বাংলাদেশে ইসলাম
ইসলাম বাংলাদেশের প্রধান ধর্ম। এ দেশের সর্বাধিক জনগণ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। বাংলাদেশে মুসলমান জনসংখ্যা প্রায় ১৪৮.৬ মিলিয়ন (১৪.৮৬ কোটি), যা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলমান জন-অধ্যুষিত দেশ (ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান এবং ভারতের পরে)। ২০২২ সালের ডিজিটাল জনশুমারি অনুসারে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯১% এর বেশি মুসলমান।[১][২][৩][৪]
ইতিহাসসম্পাদনা
ইসলামের মুহাম্মাদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)|নবী মুহাম্মাদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জন্মগ্রহণ করেন খ্রিষ্টীয় ৫৭০ সালে। এর মাত্র ৫০ বছর পর ৬২০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে আসে ইসলাম। আর উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে শুরু হয় যাত্রা। বিভিন্ন গবেষণা ও প্রাপ্ত শিলালিপি এমন দাবিই জোরালো করেছে। এতে আরও দেখা যায়, ৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে দেশের প্রথম মসজিদটিও নির্মিত হয় এই জেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের ‘মজেদের আড়া’ নামক গ্রামে। এটির নাম সাহাবায়ে কেরাম জামে মসজিদ।[৫] ১৯৮৭ সালে পঞ্চগ্রামে জঙ্গল খননের সময় প্রাচীন মসজিদের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। এর একটি ইটে কালেমা তাইয়্যেবা ও ৬৯ হিজরি লেখা রয়েছে। এ থেকে অনুমান করা হয়, মসজিদটি হিজরি ৬৯ অর্থাৎ ৬৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে স্থাপন কিংবা সংস্কার করা হয়।
রংপুর জেলার ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মামা, মা আমেনার চাচাতো ভাই আবু ওয়াক্কাস (রা.) ৬২০ থেকে ৬২৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার করেন (পৃ. ১২৬)। অনেকে অনুমান করেন, পঞ্চগ্রামের মসজিদটিও তিনি নির্মাণ করেন যা ৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কার করা হয়।
মতিউর রহমান বসুনিয়া রচিত ‘রংপুরে দ্বীনি দাওয়াত’ গ্রন্থেও এই মসজিদের বিশদ বিবরণ আছে। ‘দেশে ইসলাম প্রচার করেন ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন খিলজী’ এমন একটি ধারণা প্রতিষ্ঠিত থাকলেও এসব তথ্য প্রমাণ করে যে, এর অনেক আগেই এদেশে ইসলাম প্রচারিত হয়। ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন খিলজীর বাংলা বিজয়ের প্রায় ৬০০ বছর আগেই সাহাবীদের দ্বারা বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব হয়। প্রথম মসজিদও নির্মিত হয় সেই সময়েই।[৬]
ঐতিহাসিক মসজিদসমূহসম্পাদনা
- আবু আক্কাস মসজিদ-৬৪৮[৭][৮]
- শাহবাজ খান মসজিদ-১৬৭৯
- সোনা মসজিদ-১৪৯৩
- বাঘা মসজিদ-১৫২৩
- নয়াবাদ মসজিদ-১৭৫৫
- খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ-১৭০৩
- ষাট গম্বুজ মসজিদ-১৫শ শতক
- সাত মসজিদ-১৬৬৯
- লালবাগ কেল্লা-১৬৬৪
সূফীতত্ত্বের ভূমিকাসম্পাদনা
১৩ শতকের শুরুতে,মুঘলদের বাংলা বিজয় উত্তর ভারতের ঘটে ১১৯২ সালে । প্রধানত মহম্মদ ঘোরী এর অভিযানের পরিণাম হিসাবে জায়গা নেয়। সৈয়দ শাহ নাসিরুদ্দিন ইরাকের ছিলেন কিন্তু ইসলাম ছড়াতে বাংলাদেশ এসেছিলেন।
মতবাদ ও মাজহাবসম্পাদনা
বাংলাদেশের বেশির ভাগ মুসলমান সুন্নি। তারা বেশির ভাগই হানাফি মাযহাব এর অনুসারী। এ দলে দেওবন্দী এবং বেরলভি আন্দোলন অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও কিছু আহলে হাদিস বা সালাফি মতবাদের অনুসারী রয়েছে। বিশ্ব ইজতেমা (বিশ্ব ধর্মসভা) বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে ৫ মিলিয়ন মানুষ আকৃষ্ট, প্রার্থনা এবং ধ্যান উপর গুরুত্ত্ব দেয়, যা তাবলিগ জামাত দ্বারা বার্ষিক অনুষ্ঠিত একটি ঘটনা।
জেলা অনুযায়ী মুসলমান জনসংখ্যাসম্পাদনা
জেলা | শতকরা হার(%) |
---|---|
বরগুনা | ৯১.০১% |
বরিশাল | ৮৬.১৯% |
ভোলা | ৯৩.৪২% |
ঝালকাঠি | ৮৭.৩১% |
পটুয়াখালী | ৯১.৪৫% |
পিরোজপুর | ৭৯.০১% |
ঢাকা | ৯২.০০% |
ফরিদপুর | ৮৮.০০% |
গাজীপুর | ৯১.৯০% |
গোপালগঞ্জ | ৬৩.৫১% |
জামালপুর | ৯৭.৭৪% |
কিশোরগঞ্জ | ৯২.১০% |
মাদারীপুর | ৮৫.৬৭% |
মানিকগঞ্জ | ৮৭.০০% |
মুন্সীগঞ্জ | ৯০.৭৮% |
ময়মনসিংহ | ৯৪.৭৩% |
নারায়ণগঞ্জ | ৯২.৫৭% |
নরসিংদী | ৯৩.২৮% |
নেত্রকোণা | ৮৩.০০% |
রাজবাড়ী | ৮৬.৭৩% |
শরীয়তপুর | ৯৫.৫৪% |
শেরপুর | ৯৫.০০% |
টাঙ্গাইল | ৯১.৫২% |
চাঁদপুর | ৯৯.৫৫% |
চট্টগ্রাম | ৮৩.৯২% |
কুমিল্লা | ৯৩.৮৫% |
কক্সবাজার | ৯২.১৩% |
ফেনী | ৯২.৮০% |
লক্ষ্মীপুর | ৯৫.৩১% |
নোয়াখালী | ৯৩.৪১% |
ব্রাহ্মণবাড়িয়া | ৯০.৭৩% |
বাগেরহাট | ৭৭.৪৫% |
চুয়াডাঙ্গা | ৯৬.৭৩% |
যশোর | ৮৫.৫০% |
ঝিনাইদহ | ৮৮.০৭% |
খুলনা | ৭৩.৩৯% |
কুষ্টিয়া | ৯৫.৭২% |
মাগুরা | ৭৭.৮৯% |
মেহেরপুর | ৯৭.৫০% |
নড়াইল | ৭৫.৫৬% |
সাতক্ষীরা | ৭৮.০৮% |
বগুড়া | ৯১.০০% |
জয়পুরহাট | ৮৮.১৮% |
নওগাঁ | ৮৪.৫১% |
নাটোর | ৯০.৪৭% |
চাঁপাইনবাবগঞ্জ | ৯৪.২৭% |
পাবনা | ৯৫.১২% |
রাজশাহী | ৯৩.০০% |
সিরাজগঞ্জ | ৯২.০০% |
দিনাজপুর | ৭৬.৬৫% |
কুড়িগ্রাম | ৯১.৬৫% |
লালমনিরহাট | ৮৩.২০% |
নীলফামারী | ৮২.৬৪% |
পঞ্চগড় | ৮১.৭৯% |
রংপুর | ৮৯.৬০% |
ঠাকুরগাঁও | ৭৪.৯৭% |
হবিগঞ্জ | ৮০.২৩% |
মৌলভীবাজার | ৭০.৫৯% |
সুনামগঞ্জ | ৮৩.৬২% |
সিলেট | ৯২.৫৭% |
খাগড়াছড়ি | ৫৩.৪৫% |
বান্দরবান | ৪৭.৬২% |
রাঙামাটি | ৩৯.২৮% |
বাংলাদেশ | ৮৯ .৪০% |
উৎস:[১০]
ধর্মীয় স্বাধীনতাসম্পাদনা
বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে, প্রত্যেক নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে। তারা তাদের মত করে ধর্ম পালন করতে পারবে। প্রজাতন্ত্রের সংবিধান, সকল ধর্মীয় বৈষম্যকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।
ইসলামী রাজনীতিসম্পাদনা
১৯৭১ এর পরে, সরকার মানুষের ধর্মীয় জীবনের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তার ভূমিকা বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে. ধর্ম বিষয়ক, সমর্থন এবং মসজিদ এবং প্রার্থনা প্রতিনিধি সমাজ সহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, আর্থিক সহায়তা মন্ত্রণালয়. মক্কা থেকে বার্ষিক তীর্থযাত্রা আয়োজন কারণ সৌদি আরব এবং বাংলাদেশ সরকার এর নিয়ন্ত্রণমূলক বিদেশী বিনিময় নিয়ম সরকার হাজীদের সংখ্যার উপর বিধিনিষেধ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে আসে. এ মন্ত্রণালয়ের সংগঠন এবং ইসলামী বিষয়ের উপর গবেষণা ও প্রকাশনা সমর্থনের জন্য দায়িত্বশীলযা বাংলাদেশের ইসলামী ফাউন্ডেশন, কাজের কাজগুলোও. এসোসিয়েশন বায়তুল মোকাররম (জাতীয় মসজিদ) এবং সংগঠন ও ইমাম প্রশিক্ষণ বজায় রাখার জন্য দায়ী. প্রায় ১৮,০০০ ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, লাইব্রেরি, একটি জাতীয় নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে. ইসলামিক ফাউন্ডেশন পৃষ্ঠপোষকতা অধীন দেরি আটের দশকের মধ্যে বাংলা ইসলাম এনসাইক্লোপিডিয়া রচনা করা হয়েছে.
আরও দেখুনসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ বাংলাদেশ - বিশ্ব মুসলিম জনসংখ্যার ভবিষ্যৎ পিউ ফোরাম
- ↑ মিলার, ট্রেসি, সম্পাদক (২০০৯), বিশ্ব মুসলিম জনসংখ্যার অবস্হা : সংখ্যা এবং অবস্হানের ভিত্তিতে বিশ্ব মুসলিম জনসংখ্যার উপর প্রতিবেদন (পিডিএফ), পিউ রিসার্স সেন্টার, ১৭ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-১০-০৮ অজানা প্যারামিটার
|month=
উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - ↑ "বাংলাদেশ আদমশুমারী ২০০১" (পিডিএফ)। বাংলাদেশ আদমশুমারী। ৩১ মার্চ ২০১০ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০১। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ পরিষদ, সম্পাদনা (জুন ১৯৮২)। সংক্ষিপ্ত ইসলামি বিশ্বকোষ ২য় খণ্ড। শেরেবাংলা নগর, ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ। পৃষ্ঠা ৫৭। আইএসবিএন 954-06-022-7।
- ↑ এশিয়ার প্রথম মসজিদ সাহাবায়ে কেরাম, যায় যায় দিন, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০
- ↑ দেশে প্রথম ইসলাম প্রচার হয় যে মসজিদ থেকে। bangladesh today। ২০১৯-০১-১৪। ২০২০-০৫-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২৩।
- ↑ Mahmood, Kajal Iftikhar Rashid (২০১২-১০-১৯)। সাড়ে তেরো শ বছর আগের মসজিদ [1350 Year-old Mosque]। Prothom Alo। ২০১৮-০৬-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-৩০।
- ↑ "History and archaeology: Bangladesh's most undervalued assets?"। deutschenews24.de। ২০১২-১২-২১। ২০১৪-০৩-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৫-৩০।
- ↑ "Chapter 1: Religious Affiliation"। The World's Muslims: Unity and Diversity। Pew Research Center's Religion & Public Life Project। ২০১২-০৮-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৯-০৪।
- ↑ বাংলাদেশ#জনসংখ্যা উপাত্ত
বহিঃসংযোগসম্পাদনা
- আবদুল করিম (২০১২)। "ইসলাম, বাংলায়"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।