ঘোড়াঘাট দুর্গ

দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

ঘোড়াঘাট দুর্গ দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।[১] প্রাচীন এ দুর্গে খননকার্য পরিচালনার সময় বহু ধর্মীয় ও অন্যান্য স্থাপনার সন্ধান পাওয়া যায় তবে এর মধ্যে কয়েকটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ ও ঢিবি ব্যতীত তেমন কিছু অবশিষ্ট নেই।

ঘোড়াঘাট দুর্গ
স্থানীয় নাম
ইংরেজি: ঘোড়াঘাট দুর্গ
ধরনপ্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন
অবস্থানঘোড়াঘাট উপজেলা
অঞ্চলদিনাজপুর জেলা
পরিচালকবর্গবাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর
মালিকবাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর
সূত্র নংBD-F-14-30

ইতিহাস ও ভিতরের মসজিদ সম্পাদনা

ঐতিহাসিক বুকাননের মতে, মধ্যযুগের ঘোড়াঘাট ছিল ১০ মাইল লম্বা ও ২ মাইল চওড়া। শহরটি ছিল অত্যন্ত জনবহুল ও বসতিপূর্ণ শহর।[২]

প্রবাদে আছে ৫০ বাজার ও ৫৩ গলির শহর ছিলো এই ঘোড়াঘাট। ১৭৫৬ সালে ইংরেজ সেনাপতি মিঃ কট্রিল কর্তৃক ঘোড়াঘাটের শেষ মুসলমান ফৌজদার মীর করম আলী খান পরাজিত ও বিতাড়িত হন এবং মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে ঘোড়াঘাটের প্রশাসনিক দফতর দিনাজপুরে স্থানান্তরিত হলে শুরু হয় বিদেশাগত ইংরেজ শাসন এবং কালক্রমে শহরটি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়।[৩]

কোম্পানির সৈন্যদের মধ্যে অসংখ্য যুদ্ধ হয় এই ঘোড়াঘাটে। ১৭৮৩ সালে বিদ্রোহীদের আন্দোলন কমে গেলে ইংরেজেরা প্রশাসনিক কাজে মন দেয়। ১৭৮৬ সালে লর্ড কর্ণওয়ালিশ আমলে ঘোড়াঘাট জেলা ছিল কিন্তু ১৭৮৭ সালে জেলার সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে ২৩টি জেলা করা হয়। এর কারণে ঘোড়াঘাট নামক এক জেলার বিলপ্তি ঘটে। ফলে প্রশাসনিক দ্বায়িত্ব দিনাজপুরে চলে গেলে স্থানীয়রাও অনেকেই এ স্থান ত্যাগ করে দিনাজপুরে যেতে শুরু করেন। এভাবে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায় ঘোড়াঘাট দুর্গ।

বিভিন্ন সময় ঘোড়াঘাট দুর্গ বিভিন্ন রাজার অধীনে ছিলো। রাজারা তখন তাদের প্রয়োজন মত যুদ্ধ ব্যবস্থার জিনিস রাখতো এই দুর্গে। ঐতিহাসিক বই সমূহের আলোকে জানা যায় যে, এই দুর্গে সম্রাট আকবরের সময় ৯০০ অশ্বারোহী বাহিনী ছিলো এবং তাদের সাথে আরো ছিলো ৫০টির অধিক হাতি ও ৩২,৬০০ জনের মত পদাতিক বাহিনী।[৪]

ঘোড়াঘাট দুর্গটি দিনাজপুরের করোতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত। দুর্গের অবশিষ্ট মসজিদটি দুর্গের দক্ষিণ ও পূর্বকোণে অবস্থিত। চারকোণা মসজিদটির তিনকোণেই পূর্বে তিনটি গম্বুজ ছিলো কিন্তু বর্তমানে এগুলো ভগ্নপ্রায়।

মসজিদটির চারপাশেই রয়েছে ছড়ানো ছিটানো কয়েকটি ঢিবি। ঢিবিগুলো পূর্বে মসজিদ বা অন্য ধর্মীয় স্থাপনা অথবা কোন ভবনের অংশ ছিল বলে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ মনে করেন। দুর্গের চারপাশই দেওয়াল দিয়ে ঘেরা ছিলো যেগুলোও বর্তমানে প্রায় বিলীন হয়ে গেছে।১০৮০ এর দশকে দুর্গের একটি ঢিবি খনন করা হয় ও সেখান থেকেও একটি প্রাচীন মসজিদের সন্ধান পাওয়া যায়। নতুন উন্মুক্ত হওয়া মসজিদটি দুর্গ প্রাচীরের পশ্চিম দিকে অবস্থিত।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "ঘোড়াঘাট দুর্গের মসজিদ - বাংলাপিডিয়া" 
  2. ঐতিহাসিক ঘোড়াঘাটের ইতিহাস নিয়ে কাজী কাদের মোঞ্জুর এর রচিত প্রথম বই ইতিহাস ঐতিহ্যের ঘোড়াঘাট পৌরসভা
  3. "উপজেলার ঐতিহ্য - ঘোড়াঘাট উপজেলা - ঘোড়াঘাট উপজেলা"ghoraghat.dinajpur.gov.bd। ১৮ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুলাই ২০১৭ 
  4. মেহেরাব হোসেন এর রচিত দিনাজপুর জেলার ইতিহাস নিয়ে বই দিনাজপুর জেলার ইতিহাস