সেলিনা হোসেন

বাংলাদেশী কথাসাহিত্যিক

সেলিনা হোসেন (জন্ম ১৪ জুন ১৯৪৭)[১] বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক। তাঁর উপন্যাসে প্রতিফলিত হয়েছে সমকালের সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সংকটের সামগ্রিকতা। বাঙালির অহংকার ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তাঁর লেখায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তার গল্প উপন্যাস ইংরেজি, রুশ, মেলে এবং কানাড়ি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।[৩] ২০১৪ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান হিসেবে দুই বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি। [৪] বাংলা একাডেমির বর্তমান সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন সেলিনা হোসেন।[৫] ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তাঁকে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

সেলিনা হোসেন
জন্ম (1947-06-14) ১৪ জুন ১৯৪৭ (বয়স ৭৬)[১]
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব বাংলাদেশ
পেশাকথা-সাহিত্যিক, লেখক, ঔপন্যাসিক
পুরস্কারবাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮০), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৭), একুশে পদক (২০০৯), স্বাধীনতা পদক (২০১৮)[২]

জন্ম ও শিক্ষা জীবন সম্পাদনা

সেলিনা হোসেন ১৯৪৭ সালের ১৪ জুন রাজশাহী শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস লক্ষ্মীপুর জেলার হাজিরপাড়া গ্রামে। বাবা এ কে মোশাররফ হোসেনের আদিবাড়ি নোয়াখালী হলেও চাকরিসূত্রে বগুড়া ও পরে রাজশাহী থেকেছেন দীর্ঘকাল; কাজেই সেলিনাকে একেবারে ছেলেবেলায় নোয়াখালীতে বেশিদিন থাকতে হয়নি। সেলিনা হোসেনের মায়ের নাম মরিয়ম-উন-নিসা বকুল। মোশাররফ-মরিয়ামুন্ননেছা দম্পতির সব মিলিয়ে নয় ছেলেমেয়ে। সেলিনা ভাইবোনদের মধ্যে চতুর্থ।

শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

সেলিনা ১৯৫৪ সালে বগুড়ার লতিফপুর প্রাইমারি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৫৯ সালে রাজশাহীর প্রমথনাথ (পি.এন) গার্লস স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে তিনি এখান থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ১৯৬৪ সালে রাজশাহী মহিলা কলেজে ভর্তি হন। কলেজ জীবন শেষ করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে বি.এ. অনার্স এবং ১৯৬৮ সালে এম.এ. পাস করেন।

কর্মজীবন সম্পাদনা

সেলিনা ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমির গবেষণা সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এর পূর্বে তিনি বিভিন্ন পত্রিকাতে উপসম্পাদকীয়তে নিয়মিত লিখতেন। কর্মরত অবস্থায় তিনি বাংলা একাডেমির 'অভিধান প্রকল্প', 'বিজ্ঞান বিশ্বকোষ প্রকল্প', 'বিখ্যাত লেখকদের রচনাবলী প্রকাশ', 'লেখক অভিধান', 'চরিতাভিধান' এবং 'একশত এক সিরিজের' গ্রন্থগুলো প্রকাশনার দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও ২০ বছরেরও বেশি সময় 'ধান শালিকের দেশ' পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমির প্রথম মহিলা পরিচালক হন। ২০০৪ সালের ১৪ জুন চাকুরি থেকে অবসর নেন।বাংলা একাডেমির বর্তমান সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন সেলিনা হোসেন।[৫] ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তাকে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। [৬] তার প্রথম গল্পগ্রন্থ উৎস থেকে নিরন্তর প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। তার মোট উপন্যাসের সংখ্যা ৩৫টি, গল্প গ্রন্থ ১৩টি, ২২টি শিশু-কিশোর গ্রন্থ এবং প্রবন্ধের গ্রন্থ ১০টি।এছাড়াও ১৩টি সম্পাদনা গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন।

গ্রন্থতালিকা সম্পাদনা

উপন্যাস সম্পাদনা

  • উত্তর সারথি (১৯৭১)
  • জলোচ্ছ্বাস (১৯৭৩)১ম উপন্যাস[৭]
  • জ্যোস্নায় সূর্যজ্বালা'(১৯৭৩) (মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক)
  • হাঙর নদী গ্রেনেড'(১৯৭৬)(মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক)
  • মগ্ন চৈতন্যে শিস (১৯৭৯)
  • যাপিত জীবন (১৯৮১) (ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক)
  • নীল ময়ূরের যৌবন (১৯৮২)
  • পদশব্দ(১৯৮২)
  • চাঁদবেনে(১৯৮৪)
  • পোকা মাকড়ের ঘরবসতি(১৯৮৬)
  • নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি(১৯৮৭)(ভাষা আন্দোলন ভি.)
  • ক্ষরণ(১৯৮৮)
  • কাঁটাতারে প্রজাপতি(১৯৮৯)
  • খুন ও ভালোবাসা(১৯৯০)
  • কালকেতু ও ফুল্লরা(১৯৯২)
  • ভালোবাসা প্রীতিলতা(১৯৯২)
  • টানাপোড়েন(১৯৯৪)
  • গায়ত্রী সন্ধ্যা-১ম খণ্ড(১৯৯৪)
  • গায়ত্রী সন্ধ্যা-২য় খণ্ড(১৯৯৫)
  • গায়ত্রী সন্ধ্যা-৩য় খণ্ড(১৯৯৬)
  • দীপাম্বিতা(১৯৯৭)
  • যুদ্ধ(১৯৯৮)(মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক)
  • লারা(২০০০)
  • কাঠ কয়লার ছবি(২০০১)
  • মোহিনীর বিয়ে(২০০১)
  • আণবিক আঁধার(২০০৩)
  • ঘুমকাতুরে ঈশ্বর(২০০৪)
  • মর্গের নীল পাখি(২০০৫)
  • অপেক্ষা(২০০৭)
  • দিনের রশিতে গিটঠু(২০০৭)
  • মাটি ও শস্যের বুনন(২০০৭)
  • পূর্ণছবির মগ্নতা(২০০৮)
  • ভূমি ও কুসুম(২০১০)
  • যমুনা নদীর মুশায়রা(২০১১)
  • আগস্টের একরাত(২০১৩)[৮]
  • গেরিলা ও বীরাঙ্গনা (২০১৪)(মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক)
  • দিনকালের কাঠখড়(২০১৫)

গল্প

  • উৎস থেকে নিরন্তর(১৯৬৯)
  • জলবতী মেঘের বাতাস(১৯৭৫)
  • খোল করতাল(১৯৮২)
  • পরজন্ম(১৯৮৬)
  • মানুষটি(১৯৯৩)
  • মতিজানের মেয়েরা(১৯৯৫)
  • অনূঢ়া পূরণিমা(২০০৮)
  • সখিনার চন্দ্রকলা(২০০৮)
  • একালের পান্তাবুড়ি(২০০২)
  • অবেলার দিনক্ষণ(২০০৯)
  • নারীর রূপকথা(২০০৯)
  • নুনপান্তার গড়াগড়ি(২০১৪)
  • মৃত্যুর নীলপদ্ম(২০১৫)

কবিতা

  • বর্ণমালার গল্প

শিশু-কিশোর সাহিত্য

  • সাগর(১৯৯১)
  • বাংলা একাডেমী গল্পে বর্ণমালা(১৯৯৪)
  • কাকতাড়ুয়া(১৯৯৬)
  • বর্ণমালার গল্প(১৯৯৭)
  • আকাশ পরী(২০০১)
  • অন্যরকম যাওা(২০০১)
  • যখন বৃষ্টি নামে(২০০২)
  • জ্যোৎস্নার রঙে আঁকা ছবি(২০০২)
  • মেয়রের গাড়ি(২০০৩)
  • মিহিরুনের বন্ধুরা(২০০৪)
  • রংধনু (সম্পাদনা) (২০০৪)
  • এক রুপোলি নদী(২০০৫)
  • গল্পটা শেষ হয় না(২০০৬)
  • বায়ান্নো থেকে একাত্তর(২০০৬)
  • চাঁদের বুড়ির পান্তা ইলিশ(২০০৮)
  • মুক্তিযোদ্ধারা(২০০৯)
  • সোনারতরীর ছোটমণিরা(২০০৯)
  • পুটুসপুটুসের জন্মদিন(২০১০)
  • নীলটুনির বন্ধু(২০১০)
  • কুড়কুড়ির মুক্তিযুদ্ধ(২০১১)(মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক)
  • ফুলকলি প্রধানমন্ত্রী হবে(২০১১)
  • হরতালের ভূতবাবা(২০১৪)

প্রবন্ধ

  • স্বদেশে পরবাসী(১৯৮৫)
  • ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন(১৯৮৫)
  • একাত্তরের ঢাকা(১৯৮৯)
  • নির্ভয় করো হে(১৯৯৮)
  • মুক্ত করো ভয়(২০০০)
  • ঘরগেরস্থির রাজনীতি(২০০৮)
  • নিজেরে করো জয়(২০০৮)
  • প্রিয় মুখের রেখা(২০১০)
  • শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ(২০১০)
  • পথ চলাতেই আনন্দ(২০১৪)

সম্পাদনা

  • নারীর ক্ষমতায়নঃ রাজনীতি ও আন্দোলন (যৌথ) (২০০৩)
  • ইবসেনের নারী(২০০৬)
  • ইবসেনের নাটক ও কবিতা(২০০৬)
  • জেন্ডার বিশ্বকোষ (যৌথ) (২০০৬)
  • বাংলাদেশ নারী ও সমাজ (যৌথ) (২০০৭)
  • জেন্ডার ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন (যৌথ) (২০০৭)
  • সাহিত্যে নারীর জীবন ও পরিসর (যৌথ) (২০০৭)
  • জেন্ডার আলোকে সংস্কৃতি (যৌথ) (২০০৭)
  • পুরুষতন্ত্র নারী ও শিক্ষা (যৌথ) (২০০৭)
  • দক্ষিণ এশিয়ার নারীবাদী গল্প(যৌথ) (২০০৮)
  • জেন্ডার ও উন্নয়ন কোষ(২০০৯)
  • ধান শালিকের দেশ (বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত শিশু-কিশোর পত্রিকা, ২২ বছর)
  • ছোটদের অভিধান (বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত) (অন্যতম সম্পাদক)

ইংরেজিতে অনূদিত উপন্যাস

  • Selected Short Stories of Selina Hossain (2007). Published by Bangla Academy.
  • The Shark The River & The Grenade(1987) Published by Bangla Academy. Translated by Abedin Kader.
  • Warp and Woof (1999). 'টানাপোড়েন' উপন্যাসের অনুবাদ। Published by Bangla Academy.
  • Plumed Peacock (1st Published -1983. 2nd published -2009).'নীল ময়ূরের যৌবন'উপন্যাসের অনুবাদ। Translated By Kabir Chowdhury.
  • Fugitive colours (2010)

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সন্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রিতে ভূষিত করে।[৯] অন্যান্য পুরস্কার ও সম্মাননার মধ্যে রয়েছে:

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "বেলা অবেলা সারাবেলায় সেলিনা হোসেন"। ২২ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মে ২০১৩ 
  2. Kantho, Kaler। "স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন ১৬ বিশিষ্ট ব্যক্তি | কালের কণ্ঠ"Kalerkantho। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-২৪ 
  3. "সেলিনা হোসেন"uplbooks.com। ১৪ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৪ 
  4. "404 Not Found"kalerkantho.com 
  5. "বাংলা একাডেমির নতুন সভাপতি হলেন সেলিনা হোসেন" 
  6. ":: Welcome to GUNIJAN :: The Eminent :: Largest electronic journal of bangladeshi eminents :."gunijan.org.bd 
  7. ":: Welcome to GUNIJAN :: The Eminent :: Largest electronic journal of bangladeshi eminents :."gunijan.org.bd 
  8. ":: Welcome to GUNIJAN :: The Eminent :: Largest electronic journal of bangladeshi eminents :."gunijan.org.bd। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  9. "রাবির সমাবর্তনে ডি-লিট ডিগ্রি পাচ্ছেন হাসান আজিজুল ও সেলিনা হোসেন"দৈনিক যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০১৮ 
  10. "পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক তালিকা – বাংলা একাডেমি"বাংলা একাডেমি (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৯ 
  11. "স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন ১৬ বিশিষ্ট ব্যক্তি"দৈনিক কালের কণ্ঠ। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৯ 
  12. "পুরস্কার পেলেন পাঁচ বরেণ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান"দৈনিক প্রথম আলো। ২৪ মার্চ ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১৯ 
  13. "সনজীদা, সেলিনা, স্বরলিপি পেলেন ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার"বিডিনিউজ ২৪। ১৬ নভেম্বর ২০১৯। ১৬ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০১৯  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা