জয়পুরহাট জেলা
জয়পুরহাট জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এ জেলার অন্তর্গত তিলকপুর বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের একটি প্রাচীন মফস্বল, এটি সুতা ক্রয়-বিক্রয়ের হাটের জন্য বিখ্যাত ছিল । সময়ের পরিক্রমায় সে হাট এখন হারিয়ে গেছে । তিলকপুরের প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল তিলকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যা ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি একবার শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয় হবার মর্যাদা লাভ করে। উল্লেখ্য প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও একই বছর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । মজার ব্যাপার হলো এটি এমন এক জেলা যেখানে সকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস।
জয়পুরহাট | |
---|---|
জেলা | |
![]() বাংলাদেশে জয়পুরহাট জেলার অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°৬′ উত্তর ৮৯°৬′ পূর্ব / ২৫.১০০° উত্তর ৮৯.১০০° পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রাজশাহী বিভাগ |
স্থাপিত | ২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৪ (আগে বগুড়া জেলার মহকুমা ছিলো) |
সরকার | |
• জেলা প্রশাসক | মোঃ শরীফুল ইসলাম |
আয়তন | |
• মোট | ৯৬৫.৪৪ বর্গকিমি (৩৭২.৭৬ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ৯,৫০,৪৪১ |
• জনঘনত্ব | ৯৮০/বর্গকিমি (২,৫০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৭৫.৭% (তথ্যসূত্রঃ-BBS 2021) |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৫৯০০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫০ ৩৮ |
ওয়েবসাইট | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট ![]() |
অবস্থান ও আয়তনসম্পাদনা
জয়পুরহাট জেলার উত্তরে রয়েছে গাইবান্ধা জেলা, দিনাজপুর জেলা এবং ভারত সীমান্ত, দক্ষিণে রয়েছে বগুড়া জেলা ও নওগাঁ জেলা, পূর্বে বগুড়া জেলা ও গাইবান্ধা জেলা, এবং পশ্চিমে নওগাঁ জেলা ও ভারত সীমান্ত। জেলাটির মোট এলাকার পরিমাণ ৯৬৫.৮৮ বর্গ কিলোমিটার।[১]
ইতিহাসসম্পাদনা
স্বাধীন বাংলায় ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮২১ সালে বৃহত্তর রাজশাহী জেলার চারটি, রংপুর জেলার ২টি ও দিনাজপুর জেলার ৩টি থানা নিয়ে যে বগুড়া জেলা গঠিত হয়েছিল তারই অংশ নিয়ে ১৯৭১ সালে প্রথমে জয়পুরহাট মহকুমা এবং পরবর্তীকালে ১৯৮৪ সালে জয়পুরহাট জেলা গঠিত হয়।
ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত জয়পুরহাটের ইতিহাস অস্পষ্ট; কারণ এই সময়ে ভারতবর্ষের ইতিহাসে জয়পুরহাটের কোন স্বতন্ত্র ভৌগোলিক অবস্থান ছিল না। জয়পুরহাট দীর্ঘকাল গৌড়ের পাল এবং সেন রাজাদের রাজ্য ভূক্ত ছিল। সে সময় জয়পুরহাট নামে কোন স্থান পাওয়া যায় না । এমনকি জয়পুরহাটের পূর্ব অবস্থান বগুড়ারও কোন ভৌগোলিক অস্তিত্ব ছিল না। পূর্বে চাকলা ঘোড়াঘাট এবং পরবর্তীতে দিনাজপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল জয়পুরহাট।
বর্তমানে জয়পুরহাট এবং পাঁচবিবি উপজেলার গ্রামসমূহ নিয়ে একসময় লালবাজার থানা গঠিত হয়েছিল। জয়পুরহাট সদর থানার পশ্চিম প্রান্তে যমুনা নদীর পুর্ব তীরে পুরানাপৈল এলাকায় এই থানা অবস্থিত ছিল। স্থানটি বর্তমানে করিমনগর বলে পরিচিত। করিমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিকট যুমনা নদীর ঘাটকে আজও থানার ঘাট বলা হয়। এর দক্ষিণেও যে স্থানে বাজার ছিল তাকে বর্তমানে বাজারের ভিটা বলা হয়। এই লাল বাজারে সেই সময়ে পোস্ট অফিস স্থাপিত হয়েছিল। সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস ছিল আক্কেলপুর রেলস্টেশনের পূর্ব দিকে নবাবগঞ্জ নামক স্থানে। লাল বাজার থানার এবং খঞ্জনপুর কুঠির ভারপ্রাপ্ত ইংরেজ কর্মকর্তার তত্ত্বাবধায়নে পলিবাড়ি, খঞ্জনপুর,পুরানাপৈল,পাঁচবিবি প্রভৃতি স্থানে নীল কুঠি স্থাপিত হয়েছিল। তৎকালে লালবাজার ছিল শহর এবং সাধারণ মানুষের জীবিকার একমাত্র কর্মস্থল। দেশে তখনো রেল লাইন স্থাপিত হয়নি। মালামাল আমদানি, রপ্তানি এবং একস্থান হতে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত করার জন্য নদীপথ ব্যতীত অন্য উপায় ছিল না। যমুনা নদী ছিল ভীষণ খরস্রোতা। লাল বাজার থানা ঘাটে মহাজন ও সওদাগরী নৌকা ভিড়ত। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র উঠানামা করত। এই নদী পথেই দূর দূরান্তে যাতায়াত ও ব্যবসা বাণিজ্য চলত। সে সময় লাল বাজার, ক্ষেতলাল এবং বদলগাছী থানা দিনাজপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। দিনাজপুর, রংপুর ও রাজশাহী জেলার আয়তন এত বৃহৎ ছিল যে একজন প্রশাসকের পক্ষে সমগ্র জেলা নজর রাখা সম্ভব হত না। তাই ১৮২১ সালে ভারতের তৎকালীন বড়লাট বাহাদুর রাজশাহী, রংপুর এবং দিনাজপুর হতে কয়েকটি থানা নিয়ে বগুড়া জেলা গঠন করেন। এসময় রাজশাহী হতে শেরপুর, বগুড়া এবং আদমদিঘী থানা, রংপুর হতে দেওয়ানগঞ্জ ও গোবিন্দগঞ্জ থানা এবং দিনাজপুর হতে ক্ষেতলাল, বদলগাছী ও লাল বাজার থানা বিচ্ছিন্ন করে বগুড়া জেলার সৃষ্টি হয়েছিল। ব্যান্ডেল সাহেব ছিলেন বগুড়ার প্রথম ম্যাজিস্ট্রেট।
১৮৫৭ সাল থেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত দেশে ভীষণ দূর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এসময় দেশে রেল লাইন বসানোর কাজ শুরু হয়। ১৮৮৪ সালে কলকাতা হতে জলপাইগুড়ি পর্যন্ত ২৯৬ মাইল রেলপথ বসানো কাজ শেষ হলে লোকজনের উঠানামা ও মালামাল আমদানি রপ্তানির সুবিধার জন্য ৪-৭ মাইল পর পর রেলস্টেশন স্থাপন করা হয়। সান্তাহারের পরে তিলকপুর, আক্কেলপুর, জামালগঞ্জ এবং বাঘবাড়ীতে স্টেশন স্থাপিত হয়। সেসময় বাঘবাড়ী রেলস্টেশন কে জয়পুর গভর্ণমেন্ট ক্রাউনের নাম অনুসারে রাখা হয় জয়পুরহাট রেলস্টেশন। পরবর্তীতে রেলস্টেশনের সাথে পোস্ট অফিসের নাম জয়পুরহাট রাখার ফলে নামটি প্রসিদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু সরকারি কাগজপত্রে এর আসল নাম গোপেন্দ্রগঞ্জ বহাল থাকে। অন্য দিকে, প্রাকৃতিক দূর্যোগের বিপর্যয়ের ফলে যমুনার নব্যতা কমে যায় এবং ভাঙ্গনের ফলে লাল বাজার থানা হুমকির মুখে পরে। ফলে ভারত সরকারের নির্দেশে ১৮৬৮ সালে ১৬ মার্চ তারিখে লালবাজার পুলিশ থানা যমুনার অন্য তীরে খাসবাগুড়ী নামক গ্রামে স্থানান্তরিত করা হয়। সেই সময় স্থানটির নাম ছিল পাঁচবিবি। পরবর্তী কালে দমদমায় রেলস্টেশন স্থাপিত হলে পুলিশ থানা দমদমায় স্থানান্তরিত হয়। তৎকালে পাঁচবিবি নাম প্রসিদ্ধী লাভ করেছিল। তাই দমদমা রেলস্টেশন ও থানার নাম পূর্বের নাম অনুসারে পাঁচবিবি রেলস্টেশন রাখা হয়। দেশে রেল লাইন বসানোর পূর্বে জলপথে নৌকা এবং স্থলপথে ঘোড়া বা ঘোড়ার গাড়ি ছিল যাতায়াতে একমাত্র অবলম্বন । শ্বাপদ সংকুল জলপথে নৌকায় চরে যাতায়াত নিরাপদ ছিল না। আর এতে অধিক সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। তাই রেল লাইন বসানোর পরে নদীপথে যাতায়াত বহুলাংশে কমে যায়। জয়পুরহাট রেলস্টেশন হওয়াতে ব্যবসার ও যাতায়াতের সুবিধার কথা চিন্তা করে বিত্তশালী ব্যক্তিরা রেলস্টেশনের আশে বাসে বসতি গড়ে তোলেন। এতে খনজনপুর ও লাল বাজার হাট বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং বাঘাবাড়ী অর্থাৎ জয়পুরহাট প্রসিদ্ধ হতে থাকে। পরবর্তীতে বাঘাবাড়ীকে লিখিত হিসেবে গোপেন্দ্রগঞ্জ লিখা হতে থাকে। ১৯০৭ সালে বাঘাবাড়ীতে একটি পৃথক থানা গঠিত হয়, এবং জয়পুরহাট নামটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত হওয়ায় তা জয়পুরহাট থানা নামে পরিচিতি পায়। ১৯১৮ সালে জয়পুরহাট থানা ভবন নির্মিত হলে পাঁচবিবি থানাকে জয়পুরহাট থানার উত্তর সীমা রুপে নির্দিষ্ট করা হয়। ১৯২০ সালে ভূমি জরিপে জয়পুরহাট থানার একটি পৃথক নকশা অঙ্কিত হয়। জয়পুরের প্রাচীন রাজধানী অমবর/জয়পুর হতে পাচ মাইল দূরে অমবরের অধিষ্ঠাদেবী শীতলাদেবী । এই দেবী যশোহরের বারো ভুঁইয়ার অন্যতম। চাদারায় ও কেদারা রায়ের রাজধানী শ্রীপুর নগরীতে প্রতিষ্ঠিত হয়। মানসিংহ কর্তৃক চাদারায় পরাজিত হলে তিনি এই অষ্টভুজাদ দেবীমুর্তি আনয়ন করে স্থাপন করেন। এই সব কারণে জয়পুর বংগবাসীর নিকট প্রিয় হতে থাকে। বিশেষ করে জয়পুর ও মাড়োয়া রাজ্যের বহু লোক জয়পুরহাট এলাকায় স্থায়ী ভাবে বসবাস করায় জয়পুরের সাথে জয়পুরহাট এর গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এবং তাদের পূর্বের বাসস্থানের সংগে সংগতি রেখে খঞ্জনপুর নীল কুঠির এলাকা জয়পুর অভিহিত হতে থাকে। পরবর্তীতে রাজস্থানের জয়পুরের সংগে পার্থক্য বোঝাবার জন্য পোস্ট অফিস ও রেলস্টেশনের নাম রাখা হয়েছিল জয়পুরহাট রেলস্টেশন ও জয়পুরহাট পোস্ট অফিস। ১৯৭১ সালে ১লা জানুয়ারি তারিখে জয়পুরহাট মহকুমার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে জয়পুরহাট কে জেলা ঘোষণা করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে জয়পুরহাটসম্পাদনা
১৯৭১ সালে জয়পুরহাট জেলা (তৎকালীন জয়পুরহাট মহুকুমা) ৭ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। এই সেক্টরটি নিয়ন্ত্রণ করতেন মেজর নাজমুল হক বীর উত্তম (১৮ মার্চ ১৯৭১ – ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১) এবং মেজর কাজী নূরুজ্জামান বীর উত্তম (২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ – ডিসেম্বর ১৯৭১)। স্বাধীনতা পরবর্তী জরিপে সরকারি তথ্য অনুযায়ী এই জেলায় মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন ৭৩৯ জন।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশের সর্ববৃহৎ যুদ্ধ হিলির মুহাড়াপাড়া এলাকায় হয়েছিল বলে দাবি এখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের।
যুদ্ধ চলাকালীন এখানে প্রায় ৭ হাজার পাক সেনা নিহত হয়। শহীদ হন প্রায় ১৩শ মুক্তিযোদ্ধা এবং মিত্র বাহিনীর ৩৫৭ জন সেনা সদস্য আহত হন প্রায় ১৪শত জন।প্রচণ্ড যুদ্ধের পর ১১ ডিসেম্বর ৭নং সেক্টরের আওতায় দিনাজপুরের হিলি শত্রু মুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন স্থানে সম্মুখ ও গেরিলা যুদ্ধে হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় গ্রামের মোস্তফা, একরাম উদ্দিন, বানিয়াল গ্রামের মুজিব উদ্দিন শেখ, ইসমাইলপুর গ্রামের মনিরুদ্দিন, মমতাজ উদ্দিন, বৈগ্রামের ইয়াদ আলী ও চেংগ্রামের ওয়াসিম উদ্দিন শহীদ হন।
হিলি সীমান্ত দিনাজপুর এবং ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের প্রধান যোগাযোগ কেন্দ্র হওয়ায় উক্ত অঞ্চল রণকৌশলগত কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এই অঞ্চল দখল করার জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠে। ১৪ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখ থেকেই তারা হিলিকে দখল করার প্রচেষ্টা চালায়।এক পর্যায়ে ১৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বিকালে হানাদার বাহিনী হিলিতে অবস্থানরত ৩ ইস্ট বেঙ্গলের ক্যাপ্টেন আনোয়ার আলফা কোম্পানী ও ছাত্র জনতা মুক্তিযোদ্ধার উপর ত্রিমুখী আক্রমণ করে। হানাদার বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে টিকে থাকতে না পেরে ক্যাপ্টেন আনোয়ারের দল ছত্রভঙ্গ হয়ে সন্ধ্যার দিকে ভারতের অভ্যন্তরে বকশীগঞ্জ আম বাগানে অবস্থান নেয়।
এই যুদ্ধে ৩ ইস্ট বেঙ্গলের ৬ জন সৈনিক মৃত্যুবরণ করেন। এ অবস্থায় ২১ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে হানাদার বাহিনী হিলি দখল করে নেয় এবং চারদিকে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।
পাকিস্তানি বাহিনীর ৪ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ব্যাটালিয়ন হিলি এলাকায় কংক্রিটের বাঙ্কার নির্মাণ করত, এখানে খুবই জোরালো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। হানাদার বাহিনীর সেনারা প্রায়ই পার্শ্ববর্তী এলাকায় নারী ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ছাড়াও বাঙ্গালীদেরকে ধরে এনে এখানে নির্মম নির্যাতন করত। এক পর্যায়ে ২১ নভেম্বর ১৯৭১ তারিখে মুক্তিবাহিনীসহ যৌথ বাহিনী কর্তৃক হানাদার বাহিনীর উক্ত ঘাঁটি উৎখাত করার জন্য প্রচণ্ড আক্রমণ চালানো হয়। এই আক্রমণের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনী গোলা বর্ষণ করেও শত্রুর শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রথমে ধ্বংস করতে পারেনি। বরং এদিন মিত্রবাহিনীর অনেক সৈন্য মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে ৯ এবং ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে ভারতীয় ২০২ নং মাউন্টেন ব্রিগেডের নের্তৃত্বে যৌথবাহিনী অবিরাম আক্রমণ চালিয়ে বহু মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী সেনাদের জীবনের বিনিময়ে দখলদার বাহিনীকে পরাজিত করে। অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে এই হিলি অঞ্চল শত্রু মুক্ত হয়।
প্রশাসনিক এলাকাসমূহসম্পাদনা
জয়পুরহাট জেলা ৫টি উপজেলায় বিভক্ত। এগুলি হল:
উপজেলা | ওয়েবসাইট | আয়তন (বর্গকিমি) | জনসংখ্যা |
---|---|---|---|
জয়পুরহাট সদর উপজেলা | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট | ২৩৮.৫ | ২,৫৬,৬৯১ |
আক্কেলপুর উপজেলা | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট | ১৩৯.৪৭ | ১,২৮,৯৫২ |
কালাই উপজেলা | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট | ১৬৬.৩০ | ১,২৯,৩২৯ |
ক্ষেতলাল উপজেলা | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট | ১৪২.৬০ | ১,১৫,৮৭১ |
পাঁচবিবি উপজেলা | প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট | ২৭৮.৫৩ | ২,৪০,৯৭৯ |
এছাড়া এখানে ৫টি পৌরসভা, ৩২টি ইউনিয়ন, ৯৮৮টি গ্রাম, ও ৭৬২টি মৌজা রয়েছে।[১]
সংসদীয় আসনসম্পাদনা
জয়পুরহাটের দুইটি সংসদ আসন রয়েছে: জয়পুরহাট-১ এবং জয়পুরহাট-২।
নির্বাচনমন্ডলী নং. |
নির্বাচকমন্ডলো নাম |
ব্যাপ্তি | বর্তমান জাতীয় সংসদ সদস্য | রাজনৈতিক দল | আইনসভা | নির্বাচন অধিষ্ঠিত |
---|---|---|---|---|---|---|
জয়পুরহাট-১ |
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | একাদশ সংসদ | ডিসেম্বর ৩০, ২০১৮ | |||
জয়পুরহাট-২ |
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ | একাদশ সংসদ | ডিসেম্বর ৩০, ২০১৮ |
শিক্ষা ব্যবস্থাসম্পাদনা
জয়পুরহাট জেলার শিক্ষার হার ৭৫.৭%। জয়পুরহাট বাংলাদেশের ৭ টি নিরক্ষরমুক্ত জেলার মধ্যে অন্যতম। জেলায় সরকারি কলেজ- ৩টি, বেসরকারী কলেজ- ৩৯টি, মহিলা ক্যাডেট কলেজ- ১টি, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়- ৪টি, বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়- ১৬১টি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়- ২৬৩টি, বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়- ৮৭টি, সরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- ১টি, বেসরকারী কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- ১৩টি, কামিল মাদ্রাসা- ৪টি, ফাজিল মাদ্রাসা- ১০টি, আলিম মাদ্রাসা- ১৭টি, দাখিল মাদ্রাসা- ৮০টি, পিটিআই- ১টি, মডেল মাদ্রাসা- ১ টি রয়েছে, টিটিসি ১ টি, ১টি শিশু কল্যাণ বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে জয়পুরহাট গার্লস ক্যাডেট কলেজ, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ,মহীপুর হাজী মহাসীন সরকারি কলেজ,ক্ষেতলাল এস. এ. ডিগ্রী কলেজ, কালাই ডিগ্রী কলেজ, নান্দাইল দিঘি কলেজ, রামদেও বাজলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, জয়পুরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, জয়পুরহাট সদর থানা উচ্চ বিদ্যালয়, কালাই সরকারি এম. ইউ. উচ্চ বিদ্যালয়, ক্ষেতলাল সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় জেলার মধ্যে অন্যতম ।
এ জেলায় পড়াশুনার জন্য অনেকগুলো মাদ্রাসা রয়েছে তন্মধ্যে জয়পুরহাট সিদ্দিকীয়া কামিল মডেল মাদ্রাসা,হানাইল নোমানিয়া কামিল মাদ্রাসা,কড়ই নুরুলহুদা কামিল মাদ্রাসা,মহুরুল দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসা,ও নেংগাপীর ফাজিল মাদ্রাসা উল্লেখযোগ্য।
ধর্মসম্পাদনা
অধিকাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমান হলেও এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সহ কিছু আদিবাসী জনবসতি রয়েছে । এদের ভিতরে সাঁওতাল,ওরাও, মুনডা, মাহালি , বুনা, কোচ,হো, রাজবংশী, পাহান ইত্যাদি জনগোষ্টীর সংখ্যা প্রায় ২.২৫% । মোট ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৪৮০০০ জন(২০০১)
জেলায় মোট মসজিদের সংখ্যাঃ ২৫৭৩
জেলায় মোট হিন্দু মন্দিরের সংখ্যাঃ ৪৩৪
জেলায় মোট বৌদ্ধ মন্দিরের সংখ্যাঃ ১৮
জেলায় মোট গীর্জার সংখ্যাঃ ২১
জেলায় মোট ১৮৬ টি মসজিদ কেন্দ্রীয় পাঠাগার, ৬৭৫ জন প্রশিক্ষিত ইমাম, ২২০০ ইমাম রয়েছে।
অর্থনীতিসম্পাদনা
জয়পুরহাট জেলার অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে কৃষি নির্ভর। জয়পুরহাট উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডার খ্যাত। এখানকার মৃৎ শিল্পের কাজ এখন বিলুপ্তির পথে।[২] জয়পুরহাট চিনিকল বাংংলাদেশের বৃহৎ চিনিকল। জামালগঞ্জ কয়লা খনি দেশের বৃৃহত্তম কয়লা খনি।
প্রধান শস্যসম্পাদনা
ধান, আলু, ইক্ষু, লতিরাজ এবং কলা,মাল্টা।
রপ্তানী পণ্যসম্পাদনা
আলু, ধান, লতিরাজ, সোনালী মুরগী, কাঁচা সবজি ও চিনি
খনিজ সম্পদসম্পাদনা
জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ এলাকায় ভূপৃষ্ঠ হতে ৫১৮মিঃ নিচে প্রায় ৩৮৪ বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে চুনাপাথর এর খনির সন্ধান পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয় খনিটিতে মোট ১২০০মিলিয়ন টন চুনাপাথর মজুদ আছে।
জয়পুরহাটের জামালগঞ্জের পাহাড়পুড় এলাকায় ভূপৃষ্ঠ হতে ৬৪০মিটার গভীরে বিপুল পরিমাণ পার্মিয়ান যুগের বিটুমিনাস কয়লা পাওয়া গেছে। এই কয়লার খনিতে মোট ৬টি স্তর আছে যার মোট পুরুত্ব ৬৪ মিটার। গবেষণায় দেখা গেছে এখানে প্রায় ১০৫৩.৯০ মিলিয়ন টন কয়লা মজুদ আছে ।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বসম্পাদনা
- যেরকা ওরাও,শিক্ষানুরাগী,সমাজসেবক।
- ইয়াসিন আলী সরদার,সমাজসেবক।
- সূফী সায়েমুদ্দিন বিদ্যা বিনোদ।
- পাগলা পীর দেওয়ান সমিরুদ্দিন।
- শহীদ ডাক্তার আবুল কাশেম সরদার। শহীদ বুদ্ধিজীবী।
- খন্দকার ওলিউজ্জামান আলম,মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক।
- আব্দুর রাজ্জাক চৌধুরী, সমাজসেবক
- মনতাজুর রহমান আকবর (চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার)
- ফাতেমা তুজ জোহরা (কন্ঠ শিল্পী)
- শামসুদ্দিন হীরা (সংগীত সুরকার ওগীতিকার)
- কবি আতাউর রহমান[৩]
- অধ্যাপক মজিবর রহমান দেবদাস (একুশে পদক জয়ী ২০১৫)
- জনাব আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি (জাতীয় সংসদের হুইপ)
- খুরশিদ আলম (একুশে পদক প্রাপ্ত কন্ঠশিল্পী)
- দিলরুবা খানম (কণ্ঠশিল্পী)
- মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম ( বিজিবি মহাপরিচালক)
- শরিফুল আনোয়ার (শিক্ষাবিদ)
- মীর শহীদ মণ্ডল (একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাষা সৈনিক, কৃষক নেতা
- মেজর জেনারেল সাকিল অাহমেদ (বর্তমান মহাপরিচালক, বিজিবি)
- আলেমা ভাসানী, মওলানা ভাসানীর স্ত্রী।
- নাসির উদ্দিন সরদার,পাঠাগার সংগঠক।
- রামদেও বাজলা,শিক্ষানুরাগী।
দর্শনীয় স্থানসম্পাদনা
- বেল আমলা বার শিবালয় (শিব মন্দির),জয়পুরহাট সদর
- পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি, জয়পুরহাট সদর
- ভীমের পান্টি, মঙ্গলবাড়ি, জয়পুরহাট সদর
- দুয়ানী ঘাট, জয়পুরহাট সদর
- গোপীনাথপুর মন্দির, আক্কেলপুর
- হিন্দা-কসবা শাহী জামে মসজিদ, ক্ষেতলাল
- নিমাই পীরের মাজার, পাথরঘাটা, পাঁচবিবি
- আছরাঙ্গা দীঘী, ক্ষেতলাল;
- নান্দাইল দীঘি, পুনট,কালাই
- শিশু উদ্যান (প্রিন্স পার্ক),জয়পুরহাট
- বাংলাদেশ কয়লা, খনিজ ও ধাতব গবেষণা ইন্সটিটিউট, খঞ্জনপুর, জয়পুরহাট
- বাস্তবপুরী, জয়পুরহাট
- জয়পুরহাট চিনিকল লি.
- জামালগঞ্জ কয়লাখনি,
- লকমা জমিদার বাড়ি, পাঁচবিবি;
- পাথরঘাটা, পাঁচবিবি।
- বদ্ধভুমি- আক্কেলপুর
- হালট্টি চণ্ডী মন্দির— পুরানাপৈল, জয়পুরহাট সদর
- বিলের ঘাট (রাখালীয়া ব্রীজ ) - জয়পুরহাট
নদীসম্পাদনা
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসম্পাদনা
যোগাযোগসম্পাদনা
- সড়ক যোগাযোগ
পাকা রাস্তা- ৩৪২.৫৯ কি. মি., আধা পাকা রাস্তা- ৬১.৯৫ কি. মি., কাঁচা রাস্তা- ১,৫৯৬ কি.মি.।
- রেল যোগাযোগ
মোট রেলপথ- ৩৮.৮৬ কি. মি., মোট রেল স্টেশনের সংখ্যা- ০৭ টি (জয়পুরহাট, পাঁচবিবি, জামালগঞ্জ, আক্কেলপুর, জাফরপুর, তিলকপুর ও বাগজানা)।
ঢাকা থেকে উপজেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভাল। সড়ক পথে ঢাকা থেকে দুরত্ব ২৮০ কি.মি এর মতো। চলাচলের মাধ্যম হিসেবে হানিফ, শ্যামলী, শাহ ফতেহ আলী, সালমা, এস আর ট্রাভেলসের বিলাসবহুল কোচ পাওয়া যায়।
রেলপথে এ জেলায় রয়েছে জয়পুরহাট রেলওয়ে স্টেশন। যা রেলপথে সারাদেশের সাথে জয়পুরহাটের যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। ঢাকা অভিমুুুখী আন্তঃনগরগুলো হলো একতা, দ্রুতযান, নীলসাগর এবং কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেস।
আরও দেখুনসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ ক খ "প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব"। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৪।
- ↑ "বিলুপ্তির জয়পুরহাটের ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প"। নতুন আলো। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৪।
- ↑ "প্রখ্যাত-ব্যক্তিত্ব"। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০১৭।
বহিঃসংযোগসম্পাদনা
উইকিভ্রমণে জয়পুরহাট জেলা সম্পর্কিত ভ্রমণ নির্দেশিকা রয়েছে। |
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |