বেহুলা (চলচ্চিত্র)

বাংলাদেশী লোককাহিনীভিত্তিক চলচ্চিত্র

বেহুলা ১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলা চলচ্চিত্র।[][] জহির রায়হান ছিলেন ছবিটির চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক। ছবিটি নির্মিত হয়েছে বাংলার প্রচলিত লোককাহিনী, হিন্দু পুরাণ মনসামঙ্গল কাব্যের বেহুলা-লখিন্দরের উপাখ্যান অবলম্বনে।[] প্রযোজনা করেছেন ইফতেখারুল আলম। ছবিটিতে অভিনয় করেন সূচন্দা, রাজ্জাক, সুমিতা দেবী, ফতেহ লোহানী, মোহাম্মদ জাকারিয়া, আমজাদ হোসেন প্রমুখ।

বেহুলা
বেহুলা চলচ্চিত্রের ডিভিডি কভার
বেহুলা চলচ্চিত্রের ডিভিডি কভার
পরিচালকজহির রায়হান
প্রযোজকইফতেখারুল আলম
চিত্রনাট্যকারজহির রায়হান
উৎসমনসামঙ্গল কাব্যগ্রন্থ বেহুলা
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকারআলতাফ মাহমুদ
চিত্রগ্রাহকনাসের
সম্পাদকএনামুল হক
প্রযোজনা
কোম্পানি
স্টার সিনে কর্পোরেশন
মুক্তি
  • ১৯৬৬ (1966)
স্থিতিকাল১২৭ মিনিট
দেশপাকিস্তান
পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ)
ভাষাবাংলা

কাহিনী সংক্ষেপ

সম্পাদনা

হিন্দুর পরাণ মনসামঙ্গল কাব্যগ্রন্থ বেহুলা অনুসারে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছিল। চাঁদ সওদাগর আর শাহী সওদাগর ছিল দুইজন কাছের বন্ধু। তাদের সন্তান ছিল যথাক্রমে লখিন্দর আর বেহুলা; যাদের বিয়ে জন্মের পরপরই নির্ধারণ করে রাখা হয়ৈছিল। শাহী সওদাগর ছিল মনসার ভক্ত আর চাঁদ সওদাগর মনসাকে একদমই সহ্য করতে পারত না। ময়ূর আর সাপের শত্রুতা থাকার পরও বেহুলা লখিন্দরের কাছ থেকে ময়ূর নাচ শেখে। তাই মনসা বেহুলাকে শাপ দেন যে, বাসর রাতেই বেহুলা বিধবা হবে। চাঁদ সওদাগর অভিশাপকে অগ্রাহ্য করেন। তিনি বিশুকে নির্দেশ দেন যে, লোহার বাসর ঘর তৈরি করতে হবে। মনসা রাগান্বিত হয়ে এই বিয়ে ভাঙ্গার জন্য তার সহচর ধুমকেতুকে পৃথিবীতে পাঠান। ধুমকেতু কৌশল অবলম্বন করে অমাবস্যার রাতে বেহুলাকে শ্মশানে ডেকে পাঠান এবং অমৃতসুধার কথা বলে সুরা পান করতে দেন। সুরা পান করার ফলে বেহুলা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। বেহুলাকে গভীর রাতে শ্মশানে দেখে চাঁদ সওদাগরের পরিবার তাকে ভ্রষ্টা বলে আখ্যা দেয়। নিজের সতীত্ব প্রমাণ করতে বেহুলা অগ্নিপরীক্ষা দিতে সম্মত হয়। যার ফলে বেহুলাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়।

অভিনয় শিল্পী

সম্পাদনা

কলা কুশলী

সম্পাদনা
  • চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: জহির রায়হান
  • প্রযোজনা: ইফতেখারুল আলম
  • সংলাপ: আমজাদ হোসেন
  • সম্পাদনা: এনামুল হক
  • চিত্রগ্রহণ: নাসের
  • শব্দগ্রহণ: মালিক মনসুর, বিনোদ মন্ডল (সহযোগী)
  • শিল্প নির্দেশনা: আবদুস সবুর
  • নৃত্য পরিচালক: আলতামাস আহমেদ
  • স্থির চিত্র: কে ফটোগ্রাফার্স
  • সঙ্গীত: আলতাফ মাহমুদ
  • নেপথ্য কণ্ঠে: শাহনাজ বেগম, নীনা খান, ঝর্ণা ব্যানার্জী, মৌসুমি কবির, কণা, লাভলী, নাজমুল হুদা, দিলীপ বিশ্বাস, নাজমুন হুদা, আবদুল লতিফ, আলতাফ মাহমুদ , মাহমুদুন্নবী।
  • রূপসজ্জা: শেখ আকবর আলী
  • সাজ-সজ্জা: ড্রেস হাউস

নির্মাণ নেপথ্য

সম্পাদনা
 
চলচ্চিত্রের চিত্রায়নে জহির রায়হান

বাহানা চলচ্চিত্র নির্মাণের পরে জহির রায়হান নতুন চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নেন বাংলার প্রচলিত ও অতিপরিচিত এক লোককাহিনী, হিন্দু পুরাণ মনসামঙ্গল কাব্যের বেহুলা-লখিন্দরের উপাখ্যান। বেহুলা চরিত্রের জন্য নির্বাচন করেন সূচন্দাকে। এটি ছিল সূচন্দার অভিনীত দ্বিতীয় ছবি। এর আগে তিনি প্রখ্যাত পরিচালক সুভাষ দত্তের কাগজের নৌকা চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন।

লখিন্দরের ভূমিকায় তৎকালীন নায়কদের পছন্দ না হওয়ায় নতুন কাউকে নেওয়ার কথা ভাবেন। অভিনেতা রাজ্জাককে খবর পাঠিয়ে আসতে বলেন। তাকে দেখে প্রাথমিক পছন্দ হয় জহির রায়হানের। মএক সপ্তাহ দাঁড়ি না কামিয়ে আবার তার সাথে দেখা করতে বললেন। সাত দিন পর খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে পূর্ণ সন্তুষ্ট হয়ে লখিন্দর চরিত্রে চূড়ান্ত করেন রাজ্জাককে। চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে এটিই ছিল তার প্রথম ছবি।[][]

বেহুলা চলচ্চিত্রে সঙ্গীতের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখনীয়। এই ছবিতে মোট ১৪টি গান ও খণ্ডগান ব্যবহৃত হয়েছে। গানগুলোতে কন্ঠ দেন শাহনাজ বেগম, নীনা খান, ঝর্ণা ব্যানার্জী, মৌসুমি কবির, কণা, লাভলী, নাজমুল হুদা, দিলীপ বিশ্বাস, নাজমুন হুদা, আবদুল লতিফ, আলতাফ মাহমুদ , মাহমুদুন্নবী প্রমুখ। প্রখ্যাত সুরকার আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত পরিচালনা করেন।

বেহুলা
শাহনাজ বেগম, নীনা খান, ঝর্ণা ব্যানার্জী, মৌসুমি কবির, আবদুল লতিফ, আলতাফ মাহমুদ , মাহমুদুন্নবী প্রমুখ।
কর্তৃক সাউন্ডট্র্যাক অ্যালবাম
মুক্তির তারিখ১৯৬৬ (1966)
শব্দধারণের সময়১৯৬৬
পরিচালকআলতাফ মাহমুদ
প্রযোজকইফতেখারুল আলম
চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত গানের তালিকা
নং.শিরোনামদৈর্ঘ্য
১."ও বেহুলা সুন্দরী"২:৪৭
২."হায়রে পিতলের কলসী"২:৪৭
৩."নাচে মন ধিনা ধিনা"৪:২৫
৪."মরি হায়রে হায়"১:৪২
৫."দ্বার খোলো দ্বার খোলো কমলি"১:৫৮
৬."এ ভব সংসারে"১:০৮
৭."হেথায় ফিরে আয়"৫:৩৫
৮."বাসর বান্ধিলাম বান্ধিলাম লোহার বাসর ঘর"১:৩৪
৯."সোনার লখিন টোপর পড়েছেন"১:৫৫
১০."কি হার পঞ্চ আইহো"৩:২২
১১."প্রভু না না না"৬:০৫
১২."কি ব্যাথা মোর অন্তরে শোন নিঠুর নাগ রে"৪:৩৭
১৩."গা তোল গা তোল কন্যা হে"২:৪২
১৪."কি সাপে দংশিল লখাই রে"৪:৩৩

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "ALL-TIME GREATS - ZAHIR RAIHAN: CAPTURING NATIONAL STRUGGLES ON CELLULOID"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১১-০৯ 
  2. "Pakistani Film Database – 1966"। ২০১৫-০৩-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১১-০৯ 
  3. "জহির রায়হানের চলচ্চিত্র"। ২০১৪-১০-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১১-০৯ 
  4. "Nayak Raj adds on another year"। ২০১৪-০৪-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১১-০৯ 
  5. "Actor Razzak to receive Fazlul Haque memorial award"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১১-০৯ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা