বরিশাল
বরিশাল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি প্রধান শহর। এটি বরিশাল বিভাগের অন্তর্গত ও একই সাথে জেলা ও বিভাগীয় সদর দপ্তর। কীর্তনখোলা নদীর তীরে মোগল আমলে স্থাপিত লবণচৌকি গিরদে বন্দর কে কেন্দ্র করে এ শহর গড়ে ওঠে ও ১৮০১ সালে বরিশালে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার সদর দপ্তর স্থাপিত হলে, শহর হিসেবে এর ব্যাপক গুরুত্ব বাড়ে। দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের একটি মূল উৎস এই বৃহত্তর বরিশাল। বরিশালে একটি নদীবন্দর রয়েছে যেটি দেশের অন্যতম প্রাচীন, দ্বিতীয় বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ একটি নদীবন্দর। ডিজিটাল জনশুমারী ও গৃহগণনা-২০২২ অনুযায়ী বরিশাল আয়তনে দেশের ১০ম এবং জনসংখ্যায় ১২তম বৃহত্তর মহানগর।
বরিশাল বাকলা, চন্দ্রদ্বীপ, বাকেরগঞ্জ | |
---|---|
মহানগরী | |
বরিশাল | |
উপর থেকে: বরিশাল লঞ্চ টার্মিনাল, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, গুঠিয়া মসজিদ, অক্সফোর্ড মিশন এপিফানী গির্জা, ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল জাদুঘর | |
ডাকনাম: বাংলার ভেনিস | |
বরিশালের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২২°৪৮′০″ উত্তর ৯০°৩০′০″ পূর্ব / ২২.৮০০০০° উত্তর ৯০.৫০০০০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | বরিশাল বিভাগ |
জেলা | বরিশাল জেলা |
পৌরসভা প্রতিষ্ঠা | ১৮৭৬ |
সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা | ২০০২ |
শহর হিসাবে মর্যাদা প্রাপ্তি | ১৯ এপ্রিল ২০০৩ |
সরকার | |
• ধরন | মেয়র-কাউন্সিল |
• শাসক | বরিশাল সিটি কর্পোরেশন |
• মেয়র | আবুল খায়ের আবদুল্লাহ |
আয়তন | |
• পৌর এলাকা | ৫৮ বর্গকিমি (২২ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ১ মিটার (৪ ফুট) |
জনসংখ্যা (২০২৩) | |
• মহানগরী | ৪,১৯,৩৫১ |
• জনঘনত্ব | ১০,৫২৪/বর্গকিমি (২৭,২৬০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৮২০০ |
কলিং কোড | ০৪৩১ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট |
নামকরণ
সম্পাদনাবরিশাল নামকরণ সম্পর্কে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। এক কিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে, পূর্বে এখানে খুব বড় বড় শাল গাছ জন্মাতো, আর এই বড় শাল গাছের কারণে (বড়+শাল) বরিশাল নামের উৎপত্তি। খাল বিল জলাভূমিতে ভরা বরিশালে যাতায়াতের অসুবিধাকে মাথায় রেখে চালু হয়েছে কথা "আইতে শাল যাইতে শাল, তার নাম বরিশাল"।[১] কেউ কেউ দাবি করেন, পর্তুগীজ বেরি ও শেলির প্রেমকাহিনীর জন্য বরিশাল নামকরণ করা হয়েছে। অন্য এক কিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে, গিরদে বন্দরে (গ্রেট বন্দর) ঢাকার নবাবদের বড় বড় লবণের গোলা ও চৌকি ছিল। ইংরেজ ও পর্তুগীজ বণিকরা বড় বড় লবণের চৌকিকে 'বরিসল্ট' বলতো। অথাৎ বরি (বড়) + সল্ট (লবণ) = বরিসল্ট। আবার অনেকের ধারণা এখানকার লবণের দানাগুলো বড় বড় ছিল বলে বরিসল্ট বলা হতো। পরবর্তিতে বরিসল্ট শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল নামে পরিচিতি লাভ করে।
ভৌগোলিক সীমারেখা
সম্পাদনাবরিশাল জেলা ২১ ডিগ্রি থেকে ২৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯ ডিগ্রি থেকে ৯১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত। বরিশাল শহর এর আয়তন ৯৩.৬৩ বর্গ কিমি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
জনসংখ্যা
সম্পাদনা২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বরিশাল মহানগরীয় অঞ্চলে বসবাসরত জনসংখ্যা ৩,২৮,২৭৮ জন। মোট জনসংখ্যার ৫১.৬৩% পুরুষ এবং ৪৮.৩৭% নারী।[২] বরিশালের নগরবাসীর মধ্যে সাক্ষরতার হার ৭৫.৩%,[৩] যা জাতীয় গড় সাক্ষরতা ৫৬.৫% এর তুলনায় অনেক বেশি।
ধর্ম
সম্পাদনাবরিশালের মোট জনসংখ্যার ৮৯.৩০% মুসলিম, যার মধ্যে অধিকাংশ সুন্নি ইসলামের হানাফি মাযহাবের অনুসারী, ৯.৭% হিন্দু, ০.৯৮% খ্রিষ্টান এবং ০.০১% বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী।[৪] বরিশাল শহরে মসজিদের সংখ্যা ৩৫০, গির্জার সংখ্যা ৫, এবং মন্দিরের সংখ্যা ২০ এর বেশি।
২০১৫ সাল থেকে বরিশালের সংখ্যালঘু ক্যাথলিকদের নিজস্ব রোমান ক্যাথলিক ডায়োসিজ (বিশপের এলাকা) রয়েছে।
প্রকাশনা
সম্পাদনাদৈনিক দক্ষিণাঞ্চল, দৈনিক পল্লী অঞ্চল, দৈনিক শাহনামা, দৈনিক বাংলার বনে, দৈনিক আজকের বার্তা, দৈনিক আজকের পরিবর্তন, দৈনিক মতবাদ, দৈনিক সত্য সংবাদ, দৈনিক বরিশাল বার্তা, দৈনিক ভোরের অঙ্গিকার, দৈনিক বরিশাল প্রতিদিন, দৈনিক বিপ্লবী বাংলাদেশ, দৈনিক আজকের বরিশাল, দৈনিক আজকের সময়ের বার্তা, দৈনিক বাংলাদেশ বানী, দৈনিক আজকের তালাশ, দৈনিক বরিশালের ভোরের আলো, দৈনিক বরিশালের আজকাল, দৈনিক কলমের কণ্ঠ, বরিশাল ক্রাইম নিউজ, দৈনিক বরিশালের আলো।
- সাপ্তাহিকীর / সাময়িকী
বাকেরগঞ্জ পরিক্রমা, চিরন্তন বাংলা, উপকূল
উল্লেখযোগ্য স্থান ও স্থাপনা
সম্পাদনা- ব্রজমোহন বিদ্যালয়
- চর মোনাই দরবার ও মাদ্রাসা
- বাইতুল আমান জামে মসজিদ
- বিবির পুকুর
- বঙ্গবন্ধু উদ্যান (বেলস পার্ক)
- অশ্বিনী কুমার টাউন হল
- বরিশাল জিলা স্কুল
- বিভাগীয় যাদুঘর (কালেক্টরেট ভবন)
- ব্রজমোহন কলেজ
- শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
- বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
- অক্সফোর্ড মিশন এপিফানী গির্জা
- ব্যাপ্টিস্ট মিশন গির্জা
- সেইন্ট পিটার চার্চ
- কীর্তনখোলা নদী
- বরিশাল নদী বন্দর
- গুঠিয়া মসজিদ
- দুর্গাসাগর দিঘি
- চারণকবি মুকুন্দদাস প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দির
- সাতলার বিল
- লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি
- ভাসমান বাজার, স্বরূপকাঠি
- বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
- গুঠিয়া মসজিদ
- জীবনানন্দ দাসের বাড়ি
- বার্থী কালীবাড়ি
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
সম্পাদনা- মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত - ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী, শিক্ষানুরাগী, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক
- শহীদ আলতাফ মাহমুদ - ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, সুরকার, সঙ্গীতশিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী
- শহীদ তারকেশ্বর সেনগুপ্ত - ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী ও চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের অন্যতম কর্মী
- বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর - মুক্তিযোদ্ধা (বীরশ্রেষ্ঠ)
- কুসুমকুমারী দাশ - লেখক ও কবি
- জীবনানন্দ দাশ, - কবি
- আবদুর রহমান বিশ্বাস - সাবেক রাষ্ট্রপতি
- শওকত হোসেন হিরন - সাবেক মেয়র
- শের-ই বাংলা এ.কে.ফজলুল হক - রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
- সুফিয়া কামাল - কবি
- হানিফ সংকেত - উপস্থাপক
- কামিনী রায় - কবি
- প্রতুল মুখোপাধ্যায় - কবি, গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী
- নির্মলকুমার রায়চৌধুরী, চিকিৎসক ও সমাজসেবী
- অমল কুমার রায়চৌধুরী, গবেষক ও সাহিত্যিক
- আসাদ চৌধুরী - কবি
- আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ - লেখক ও কবি
- সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক - পীর ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
- সৈয়দ ফজলুল করিম - পীর ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
- সৈয়দ রেজাউল করিম - পীর ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
- সৈয়দ ফয়জুল করিম - রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
- সৈয়দ দুলাল - নাট্য ব্যক্তিত্ব ও টেলিভিশন অভিনেতা
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ পবিত্র কুমার গুপ্ত (২০০০)। পূণ্যক্ষেত্র হরিহর ক্ষেত্রে। কলকাতা: স্বদেশ চর্চা কেন্দ্র। পৃষ্ঠা ১৯।
- ↑ "বরিশাল সিটি কর্পোরেশন"। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। ২০১৩-০৭-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৯-১৯।
- ↑ "Bangladesh Bureau of Statistics Region Census 2011 page 30" (পিডিএফ)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। ২০১৪-১১-১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৯-২০।
- ↑ ক খ "Bangladesh Bureau of Statistics Region Census 2011 page 28" (পিডিএফ)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। ২০১৪-০৯-২৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০৯-২০।