চম্পা (অভিনেত্রী)

বাংলাদেশী অভিনেত্রী

গুলশান আরা আক্তার চম্পা (জন্ম: ৫ জানুয়ারি ১৯৬৫)[] হলেন একজন বাংলাদেশী অভিনেত্রী। তিনি তিন কন্যা চলচ্চিত্রে তার অপর অভিনেত্রী দুই বোন ববিতাসুচন্দার সাথে অভিনয় করে পরিচিতি অর্জন করেন।[] তিনি পদ্মা নদীর মাঝি (১৯৯৩), অন্য জীবন (১৯৯৫) ও উত্তরের খেপ (২০০০) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে তিনটি এবং শাস্তি (২০০৫) ও চন্দ্রগ্রহণ (২০০৮) চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।

চম্পা
চম্পা কক্সবাজারে ২০১৪
জন্ম
গুলশান আরা আক্তার চম্পা

(1965-01-05) ৫ জানুয়ারি ১৯৬৫ (বয়স ৫৯)
যশোর, খুলনা, পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)
জাতীয়তাবাংলাদেশ
পেশাঅভিনেত্রী, মডেল
কর্মজীবন১৯৮১–বর্তমান
উচ্চতা৫ ফু ৭ ইঞ্চি (১.৭০ মি)
দাম্পত্য সঙ্গীশহিদুল ইসলাম খান (১৯৮২–বর্তমান)
সন্তান
আত্মীয়
পুরস্কারপূর্ণ তালিকা

চলচ্চিত্রে আগমন

সম্পাদনা

চম্পা প্রথমে মডেলিং-এর মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর টিভি নাটকে অভিনয় করতে থাকেন এবং জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।[] শিবলী সাদিক পরিচালিত তিন কন্যা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চম্পা চলচ্চিত্রের জগতে আগমন করেন। এই চলচ্চিত্রে তারা তিন বোন সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা একত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রে একটি গানও ছিল "তিন কন্যা এক ছবি"। তিনি সত্যজিত রায়ের ছেলে সন্দ্বীপ রায়ের ‘টার্গেট’ সিনেমাতে এবং বুদ্ধদেব দাশ গুপ্তের ‘লালদরজা’ সিনেমাতে অভিনয় করার সুযোগ পান। গৌতম ঘোষ পরিচালিত পদ্মা নদীর মাঝি চলচ্চিত্র ছিল তার সবচেয়ে বড় মাপের কাজ। ১২ বছরের ক্যারিয়ারে প্রায় ১০০-এর বেশি সিনেমাতে তিনি অভিনয় করেছিলেন। বর্তমানে তিনি পর্দায় অনুপস্থিত।[]

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা
 
রিয়াজ, সুচন্দা, ববিতা, তিনা ও চম্পা কক্সবাজারে ২০১৪ সালে

কাজের অনুকূল পরিবেশ আর বৈচিত্র্যময় চরিত্র না পাওয়ায় তিনি সিনেমাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তাছাড়া চম্পার মেয়ে কানাডায় থাকে যাকে সময় দেয়ার জন্য প্রায়ই তিনি দেশের বাইরে থাকেন। যে কারণে কাজ করা হয়ে উঠছে না। চম্পা ইদানীং টেলিভিশনের বাংলা নাটকেও কাজ করছেন।[] বাচসাস ৩৮তম আসরের পুরস্কার বিজয়ী ছিলেন ববিতা (২০১২) ও চম্পা (২০১৩)। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন সুচন্দা। ২০১১ ও ২০১২ সালে সেরা পাশ্বচরিত্র হিসেবে নির্বাচিত হন ববিতাচম্পা[]

সমালোচনা

সম্পাদনা

চম্পা ৯০ দশকের শেষ দিকে এসে বিতর্কিত কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সমালোচিত হন। যদিও প্রথম দিকেই সুপারহিট 'প্রেম দিওয়ানা' ছবিতে মান্নার সাথে ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করেন। তবে 'ভয়ঙ্কর বিষু' ছবিতে ডিপজলের সাথে সংক্ষিপ্ত পোশাকে বিতর্কিত গানে আর 'বিপ্লবী জনতা' চলচ্চিত্রে ধর্ষণ দৃশ্যে অভিনয় করে তুমুল সমালোচনার মুখে পরেন। চম্পা নিজেকে আবেদনময়ী ও সাহসী নায়িকা হিসাবে তুলে আনার চেষ্টা করেন, যা দর্শকরা ভাল ভাবে নেয়নি। তারপরও বেশ কিছু ছবিতে খোলামেলা পোশাকে অভিনয় করে সমসাময়িক নায়িকাদের সাথে প্রতিযোগিতায় নামেন। 'ভয়াবহ' ছবিতে বিতর্কিত নায়িকা মুনমুন এর সাথে পাল্লা দিয়ে অতিরিক্ত আবেদনশীল পশ্চিমা পোশাক পরে উপস্থিত হন।

চলচ্চিত্রের তালিকা

সম্পাদনা
বছর চলচ্চিত্র ভূমিকা পরিচালক টীকা
১৯৮৫ তিন কন্যা চম্পা শিবলি সাদিক চলচ্চিত্রে অভিষেক
১৯৮৬ নিষ্পাপ আলমগীর
১৯৮৭ সহযাত্রী আজহারুল ইসলাম খান
১৯৮৮ যোগাযোগ খেয়া মইনুল হোসেন
ভেজা চোখ প্রিয়া শিবলি সাদিক
১৯৮৯ বিরহ ব্যথা কুন্দনন্দিনী চাষী নজরুল ইসলাম বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিষবৃক্ষ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত
১৯৯০ কাসেম মালার প্রেম মোস্তফা আনোয়ার
পদ্মা মেঘনা যমুনা মাজু চাষী নজরুল ইসলাম
অচেনা রেবেকা রফিক শিবলি সাদিক
টপ রংবাজ শহীদুল ইসলাম খোকন
১৯৯২ শঙ্খনীল কারাগার মোস্তাফিজুর রহমান হুমায়ূন আহমেদ রচিত শঙ্খনীল কারাগার উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত
চোরের বউ জহিরুল হক
১৯৯৩ অন্ধ প্রেম রোকেয়া মোস্তফা আনোয়ার
পদ্মা নদীর মাঝি মালা গৌতম ঘোষ বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
প্রেম দিওয়ানা মনতাজুর রহমান আকবর
ত্যাগ শারমিন শিবলি সাদিক
১৯৯৪ ডিসকো ড্যান্সার মনতাজুর রহমান আকবর
ঘৃণা চন্দ্রা মালেক আফসারী
সিপাহী কাজী হায়াত
দেশপ্রেমিক কাজী হায়াত
গোলাপী এখন ঢাকায় আলাপী আমজাদ হোসেন
১৯৯৫ বাবার আদেশ মনতাজুর রহমান আকবর
অন্য জীবন শেখ নিয়ামত আলী বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
টার্গেট বিজরী সন্দীপ রায়
১৯৯৬ খলনায়ক রুবি মনতাজুর রহমান আকবর
১৯৮৮ পালাবি কোথায় নুরি শহীদুল ইসলাম খোকন
লাল দরজা বেলা বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত
১৯৯৮ ভাই ইলিয়াস কাঞ্চন
১৯৯৯ ভয়ংকর বিষু মনতাজুর রহমান আকবর
২০০০ উত্তরের খেপ শাহজাহান চৌধুরী বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
২০০৩ চন্দ্রকথা মদিনা হুমায়ূন আহমেদ
আধিয়ার ফেরদৌসী বাই সাইদুল আনাম টুটুল
২০০৪ এক খণ্ড জমি লতিফা শাহজাহান চৌধুরী শাহাবুদ্দীন নাগরীর কবিতা অবলম্বনে নির্মিত
২০০৫ শাস্তি রাধা দেবী চাষী নজরুল ইসলাম বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
২০০৬ বিদ্রোহী পদ্মা রাধা বাদল খন্দকার
২০০৮ চন্দ্রগ্রহণ সখিনা বিবি / পাগলী মুরাদ পারভেজ বিজয়ী: শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
২০১০ মনের মানুষ[] পদ্মাবতী গৌতম ঘোষ
২০১৫ আরো ভালোবাসবো তোমায় ঝুমকা এস এ হক অলিক
২০১৮ ইনস্পেক্টর নটিকে আশোক পাতি

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা
বছর পুরস্কার বিভাগ চলচ্চিত্র ফলাফল
১৯৯৩ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পদ্মা নদীর মাঝি বিজয়ী
১৯৯৫ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী অন্য জীবন বিজয়ী
২০০০ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী উত্তরের খেপ বিজয়ী
২০০৫ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী শাস্তি বিজয়ী
২০০৮ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী চন্দ্রগ্রহণ বিজয়ী

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "হরতাল নির্বাচনে চম্পার জন্মদিন!"। Banglanews24.com। ২০১৪-০১-০৪। ২০১৪-০২-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-২৬ 
  2. "তিন বোনের ঈদ"দৈনিক প্রথম আলো। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১০। ২০১৪-০৪-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১ 
  3. রহমান, মোমিন; হোসেন, নবীন (১৯৯৮)। "বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে তারকা নায়িকাঃ পপি থেকে পপি"। অন্যদিন, ঈদ সংখ্যা। মাজহারুল ইসলাম। (২৫): ৩৫৩। 
  4. হোসেন, আনিকা (১৩ অক্টোবর ২০১০)। "ফিরলেন চম্পা"দৈনিক আমার দেশ। ১৭ অক্টোবর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ 
  5. http://www.bmdb.com.bd/news/তিনকন্যা-এক-ছবি/#more-10465
  6. মজুমদার, সমরেশ। "মাইল ফলক হতে হতেও হল না"দৈনিক আনন্দবাজার। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১১ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা