কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন (আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন হিসেবে পরিচিত) হচ্ছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় রেলওয়ে স্টেশন। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মতিঝিলে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও সর্বাধুনিক রেলওয়ে স্টেশন।[১][২][৩]
ইতিহাসসম্পাদনা
বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ঢাকার শহুরে অবস্থা বৃদ্ধি পায়, এবং এর অর্থনীতিও বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে ১৯৪৭ সালের পর, যখন এটি পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাজধানী হয়। বিদ্যমান রেলপথগুলো উত্তরের দিকে প্রসারিত হয়ে ঢাকাকে পুরনো ও নতুন শহরে দ্বিখণ্ডিত করে, এবং এই রেলপথগুলো বিভিন্ন স্থানে সড়কের সাথে মিলিত হওয়ায় উত্তর-দক্ষিণের সড়ক যানবাহনের প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। এছাড়াও ঢাকার উত্তর দিকে অবস্থিত ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনটি ছিল অপূর্ণাঙ্গ, যাতে একটি প্ল্যাটফর্ম, একটি ছোট প্রাঙ্গণ ও একটি লোকোমোটিভ শেড ছিল। ধারণা করা হয়, স্টেশনটিকে তুলনামূলক কম ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে স্থানান্তর করলে তেমন কোনো বাঁধা ছাড়াই উত্তর-দক্ষিণের যানবাহনের প্রবাহ সহজ হবে, এবং পুরনো ও নতুন ঢাকা শহরও একত্রিত হবে। ১৯৪৮ সালে বিশেষজ্ঞরা স্টেশনটিকে কমলাপুরে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। ১০ বছর পর ১৯৫৮ সালে প্রাদেশিক সরকার পরিকল্পনাটি কার্যকর করার দায়িত্ব অর্পণ করে।[২] তেজগাঁও থেকে রেলপথের গতিমুখ পরিবর্তন করে খিলগাঁও, এবং এরপর কমলাপুর পর্যন্ত নেওয়া হয়। ১৯৬৮ সালের ২৭শে এপ্রিল স্টেশনটি উদ্বোধন করা হয়।[২]
অবকাঠামোসম্পাদনা
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্থপতি ছিলেন দুজন মার্কিন: ড্যানিয়েল বার্নহ্যাম এবং বব বুই। দুজনেই লুই বার্জার অ্যান্ড কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের স্থপতি হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন।[৪]
বার্নহ্যাম ও বুইয়ের ডিজাইন চ্যালেঞ্জ ছিল একটি চওড়া-স্প্যানের কাঠামো তৈরি করা, যা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ার উপযোগী হবে। এর ফলাফল ট্রেন টার্মিনালের ছাদের কংক্রিটের অসচরাচর কাঠামো, যার সাথে রয়েছে একটি প্যারাসল ছাদ যা নিম্নমুখী আন্তঃসংযুক্ত কাঠামোসমূহের সারিকে আশ্রয় দেয়। টার্মিনালটির প্রোফাইল–মৃদুভাবে সূক্ষ্মাগ্র ও খিলান করা খোলসসমূহের এক ছন্দময় বিন্যাস গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ার সাধারণ চিত্রের উদ্দীপনা দেয়, যেখানে একটি ছাতা বর্ষার বৃষ্টি হতে সুরক্ষা প্রদান করে। স্টেশনটির নকশায় একটি একত্রিত ছাউনি ছাদের নিচে স্টেশনের টিকেট বুথ, প্রশাসনিক অফিস, যাত্রী বিশ্রামকেন্দ্র ও ওয়েটিং এরিয়াসহ বিভিন্ন কার্যকরী স্থান রয়েছে।[২]
পুরো স্থাপনাটি ৩৬টি বর্গক্ষেত্রের সমন্বয়ে গঠিত। এতে মোট ৪৯টি কলাম রয়েছে। এর ওপর দাঁড়িয়ে আছে ৩৬টি সরু কংক্রিটের ডোম নিয়ে একটি ছাদ। ৫৯ ফুট উঁচু প্রতিটি কলাম ওপরের দিকে গিয়ে চারটি শাখা বিস্তার করে ছাদটাকে ধরে রেখেছে।[৪]
স্টেশনটি ১৫৬ একর জায়গার উপর গঠিত। এতে ১০টি প্ল্যাটফর্ম। এছাড়াও এতে রয়েছে ১১টি টিকেট কাউন্টার এবং বহু যাত্রী বিশ্রামকেন্দ্র।[৪]
২০১৮ সালে সরকারি–বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) ঢাকা বিমানবন্দর ও তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনসহ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘিরে মাল্টিমোডাল হাব করার প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর অধীন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের চারপাশে অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে; থাকবে বহুতল আবাসন ভবন, হোটেল, শপিং মল, পাতাল ও উড়ালপথ।
২০২০ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঢাকা মেট্রো রেলের এমআরটি লাইন ৬ এর সঙ্গে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের যোগাযোগ ঘটাতে হবে। কিন্তু বর্তমান স্টেশনটি এম আরটি লাইন ৬ এর প্রস্তাবিত পথের সঙ্গে মিলতে না পারায় কমলাপুর স্টেশনটি ভেঙে ১৩০ মিটার উত্তরে নতুন জায়গায় তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।[৪][৫]
ট্রেনের তালিকাসম্পাদনা
এই অনুচ্ছেদটিতে কোনো উৎস বা তথ্যসূত্র উদ্ধৃত করা হয়নি। |
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলো হচ্ছে:
- একতা এক্সপ্রেস
- পঞ্চগড় এক্সপ্রেস
- দ্রুতযান এক্সপ্রেস
- জামালপুর এক্সপ্রেস
- সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস
- লালমনি এক্সপ্রেস
- রংপুর এক্সপ্রেস
- নীলসাগর এক্সপ্রেস
- কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস
- সিল্কসিটি এক্সপ্রেস
- ধুমকেতু এক্সপ্রেস
- পদ্মা এক্সপ্রেস
- বনলতা এক্সপ্রেস
- সুন্দরবন এক্সপ্রেস
- চিত্রা এক্সপ্রেস
- বেনাপোল এক্সপ্রেস
- তিস্তা এক্সপ্রেস
- অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস
- ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস
- যমুনা এক্সপ্রেস
- হাওর এক্সপ্রেস
- মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস
- সূবর্ণ এক্সপ্রেস
- মহানগর প্রভাতী/গোধুলী
- পারাবত এক্সপ্রেস
- উপকূল এক্সপ্রেস
- জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস
- মহানগর এক্সপ্রেস
- এগারো সিন্ধুর প্রভাতী এক্সপ্রেস
- এগারো সিন্ধুর গোধুলী এক্সপ্রেস
- উপবন এক্সপ্রেস
- তূর্ণা এক্সপ্রেস
- কালনী এক্সপ্রেস
- কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস
- সোনার বাংলা এক্সপ্রেস
- রাজশাহী এক্সপ্রেস
- টাঙ্গাইল কমিউটার
- ঢাকা কমিউটার
- কালিয়াকৈর কমিউটার
- দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার
- জামালপুর কমিউটার
- ভাওয়াল এক্সপ্রেস
- বলাকা কমিউটার
- মহুয়া এক্সপ্রেস
- তুরাগ কমিউটার
- ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস
- কর্ণফুলী এক্সপ্রেস
- সুরমা এক্সপ্রেস
- ঢাকা/চট্টগ্রাম মেইল
- ঢাকা/নোয়াখালী এক্সপ্রেস
- নারায়ণগঞ্জ কমিউটার
- তিতাস কমিউটার
- চট্টলা এক্সপ্রেস ও
- লোকাল ট্রেন।
চিত্রশালাসম্পাদনা
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "Kamalapur Railway Station Map/Atlas BR/Bangladesh Zone - Railway Enquiry"। indiarailinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৯।
- ↑ ক খ গ ঘ "A quiet masterpiece that serves as Dhaka's gateway" [একটি নিখুঁত মাস্টারপিস যা ঢাকার প্রবেশদ্বার হিসাবে কাজ করে]। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৭-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৯।
- ↑ "কমলাপুর রেলস্টেশন স্থানান্তর করা হলে যানজট বৃদ্ধি পাবে"। মে ১০, ২০১৪। ৯ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মে ২০১৬।
- ↑ ক খ গ ঘ "কমলাপুর স্টেশনকে বাঁচতে দিন"। প্রথম আলো। ২০২০-১১-২৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৯।
- ↑ "ভাঙা পড়বে ঐতিহ্যবাহী কমলাপুর রেলস্টেশন"। প্রথম আলো। ২০২০-১১-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৯।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
বহিঃসংযোগসম্পাদনা
উইকিমিডিয়া কমন্সে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন