অশ্বিনীকুমার দত্ত

রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবী, লেখক, শিক্ষক, আইনজ্ঞ

অশ্বিনীকুমার দত্ত (২৫শে জানুয়ারি, ১৮৫৬-৭ই নভেম্বর, ১৯২৩) ছিলেন একজন বাঙালি রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক এবং লেখক।

অশ্বিনীকুমার দত্ত
জন্ম২৫ জানুয়ারি ১৮৫৬
মৃত্যু৭ নভেম্বর ১৯২৩
পেশাবাঙালি রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক এবং লেখক


অশ্বিনী কুমার দত্ত

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

অশ্বিনীকুমার দত্ত বরিশালের গৌরনদীর বাটাজোর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন সাব-জজ ব্রজমোহন দত্ত। কলকাতাপ্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফ এ পাশ করেন ও ১৮৭৯ সালে এলাহাবাদ থেকে মাত্র ২৩ বছর বয়েসে আইন (বি.এল) পাশ করেন তিনি। ওই বছর তিনি শ্রীরামপুরের চাতরা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।[]

কর্মকাণ্ড

সম্পাদনা

বরিশালে বিভিন্ন সমাজহিতৈষী ও কল্যাণমূলক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। জাতীয়তাবাদী রাজনীতি, জনকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কাজকর্মের জন্যে তাকে মহাত্মা অশ্বিনীকুমার বা আধুনিক বরিশালের রূপকার বলে অভিহিত করা হতো। দুর্নীতি, সামাজিক গোঁড়ামি, কুসংস্কার ইত্যাদির বিরুদ্ধে ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিবেদিত প্রান ছিলেন তিনি। দুর্ভিক্ষে অতুলনীয় সেবাকাজে, চা বাগান শ্রমিকদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ, ক্লান্তিহীন নেতা।[] চারণকবি মুকুন্দ দাস ও রাজনীতিবিদ আবুল কাশেম ফজলুল হকের খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠায় তার সর্বাত্মক অবদান ছিল। বরিশাল শহরে নিজের দান করা এলাকায় পিতার নামে ব্রজমোহন বিদ্যালয় ও ব্রজমোহন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে কুড়ি বছর বিনা বেতনে কলেজে শিক্ষাদান করেছেন। তিনি বরিশাল শহরে স্ত্রী শিক্ষার্থে একটি বালিকা বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৯০৫-১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় জাতীয় নেতার স্থান লাভ করেন তিনি। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের মাদ্রাজ অধিবেশনে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেন। জাতীয় কংগ্রেসকে প্রাসাদ রাজনীতি থেকে সাধারণ জনগণের মধ্যে নিয়ে আসার প্রথম কারিগর অশ্বিনীকুমার দত্ত। তার প্রতিষ্ঠিত 'স্বদেশ বান্ধব সমিতি'র স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্যে বরিশালকে স্বদেশী আন্দোলনের একটি শক্তিশালী কেন্দ্রে পরিণত করেছিলেন। জেলার সর্বত্র এর ১৬০ টিরও বেশি শাখা ছিল এই সমিতির। ব্রিটিশ পুলিশ তাকে বরিশালে গ্রেপ্তার করে ও ১৯০৮ সালে তার সমিতি নিষিদ্ধ করে। তাকে ১৯১০ সাল পর্যন্ত লক্ষ্মৌ জেলে বন্দি রাখা হয়।[] ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধী প্রথম বরিশালে এসে অশ্বিনীকুমার দত্তকে জেলার অদ্বিতীয় নেতা হিসেবে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছিলেন। কলকাতায় রাজনারায়ণ বসুর প্রভাবে ব্রাহ্মধর্মে আকৃষ্ট হন ও ১৮৮২-তে বরিশালে ব্রাহ্মসমাজের সদস্যপদ গ্রহণ করেন।[][]

  • ১৮৮৪-তে 'ব্রজমোহন স্কুল' প্রতিষ্ঠা করেন।
  • ১৮৮৬-তে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য 'পিপলস্‌ অ্যাসোসিয়েশন' স্থাপন করেন।
  • ১৮৮৭-তে তার প্রচেষ্টায় বরিশাল ডিস্ট্রিক্ট বোর্ড স্থাপিত হয়।
  • ১৮৮৭-তে নারী শিক্ষা প্রসারের জন্য 'বাখরগঞ্জ হিতৈষিণী সভা' এবং একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
  • ১৮৮৯ ব্রজমোহন কলেজ স্থাপন করেন।
  • অশ্বিনী ভবন ভেঙ্গে ফেলার পর নাইট কলেজ তৈরি করা হয় যা পরে বর্তমান বরিশাল কলেজ নাম দেয়া হয়।

রচিত গ্রন্থ

সম্পাদনা
  • ভক্তিযোগ
  • কর্মযোগ
  • প্রেম
  • দুর্গোৎসবতত্ত্ব
  • আত্মপ্রতিষ্ঠা
  • ভারতগীতি[][]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "অশ্বিনীকুমার দত্ত"barisalpedia.net.bd। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. প্রথম খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৩৮। 
  3. "চিত্র-বিচিত্র"। প্রথম আলো। ১৪ নভেম্বর ২০০৯। ৭ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৭ 
  4. "মহাত্মা শ্রী অশ্বিনীকুমার দত্ত"। সংগ্রহের তারিখ ৩ অক্টোবর ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]