিরাজুল ইসলাম, রফিকুন নবী ও আইনুন নিশাত পেলেন শেলটেক পদক"। দৈনিক ইত্তেফাক। ৫ নভেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ "শেলটেক পদকে ভূষিত তিন গুণী"। দৈনিক কালের কণ্ঠ। ৫ নভেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১৭।
- ↑ "বাংলা একাডেমির ফেলোশিপ পেলেন সাত বিশিষ্টজন"। দৈনিক কালের কণ্ঠ। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮।