কুড়িগ্রাম জেলা
কুড়িগ্রাম জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল।[১]
কুড়িগ্রাম | |
---|---|
জেলা | |
![]() বাংলাদেশে কুড়িগ্রাম জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°৪৫′০″ উত্তর ৮৯°৩৯′৩৬″ পূর্ব / ২৫.৭৫০০০° উত্তর ৮৯.৬৬০০০° পূর্বস্থানাঙ্ক: ২৫°৪৫′০″ উত্তর ৮৯°৩৯′৩৬″ পূর্ব / ২৫.৭৫০০০° উত্তর ৮৯.৬৬০০০° পূর্ব ![]() | |
দেশ | ![]() |
বিভাগ | রংপুর বিভাগ |
আয়তন | |
• মোট | ২২৪৫.০৪ কিমি২ (৮৬৬.৮১ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১ আদমশুমারি) | |
• মোট | ২০,৬৯,২৭৩ |
• জনঘনত্ব | ৯২০/কিমি২ (২৪০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৫৬% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৫৬০০ ![]() |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫৫ ৪৯ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
ভৌগোলিক সীমানাসম্পাদনা
কুড়িগ্রাম জেলার উত্তরে লালমনিরহাট জেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলা, দক্ষিণে গাইবান্ধা জেলা, পূর্বে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ধুবড়ী জেলা ও দক্ষিণ শালমারা মানকার চর জেলা এবং পশ্চিমে লালমনিরহাট জেলা ও রংপুর জেলা অবস্থিত।
ইতিহাস এবং নামকরণসম্পাদনা
কুড়িগ্রাম জেলার নামকরণের ইতিহাস নিয়ে অনেক কিংবদন্তি রয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্নাতীত বা সন্দেহমুক্ত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। সবই কিংবদন্তি ও প্রচলিত লোকশ্রুতি। তার কিছু কিছু বিষয় সমর্থনযোগ্য মনে হতে পারে। জানা যায়, কোন এক সময় মহারাজা বিশ্ব সিংহ কুড়িটি জেলে পরিবারকে উচ্চ শ্রেণীর হিন্দুরূপে স্বীকৃতি দিয়ে এ অঞ্চলে প্রেরণ করেন। এ কুড়িটি পরিবারের আগমনের কাহিনী থেকে কুড়িগ্রাম জেলার নামকরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বিলু কবীরের লেখা 'বাংলাদেশের জেলা নামকরণের ইতিহাস' বই থেকে জানা যায়, এখানে কুড়িটি মেচ্ তৈলজীবী পরিবারের বসতি ছিল বলে এ রকম নামকরণ হয়েছে। অন্য আরেকটি লোকশ্রুতি হলো : রঙ্গপুর অর্থাৎ এই অঞ্চল একদা ছিল কুচবিহার রাজ্যের অন্তর্গত। কুচবিহারের বাসিন্দাদের বলা হয় কোচ। এরা তিওড় গোষ্ঠীবিশেষও। মাছ ধরে বিক্রি করা তাদের পেশা। সুবিধাবঞ্চিত নীচু শ্রেণীর এই হিন্দু কোচদের কুড়িটি পরিবারকে সেখান থেকে এখানে প্রেরণ করা হয়েছিল বা আনয়ন করা হয়েছিল বসতি স্থাপনে জন্য। ওই কুড়িটি কোচ পরিবারের কারণে 'কুড়িগ্রাম' নামকরণ হয়েছে। আবার এমনও জানা যায়, এই গ্রামে কুরি বা কুরী নামক একটি হিন্দু আদিবাসী বা নৃগোষ্ঠী বসবাস করত বলেই অঞ্চলটির নাম হয় 'কুড়িগ্রাম'। অদ্যাবধি এখানে 'কুরি' নামক আদিবাসী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস লক্ষ্য করা যায়। এখনও এ অঞ্চলে কুড়ি হিসেবে গোনার পদ্ধতি চালু রয়েছে। বিশিষ্ট পণ্ডিত জা পলিলুস্কি প্রমাণ করেছেন, গণনার এ পদ্ধতি বাংলায় এসেছে কোল ভাষা থেকে। কোল অস্ট্রিক ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত। আরব অস্ট্রিক ভাষায় কুর বা কোর ধাতুর অর্থ হলো মানুষ। কুড়ি হিসেবে গোনার পদ্ধতিটিও এসেছে মানুষ থেকেই। এ অস্ট্রিক কারা? পন্ডিতদের মতে, প্রত্নপ্রস্তর যুগে এ অঞ্চলে বাস করত নিগ্রো জাতি। এরপর আসে নব্যপ্রস্তর যুগ। আসামের উপত্যকা অতিক্রম করে আসে অস্ট্রিক জাতীয় জনগোষ্ঠী। তারপরে আসে দ্রাবিড় ও মঙ্গোলীয়রা। এদের মিলিত স্রোতে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় মানবসভ্যতার সূচনা হয়। এরাই লাঙ্গল দিয়ে চাষের প্রবর্তন করেছে। কুড়ি হিসেবে গোনার পদ্ধতি করেছে চালু। নদনদীতে ডিঙি বেয়েছে, খেয়েছে শুঁটকি, খেয়েছে বাইগন বা বেগুন, লাউ বা কদু, কদলী বা কলা, জাম্বুরা, কামরাঙ্গা। করেছে পশু পালন। এঁকেছে কপালে সিঁন্দুর। করেছে রেশম চাষ। করেছে তামা, ব্রোঞ্জ ও সোনার ব্যবহার। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন, ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত দেশ শাসন করত 'ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি'। ১৮৫৮ সালের পর শাসনকার্যের ক্ষমতা চলে যায় ব্রিটিশ সরকারের হাতে। এই ব্রিটিশ সরকারের আমলে কুরিগঞ্জ চারটি থানায় বিভক্ত ছিল। পরে ১৮৭৫ সালে ২২ এপ্রিল তারিখে একটি নতুন মহকুমার গোড়াপত্তন হয়। এ মহকুমার নাম 'কুড়িগ্রাম'। কুড়িগ্রামঘেষা ব্রহ্মপুত্রের কারণে এখানে আসে বিভিন্ন আদিম জনগোষ্ঠী। এসব কারণে এখানে গড়ে উঠেছিল একটি সভ্যতাও। বিজিত আর্যদের কোন স্মৃতি এখানে নেই। তবে অন্যদের কিছু কিছু ক্ষীয়মাণ রাজচিহ্ন রয়েছে। বারো বা দ্বাদশ শতকের প্রথমপর্বে এ অঞ্চলে সেন রাজবংশের শাসনকাল আরম্ভ হয়। রাজারহাটের বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের চত্রা নামক গ্রামে এদের রাজধানী ছিল। এ বংশের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন রাজার নাম নীলধ্বজ সেন, চক্রধ্বজ সেন, নীলাম্বর সেন। সেনবংশের পতনের পর শুরু হয় মুঘল যুগ।
প্রশাসনিক এলাকাসমূহসম্পাদনা
কুড়িগ্রামের মোট আয়তন: ২২৩৬.৯৪ বর্গ কিঃমিঃ। উপজেলা ৯টি, পৌরসভার ৩টি, ইউনিয়ন পরিষদ ৭২টি এবং গ্রামের ১৮৬টি। মোট পাকা রাস্তা : ৪১৪.৯২ কিঃমিঃ এবং কাঁচা রাস্তা ৪২৬৭.৫৬ কিঃমিঃ।
উপজেলাসমূহসম্পাদনা
সংসদীয় এলাকাসম্পাদনা
কুড়িগ্রাম জেলায় সংসদীয় এলাকার সংখ্যা ৪টি।
- কুড়িগ্রাম- ১ (নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী)
- কুড়িগ্রাম- ২( রাজারহাট, কুড়িগ্রাম সদর, ফুলবাড়ী)
- কুড়িগ্রাম– ৩ (উলিপুর)
- কুড়িগ্রাম- ৪ (চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর)
জনসংখ্যা ও ভোটারসম্পাদনা
- মোট জনসংখ্যা- ১৮০১৩৫৬ জন, পুরুষ- ৯০৫৯৪৪ জন, মহিলা- ৮৯৫৪১২ জন।
- মোট ভোটার- ১০৮১১৫৭ জন, পুরুষ- ৫৪১৮৯৫ জন, মহিলা- ৫৮১০৬২ জন।
অর্থনীতিসম্পাদনা
এই এলাকার অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। এখানকার অর্থকার ফসলের মধ্যে ধান, গম, আলু, পাট, তামাক, সরিষা, সুপারী, বাঁশ, আখ, ভুট্টা, বাদাম, কাউন উল্লেখযোগ্য। শিল্প প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ৮৯৩টি, ৪টি বড়, ২৭টি মধ্যম এবং ৮৬২টি কুটির শিল্প। মোট আবাদী জমির পরিমাণ ২৫৯৬০৮.২১ একর।
শিক্ষাসম্পাদনা
শিক্ষার হার শতকরা ৫৬%।[২] উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হল-
- কলেজের সংখ্যা: ৬৪টি
- হাইস্কুলের সংখ্যাঃ২৬৬টি
- মাদ্রাসার সংখ্যা: ২৩৮টি
- কলেজ সমুহঃ
- কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ,
- কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ
- ভুরুংগামারী সরকারি কলেজ,
- উলিপুর সরকারি কলেজ।
- ফুলবাড়ি জসিমিয়া সরকারি কলেজ
- নাগেশ্বরী সরকারি কলেজ,
- রৌমারী সরকারি কলেজ
- স্কুল সমুহ
- কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।
- ভুরুংগামারী পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়,
- নাগেশ্বরী ডি এম একাডেমি,
- উলিপুর এম এস স্কুল এন্ড কলেজ
- কুড়িগ্রাম কামিল (এমএ) মাদ্রাসা,
- নাগেশ্বরী কামিল (এমএ) মাদ্রাসা
- তিলাই উচ্চ বিদ্যালয়, ভুরুংগামারী
- ভুরুংগামারী নে/উ বালিকা উঃবিঃ
- ইসমাইল হোসেন ডিগ্রি কলেজ
- সি,জি জামান উচ্চ বিদ্যালয়
- বোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
- এইলি মডেল স্কুল, ঘড়িয়ালডাঙ্গা, রাজারহাট।
- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা: ৫৬৩টি
- বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা: ৫৪৫টি
জেলার সর্বসাধারণের জন্য এখানে একটি সরকারি গণগ্রন্থাগার রয়েছে। যা শহরের প্রাণকেন্দ্র তথা কলেজ মোড়, কুড়িগ্রাম সদর, কুড়িগ্রাম-এ অবস্থিত।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসম্পাদনা
- মসজিদের ৩৪৯৩টি
- মন্দিরের ১৮০টি
- গির্জার ৩টি
যোগাযোগ মাধ্যমসম্পাদনা
রেলপথসম্পাদনা
১৬ই অক্টোবর, ২০১৯ সালে রাজধানী থেকে সেমি ননস্টপ ট্রেন কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস চালু হয়।
সময়সূচীসম্পাদনা
৭৯৮ কুড়িগ্রাম থেকে ছাড়েঃ ০৭ঃ২০ ঢাকা পৌছেঃ ১৭ঃ২৫
৭৯৭ ঢাকা থেকে ছাড়েঃ ২০ঃ৪৫ কুড়িগ্রাম পৌছেঃ ০৬ঃ২০
চিত্তাকর্ষক স্থানসম্পাদনা
- ধরলা সেতু
- ধরলা সেতু ২ (ফুলবাড়ী উপজেলা)
- সোনাহাট স্থলবন্দর
- ধরলা বাঁধ
- শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলক
- চান্দামারী মসজিদ
- কোটেশ্বর শিব মন্দির
- পাঙ্গা জমিদার বাড়ি
- ঘড়িয়ালডাঙ্গা জমিদার বাড়ি
- টুপামারী (জিয়া পুকুর)
- মুন্সিবাড়ী
- ধাম শ্রেণী মন্দির
- জালার পীরের দরগাহ
- উদুনা-পুদুনার বিল
- বেহুলার চর
- ভেতরবন্দ জমিদার বাড়ি
- সোনাহাট ব্রিজ
- ফুল সাগর
- নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ি
- চতুর্ভূজ সেনপাড়া শিব মন্দির
- ধলডাঙ্গা বাজার
- কালজানি ঘাট
- চিলমারী বন্দর
- জয়মনিরহাট জমিদার বাড়ি
- মাধাইখাল কালী মন্দির
- বহলকুড়ি ভারত ও বাংলাদেশ ১০০১ নাম্বার রাষ্ট্রীয় সিমানা চুক্তি পিলার
- চাকিরপাশার বিল।
- টগরাইহাটের অচিন গাছ।
- দাশিয়ার ছড়া (সাবেক ছিটমহল)
- আমতলি সর্বজনীন দুর্গা মন্দির(রাজারহাট)
কৃতি ব্যক্তিত্বসম্পাদনা
- সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, কুড়িগ্রাম জেলা শাখা।
- সাবেক গভর্নর, কুড়িগ্রাম জেলা,
- সাবেক সংসদ সদস্য, কুড়িগ্রাম ১.
- তারামন বিবি, বীর প্রতীক (মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য খেতাব প্রাপ্ত)
- সৈয়দ শামসুল হক (প্রথিতযশা সাহিত্যিক)
- আব্বাসউদ্দীন আহমদ (ভাওয়াইয়া সম্রাট হিসেবে খ্যাত। মূলত কুচবিহারে জন্মগ্রহণ করলেও রংপুর বেতার কেন্দ্রে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন, কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দর নিয়ে গান রচনা করেছেন)
- কছিম উদ্দিন (ভাওয়াইয়া যুবরাজ হিসেবে পরিচিত)
- খালিদ হাসান সোহেল (চলচ্চিত্র নির্মাতা)
- মরহুম অধ্যাক্ষ জনাব এম,এ বকর মিঞা অধ্যাক্ষ বলদিয়া কলেজীয়েট স্কুল,বলদিয়া,ভুরুঙ্গামারী।
- ভবানী পাঠক (বৃটিশদের বিরুদ্ধে তিনি প্রথম সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন)
- মোঃ জাকির হোসেন (পরিবেশ, পানি সম্পদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ)
- ড.তুহিন ওয়াদুদ, শিক্ষক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
- সফিউল আলম রাজা (ভাওয়াইয়া শিল্পী)
- সাবেক সংসদ সদস্য কুড়িগ্রাম ১,
- সাবেক গভর্নর কুড়িগ্রাম জেলা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "কুড়িগ্রাম জেলা - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-০২।
- ↑ "কুড়িগ্রাম জেলা"
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। kurigram.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-০২।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
বহিসংযোগসম্পাদনা
উইকিভ্রমণে কুড়িগ্রাম জেলা সম্পর্কিত ভ্রমণ নির্দেশিকা রয়েছে। |
উইকিমিডিয়া কমন্সে কুড়িগ্রাম জেলা সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে। |
- কুড়িগ্রাম জেলা - জাতীয় তথ্য বাতায়ন।