মুকুন্দ দাস
মুকুন্দ দাস (ফেব্রুয়ারি ২২, ১৮৭৮ - মে ১৮, ১৯৩৪)একজন বাঙালি কবি যাকে চারণ কবি বলেও অভিহিত করা হয়। মুকুন্দ দাস স্বদেশী ও অসহযোগ আন্দোলনের সময় বহু স্বদেশী বিপ্লবাত্মক গান ও নাটক রচনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ছিলেন, স্বদেশী যাত্রার প্রবর্তক। প্রকৃতপক্ষে তিনি একজন চারণ কবি ছিলেন।
মুকুন্দ দাস | |
---|---|
জন্ম | যজ্ঞেশ্বর দে ২২ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৮ চন্দ্রদ্বীপ, ঢাকা, ব্রিটিশ ভারত |
মৃত্যু | ১৮ মে ১৯৩৪ | (বয়স ৫৬)
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় |
পেশা | নাট্যকার, সুরকার, চারণ কবি |
দাম্পত্য সঙ্গী | সুভাষিণী দেবী |
পিতা-মাতা | গুরুদয়াল দে শ্যামাসুন্দরী দেবী |
জন্ম ও শৈশব
সম্পাদনাঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগণার বানরী গ্রামে ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার গুরুদয়াল দে'র ঔরসে শ্যামাসুন্দরী দেবীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম গুরুদয়াল দে এবং মাতার নাম শ্যামাসুন্দরী দেবী ও তার স্ত্রী সুভাষিণী দেবী। তার বাবার দেওয়া নাম ছিল যজ্ঞেশ্বর দে এবং ডাক নাম ছিল যজ্ঞা। তার জন্মের পরে ঐ গ্রাম পদ্মা নদীতে তলিয়ে গেলে তারা সপরিবারে গুরু দয়ালের চাকুরিস্থল বরিশাল শহরে চলে আসেন। বরিশালের ব্রজমোহন স্কুলে তার শিক্ষা শুরু হয়। বরিশালে বৈষ্ণব সন্ন্যাসী রামানন্দ অবধূত যজ্ঞেশ্বরের গলায় হরি সংকীর্তন ও শ্যামা সঙ্গীত শুনে মুগ্ধ হয়ে তাকে দীক্ষা দিয়ে তার নাম রাখেন মুকুন্দ দাস। উনিশ বছরের বয়সের মধ্যে মুকুন্দ দাস সাধন-সঙ্গীত নামে একশখানি গান সমৃদ্ধ একখানি বই রচনা করেন।[১] বরিশাল হিতৈষী পত্রিকায় লিখতেন। যাত্রাগানে সারা বরিশাল মাতিয়ে রাখতেন।
মুকুন্দ দাসের বাড়ির বর্তমান অবস্থা
সম্পাদনাচারণ কবি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তিনি বরিশালের কাশীপুর কালী মন্দিরের জায়গা কেনেন, যা এখন বরিশাল নগরীতে ঢোকার মুখে নথুলাবাদ বাস টার্মিনাল -সংলগ্ন চারণকবি মুকুন্দ দাসের কালীবাড়ি। সেই সময়ের মোট জায়গা ছিল ৮৭ শতক, এখন আছে মাত্র ১৯ শতক। বাকিটা বেহাত হয়ে গেছে। বর্তমান স্থানটুকু ঘিরে আছে ছাত্রাবাস, লাইব্রেরি, দাতব্য চিকিৎসালয় এবং পূজা মন্দির।
রাজনৈতিক গান ও নাটক রচনা
সম্পাদনাবরিশালের অশ্বিনীকুমার দত্তের সংস্পর্শে মুকুন্দদাস রাজনীতিতে আকৃষ্ট হন। তাঁর আগ্রহে মুকুন্দদাস মাতৃপূজা নামে একটি নাটক রচনা করেন। দুর্গাপূজার মহাসপ্তমীতে নবগ্রামে এই নাটকের প্রথম প্রকাশ্য যাত্রাভিনয় হয়। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় মুকুন্দদাস একের পর এক গান, কবিতা ও নাটক রচনা করে বাঙালির জাতীয় জীবনে নূতন উদ্দীপনার সঞ্চার করেন। এরপর ব্রিটিশ সরকার রাজদ্রোহের অপরাধে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন ও বিচারে তাকে দিল্লী জেলে আড়াই বছর সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়। মাতৃপূজা নাটকটি সরকার বাজেয়াপ্ত করে। [১] কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথাক্রমে বাংলা মায়ের দামাল ছেলে চারণ-সম্রাট মুকুন্দ উপাধিতে ও সন্তান আখ্যায় ভূষিত করেন। [২]
পরবর্তী জীবন
সম্পাদনামুকুন্দদাস কারাবাসে থাকাকালীন তাঁর স্ত্রী সুভাষিণী দেবীর মৃত্যু ঘটে। মুক্তিলাভের পর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ও অন্যান্যরা তাঁকে সান্ত্বনা দেন ও উদ্বুদ্ধ করেন যার ফলে তিনি পুনরায় রচনায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ মে শুক্রবার মুকুন্দদাস মৃত্যু বরণ করেন।[১]
রচনা
সম্পাদনামুকুন্দদাসের রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মাতৃপূজা, সমাজ, আদর্শ, পল্লীসেবা, সাথী, কর্মক্ষেত্র, ব্রহ্মচারিণী, পথ ইত্যাদি।[১]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ ঘ চারণকবি মুকুন্দদাসের গ্রন্থাবলী, প্রকাশক - বসুমতী কর্পোরেশন লিমিটেড, ১৬৬, বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী ষ্ট্রীট, কলকাতা, ৭০০০১২
- ↑ সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৭; পৃষ্ঠা- ২৮৬।