ববিতা
ফরিদা আক্তার পপি[১] (ববিতা নামে পরিচিত; জন্ম: ৩০ জুলাই, ১৯৫৩[২]) বাংলাদেশের একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং প্রযোজক।[৩] তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ৭০-র দশকের সেরা অভিনেত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৭৩ সালে ২৩তম বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব থেকে গোল্ডেন বীয়ার জয়ী সত্যজিৎ রায়ের অশনি সংকেত চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রশংসিত হন। ববিতা ৩৫০ এর বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তিনি ১৯৭৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রবর্তনের পর টানা তিনবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জেতেন।[৪] এছাড়া ১৯৭৬[৪], ১৯৭৭,[৪] ১৯৮৫ সালে আরেকবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী[৪], ১৯৯৬ সালে শ্রেষ্ঠ প্রযোজক, ২০০২ ও ২০১১ সালে পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী। এছাড়া ২০১৬ সালে তাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়।[৫]
ফরিদা আক্তার ববিতা | |
---|---|
জন্ম | ফরিদা আক্তার পপি ৩০ জুলাই ১৯৫৩ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশী |
পেশা | অভিনেত্রী, প্রযোজক |
কর্মজীবন | ১৯৬৮–বর্তমান |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | অশনি সংকেত (১৯৭৩), বাঁদী থেকে বেগম (১৯৭৫), নয়নমণি (১৯৭৬), বসুন্ধরা (১৯৭৭), রামের সুমতি (১৯৮৫), পোকামাকড়ের ঘরবসতি (১৯৯৬) |
আদি নিবাস | যশোর জেলা |
দাম্পত্য সঙ্গী | ইফতেখার আলম |
সন্তান | অনিক ইসলাম (পুত্র) |
আত্মীয় | |
পুরস্কার | পূর্ণ তালিকা |
ওয়েবসাইট | https://www.babita.net |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাফরিদা আখতার পপি ১৯৫৩ সালে বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় জন্ম নেন। তার বাবা নিজামুদ্দীন আতাইয়ুব একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মাতা জাহানারা বেগম ছিলেন একজন চিকিৎসক। নিজামুদ্দীন ছিলেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র। জাহানারা পড়েছেন লেডি ব্রেবোর্নে। [৬] বাবার চাকরি সূত্রে তারা তখন বাগেরহাটে থাকতেন। তবে তার পৈতৃক বাড়ি যশোর জেলায়। শৈশব এবং কৈশোরের প্রথমার্ধ কেটেছে যশোর শহরের সার্কিট হাউজের সামনে রাবেয়া মঞ্জিলে। তিন বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে বড়বোন সুচন্দা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, বড়ভাই শহীদুল ইসলাম ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেজভাই ইকবাল ইসলাম বৈমানিক, ছোটবোন গুলশান আখতার চম্পা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং ছোটভাই ফেরদৌস ইসলাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা।[৭][৮] এছাড়াও অভিনেতা রিয়াজ তার চাচাত ভাই। চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হান তার ভগ্নিপতি। ববিতার পরিবার একসময় বাগেরহাট থেকে ঢাকার গেন্ডারিয়াতে চলে আসে। তার মা ডাক্তার থাকায়, ববিতা চেয়েছিলেন ডাক্তার হতে। ববিতার একমাত্র ছেলে অনীক কানাডায় পড়াশোনা করেন।
শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাতিনি পড়াশোনা করেছেন যশোর দাউদ পাবলিক বিদ্যালয়ে। সেখানে অধ্যয়নকালে বড়বোন কোহিনুর আক্তার চাটনীর (সুচন্দা) চলচ্চিত্রে প্রবেশের সূত্রে পরিবার সহ চলে আসেন ঢাকায়। গেন্ডারিয়ার বাড়িতে শুরু হয় কৈশোরের অবশিষ্টাংশ। এখানে তিনি মনিজা রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন।[৯] চলচ্চিত্রে অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে পড়ায় প্রতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট অর্জন না করলেও ববিতা ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে শিক্ষিত করে তোলেন। দক্ষতা অর্জন করেন ইংরেজিসহ কয়েকটি বিদেশি ভাষায়। নিজেকে পরিমার্জিত করে তোলেন একজন আদর্শ শিল্পীর মাত্রায়।[৭]
কর্মজীবন
সম্পাদনাঅভিনয়ের শুরু: ১৯৬৮-১৯৭৪
সম্পাদনাতার চলচ্চিত্র কর্মজীবনে আসার পেছনে বড়বোন সুচন্দার অনুপ্রেরণা রয়েছে। বড়বোন সুচন্দা অভিনীত জহির রায়হানের সংসার চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে ববিতার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৬৮ সালে।[৭] এই চলচ্চিত্রে তিনি রাজ্জাক-সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন, যদিও ছবিটি মুক্তি পায়নি। চলচ্চিত্র জগতে তার প্রাথমিক নাম ছিলো "সুবর্ণা"। তিনি আব্দুল্লাহ আল মামুনের কলম নামের একটি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছিলেন সে সময়। জহির রায়হানের জ্বলতে সুরুজ কি নিচে চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়েই তার নাম "ববিতা" হয়ে যায়। প্রযোজক ক্যামেরাম্যান আফজাল চৌধুরী ও তার স্ত্রী ববিতা নাম রাখার প্রস্তাব করেন। ১৯৬৯ সালে শেষ পর্যন্ত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন প্রথম নায়িকা চরিত্রে। ১৯৬৯ সালের ১৪ই আগস্টে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় এবং ঐদিন তার মা মারা যান।[১০] সেই সিনেমায় ১২০০০ টাকা পারিশ্রমিক পান, তিনি সেই টাকা দিয়ে একটি টয়োটা গাড়ি কেনেন। তার কর্মজীবনের শুরুতে ভগ্নিপতি জহির রায়হানের পথ প্রদর্শনে চললেও পরে তিনি একাই পথ চলেছেন। ৭০'-এর দশকে শুধুমাত্র অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি গোটা দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন।[১১] ‘টাকা আনা পাই’ সিনেমাটা ছিল তার জন্য টার্নিং পয়েন্ট যা পরিচালনা করেছিলেন জহির রায়হান। এরপর তিনি নজরুল ইসলামের ‘স্বরলিপি’ সিনেমাতে অভিনয় করেন যা ছিল সুপারহিট সিনেমা।[১০]
অশনি সংকেত
সম্পাদনাববিতার চলচ্চিত্র কর্মজীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একই নামের একটি অসমাপ্ত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সত্যজিৎ রায় পরিচালিত অশনি সংকেত (১৯৭৩)। এই চলচ্চিত্রে "অনঙ্গ বৌ" চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক শিল্পীর মর্যাদা লাভ করেন এবং ব্যাপক প্রশংসিত হন।[৩] ১৯৯৩ সালে ভারতে বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার, ১৯৭৩ সালে ভারতে বাংলা চলচ্চিত্র প্রসার সমিতি পুরস্কার এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি কর্তৃক বিশেষ পুরস্কার অর্জন করেন।[৭]
তেতাল্লিশের মন্বন্তর এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণ বাংলার আর্থ-সামাজিক পটপরিবর্তন ছিলো এই চলচ্চিত্রের মূল বিষয়। চলচ্চিত্রের প্রাক্কালে সত্যজিত রায়ের নির্দেশে ভারতীয় চিত্রগ্রাহক নিমাই ঘোষ স্বাধীনতার পর ঢাকায় এফডিসিতে আসেন, এবং সেখানে ববিতার প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ আলোকচিত্র তুলেন। এর কিছুদিন পর ববিতার বাসায় ভারতীয় হাইকমিশন থেকে একটি চিঠি আসে, প্রাথমিক মনোনয়ণের কথা জানিয়ে। এরপর ববিতা এবং তার বোন সুচন্দা ভারতে যান সত্যজিৎ রায়ের সাথে দেখা করতে। সত্যজিত ববিতাকে দেখে প্রথমে অনেক লাজুক ভেবেছিলেন। তাই ইন্দ্রপুরের স্টুডিওতে তিনি তাকে আবার নানারকম পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সত্যজিত বলেন, "আমি অনেক খুশি, আমি "অনঙ্গ বউ" আজকে পেয়ে গেছি। আমি ভাবতেও পারিনি এই মেয়েটি সেদিনের সেই মেয়েটি। আজকে এই মেয়ে সম্পূর্ণ অন্য মেয়ে। এই আমার অনঙ্গ বউ।" ববিতাও অনেক চাপের মুখে ছিলেন তাঁকে নেয়া হয় কিনা এ ব্যপারে। তিনি বলেন, "একজন অল্পবয়সী বাঙালী যা করে, ভেতরে-ভেতরে অনেক মানত-টানত করে শেষে জানলাম, আমি তাঁর ছবির জন্যে নির্বাচিত হয়েছি।"[১০]
প্রতিষ্ঠা ও স্বীকৃতি: ১৯৭৫-১৯৮৫
সম্পাদনা১৯৭৫ সালে ববিতা বাঁদী থেকে বেগম, লাঠিয়াল ' চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। মোহসীন পরিচালিত বাঁদী থেকে বেগম ছবিতে একজন কচুয়ানের ঘরে লালিত পালিত হওয়ার জমিদারের কন্যা চাঁদনী চরিত্রে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রে একধারে কচুয়ানের মেয়ে, নর্তকী এবং জমিদারের কন্যা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি ১৯৭৫ সালে প্রবর্তিত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের প্রথম আসরে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন।[১২] নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত লাঠিয়াল ছবিতে তিনি বানু চরিত্রে অভিনয় করেন। পারিবারিক অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং চর দখল নিয়ে আবর্তিত এই চলচ্চিত্রটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের প্রথম আয়োজনে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করে।
পরের বছর ফারুকের বিপরীতে অভিনয় করেন সূর্যগ্রহণ ও নয়নমনি ছবিতে। নয়নমনি ছবিতে তিনি প্রথমবার আমজাদ হোসেনের পরিচালনায় কাজ করেন। পরবর্তীকালে তিনি হোসেনের পরিচালনায় গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮) ও গোলাপী এখন ঢাকায় (১৯৯৪) ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন।[১৩] নয়নমনি ছবিতে নাম চরিত্র মনি ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য তিনি টানা দ্বিতীয়বারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ১৯৭৬ সালে রাজ্জাকের বিপরীতে জহিরুল হক পরিচালিত কি যে করি, ওয়াহিদের বিপরীতে বন্দিনী, এবং জাফর ইকবালের বিপরীতে এক মুঠো ভাত ছবিতে কাজ করেন।[১৪]
১৯৭৭ সালের মার্চে মুক্তি পায় চিত্রনায়ক রাজ্জাক পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র অনন্ত প্রেম। এই চলচ্চিত্রের শেষ দৃশ্যে রাজ্জাক-ববিতার গভীর চুম্বনের একটি দৃশ্য ছিলো যা সেই সময়ে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিল। তবে চুম্বনের দৃশ্য বাদ দিয়েই চলচ্চিত্রটি মুক্তি দেয়া হয়। ১৯৭৭ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্রটির জন্যই চিত্রায়িত হয়েছিল বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের প্রথম চুম্বন দৃশ্য।[১৫] একই বছর তিনি ইলিয়াস জাভেদের বিপরীতে ইবনে মিজান পরিচালিত নিশান চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়া এই বছর তিনি কথাসাহিত্যিক আলাউদ্দিন আল আজাদ রচিত তেইশ নম্বর তৈলচিত্র অবলম্বনে নির্মিত বসুন্ধরা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সুভাষ দত্ত পরিচালিত ছবিটিতে তার বিপরীতে অভিনয় করেন নবাগত ইলিয়াস কাঞ্চন।[১৬] একজন চিত্রকরের তার স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা এবং তার সন্তানের প্রতি স্ত্রীর মার্তৃত্ববোধ নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে ছবি চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি টানা তৃতীয়বারের মত শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
১৯৮৩ সালে ববিতা দূরদেশ নামক হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে নিজ কর্মজীবনে এবং বাংলাদেশীদের মধ্যে প্রথমবারের মতো বলিউডে পদার্পণ করেন।[১৭][১৮][১৯][২০]
১৯৮৬-২০০০
সম্পাদনানব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে ববিতা পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন। ১৯৯১ সালে তিনি চাষী নজরুল ইসলামের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত পদ্মা মেঘনা যমুনা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এতে তিনি তার বোন চম্পা ও ফারুকের সাথে অভিনয় করেন। ছবিতে সাজু চরিত্রে সৎ বাবার পরিবারে এক নিগৃহীতার ভূমিকায় অভিনয় করেন। একই বছর তিনি আজিজুর রহমান পরিচালিত শ্বশুর বাড়ী চলচ্চিত্রে মাহমুদ কলির বিপরীতে অভিনয় করেন। পরের বছর দিলীপ সোম পরিচালিত মহামিলন চলচ্চিত্রে শাহানা মালিক চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটিতে প্রধান দুই ভূমিকায় অভিনয় করেন সালমান শাহ ও শাবনূর।
১৯৯৬ সালে তিনি প্রযোজনা করেন পোকামাকড়ের ঘর বসতি। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন রচিত একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি পরিচালনা করেন আখতারুজ্জামান। ববিতা এই ছবিতে অভিনয়ও করেন।[২১] তার বিপরীতে ছিলেন খালেদ খান এবং খলচরিত্রে অভিনয় করেন আলমগীর। ছবিটির জন্য ববিতা শ্রেষ্ঠ প্রযোজক হিসাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ছবিটি শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ আরও তিনটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে।[২২] এই বছর তিনি পার্শ্ব চরিত্রে এম এ খালেক পরিচালিত স্বপ্নের পৃথিবী, শিবলি সাদিক পরিচালিত মায়ের অধিকার, জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত জীবন সংসার এবং মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত দীপু নাম্বার টু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
১৯৯৭ সালে তিনি মহম্মদ হান্নান পরিচালিত প্রাণের চেয়ে প্রিয় ছবিতে রোকেয়া চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন রিয়াজ ও রাভিনা, এবং ববিতার বিপরীতে ছিলেন বুলবুল আহমেদ। জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত এ জীবন তোমার আমার ছবিতে তিনি মমতা চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন রিয়াজ এবং পূর্ণিমা। জিল্লুর রহমান পরিচালিত টাইগার চলচ্চিত্রে তিনি জসিমের বিপরীতে কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। একই বছর খান আতাউর রহমান পরিচালিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এখনো অনেক রাত চলচ্চিত্রে বাঁধন চরিত্রে অভিনয় করেন। এটি ছিল খান আতার মৃত্যুর পূর্বে পরিচালিত শেষ চলচ্চিত্র। ১৯৯৯ সালে তিনি শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ম্যাডাম ফুলি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন নবাগত শিমলা এবং ববিতা তার মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন।
২০০১-২০১০
সম্পাদনা২০০২ সালে বাঙালি গীতিকবি হাছন রাজার জীবনী অবলম্বনে নির্মিত হাছন রাজা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম। ছবিতে তাকে হাছন রাজার মায়ের ভূমিকায় দেখা যায়। ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে এবং ববিতা শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার[২৩] এবং শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রীর জন্য বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৩ সালে তিনি চিত্রনায়িকা মৌসুমী পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি চলচ্চিত্রে কাজ করে।[২৪] এই ছবিতে তাকে দীর্ঘ ১৪ বছর পর রাজ্জাকের বিপরীতে দেখা যায়। ২০০৫ সালে তিনি নারগিস আক্তার পরিচালিত চার সতীনের ঘর ছবিতে অভিনয় করেন। এই ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন আলমগীর এবং তার বাকি তিন সতীনের চরিত্রে অভিনয় করেন পারভীন সুলতানা দিতি, শাবনূর ও ময়ূরী।
২০০৯ সালে তিনি রাজ্জাকের বিপরীতে অভিনয় করেন সবাই তো ভালোবাসা চায় ছবিতে। দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত এই ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন মামনুন হাসান ইমন এবং পূর্ণিমা।[২৫] ২০১০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ছোটগল্প সমাপ্তি অবলম্বনে নির্মিত অবুঝ বউ ছবিতে অভিনয় করেন।[২৬] ছবিটি পরিচালনা করেন নারগিস আক্তার। এই ছবিতে তিনি রানীমা চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র মৃন্ময়ীর ভূমিকায় অভিনয় করেন প্রিয়াংকা[২৭] এবং রানীমার পুত্র অপূর্বের ভূমিকায় অভিনয় করেন ফেরদৌস আহমেদ। একই বছর তিনি কাজী হায়াৎ পরিচালিত অপরাধধর্মী-নাট্য চলচ্চিত্র ওরা আমাকে ভাল হতে দিল না-এ অভিনয় করেন। ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন কাজী মারুফ এবং পূর্ণিমা। ববিতা মারুফের চরিত্রের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেন।
২০১১-বর্তমান
সম্পাদনাএই অনুচ্ছেদটি সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। (সেপ্টেম্বর ২০২১) |
অভিনয়ের ধরন
সম্পাদনাববিতা প্রায় তিন দশক ধরে চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। তবে এক পর্যায়ে সিনেমার জগতে টিকে থাকার জন্য এবং বাণিজ্যিক ছবিতে নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণের জন্য তিনি পুরোপুরি বাণিজ্যিক ঘরানার ছবির দিকে ঝুঁকে পড়েন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তাই ববিতা একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। নায়িকা হিসেবে তার স্বাতন্ত্র্য লক্ষণীয় ছিল। অভিনয়, জৌলুস,দেহসৌষ্ঠব,ব্যক্তিত্ব, নৃত্য কুশলতা সবকিছুতেই তিনি পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি মা-ভাবির চরিত্রে অভিনয় করে আসছেন।[১১]
গ্রামীণ, শহুরে চরিত্র কিংবা সামাজিক অ্যাকশন অথবা পোশাকি সব ধরনের ছবিতেই তিনি সাবলীলভাবে অভিনয় করেন। স্বাধীনতার পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন।তৎকালীন সময়ে তিনি ফ্যাশনের ক্ষেত্রে শহরের মেয়েদের ভীষণ প্রভাবিত করেন। নগর জীবনের আভিজাত্য তার অভিনয়ে ধরা পড়েছিল। সত্তর দশকের প্রথমার্ধে রুচিশীল, সামাজিক সিনেমা মানেই ছিল ববিতা।[১১]
চলচ্চিত্র তালিকা
সম্পাদনাপুরস্কার ও সন্মাননা
সম্পাদনাববিতা পরপর তিন বছর একটানা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতেন। সত্যজিৎ রায়ের অশনি সংকেত চলচ্চিত্র "অনঙ্গ বউ" চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে সর্বভারতীয় শ্রেষ্ঠ নায়িকার পুরস্কার পান। এছাড়াও সরকারি এবং বেসরকারী অসংখ্য পুরস্কার তিনি লাভ করেছেন। এজন্য তাকে ‘পুরস্কার কন্যা’ বলা হতো। তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সবচেয়ে বেশিবার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[৭][১১]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "দ্বীপের নামকরণ হয়েছে আমার নামে"। যায়যায়দিন। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২৭।
- ↑ "আজীবন সম্মাননা পেলেন ববিতা"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-২৭।
- ↑ ক খ লিয়াকত হোসেন খোকন (৯ সেপ্টেম্বর ২০১০)। "কিংবদন্তি : ববিতা"। দৈনিক আমার দেশ। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৪।
- ↑ ক খ গ ঘ "বাষট্টি পেরিয়ে ববিতা"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-৩০।
- ↑ "আজীবন সম্মাননা পেলেন ববিতা"। দৈনিক প্রথম আলো। ৩১ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০১৮।
- ↑ ববিতা (জুন, ২০১৮)। "প্রথম আলো ঈদ সংখ্যা ২০১৮"। প্রথম আলো ঈদ সংখ্যা ২০১৮। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য) - ↑ ক খ গ ঘ ঙ মোহাম্মদ হাসানূজ্জামান (মার্চ ২০১২)। "পারিবারিক পরিচিতি"। jessore.info। ১৬ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৪।
- ↑ "তিন বোনের ঈদ"। দৈনিক প্রথম আলো। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১০। ২০১৪-০৪-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৪।
- ↑ সুলাইমান, রাখী (৩ আগস্ট ২০১৪)। "ববিতাকে খুব মনে পড়ে দর্শকদের"
|ইউআরএল=
এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)। যায়যায়দিন। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৭। - ↑ ক খ গ সুপ্রিয়া, শাহিদা পারভীন; হোসেন, নবীন (২০০৩)। "আত্নজীবনীর খসড়া: ববিতা"। যুগান্তর, ঈদ সংখ্যা। মাজহারুল ইসলাম: ৩৩৯।
- ↑ ক খ গ ঘ মুরশিদ, গোলাম; হোসেন, নবীন (১৯৯৮)। "বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তারকা নায়িকা: পপি থেকে ববিতা"। অন্যদিন ঈদ সংখ্যা। মাজহারুল ইসলাম। ২ (২৫): ৩৪৯। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|সংগ্রহের-তারিখ=
(সাহায্য); - ↑ "চিরচেনা ববিতা"। দৈনিক নয়া দিগন্ত। ঢাকা, বাংলাদেশ। ৭ জুলাই ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "দেশে ফিরেই ববিতার মন খারাপ"। দৈনিক প্রথম আলো। ২০ নভেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২১ নভেম্বর ২০১৮।
- ↑ ফজলে এলাহী (২ অক্টোবর ২০১৫)। "সাদাকালোয় সোনালি দিন"। বণিক বার্তা। ২০১৫-১০-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৭।
- ↑ শান্তা মারিয়া (১ আগস্ট ২০১৪)। "হারিয়ে যাওয়া চুম্বন, রাজ্জাক-ববিতা"। ঢাকা জার্নাল। ৩ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১৪।
- ↑ "সুভাষ দত্তের আবিষ্কার কাঞ্চনের কথা"। দৈনিক আমার দেশ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ১৬ নভেম্বর ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ রাহাত সাইফুল (২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০)। "বলিউডে অভিনয় করেছেন যে বাংলাদেশি শিল্পীরা"। রাইজিংবিডি.কম।
- ↑ "Directors who can't make good films resort to item numbers, says Nadeem Baig"। Dawn। ১৮ জুন ২০১৮।
- ↑ "Nadeem – Cineplot.com" (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০৭-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০৪।
- ↑ "Profile: The legend speaks"। Dawn। ২৯ জুলাই ২০১২।
- ↑ "অভিনয় ছাড়ছেন ববিতা"। জাগোনিউজ। ২৩ জুলাই ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৭।
- ↑ আলাউদ্দীন মাজিদ (১৭ অক্টোবর ২০১৫)। "সাফল্যে ভিন্ন স্বাদের ছবি"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "National film awards for 2002 and 2003 declared"। দ্য ডেইলি স্টার। ২৪ নভেম্বর ২০০৪। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "Forging ahead In conversation with Moushumi"। দ্য ডেইলি স্টার। ৫ নভেম্বর ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "আবার রাজ্জাক ও ববিতা"। প্রথম আলো। ১৪ অক্টোবর ২০০৯। ২০১৭-১২-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৭।
- ↑ "বিশ্বকবির 'সমাপ্তি' নিয়ে 'অবুঝ বউ' মুক্তি পাচ্ছে ঈদে"। দৈনিক জনকণ্ঠ। ঢাকা, বাংলাদেশ। ২৫ আগস্ট ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৭।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ স্টাফ রিপোর্টার (২৫ নভেম্বর ২০১৩)। "ব্যস্ত হয়ে উঠছেন প্রিয়াংকা"। দৈনিক মানবজমিন। ঢাকা, বাংলাদেশ। ৭ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০১৭।
- ↑ মঈনুদ্দীন, অভি (১০ জানুয়ারি ২০১৬)। "আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন ববিতা"। দৈনিক জনকণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০১৮।
- ↑ "মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৭: ববিতা পেলেন আজীবন সম্মাননা"। একুশে টিভি অনলাইন। ৩১ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০১৮।
- ↑ "আজীবন সম্মাননা পেলেন ববিতা ও ফারুক"। দৈনিক ইত্তেফাক। ৬ এপ্রিল ২০১৮। ৮ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০১৮।
- ↑ "আজীবন সম্মাননা নিয়ে দেশে ফিরছেন ববিতা: কলকাতার ১৭তম টেলি-সিনে অ্যাওয়ার্ড'-এ আজীবন সম্মাননা পেলেন ববিতা"। চ্যানেল আই অনলাইন। ৩ জুন ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুন ২০১৮।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে ববিতা (ইংরেজি)
- বাংলা মুভি ডেটাবেজে ববিতা