আখ্যান
এই নিবন্ধে একাধিক সমস্যা রয়েছে। অনুগ্রহ করে নিবন্ধটির মান উন্নয়ন করুন অথবা আলাপ পাতায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
|
একটি বয়ান, ভাষ্য, আখ্যান, গল্প (narrative, story, tale) হলো পরস্পর সম্পর্কিত ঘটনাবলির একটি বিবরণ বা অভিজ্ঞতার সংকলন।[১][২] এটি হতে পারে অকল্পকাহিনি (যেমন: স্মৃতিকথা, জীবনী, সংবাদ প্রতিবেদন, প্রামাণ্যচিত্র, ভ্রমণ সাহিত্য) অথবা কল্পকাহিনি (যেমন: রূপকথা, গল্পগাথা, থ্রিলার, উপন্যাস)।[৩][৪][৫]
গল্প বা বর্ণনা লিখিত বা কথ্য শব্দের মাধ্যমে, স্থিরচিত্র বা গতিশীল চিত্রের মাধ্যমে, অথবা এই উপাদানগুলোর সমন্বয়ে উপস্থাপন করা যায়। শব্দটি লাতিন ক্রিয়া narrare ("বর্ণনা করা") থেকে এসেছে, যা gnarus ("জ্ঞানী বা দক্ষ") শব্দ থেকে উদ্ভূত।[৬][৭]
গল্প নির্মাণের প্রক্রিয়াকে বর্ণনা (narration) বলা হয়, যা যুক্তিতর্ক, বর্ণনা (description) ও ব্যাখ্যা (exposition)-এর পাশাপাশি চারটি প্রচলিত আলোচনার আঙ্গিকের (rhetorical modes) একটি। এই অর্থে "বর্ণনা" শব্দটি কথকতা (narration)-এর অপেক্ষাকৃত সংকীর্ণ সংজ্ঞা থেকে ভিন্ন। গল্প নির্মাণের জন্য বিভিন্ন বর্ণনামূলক কৌশল ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে সাহিত্যিক কৌশল, যা গল্পের গভীরতা ও আকর্ষণ বৃদ্ধি করে।
গল্প বলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমকে গল্প বলা (storytelling) বলা হয় এবং এর আদিমতম রূপ হলো মৌখিক গল্প বলা।[৮] শৈশবে এই গল্পগুলো সাধারণত নৈতিকতা, ইতিহাস, সম্প্রদায়গত পরিচয় এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ শেখানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। নৃতত্ত্ববিদরা আজ এই প্রথাকে গবেষণা করেন, বিশেষ করে আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে।[৯]
মৌখিক ঐতিহ্য অনুযায়ী, গল্পগুলো প্রাত্যহিক ভাষা ব্যবহার করে বলা হয়, যেখানে বক্তা নির্দিষ্ট শ্রোতাদের জন্য গল্পের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করতে পারেন। এটি মহাকাব্য থেকে পৃথক, যেখানে ভাষা আনুষ্ঠানিক এবং সাধারণত নির্দিষ্ট শব্দবিন্যাস মেনে শেখানো হয়।[১০]
গল্প সব ধরনের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড, শিল্প এবং বিনোদনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, যেমন: ভাষণ, সাহিত্য, নাটক, সংগীত, কমিকস, সাংবাদিকতা, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, অ্যানিমেশন, ভিডিও গেম, রেডিও, খেলা এবং পারফরম্যান্স। এমনকি কিছু চিত্রকলা, ভাস্কর্য, অঙ্কন এবং ফটোগ্রাফি-তেও গল্প বলা হয়, যদি তা ঘটনাবলির ক্রম উপস্থাপন করে। তবে, কিছু শিল্প আন্দোলন, যেমন আধুনিক শিল্প, বর্ণনার পরিবর্তে নির্বাসিত শিল্প (abstract) এবং ধারণামূলক শিল্প (conceptual) গ্রহণ করে।
গল্প বিভিন্ন শৈলীতে সাজানো হতে পারে: অকল্পকাহিনি (সৃজনশীল অকল্পকাহিনি, জীবনী, সাংবাদিকতা, ইতিহাস); ঐতিহাসিক ঘটনা অবলম্বনে রচিত কল্পকাহিনি (উপাখ্যান, মিথ, গল্পগাথা, ঐতিহাসিক উপন্যাস); এবং প্রচলিত কল্পকাহিনি (সংক্ষিপ্ত গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, গান ইত্যাদি)।
গল্পের ভেতরে আরেকটি গল্প থাকতে পারে, যা গল্পের ভেতর গল্প (story within a story) নামে পরিচিত। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হলো অবিশ্বাস্য কথক (unreliable narrator), যেখানে চরিত্রের দৃষ্টিভঙ্গি বিভিন্ন কারণে বিভ্রান্তিকর হতে পারে, বিশেষত নোয়ার সাহিত্য (noir fiction)-এ।
একটি গল্পের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর বর্ণনামূলক ধরন (narrative mode), যা লিখিত বা কথ্য ভাষায় গল্প উপস্থাপনের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলোর সংকলন। (আরও জানুন "নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি" অনুচ্ছেদে)।
গল্প
সম্পাদনাগল্প হল স্বল্প দৈর্ঘের বর্ণিত উপাখ্যান। জীবনের কয়েকটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাধারণত গল্প তৈরি হয়, তাই গল্পকে জীবনের খণ্ডাংশ বলা হয়ে থাকে। গল্পের মধ্যে সীমিত বর্ণনা থাকে। স্বল্প পরিসরে ঘটনাকে নিজস্ব শৈলীতে বলে দেওয়া গল্পের মূল উদ্দেশ্য।
সাহিত্যের সূত্রপাত হয়েছে গল্প বলার মাধ্যমে। যদি গল্পের কথা বলি, তবে বলে রাখা উচিত মানুষরা যখন গুহায় বাস করতো তখনও মানুষ গল্প বলতো। এমনকি মানুষ যখন ভাষা আবিষ্কার করেনি,তখনও মানুষ ছবি একে গল্প বলার চেষ্টা করতো। এবং মানব সভ্যতার বিকাশে গল্পের বিস্তৃতি এত সুদুর প্রসারি যে, বলা যায় মানব সভ্যতার সুচনাই হয়েছে গল্প বলার মাধ্যমে।
আর, স্বভাবগত কারণেই মানুষ গল্প করে, আর গল্প করতে ভালোবাসে। মানুষ সুখের গল্প করে, দুঃখের গল্প করে, বানায়ে গল্প বলে, সত্য গল্প বলে, এমনকি আমরা যেসব ইতিহাস পড়ি, সেগুলো আসলে একটা সময়ের প্রামাণিক গল্প ছাড়া আর কিছুই না। তো মানুষ যেখানেই হোক, যেভাবেই হোক, গল্প বলে।
যখন মানুষরা সাহিত্য শব্দ আবিষ্কার করল সেই থেকে গল্প বলার আর, গল্প পড়ার অভ্যেস বেড়েই যেতে লাগলো। তারপর থেকে মানুষ তার মনের ক্ষুধা মেটাতেই অনেক খানি গল্প পড়া শুরু করল।মানব বিকাশের ধারায় মানুষের প্রথম বিনোদন ব্যবস্থা ছিল গল্প। তার ব্যাপকতা এখনও লক্ষ্য করা যায়। সাহিত্যের শুরুর দিকে মানুষ গল্পের সাথে ছন্দ লাগিয়ে তাদের গল্প গুলোকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা করতো। আর এই ভাবে তারা সফলও হয়েছেন। যেগুল কে আমার মহাকাব্য বলে জানি।
সাহিত্যের ধারায় একে একে যোগ হল নতুন নতুন গল্প বলার ধারা। কবিতা,উপন্যাস, নাটক, চলচ্চিত্র, আর গল্প তো ছিলই তাতে আরও স্পষ্ট ধারা হল ছোটগল্প, শুধু গল্প, যা ছোট গল্পের চেয়ে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে একটু বেশি, যোগ হল গল্পের ভাগ, কাল্পনিক আর বাস্তব। এই ভাবে একে একে এই গল্প বলার ধারা গুলো হয়ে গেল সতন্ত্র এক-একটি সাহিত্য প্রকাশ।
বর্তমান সময়ে বসে এই গল্প বলার বিস্তৃতি নিয়ে গল্প বলতে গেলে তা হয়তো একজন মানুষের সারাজীবন বলেও শেষ হবেনা।
আখ্যান, উপাখ্যান, গল্প বা কাহিনী বলতে কোনও একটি ঘটনা বা ধারাবাহিক সম্পর্কযুক্ত একাধিক ঘটনার লিখিত বা কথিত বর্ণনাকে বোঝায়। এটি গদ্যসাহিত্যের একটি সমৃদ্ধ শাখা। আখ্যান বা গল্প নানা ধরনের হতে পারে, যেমন: ছোটগল্প, বড়গল্প, রূপকথার গল্প, ভৌতিক গল্প,গোয়েন্দা গল্পঃত্যাদি।[১১] গল্প-Story কার না পড়তে ভালো লাগে। গল্প পড়া ও এক ধরনের নেশা। আর গল্প তো গল্পই হয়, সম্পূর্ণ কাল্পনিক-চরিত্র,স্থান,কাল ,পাত্র ই হয়। তবে কিছু কিছু গল্প বাস্তবকে খুব গভীরভাবে স্পর্শ করে যায়।গল্পের সাথে কোন ব্যক্তি, সম্প্রদায়ের সাথে মিল থাকে না বা কোন ব্যক্তি, সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্য করেও গল্প লেখা হয় না। যদি কোনও কারণ বশত ব্যক্তি, সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য বা মিল খুঁজে পান, সেটা একেবারে কাকতালীয়। তাছাড়াও যদি কোন ব্যক্তি, সম্প্রদায় আঘাত পেয়ে থাকেন,সেটা সম্পূর্ণ লেখকের অনিচ্ছাকৃ।বাংলা সাহিত্যে গল্পের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
ছোট গল্প
সম্পাদনাসাহিত্যরূপ হিসেবে ছোট গল্পের উদ্ভব ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপে। ঊনবিংশ শতাব্দীতেই বাংলা ছোট গল্পের উদ্ভব ঘটে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ছোটগল্পের প্রথম ও প্রধান শিল্পী হলেও তাঁর পূর্বে পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, স্বর্ণকুমারী দেবী, নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত- - প্রমুখ লেখক গল্পরচনায় পটভূমি প্রস্তুত করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের 'বেতাল পঞ্চবিংশতি' (১৮৪৭) নামক অনুবাদ গ্রন্থটির ঘটনা উপস্থাপনায় গল্পরসের পরিচয় পাওয়া যায়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Random House (1979)
- ↑ Spencer, Alexander (২০১৮-০৬-২৫)। "Narratives and the romantic genre in IR"। International Politics। Springer Science and Business Media LLC। 56 (1): 123–140। আইএসএসএন 1384-5748। এসটুসিআইডি 149826920। ডিওআই:10.1057/s41311-018-0171-z।
গল্প বা বিবরণ হলো মানুষের মানসিক কর্মকাণ্ডের একটি অংশ, যা অভিজ্ঞতাকে অর্থ প্রদান করে।
- ↑ Carey & Snodgrass (1999)
- ↑ Harmon (2012)
- ↑ Webster (1984)
- ↑ Traupman (1966)
- ↑ Webster (1969)
- ↑ Mello, Robin (২০০১-০২-০২)। "The Power of Storytelling: How Oral Narrative Influences Children's Relationships in Classrooms"। International Journal of Education & the Arts। 2 (1)। ২০০৮-০৬-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-২৫।
- ↑ Hodge, et al. 2002. Utilizing Traditional Storytelling to Promote Wellness in American Indian events within any given narrative
- ↑ Vansina, Jan (১৯৮৫)। Oral tradition as history। পৃষ্ঠা 13।
- ↑ Dan McAdams (২০০৪)। "Redemptive Self: Narrative Identity in America Today"। The Self and Memory। 1 (3): 95–116। ডিওআই:10.1093/acprof:oso/9780195176933.001.0001।
পরিভাষা
সম্পাদনা- আখ্যান, উপাখ্যান - narrative
- গল্প - story
- কাহিনী (বিকল্প বানানে কাহিনি) - tale