সুচন্দা

বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী

কোহিনূর আক্তার সুচন্দা (১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭) যশোরে জন্ম নেয়া বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও পরিচালক। তিনি ১৯৬০-এর দশকে অভিনয় জীবন শুরু করেন। তার ছোট বোন ববিতাচম্পা ঢালিউডের দুই অভিনেত্রী। অভিনেতা রিয়াজ তার চাচাত ভাই। ২০০৮ সালে হাজার বছর ধরে চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিলেন। এছাড়া ২০১৯ সালে তাঁকে আজীবন সম্মাননা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান করা হয়।[]

সুচন্দা
ঢাকায় চলচ্চিত্র কর্পোরেশনে বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিতে সুচন্দা -২০২৪
জন্ম
কোহিনুর আক্তার চাটনি

(1947-09-19) ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ (বয়স ৭৭)[]
শিক্ষাউচ্চ মাধ্যমিক
মাতৃশিক্ষায়তনঢাকা সিটি কলেজ
কর্মজীবন১৯৬৫–২০০৫
দাম্পত্য সঙ্গীজহির রায়হান (বি.১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬৭– ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২)
এম. রেজাউল মালিক (বি. ১৯৭৬–)
সন্তানআরাফাত রায়হান অপু (ছেলে)
তপু রায়হান (ছেলে)
রাফাইয়াৎ মালিক (মেয়ে)
রাফাইয়া মালিক (মেয়ে)[]
পিতা-মাতাএ.এস.এম নিজামউদ্দীন আইয়ূব (পিতা)
বেগম জাহান আরা (মাতা)
আত্মীয়ববিতা (বোন)
চম্পা (বোন)
রিয়াজ (চাচাত ভাই)
পুরস্কারজাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার

প্রাথমিক জীবন

সম্পাদনা
 
রিয়াজ, সুচন্দা, ববিতা, তিনা ও চম্পা কক্সবাজারে ২০১৪ সালে

সুচন্দার আসল নাম কোহিনুর আক্তার, ডাক নাম চাটনি। ১৯৪৭ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর যশোরের সাতক্ষীরায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা এএসএম নিজামউদ্দীন আইয়ূব একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। পাশাপাশি সাহিত্যচর্চাও করতেন। মা ডাঃ বেগম জাহান আরা ছিলেন একজন হোমিও চিকিৎসক। তিন বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে সুচন্দা সবার বড়। সুচন্দা যশোর মোমেন গার্লস স্কুলে ও যশোর মাইকেল মধূসূদন কলেজে পড়ালেখা করেন। স্কুল কলেজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাঁর অংশগ্রহণ ছিল। তিনি যশোরে কিশোরী নৃত্যশিল্পী হিসাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। পিতার চাকরি বদলীর কারণে ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকা সিটি কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। যশোরে থাকাকালীন শকুন্তলা নাটকে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেন।[]

পারিবারিক জীবন

সম্পাদনা

১৯৬৭ সালে বেহুলায় অভিনয় করার সময় চিত্র পরিচালক জহির রায়হানের সাথে তাঁর ভাব বিনিময় হয় এবং ১৯৬৭ সালে তাকে বিয়ে করেন। জহির রায়হান ১৯৭২ সালের ৩০শে জানুয়ারি বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খোঁজ করতে গিয়ে নিখোঁজ হন। তাঁদের দুই ছেলে, আরাফাত রায়হান অপু ও তপু রায়হান। আরাফাত রায়হান অপু একজন ব্যাংকার ও তপু রায়হান একজন ব্যবসায়ী। ১৯৭৬ সালে সুচন্দা ব্যবসায়ী এম রেজাউল মালিককে বিয়ে করেন। তাদের দুই মেয়ে রয়েছে, রাফাইয়াৎ মালিক ও রাফাইয়া মালিক।[]

অভিনয় জীবন

সম্পাদনা

সুচন্দা ১৯৬৫ সালে অভিনয় শুরু করেন প্রখ্যাত অভিনেতা কাজী খালেকের একটা প্রামাণ্যচিত্রে। সুভাষ দত্ত পরিচালিত কাগজের নৌকা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ১৯৬৬ সালে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। পরবর্তীকালে, ১৯৬৭ সালে হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী নিয়ে চলচ্চিত্র বেহুলায় অভিনয় করেন। এতে তিনি রাজ্জাকের বিপরীতে অভিনয় করেন। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছবি জীবন থেকে নেয়া। এছাড়াও ৬০ এর দশকের শেষের দিকে গোলাম মুস্তফার বিপরীতে চাওয়া পাওয়া, আজিমের বিপরীতে নয়নতারা, রাজ্জাকের বিপরীতে সুয়োরানী দুয়োরানী এবং ৭০ এর দশকে যে আগুনে পুড়ি, কাঁচের স্বর্গ, অশ্রু দিয়ে লেখা তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র। অভিনয়ের পাশপাশি তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন। জহির রায়হানের জীবদ্দশায় টাকা আনা পাইপ্রতিশোধ চলচ্চিত্র দুটি প্রযোজনা করেন। এছাড়াও তিনকন্যা, বেহুলা লখীন্দর, বাসনাপ্রেমপ্রীতি চলচ্চিত্রগুলো প্রযোজনা করেন।[] তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘সবুজ কোট কালো চশমা’। ২০০৫ সালে স্বামী জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের আলোকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন এবং সেরা প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।[]

চলচ্চিত্রের তালিকা

সম্পাদনা
মুক্তির সাল শিরোনাম চরিত্র পরিচালক সহ-শিল্পী টীকা
১৯৬৬ কাগজের নৌকা সুভাষ দত্ত আক্তার হোসেন, সৈয়দ হাসান ইমাম প্রথম চলচ্চিত্র
১৯৬৭ বেহুলা বেহুলা জহির রায়হান রাজ্জাক রাজ্জাকের সাথে প্রথম চলচ্চিত্র
আনোয়ারা আনোয়ারা রাজ্জাক
চাওয়া পাওয়া গোলাম মুস্তাফা
নয়নতারা নয়ন কাজী জহির আজিম
১৯৬৮ দুই ভাই রাজ্জাক
সুয়োরানী দুয়োরানী রাজকন্যা মনিমালা রাজ্জাক
কুচবরণ কন্যা রাজ্জাক
জুলেখা রাজ্জাক
সংসার রাজ্জাক
পরশমনি মান্নান
আয়না ও অবশিষ্ট আজিম
পয়সে
রাখাল বন্ধু
জরিনা সুন্দরী
১৯৬৯ মনের মত বউ রাজ্জাক
সখিনা রাজ্জাক
১৯৭০ যোগ বিয়োগ রাজ্জাক
যে আগুনে পুড়ি আমির হোসেন রাজ্জাক
জীবন থেকে নেয়া বিথী জহির রায়হান রাজ্জাক
কোথায় যেন দেখেছি আনোয়ার হোসেন
অন্তরঙ্গ রহমান
সুখ দুঃখ
১৯৭২ প্রতিশোধ বাবুল চৌধুরী রাজ্জাক প্রযোজক
জীবন সংগীত রাজ্জাক
অশ্রু দিয়ে লেখা কামাল আহমেদ রাজ্জাক, সুজাতা
কাচের স্বর্গ উজ্জ্বল
নতুন নামে ডাকো
জীবন তৃষ্ণা
১৯৭৩ দয়াল মুরশিদ
শনিবারের চিঠি উজ্জ্বল
১৯৭৪ সংগ্রাম চাষী নজরুল ইসলাম
বিচার
পরিণতি
১৯৭৫ ধীরে বহে মেঘনা আলমগীর কবির বুলবুল আহমেদ, ববিতা
১৯৭৮ অশান্ত ঢেউ
দিনের পর দিন
১৯৭৯ রাজবন্দি
বেলা শেষের গান
১৯৮২ বড় বাড়ির মেয়ে
১৯৮৪ পেনশন রফিকুল বারী চৌধুরী বুলবুল আহমেদ, ববিতা
প্রিন্সেস টিনা খান রানু আখতারুজ্জামান ওয়াসিম, টিনা খান
১৯৮৫ চন্দ্রনাথ সুলচনা চাষী নজরুল ইসলাম রাজ্জাক, দোয়েল
রামের সুমতি নেত্রা ববিতা, প্রবির মিত্র
তিন কন্যা চন্দা শিবলি সাদিক ববিতা, চম্পা প্রযোজক
চোর
কথা দিলাম
পরান পাখী
দেনা-পাওনা
ফুলশয্যা
আপোস
খামোশ
দোষী
আওয়ারা
কলমীলতা
চ্যালেঞ্জ
রাজাসাহেব
বড় মা
জিপসি সর্দার
সকাল সন্ধ্যা
আশীর্বাদ
সৎমা
সম্রাট
রাজবধূ
শরিফ বদমাশ
ফুলের মত বউ
২০০৫ হাজার বছর ধরে টুনির মা সুচন্দা এটিএম শামসুজ্জামান, রিয়াজ, শশী

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা
বছর পুরস্কার বিভাগ চলচ্চিত্র ফলাফল
২০০৬ মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার সেরা চলচ্চিত্র হাজার বছর ধরে (২০০৫) বিজয়ী
২০০৮ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র (প্রযোজক) হাজার বছর ধরে (২০০৫) বিজয়ী[]
সেরা পরিচালক হাজার বছর ধরে (২০০৫) বিজয়ী[]
২০১০ সিজেএফবি পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড আজীবন সম্মাননা - বিজয়ী[১০]
২০১৭ দশম স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-দ্য ডেইলি স্টার জীবনের জয়গান আজীবন সম্মাননা বিজয়ী[১১]
২০১৯ ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদান বিজয়ী[১২]
২০১৯ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার আজীবন সম্মাননা আজীবন সম্মাননা বিজয়ী

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "শুভ জন্মদিন সুচন্দা-সালমান"বাংলা মুভি ডেটাবেজ নিউজ। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  2. হাসানূজ্জামান বিপুল; রাজিবুর রহমান তপু (১৬ জানুয়ারি ২০১৪)। "কোহিনুর আক্তার সুচন্দা"যশোর ইনফো। ১৪ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  3. "সেরা অভিনেতা তারিক আনাম, সেরা অভিনেত্রী সুনেরা; ন ডড়াই সেরা চলচ্চিত্র"দৈনিক কালের কণ্ঠ। ৩ ডিসেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০২০ 
  4. ইলা মুৎসুদ্দী (১৬ জানুয়ারি ২০১৪)। "সুঅভিনেত্রী সুচন্দা"দৈনিক আজাদী। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "হারানো দিনের নায়িকা বাংলার বেহুলা সুচন্দা"দৈনিক পূর্বকোণ। ৯ জানুয়ারী ২০১৫। ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  6. লিয়াকত হোসেন খোকনর (১৯ মে ২০১০)। "কিং ব দ ন্তি : তিন কন্যা'র বড় কন্যা সুচন্দা"দৈনিক আমার দেশ। ১২ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  7. চিন্তামন তুষার (৯ মার্চ ২০১৫)। "সময় থাকতে পুরস্কৃত করুন: সুচন্দা"বিডিনিউজ। ১১ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  8. "National Film Awards for the last fours years announced"দ্য ডেইলি স্টার। ১ সেপ্টেম্বর ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১১ 
  9. এরশাদ কমল (১১ সেপ্টেম্বর ২০০৮)। "Shuchanda on her National Award winning film 'Hajar Bochhor Dhorey'"দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১১ 
  10. হোসাইন আব্দুল হাই। "সিজেএফবি'র আজীবন সম্মাননা পেলেন চলচ্চিত্র তারকা সুচন্দা'"ডয়চে ভেলে। সংগ্রহের তারিখ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ 
  11. "'জীবনের জয়গান'-এ সম্মানিত হচ্ছেন তাঁরা"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-১৬ 
  12. "ফজলুল হক স্মৃতি পুরস্কার পেলেন সুচন্দা"প্রথম আলো। ২০১৯-১২-২৮। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১২-২৯ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা