ঘোড়াঘাট উপজেলা

দিনাজপুর জেলার একটি উপজেলা

ঘোড়াঘাট উপজেলা বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা।

ঘোড়াঘাট
উপজেলা
মানচিত্রে ঘোড়াঘাট উপজেলা
মানচিত্রে ঘোড়াঘাট উপজেলা
স্থানাঙ্ক: ২৫°১৪′৪৮″ উত্তর ৮৯°১৩′২″ পূর্ব / ২৫.২৪৬৬৭° উত্তর ৮৯.২১৭২২° পূর্ব / 25.24667; 89.21722 উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন
দেশবাংলাদেশ
বিভাগরংপুর বিভাগ
জেলাদিনাজপুর জেলা
আয়তন
 • মোট১৪৮.৬৭ বর্গকিমি (৫৭.৪০ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা []
 • মোট১,০৩,১১৯
 • জনঘনত্ব৬৯০/বর্গকিমি (১,৮০০/বর্গমাইল)
সময় অঞ্চলবিএসটি (ইউটিসি+৬)
প্রশাসনিক
বিভাগের কোড
৫৫ ২৭ ৪৩
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট উইকিউপাত্তে এটি সম্পাদনা করুন

অবস্থান ও আয়তন

সম্পাদনা

রংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলার দক্ষিণের সর্বশেষ উপজেলা এটি। জেলা সদর হতে এই উপজেলার দূরত্ব ৯৬ কিলোমিটার । এ উপজেলার উত্তরে নবাবগঞ্জ উপজেলারংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলাগাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলারংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা, পশ্চিমে হাকিমপুর উপজেলা। এই উপজেলার আয়তন ৫৭.৩৭ বর্গমাইল বা ১৪৮.৭৪ বর্গ কিলোমিটার।

প্রশাসনিক এলাকা

সম্পাদনা

ঘোড়াঘাট উপজেলার মোট ৪টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা রয়েছে।

ইতিহাস

সম্পাদনা

দিনাজপুর জেলা সদর থেকে দক্ষিণ পূর্ব দিকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে করতোয়া নদীর তীরে ঘোড়াঘাট উপজেলা অবস্থিত। ২০.১৪ থেকে ২৬.৩৮ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৮.৮৬ থেকে ৮৯.১৯ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে এর ভৌগলিক অবস্থান। ত্রিভুজাকার আকৃতরি মতো এই উপজেলার মোট ভূমির পরিমাণ ৩৬,৭৩৮ একর। আয়তস ৫৭.৩৭ বর্গমাইল। প্রাচীনকালে ঘোড়াঘাট কোন রাজার অধীনের শাসিত হয়েছে তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। জানা যায়, মহাভারতীয় যুগ ( ৫ হাজার বছর আগে) এই ক্ষুদ্র জনপদ মৎস দেশের অধীনে ছিল। তাছাড়া এ উপজেলায় মৌর্য যুগ, গুপ্ত শাসন, পাল শাসন, সেন আমল, তুর্কী শাসন, সুলতানী আমল, পাঠান আমল, মোগল শাসন, নবাবী আমল, ইংরেজ শাসনাধীনে ছিল। ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে এ অঞ্চল মুসলিম শাসনাধীনে আসে। বহুপীর, দরবেশ, আলেম, ধর্মপ্রচারক, যোদ্ধা, জ্ঞানীগুণী ও নানা পেশার মানুষের আগমণে সমৃদ্ধ হয়ে পড়ে এ ঘোড়াঘাট উপজেলা।


দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট,করতোয়া নদীর তীরে রাজার বিশাল অশ্বারোহী বাহিনীর অশ্বশালা ছিল। এই সকল অশ্বকে করতোয়া নদীতে স্নান ও পানি পান করানো হত। ফলে স্থানটির নাম কালক্রমে ঘোড়াঘাট হয়। চির প্রবাহমান করতোয়া নদীর তীরে সবুজ গাছপালায় ঢাকা, সবুজে ঘেরা, স্নীগ্ধ জনমুখর এবং ঐতিহাসিক ক্ষ্যাত এক জনপদের নাম ঘোড়াঘাট। বৃটিশ আমলে ১৭৯৩ সালে ঘোড়াঘাট থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৬৫ সালের পূর্বে ঘোড়াঘাটের একটি উজ্বল অতীত ছিল। গৌরব যুগের ঘোড়াঘাট ছিল ১০ মাইল লম্বা ২ মাইল চওড়া। কথায় আছে একান্ন পট্টি বাহান্ন গলির শহর ছিল ঘোড়াঘাট। মধ্য যুগের বাংলার গৌরবময় ইতিহাস প্রসিদ্ধ ঘোড়াঘাট দূর্গ আর নেই তবে আজও পড়ে আছে জীর্ন ধ্বংসাবশেষ,আছে অনুসন্ধান,আছে সংগ্রহ ও সংকলন। পলাশীর যুদ্ধের আট বছর পর ১৭৬৫ সালে ইংরেজ সেনাপতীর দ্বারা ঘোড়াঘাট বিজয়ী হওয়ার পর কোন এক সময়ে ঘোড়াঘাটের পতন শুরু হয়।১৭৬৫ সালের পূর্বে কখনও সরকার পরিচালনার কেন্দ্র হিসেবে কখনও জেলা হিসেবে পরিচিত হয়েছে ঘোড়াঘাট।ঘোড়াঘাট নামটি প্রথম পাওয়া যায় মাহমুদ শাহী বংশের সুলতান রকন উদ্দিন বরবক শাহ এর আমলে(১৪৫৯-৭৬ খ্রী:) আইন-ই আকবরিতে ঘোড়াঘাটের নামটি বার বার উল্লেখিত হয়েছে। মধ্যযুগের প্রসিদ্ধ কবি হায়াত মাহমুদের পুথিতে ঘোড়াঘাটের নামটি ব্যবহৃত হয়েছে। ঘোড়াঘাটের প্রতিটি ধুলিকনায় মিশে আছে জানা অজানা ইতিহাসের অনেক মূল্যবান তথ্য।ঘোড়াঘাট পৌরসভায় দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে সাহেবগঞ্জ মৌজার করোতোয়া নদীর তীর ঘেষে জরাজীর্নভাবে দাড়িয়ে আছে সময়ের বিশালতায় ও দৃঢ়তায় মধ্যযুগের বাংলার শ্রেষ্ট ও বৃহত্তম ঘোড়াঘাট দূর্গ। গৌড়ীয় সুলতান বরবক শাহের সেনাপতি ইসমাইল গাজীর নেতৃত্বে আত্রাই নদীর তীরবর্তী মাহিসন্তোষ নামক স্থানে কামতারাজের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ হয় এবং পরে কামতাপুর দুর্গ (দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে) বিজীত হয়। ঘোড়াঘাটে করতোয়া নদীর পশ্চিমতীরে ইসমাইল গাজী এক মুসলিম নগরীর গোড়াপত্তন করেন। পরবর্তী কালে ইহা বিখ্যাত ঘোড়াঘাট সরকার নামে পরিচিত হয়। জিন্দাপীর নামে অভিহিত ইসমাইল গাজী ও বহু আউলিয়ার মাজার ঘোড়াঘাটে বিদ্যমান। ঘোড়াঘাট দূর্গের মধ্যে রয়েছে হোসেন শাহি মসজিদ নামে পরিচিত ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি শাহী মসজিদ, আরও রয়েছে ঘোড়াঘাট খ্যাত পাঁচটি পীরের মাজার ১। দরিয়া-ই বুখারী (র:)মাজার ২। শাহ ইসমাইল গাজী (র:) মাজার ৩। খন্দকার বদরে আরেফিন (র:)মাজার ৪। নুরুদ্দীন(র:) মাজার৫। কাজী সদরউদ্দীন(র:) মাজার আরও রয়েছে সবুজ গাছপালায় ঘেরা ছায়া ঢাকা শান্ত স্নীগ্ধ বিশাল আকারের লালদহ বিল। তাছাড়া, ঘোড়াঘাট পৌরসভার বাহিরে রয়েছে আরো একটি প্রাচীন মসজিদ যাকে এখন সুজা মসজিদ বলে ডাকা হয়। মোঘল বাদশা শাহ সুজা এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার নামানুসারেই এর নাম সুজা মসজিদ। বহু ধ্বংসস্তুপের মাঝে এটি বর্তমানে সর্বোচ্চ অক্ষত পুরাকীর্তি। এছাড়াও এই উপজেলায় ঘোড়ার সময় অনেক প্রাচীন ভবনের ধ্বংসাবশেষ চোখে পড়া কোনো অবাক করার মত ঘটনা নয়।

জনসংখ্যার উপাত্ত

সম্পাদনা

এই উপজেলার মোট জনসংখ্যা ১,৩৭,৩৮০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৬৯,১৪১ জন এবং মহিলা ৬৮,২৩৯ জন। লোকসংখ্যার ঘনত্ব ৭৯২ জন (বর্গকিলোমিটারে)। বাতসরিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.২৬% । এখানে মোট পরিবারের সংখ্যা ৩০,০৭৭ টি।

শিক্ষা

সম্পাদনা

ঘোড়াঘাটে, ঘোড়াঘাট সরকারী কলেজ সহ বেশকিছু স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো - ঘোড়াঘাট কে.সি পাইলট হাই স্কুল এ্যান্ড কলেজ, রানীগঞ্জ সরকারি ২য় দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ, নুরজাহানপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বরাতীপুর মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, ওসমানপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়,রানীগঞ্জ মহিলা কলেজ, ইত্যাদি।

অর্থনীতি

সম্পাদনা

ঘোড়াঘাট উপজেলা চারটি ইউনিয়ন এবং ১ টি পৌরসভায় বিভক্ত। দেশের অন্যান্য উপজেলার মত এখানে একক কোন অর্থনৈতিক কেন্দ্র গড়ে উঠেনি। থানা প্রশাসন ঘোড়াঘাটে হলেও উপজেলা ভবনসহ অন্যান্য কাঠামো ওসমানপুরে অবস্থিত। আবার প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্র হচ্ছে রানীগঞ্জ বাজার।

নদীসমূহ

সম্পাদনা

এ উপজেলায় মাত্র দুটি নদী আছে। একটি করতোয়া অন্যটি মইলা নদী বা মরা করতোয়া। কিন্তু করতোয়া নদী প্রস্থে অনেক বড় মহিলা নদী থেকে। করতোয়া নদীর উপর দিয়ে একটি প্রস্থ বরাবর ব্রিজ আছে যার নাম তিরমুনি ব্রিজ নামে বিখ্যাত মূলত ঘোড়াঘাট এবং পলাশবাড়ী ব্যাবসাকেন্দ্রিক হিসেবে ব্রিজ টি বেশি ব্যাবহার হয়

দর্শনীয় স্থান

সম্পাদনা

উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

সম্পাদনা

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন (জুন ২০১৪)। "উপজেলা সর্ম্পকিত তথ্য : এক নজরে উপজেলা"। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা