জামালপুর জেলা

বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি জেলা

জামালপুর জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি একটি 'বি' শ্রেণিভুক্ত জেলা। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে অবস্থিত। বিশেষ করে কৃষি পণ্যের জন্য সমৃদ্ধ এই জেলা। জেলাটির রেল পথে বাহাদুরাবাদ ঘাট, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, এবং সড়কপথে মেঘালয়ের সাথে যোগাযোগ রয়েছে। কৃষি প্রধান এ অঞ্চলে মূলত প্রধান ফসলের মধ্যে ধান, পাট, আখ, সরিষা বীজ, চিনাবাদাম, এবং গম উৎপন্ন হয়।ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের জন্য অন্যতম শুল্কস্টেশন রয়েছে এই জেলায়। দেশের সব থেকে বড় সার কারখানা এখানেই রয়েছে।

জামালপুর
জেলা
ঘড়ির কাটার দিকেঃ দেওয়ান শাহের মাজার, লাউচাপড়া, তারাকান্দিতে ভাসমান ল্যান্ডিং স্টেশন, জামালপুর জেলার লেক, দোয়াময়ী মন্দির
বাংলাদেশে জামালপুর জেলার অবস্থান
বাংলাদেশে জামালপুর জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ২৪°৫৫′১২″ উত্তর ৮৯°৫৭′৩৬″ পূর্ব / ২৪.৯২০০০° উত্তর ৮৯.৯৬০০০° পূর্ব / 24.92000; 89.96000 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগময়মনসিংহ বিভাগ
সরকার
 • জেলা প্রশাসকহাছিনা বেগম
আয়তন
 • মোট২,০৩১.৯৮ বর্গকিমি (৭৮৪.৫৫ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[]
 • মোট২৩,৮৪,৮১০
 • জনঘনত্ব১,২০০/বর্গকিমি (৩,০০০/বর্গমাইল)
সাক্ষরতার হার
 • মোট৪৮.০৫%
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৩০ ৩৯
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

ইতিহাস

সম্পাদনা

ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, দিল্লির সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে (১৫৫৬-১৬০৫) হযরত শাহ জামাল নামে একজন ধর্মপ্রচারক ইয়েমেন থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ২০০ জন অনুসারী নিয়ে এ অঞ্চলে এসেছিলেন। পরবর্তীতে ধর্মীয় নেতা হিসাবে তিনি দ্রুত প্রাধান্য বিস্তার লাভ করেন। ধারণা করা হয়, শাহ জামাল-এর নামানুসারে এই শহরের নামকরণ হয় জামালপুর। ময়মনসিংহ জেলার অধীনে ১৮৪৫ সালে জামালপুর মহকুমা গঠিত হয়। ভয়াবহ বন্যায় যমুনা নদীর সৃষ্টির পরে জামালপুর মহকুমার সিরাজগঞ্জ থানাকে পাবনা জেলার সাথে জুড়ে দেওয়া হয় ১৮৫৫ সালে। দেওয়ানগন্জ থানা রংপুর জেলা হতে ১৮৬৬ সালে জামালপুর মহকুমায় যুক্ত করা হয়। এরপর ১৮৭৯ সালে টাংগাইল মহকুমা গঠিত হলে মধুপুরসহ বেশ কিছু এলাকা জামালপুর মহকুমা হতে টাংগাইল মহকুমার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৭৮ সালে ২৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ থেকে পৃথক করে জামালপুরকে বাংলাদেশের ২০ তম জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৪ সালে জামালপুর জেলা ভেঙ্গে শেরপুর জেলা গঠন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ

সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ২১ জুন পাকিস্তানি বাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় জামালপুর সদর উপজেলার শ্মশান ঘাটে ৯ জন নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরবর্তী সময়ে,৩১ জুলাই বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালপুর পাকিস্তানি সেনা ঘাঁটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তীব্র সংঘর্ষ হয়। এই যুদ্ধে বীরত্বের সাথে লড়াই করতে গিয়ে ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ, আহাদুজ্জামান, আবুল কালাম আজাদসহ ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

১৩ নভেম্বর বকশীগঞ্জের কামালপুরে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে বাঙালি সৈন্যরা পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে আরেকটি ভয়াবহ যুদ্ধে লিপ্ত হন, যেখানে তাহের গুরুতর আহত হন।[]

দীর্ঘ ২১ দিন টানা লড়াইয়ের পর ৪ ডিসেম্বর কামালপুরে অবস্থিত ছোট পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটির পতন ঘটে। ক্যাপ্টেন আহসান মালিকের নেতৃত্বে ২২০ জন পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

জামালপুর গ্যারিসনের নেতৃত্বে ছিলেন সুলতান আহমেদ, যিনি ভারতীয় কমান্ডার হারদেব ক্লার-এর আত্মসমর্পণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সাহসিকতার পরিচয় দেন এবং কলমের পরিবর্তে অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।[] রংপুর-বগুড়া ফ্রন্টের মতো, এই ফ্রন্টও একমাত্র এলাকা ছিল যেখানে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের অবস্থান রক্ষা করেছিল। তবে, ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর তাদের ঢাকায় প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই পশ্চাদপসরণের সময় পাকিস্তানি কমান্ডার আব্দুল-কাদির নিয়াজী শত্রু বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন, যা বাংলাদেশি ও ভারতীয় বাহিনীর মনোবল আরও বৃদ্ধি করে।


অবস্থান ও আয়তন

সম্পাদনা

এই জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়, কুড়িগ্রাম জেলা এবং শেরপুর জেলা, দক্ষিণে টাঙ্গাইল জেলা, পূর্বে শেরপুর জেলাময়মনসিংহ জেলা, পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ জেলা, বগুড়া জেলাগাইবান্ধা জেলা

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ

সম্পাদনা

জামালপুর জেলা ৭টি উপজেলা, ৭টি থানা, ৮টি পৌরসভা, ৬৮টি ইউনিয়ন, ৮৪৪টি মৌজা, ১৩৪৬টি গ্রাম ও ৫টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত।

জামালপুর জেলায় মোট ৭টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হল:

ক্রম নং উপজেলা আয়তন[]
(বর্গ কিলোমিটারে)
প্রশাসনিক থানা আওতাধীন এলাকাসমূহ
০১ ইসলামপুর ৩৫৩.৩২ ইসলামপুর পৌরসভা (১টি): ইসলামপুর
ইউনিয়ন (১২টি): কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলী, সাপধরী, নোয়ারপাড়া, ইসলামপুর, পাথর্শী, পলবান্ধা, গোয়ালেরচর, গাইবান্ধা, চর পুটিমারী এবং চর গোয়ালিনী
০২ জামালপুর সদর ৫০৮.৮১ জামালপুর সদর পৌরসভা (১টি): জামালপুর
ইউনিয়ন (১৫টি): কেন্দুয়া, শরীফপুর, লক্ষ্মীরচর, তুলশীরচর, ইটাইল, নরুন্দি, ঘোড়াধাপ, বাঁশচড়া, রানাগাছা, শ্রীপুর, শাহবাজপুর, তিতপল্লা, মেষ্টা, দিগপাইত এবং রশিদপুর
০৩ দেওয়ানগঞ্জ ২৬৭.৫১ দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভা (১টি): দেওয়ানগঞ্জ
ইউনিয়ন (৮টি): ডাংধরা, চর আমখাওয়া, পার রামরামপুর, হাতীভাঙ্গা, বাহাদুরাবাদ, চিকাজানী, চুকাইবাড়ী এবং দেওয়ানগঞ্জ
০৪ বকশীগঞ্জ ২৩৮.৩০ বকশীগঞ্জ পৌরসভা (১টি): বকশীগঞ্জ
ইউনিয়ন (৭টি): ধানুয়া কামালপুর, বগারচর, বাট্টাজোড়, সাধুরপাড়া, বকশীগঞ্জ, নিলাখিয়া এবং মেরুরচর
০৫ মাদারগঞ্জ ২২৫.৩৯ মাদারগঞ্জ পৌরসভা (১টি): মাদারগঞ্জ
ইউনিয়ন (৭টি): চর পাকেরদহ, কড়ইচড়া, গুনারীতলা, বালিজুড়ী, জোড়খালী, আদারভিটা এবং সিধুলী
০৬ মেলান্দহ ২৫৮.৩৩ মেলান্দহ পৌরসভা (২টি): মেলান্দহহাজরাবাড়ী
ইউনিয়ন (১১টি): দুরমুট, কুলিয়া, মাহমুদপুর, নাংলা, নয়ানগর, আদ্রা, চর বানিপাকুরিয়া, ফুলকোচা, ঘোষেরপাড়া, ঝাউগড়া এবং শ্যামপুর
০৭ সরিষাবাড়ী ২৬৩.৫০ সরিষাবাড়ী পৌরসভা (১টি): সরিষাবাড়ী
ইউনিয়ন (৮টি): সাতপোয়া, পোগলদীঘা, ডোয়াইল, আওনা, পিংনা, ভাটারা, কামরাবাদ এবং মহাদান

সংসদীয় আসন

সম্পাদনা
সংসদীয় আসন জাতীয় নির্বাচনী এলাকা[] সংসদ সদস্য[][][][] [১০] রাজনৈতিক দল
১৩৮ জামালপুর-১ বকশীগঞ্জ উপজেলা এবং দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা শূণ্য
১৩৯ জামালপুর-২ ইসলামপুর উপজেলা শূণ্য
১৪০ জামালপুর-৩ মেলান্দহ উপজেলা এবং মাদারগঞ্জ উপজেলা শূণ্য
১৪১ জামালপুর-৪ সরিষাবাড়ী উপজেলা এবং জামালপুর সদর উপজেলার তিতপল্লামেষ্টা ইউনিয়ন শূণ্য
১৪২ জামালপুর-৫ জামালপুর সদর উপজেলা (তিতপল্লামেষ্টা ইউনিয়ন) শূণ্য

জনসংখ্যা

সম্পাদনা

জনসংখ্যা ২৩,৮৪,৮১০ জন। পুরুষ ৫০.৫৮%, মহিলা ৪৯.৪২%। মুসলিম ৯৭.৭৪%, হিন্দু ১.৯২%, খ্রিষ্টান ০.০৭%, বৌদ্ধ ০.০৪% এবং অন্যান্য ০.১৪%। উপজাতিগোষ্ঠী - গারো, হদি, কুর্মী এবং মাল অন্যতম।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান

সম্পাদনা

মসজিদ ৪২০২ টি, মন্দির ৪৪ টি, গীর্জা ৩৯, সমাধি ১৩। সবচেয়ে সুপরিচিত শৈলেরকান্ধা আল মসজিদু আসছালাম জামে মসজিদ, গৌরীপুর কাঁচারী জামে মসজিদ, শাহ জামাল সমাধি, শাহ কামাল সমাধি, হযরত দেওয়ান শাহ এর মাজার এবং দয়াময়ী মন্দির।

ঐতিহ্য

সম্পাদনা

জামালপুর জেলার বিভিন্ন জিনিসের দেশজোড়া খ্যাতি রয়েছে। তার মধ্যে ইসলামপুরের কাঁসার বাসন ও গুড়, মেলান্দহের উন্নতমানের তামাক ও তৈল, দেওয়ানগঞ্জের আখচিনি, সরিষাবাড়ীর পাট ও সার, মাদারগঞ্জের মাছ, দুধ ও ঘি, বকশীগঞ্জের নকশি কাঁথা, চিনা মাটি, কাঁচ বালি, নুড়ি পাথর, বাঁশ ও বেতের আসবাবপত্র, জামদানি শিল্প এবং জামালপুর সদর উপজেলার আনারস, পান, বুড়িমার মিষ্টি ও আজমেরীর জিলাপী, সর ভাজা, ছানার পায়েস, ছানার মিষ্টি অন্যতম। তাছাড়া জামালপুরের বিভিন্ন এলাকার কংকরযুক্ত লাল বালি, সাদা মাটি, কাঁচবালি এবং শাক-সবজি নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অনেক জেলার চাহিদা মিটাতে সহায়তা করে। জামালপুরের নকশী কাঁথা ও নকশী চাদর এখনো সারা দেশে সমাদৃত।

কাসা শিল্প:

জামালপুর জেলার ইসলামপুরের কাসা শিল্প একসময় সারা বিশ্বব্যাপি পরিচিত ছিল। কাসা দিয়ে বিভিন্ন নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদি তৈরী হত। এর মধ্যে ঘটি-বাটি, পে­ট, জগ, গ্লাস, বদনা, হুক্কা, খেলনা সামগ্রী এবং পূজা পার্বণে ব্যবহুত জিসিষপত্র ইত্যাদি। এগুলোর নির্মাণ শৈলী খুবই চমৎকার ছিল এবং মানুষ এগুলোকে তৈজসপত্র হিসেবে পারিবারিক ও ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করত। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ শিল্পের সাথে বেশি জড়িত ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এ শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই দেশ ত্যাগ প্রতিবেশী ভারতে চলে যায়। পাকহানাদার বাহিনী এ শিল্পের সাথে জড়িতদের ঘরবাড়ী আগুনে পুড়ে দেয়ায় স্বাধীনতার পর অনেকেই দেশে ফিরে তাদের পৈত্রিক পেশা বাদ দিয়ে বর্তমানে অন্য পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে। তাছাড়া আধুনিক যুগে নৈত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদির ধরন বদলে যাওয়ায় বর্তমানে এ শিল্পে ধস নেমেছে। তবুও পৈত্রিক পেশাকে ধরে রখার জন্য বর্তমানে ইসলামপুরে প্রায় ২০/২৫টি পরিবার কাজ করছে। কাসা শিল্পের সাথে জড়িতরা খুবই গরীব। এদেরকে সরকারিভাবে আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা প্রদান করা হলে এবং বেসরকারী সংস্থাগুলো এদের পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে এলে এ শিল্পটি তার হৃতগৌরব পুনরায় ফিরে পেত এবং শিল্পীরা তাদের বাপদাদার পেশাটিকে দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হত।

নকশীকাঁথা শিল্প:

আবহমানকাল থেকেই বাংলার বধূরা স্বভাবগতভাবেই বাংলার ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের দৃশ্যগুলোকে মনের মাধুরী মিশিয়ে সূই-সূতার মাধ্যমে কাপড়ের উপর তৈরী করত অপূর্ব চিত্র। গ্রামের বৌ-ঝিরা সাংসারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে সৌখিনতাবশত, নকশীকাঁথা তৈরী করত। মেয়ে বড় হওয়ার সাথে সাথে মা, নানী-দাদীরা মেয়েকে শ্বশুরবাড়ী পাঠানোর সময় বাহারী রঙ এর নকশীকাঁথা সঙ্গে দিত। যারা গরীব তারাও মেয়েকে ২/১ টি কাথাঁ বালিশ দিতে ভুলত না। জামালপুরের নকশী কাঁথা ও হাতের কাজের বাহারী পোশাক পরিচ্ছদ সারাদেশে বহু পূর্ব থেকেই প্রশংসিত ছিল। বর্তমানে তা আরো উন্নত হয়ে দেশে ও দেশের বাইরে সমাদৃত হচ্ছে। জামালপুরের বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ এবং সদর উপজেলাতেই নকশী কাঁথা শিল্পের কম বেশি উৎপাদন হয়। তবে জামালপুর সদর উপজেলায় এ শিল্পের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে জামালপুর শহরে এর আধিক্য সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যণীয়। এখানকার পোশাক পরিচ্ছদের গুণগতমান উন্নত হওয়ায় এবং দাম তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় দেশ ও দেশের বাইরে এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এ ঐতিহ্যবাহী মনোমুগ্ধকর সূচি শিল্পটি একসময় হারিয়ে যেতে বসেছিল। ৭০ দশকের শেষভাগে এ শিল্পের চিহ্ন প্রায় বিলুপ্ত হতে থাকে। অবশেষে ৮০ দশকের শুরুতেই আবার হারাতে বসা নকশী শিল্পটি পুনরুদ্ধার করে বাণিজ্যিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় গতিযোগ করে ব্র্যাক নামীয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানটি।

নকশীকাঁথা শিল্পের জিনিস পত্রাদির মধ্যে রয়েছে নকশীকাঁথা, বেড কভার, থ্রীপিছ, ওয়ালমেট, কুশন কভার, শাড়ী, পাঞ্জাবী, টি শার্ট, ফতুয়া, স্কার্ট, লেডিজ পাঞ্জাবী, ইয়ক, পার্স, বালিশের কভার, টিভি কভার, শাড়ীর পাইর, ওড়না, ফ্লোর কুশন, মাথার ব্যান্ড, মানি ব্যাগ, কলমদানী, মোবাইল ব্যাগ, ওয়ালমেট, ছিকা, শাল চাদর ইত্যাদি। নকশীকাঁথা পণ্যের মূল্য ২৫ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

মৃৎ শিল্প:

কুমার সম্প্রদায় এ অঞ্চলে গ্রামীণ লোকায়ত জীবনে পোড়া মাটির শিল্প দ্রব্য এবং তৈজসপত্র তৈরী করে ব্যাপকভাবে পরিচিতি অর্জন করেছে। ১৯০১ সালের লোক গগণা হিসেবে জামালপুরের কুমার পরিবারের লোক সংখ্যা ছিল ১৫০০ জন। এরা হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল। এদের তৈরী জিনিসপত্র জামালপুরসহ সারা দেশেই সমাদৃত ছিল। সে আমলে ভাত তরকারীসহ রান্না-বান্নার যাবতীয় কাজ মাটির হাড়িতেই হতো। মাটির কলসে পানি রাখত, মাটির গ্লাসে পানি এবং কাদাতে (থালা) ভাত খেত। বর্তমানে আধুনিক এল্যুমিনিয়াম, ষ্টিল এবং মেলামাইনের তৈজসপত্র তৈরীর ফলে মাটির বাসন কোসন প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে। তবে এখনও কিছু কিছু পরিবারে মাটির বাসন-কোসনের ব্যবহার করতে দেখা যায়। মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িতদের অনেকেই পৈত্রিক পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় কাজ করতে উৎসাহী নয়। ফলে তাদেরকে মানবেতন জীবন যাপন করতে হচ্ছে। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে এবং এ পেশার সাথে জড়িতদের কথা বিবেচনা করে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া প্রয়োজন।

তাঁত শিল্প:

জামালপুরের তাঁত শিল্প এক সময় খুবই উন্নত ছিল। বর্তমানে এ শিল্পটি মৃতপ্রায়। জেলার সদর উপজেলার দিকপাইত, মেষ্টা ও তিতপল্লা ইউনিয়নে বর্তমানে কিছু তাঁতী রয়েছে। বকশীগঞ্জ উপজেলায় একটি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট রয়েছে। এ শিল্পটিকে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা হলে শিল্পটি আবারো তার হ্রত গৌরব ফিরে পেতে পারে।

খাবার:

জামালপুর জেলার লোকজন সাধারণত ভাত, মাছ, মাংশ, ডাল ও শাক-সবজি খেতে পছন্দ করে। তবে কারো মৃত্যু উপলক্ষে বা কোন বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে এ জেলার মানুষ একটি বিশেষ খাবার খেয়ে থাকে। তা হলো মেন্দা বা মিল্লি বা মিলানি বা পিঠালি। দেখতে অনেকটাই হালিমের মতো। যেটি গরু বা খাসি বা মহিষের মাংশের সাথে সামান্য চালের গুঁড়া ও আলু দিয়ে রান্না করা হয়। তার সাথে সাদা ভাত ও মাশকলাইয়ের ডাল। অনেক জায়গায় খাবার শেষে দই ও মিষ্টিও দিয়ে থাকে।

*কুটির শিল্প

জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ডাংধরা ইউনিয়ন এর কবিরপুর গ্রামে বাশ দিয়ে কুলা,চালুন,খালই,ঢালি,মুরগীর খাচা খুবই বিখ্যাত ছিল এবং অনেক গরিব অসহায় মানুষের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে

এই ইউনিয়ন তগেকে এখন অন্যান্য ইউনিয়ন এর জনবল বাশ দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে সানন্দবাড়ি হাটে বিক্রি করে আর সেখান থেকেই চলে অনেকের সংসার

শিক্ষা

সম্পাদনা

শিক্ষার গড় হার ৪৮.০৫%। এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান -

* সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় - ১টি,

  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় - ১টি,
  • সরকারি মেডিকেল কলেজ - ১টি,
  • সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল - ১টি
  • সরকারি টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং কলেজ - ১টি
  • সরকারি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট - ১টি
  • সরকারি পল্লী উন্নয়ন একাডেমি - ১টি
  • সরকারি ইন্সটিটিউট অব হেল্থ টেকনোলজি -১টি
  • সরকারী কলেজ - ৮টি,
  • বেসরকারী কলেজ - ২০টি,
  • সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় - ৭টি,
  • বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় - ২২৪টি,
  • মাদ্রাসা-১১০টি,
  • জুনিয়র হাইস্কুল - ৩৮টি,
  • সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় - ৫৮৮টি,
  • বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় - ৩৯০,
  • কিন্ডার গার্টেন স্কুল - ১৭৬টি
  • আইন কলেজ - ১টি,
  • হোমিওপ্যাথি কলেজ - ১টি,
  • কৃষি গবেষণা কেন্দ্র - ১টি,
  • কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র-২টি,
  • কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ-২টি।

বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ

সম্পাদনা

আশরাফুর রহমান আকন্দ, সিনিয়র সাংবাদিক ও সংবাদ পাঠক, বাংলা প্রোগ্রাম, রেডিও তেহরান, ইরান।

দর্শনীয় স্থান

সম্পাদনা
  • হযরত শাহ জামাল -এর মাজার - জামালপুর সদর
  • হযরত শাহ কামাল (রা:) এর মাজার, ডিগ্রীরচর বাজার, দেওয়ানগঞ্জ
  • হযরত শাহ কামাল -এর মাজার - দুরমুঠ, মেলান্দহ উপজেলা।
  • হযরত মাওলানা শাহ সূফি সৈয়দ সাইফুল মালেক (রঃ) -এর মাজার ছালাম,আবাদ শরীফ শৈলেরকান্দা জামালপুর সদর
  • আল মসজিদ্দু আসছালাম ও নহরে রব্বানী দিঘি ছালাম,আবাদ শরীফ শৈলেরকান্দা জামালপুর সদর
  • শেখ হাসিনা সাংস্কৃতিক পল্লী, সদর
  • আলেয়া গার্ডেন, জামালপুর সদর;
  • গারো পাহাড় লাউচাপড়া পাহাড়িকা বিনোদন কেন্দ্র - বকশীগঞ্জ উপজেলা;
  • মুক্তিযুদ্ধে ১১ নং সেক্টর ধানুয়া কামালপুর বকশীগঞ্জ উপজেলা;
  • ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দর- বকশীগঞ্জ উপজেলা
  • মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ -ধানুয়া কামালপুর বকশীগঞ্জ উপজেলা
  • বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স মিল লিঃ ও লেদার মিল লিঃ;
  • দয়াময়ী মন্দির - জামালপুর সদর;
  • যমুনা সার কোম্পানি লিমিটেড- তারাকান্দি, সরিষাবাড়ী;
  • প্রজাপতি পার্ক ও দ্বিজেন শর্মা উদ্ভিদ উদ্যান,তানজিম পল্লী,দৌলতপুর, সরিষাবাড়ী;
  • জিল বাংলা চিনিকল - দেওয়ানগঞ্জ;
  • হরিশচন্দ্রের দীঘি - দেউর পাড় চন্দ্রা,জামালপুর
  • ইন্দিরা- উত্তর দেউর পাড় চন্দ্রা
  • যমুনা সিটি পার্ক - পোগলদিঘা, সরিষাবাড়ী;
  • লুইস ভিলেজ রিসোর্ট অ্যান্ড পার্ক-বেলটিয়া, জামালপুর।
  • বোসপাড়া গ্রামীণ ব্যাংক
  • যমুনা জেটি ঘাট -জগন্নাথগঞ্জ ঘাট, সরিষাবাড়ী;
  • গুঠাইল বাজার ঘাট, ইসলামপুর উপজেলা।
  • উলিয়া বাজার পাইলিং ঘাট, ইসলামপুর উপজেলা।
  • বাহাদুরাবাদ ঘাট, কুলকান্দি, ইসলামপুর উপজেলা।
  • হাইওয়ে রোড,খরকা বিল,মাদারগঞ্জ উপজেলা।
  • স্বপ্ননীল পার্ক, সাতপোয়া, সরিষাবাড়ী।
  • তরফদার খামারবাড়ি, জগন্নাগঞ্জঘাট।
  • মেয়র পার্ক,পপুলার মোড়,সরিষাবাড়ী।
  • গান্ধী আশ্রম,হাজীপুর।
  • যমুনা পাড়, দেওয়ানগঞ্জ।
  • ৩৫ বিজিবি ক্যাম্প,সদর
  • কালীবাড়ী,সরিষাবাড়ি
  • মধুটিলা ইকোপার্ক
  • পোল্লাকান্দি ব্রিজ
  • আঙর বাড়ি-বকশীগঞ্জ
  • মেন্দা সুলতান স্টেডিয়াম-সদর
  • পাথরেরচর ব্রিজ
  • নান্দিনা-শ্রীপুর-বাশচরা কাছাকাছি পাহাড়
  • সানন্দবাড়ি হাট

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "এক নজরে জেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ২৯ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১৪ 
  2. Samar Pal (২০১২)। "Jamalpur District"। Sirajul Islam and Ahmed A. Jamal। Banglapedia: National Encyclopedia of Bangladesh (Second সংস্করণ)। Asiatic Society of Bangladesh 
  3. Cloughley, Brian (২০০৬)। A History of the Pakistan Army (3rd সংস্করণ)। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 180আইএসবিএন 978-0-19-547334-6 
  4. "ইউনিয়ন পরিসংখ্যান সংক্রান্ত জাতীয় তথ্য" (পিডিএফ)web.archive.org। Wayback Machine। Archived from the original on ৮ ডিসেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৫ মার্চ ২০২১ 
  5. "Election Commission Bangladesh - Home page"www.ecs.org.bd 
  6. "বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জানুয়ারি ১, ২০১৯" (পিডিএফ)ecs.gov.bdবাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। ১ জানুয়ারি ২০১৯। ২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৯ 
  7. "সংসদ নির্বাচন ২০১৮ ফলাফল"বিবিসি বাংলা। ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  8. "একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল"প্রথম আলো। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  9. "জয় পেলেন যারা"দৈনিক আমাদের সময়। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ 
  10. {{ }}
  11. "কাঁধে অস্ত্র হাতে ক্যামেরা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন হারুন হাবীব"। ২৬ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০১৯ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা