দিয়েগো মারাদোনা

আর্জেন্টিনীয় ফুটবল খেলোয়াড় ও ম্যানেজার
(ম্যারাডোনা থেকে পুনর্নির্দেশিত)

দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা (স্পেনীয়: Diego Maradona, স্পেনীয় উচ্চারণ: [ˈdjeɣo maɾaˈðona]; ৩০ অক্টোবর ১৯৬০ – ২৫ নভেম্বর ২০২০; দিয়েগো মারাদোনা নামে সুপরিচিত) একজন আর্জেন্টিনীয় পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় এবং ম্যানেজার ছিলেন। ভক্তদের কাছে এল পিবে দে অরো (সোনালী বালক)[] ডাকনামে পরিচিত মারাদোনা তার খেলোয়াড়ি জীবনের অধিকাংশ সময় আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্স এবং নাপোলির হয়ে একজন মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছেন। তিনি মূলত একজন আক্রমণাত্মক মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হিসেবে খেললেও মাঝেমধ্যে দ্বিতীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছেন। বহু ফুটবল খেলোয়াড় এবং বিশেষজ্ঞ তাকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবে গণ্য করেন।[][] মারাদোনাকে ক্রীড়া জগতের সবচেয়ে বিতর্কিত এবং গণমাধ্যমে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গের অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৯১ সালে ইতালিতে মাদক পরীক্ষায় কোকেইনের জন্য ধরা পড়ায় তাকে ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৯৪ ফিফা বিশ্বকাপে ইফিড্রিন পরীক্ষায় ইতিবাচক ফলাফলের জন্য তাকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে তিনি তার কোকেইন নেশা ত্যাগ করেন। তার কড়া রীতির জন্য সাংবাদিক-ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ এবং তার মধ্যে বেশ কিছু সময় মতভেদের সৃষ্টি হয়েছে।

দিয়েগো মারাদোনা
১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের পর মারাদোনা
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা[]
জন্ম (১৯৬০-১০-৩০)৩০ অক্টোবর ১৯৬০
জন্ম স্থান লানুস, বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা
মৃত্যু ২৫ নভেম্বর ২০২০(2020-11-25) (বয়স ৬০)
মৃত্যুর স্থান তিগ্রে, বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা
উচ্চতা ১.৬৫ মিটার (৫ ফুট ৫ ইঞ্চি)[][]
মাঠে অবস্থান মধ্যমাঠের খেলোয়াড়
আক্রমণভাগের খেলোয়াড়[][][]
যুব পর্যায়
১৯৬৭–১৯৭১ এস্ত্রেয়া রোহা
১৯৭০–১৯৭৪ লস সেবোয়িতাস
১৯৭৫–১৯৭৬ আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্স
জ্যেষ্ঠ পর্যায়*
বছর দল ম্যাচ (গোল)
১৯৭৬–১৯৮১ আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্স ১৬৭ (১১৬)
১৯৮১–১৯৮২ বোকা জুনিয়র্স ৪০ (২৮)
১৯৮২–১৯৮৪ বার্সেলোনা ৩৬ (২২)
১৯৮৪–১৯৯১ নাপোলি ১৮৮ (৮১)
১৯৯২–১৯৯৩ সেভিয়া ২৬ (৫)
১৯৯৩–১৯৯৪ নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ (০)
১৯৯৫–১৯৯৭ বোকা জুনিয়র্স ৩০ (৭)
মোট ৪৯১ (২৫৯)
জাতীয় দল
১৯৭৭–১৯৭৯ আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ ১৫ (৮)
১৯৭৭–১৯৯৪ আর্জেন্টিনা ৯১ (৩৪)
পরিচালিত দল
১৯৯৪ তেক্সতিল মান্দিয়ু
১৯৯৫ রেসিং ক্লাব
২০০৮–২০১০ আর্জেন্টিনা
২০১১–২০১২ আল-ওয়াসল
২০১৩–২০১৭ দেপোর্তিবো রিয়েস্ত্রা (সহকারী)
২০১৭–২০১৮ ফুজাইরাহ
২০১৮–২০১৯ দোরাদোস সিনালোয়া
২০১৯–২০২০ লা প্লাতা
অর্জন ও সম্মাননা
ফুটবল (পুরুষ)
 আর্জেন্টিনা-এর প্রতিনিধিত্বকারী
ফিফা বিশ্বকাপ
বিজয়ী ১৯৮৬ মেক্সিকো
রানার-আপ ১৯৯০ ইতালি
কোপা আমেরিকা
তৃতীয় স্থান ১৯৮৯ ব্রাজিল
ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ
বিজয়ী ১৯৭৯ জাপান
কনমেবল–উয়েফা কাপ অব চ্যাম্পিয়ন্স
বিজয়ী ১৯৯৩ আর্জেন্টিনা

স্বাক্ষর
* কেবল ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে

১৯৬৭–৬৮ মৌসুমে, আর্জেন্টিনীয় ফুটবল ক্লাব এস্ত্রেয়া রোহার যুব পর্যায়ের হয়ে খেলার মাধ্যমে মারাদোনা ফুটবল জগতে প্রবেশ করেন এবং পরবর্তীতে লস সেবোয়িতাস এবং আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের যুব দলের হয়ে খেলার মাধ্যমেই তিনি ফুটবল খেলায় বিকশিত হয়েছেন। ১৯৭৬–৭৭ মৌসুমে, আর্জেন্টিনীয় ফুটবল ক্লাব আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের মূল দলের হয়ে খেলার মাধ্যমে তিনি তার জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেন; আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের ৫ মৌসুমে ১৬৭ ম্যাচে অংশগ্রহণ করার পর তিনি প্রায় ১.৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে আরেক আর্জেন্টিনীয় ক্লাব বোকা জুনিয়র্সে যোগদান করেন। বোকা জুনিয়র্সে মাত্র ১ মৌসুমে একটি লিগ শিরোপা জয়লাভ করার পর, প্রায় ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে (যা উক্ত সময়ের বিশ্ব রেকর্ড ছিল) স্পেনীয় ক্লাব বার্সেলোনায় যোগদান করেন; যেখানে সেসার লুইস মেনোতির অধীনে তিনি তিনটি শিরোপা জয়লাভ করেছেন। বার্সেলোনার হয়ে ২ মৌসুমে সকল প্রতিযোগিতায় ৪৫ ম্যাচে ৩০টি গোল করার পর, প্রায় ৭ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ইতালীয় ক্লাব নাপোলিতে যোগদান করেন; এই স্থানান্তরের মাধ্যমে মারাদোনা পুনরায় বিশ্ব রেকর্ড করেন। মারাদোনা ফুটবল ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে দুইবার স্থানান্তরের বিশ্বরেকর্ড ভঙ্গ করেছেন।[১০] পরবর্তীতে, তিনি সেভিয়া এবং নিওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলেছেন। সর্বশেষ ১৯৯৫–৯৬ মৌসুমে, তিনি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে পুনরায় বোকা জুনিয়র্সে যোগদান করেছিলেন, যেখানে তিনি ২ মৌসুম অতিবাহিত করে অবসর গ্রহণ করেছেন।

১৯৭৭ সালে, মারাদোনা আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে আর্জেন্টিনার বয়সভিত্তিক পর্যায়ে অভিষেক করেছিলেন, যেখানে তিনি ১৫ ম্যাচে ৮টি গোল করেছিলেন। একই বছর, মারাদোনা আর্জেন্টিনার হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক করেছিলেন, যেখানে তিনি সর্বমোট ৯১ ম্যাচে ৩৪টি গোল করেছেন। তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে ৪টি ফিফা বিশ্বকাপ (১৯৮২, ১৯৮৬ ১৯৯০ এবং ১৯৯৪) এবং ৩টি কোপা আমেরিকায় (১৯৭৯, ১৯৮৭ এবং ১৯৮৯) অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ২–১ গোলে জয়লাভ করার ম্যাচে আর্জেন্টিনার হয়ে মারাদোনার করা উভয় গোলই ফুটবল ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। প্রথম গোলটি ছিল হ্যান্ডবল, যা “হ্যান্ড অফ গড” নামে খ্যাত এবং দ্বিতীয় গোলটি মারাদোনা প্রায় ৬০ মিটার দূর থেকে ড্রিবলিং করে পাঁচজন ইংরেজ রক্ষণভাগের খেলোয়াড়কে পাশ কাটিয়ে করেন। ২০০২ সালে ফিফার ভক্তগণ ভোটের মাধ্যমে সেটি শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে নির্বাচিত করেছে।[১১]

১৯৯৪ সালে, মারাদোনা আর্জেন্টিনীয় ফুটবল ক্লাব তেক্সতিল মান্দিয়ুর ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করার মাধ্যমে ম্যানেজার হিসেবে ফুটবল জগতে অভিষেক করেন। তেক্সতিল মান্দিয়ু-এ মাত্র ১ বছরের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করার পর তিনি রেসিং ক্লাবে ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন। অতঃপর প্রায় ১৩ বছর ফুটবল হতে দূরে থাকার পর ২০০৮ সালে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার অধীনে আর্জেন্টিনা ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছিল। তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে প্রায় ২ বছর হিসেবে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি আল-ওয়াসল, দেপোর্তিবো রিয়েস্ত্রা, ফুজাইরাহ এবং দোরাদোস সিনালোয়ার ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন।[১২][১৩] ২০১৮ সালের মে মাসে, মারাদোনা বেলারুশীয় ক্লাব দিনামো ব্রেস্তের নতুন সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন,[১৪] তবে তিনি জুলাই মাসে উক্ত পদের সকল কার্যভার গ্রহণ করেন।[১৫] সর্বশেষ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, তিনি লা প্লাতায় ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেছিলেন, যেখানে তিনি তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত ছিলেন।[১৬]

ব্যক্তিগতভাবে, মারাদোনা বেশ কিছু পুরস্কার জয়লাভ করেছেন, যার মধ্যে ১৯৮৬ সালে গোল্ডেন বল এবং ১৯৯০ সালে ব্রোঞ্জ বল জয় অন্যতম। এছাড়াও তিনি ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত ফিফা শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়ের (পেলের সাথে যৌথভাবে)[১৭][১৮] খেতাব অর্জন করেছেন। দলগতভাবে, ঘরোয়া ফুটবলে, মারাদোনা সর্বমোট ৯টি শিরোপা জয়লাভ করেছেন, যার মধ্যে ১টি বোকা জুনিয়র্সের হয়ে, ৩টি বার্সেলোনার হয়ে এবং ৬টি নাপোলির হয়ে জয়লাভ করেছেন। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়, সর্বমোট ৩টি শিরোপা জয়লাভ করেছেন; ১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপ শিরোপা জয় অন্যতম।

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা
 
১৯৭৩ সালের সেবোয়িতাসের হয়ে এবিয়া তোরনেওসে খেলার সময় মারাদোনা

"দিয়েগো যখন আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে এসেছিল, তখন আমি সত্যিই তার প্রতিভা দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম এবং বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে তার বয়স মাত্র আট বছর। আসলে, আমরা তার পরিচয়পত্র চেয়েছিলাম যেন আমরা তার বয়স মেলাতে পারি, কিন্তু সে আমাদের বলেছে যে তার কাছে এটা নেই। আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে সে আমাদের নিয়ে মজা করছে, কারণ যদিও তার শরীর শিশুদের মতো ছিল, তবে সে প্রাপ্তবয়স্কদের মতো খেলেছে। যখন আমরা জানতে পারলাম যে সে আমাদের সত্য বলছে, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমরা তার প্রতি পুরোপুরি মনোনিবেশ করব।"

—ফ্রান্সিস্কো কোরনেয়ো, মারাদোনাকে খুঁজে পাওয়া কোচ[১৯]

দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা ১৯৬০ সালের ৩০শে অক্টোবর তারিখে আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেসের লানুসের পলিপলিনিকো (পলিক্লিনিক) আবিতা হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেছেন। তার বাবার নাম দিয়েগো মারাদোনা "চিতরো" (মৃত্যু: ২০১৫) এবং তার মায়ের নাম দালমা সালভাদোর ফ্রাঙ্কো "দোনিয়া তোতা" (১৯৩০–২০১১)। তারা উভয়েই কোরিয়েন্তে নদীর তীরে একে অপরের থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরত্বে কোরিয়েন্তেস প্রদেশের উত্তর-পূর্বের এস্কুইনা শহরে জন্মগ্রহণ এবং শৈশব অতিবাহিত করেছেন। ১৯৫০ সালে তারা এস্কুইনা ছেড়ে বুয়েনোস আইরেসে বসতি স্থাপন করেন। মারাদোনা তার শৈশবেই পরিবারে সাথে কোরিয়েন্তেস প্রদেশ থেকে বুয়েনোস আইরেসের দক্ষিণ উপকণ্ঠে অবস্থিত ভিয়া ফিওরিতো-এ স্থানান্তরিত হন এবং সেখানেই তিনি তার শৈশব অতিবাহিত করেছেন।[২০] তিনি তার বাবা-মায়ের চার কন্যার সন্তানের পর প্রথম পুত্র ছিলেন। তার দুই ছোট ভাই উগো মারাদোনা (এল তুর্কো) এবং রাউল মারাদোনা (লালো) উভয়ই পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। মাত্র আট বছর বয়সে, মারাদোনাকে একজন প্রতিভাবান স্কাউট তার প্রতিবেশী ক্লাব এস্ত্রেয়া রোহাতে খেলতে দেখে। অতঃপর তিনি উক্ত স্কাউটের বদৌলতে বুয়েনোস আইরেস ভিত্তিক ফুটবল ক্লাব আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের দল লস সেবায়িতাস-এ (ছোট পেঁয়াজ) যোগদান করেন। একজন ১২ বছর বয়সী বল বয় হিসেবে তিনি প্রথম বিভাগের খেলার প্রথমার্ধের বিরতির সময় বল নিয়ে তার জাদুকরী কুশল প্রদর্শন করে দর্শকদের উল্লসিত করেন।[২১] তিনি ব্রাজিলীয় সৃজনশীল খেলোয়াড় রিভেলিনো এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পার্শ্বীয় খেলোয়াড় জর্জ বেস্টকে তার শৈশবে ফুটবল খেলোয়াড় হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।[২২][২৩]

ক্লাব ফুটবল

সম্পাদনা

আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্স

সম্পাদনা
 
মারাদোনার সবচেয়ে বিখ্যাত নাটমেগ, যেদিন তিনি প্রিমিয়ার বিভাগে অভিষেক করেছিলেন

১৯৭৬ সালের ২০শে অক্টোবর তারিখে, তার ১৬তম জন্মদিনের মাত্র ১০ দিন পূর্বে, মারাদোনা আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের হয়ে তায়েরাস দে কর্দোবার বিরুদ্ধে ম্যাচে অভিষেক করেন।[২৪] তিনি উক্ত ম্যাচে ১৬ নম্বর জার্সি পরে রুবেন আনিবাল জাকোবেত্তির মাঠে প্রবেশ করেন এবং আর্জেন্টিনীয় প্রিমিয়ার বিভাগের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন। অভিষেকের কয়েক মিনিট পর মারাদোনা হুয়ান দোমিঙ্গো কাব্রেরার পায়ের মধ্য দিয়ে বল নিয়ে যান, এটি এমন একটি নাটমেগ ছিল যা পরবর্তীতে কিংবদন্তি হয়ে ওঠে।[২৫] খেলা শেষে মারাদোনা বলেন, "সেদিন আমার মনে হয়েছিল আমি আমার হাতে আকাশ ধরে রেখেছি"।[২৬] ত্রিশ বছর পর, কাব্রেরা মারাদোনার অভিষেকের কথা স্মরণ করে বলেন, "আমি মাঠের ডান পাশে ছিলাম এবং তাকে চাপ দিতে গিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি আমাকে কোন সুযোগ দেননি। সে আমাকে নাটমেগ করেছে এবং যখন আমি ঘুরে দাঁড়ালাম, সে আমার থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছিল"।[২৭] অতঃপর ১৯৭৬ সালের ১৪ই নভেম্বর তারিখে, নিজের ১৬তম জন্মদিনের দুই সপ্তাহ পরে, মারপ্লাতেন্সের বিরুদ্ধে ম্যাচে গোল করার মাধ্যমে মারাদোনা আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের হয়ে এবং আর্জেন্টিনীয় প্রিমিয়ার বিভাগে তার প্রথম গোলটি করেন।[২৮]

আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের হয়ে খেলে তিনি ১৯৭৮ সালে মহানগর স্তরে, ১৯৭৯ সালে মহানগর ও জাতীয় স্তরে এবং ১৯৮০ সালে মহানগর ও জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। এর ফলে তিনি আর্জেন্টিনার ফুটবলে একটি রেকর্ড অর্জন করে, তিনি একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ৫টি প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার অর্জন করেন। মারাদোনা ১৯৭৬ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সে ৫ বছর অতিবাহিত করেন, যেখানে তিনি ১৬৭ ম্যাচে ১১৫টি গোল করেন।[২৯]

বোকা জুনিয়র্স

সম্পাদনা
 
১৯৮১ মহানগর চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর বোকা জুনিয়র্সের ভক্তদের সাথে মারাদোনা

মারাদোনা রিভার প্লেতসহ বেশ কয়েকটি ক্লাবে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন, যারা তাকে ক্লাবের সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত খেলোয়াড় করার প্রস্তাব দিয়েছিল।[৩০] তবে, পরবর্তীকালে দানিয়েল পাসারেয়া এবং উবালদো ফিয়োলের অধিক বেতনে ফলে রিভার প্লেত তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছিল।[৩১] মারাদোনা বোকা জুনিয়র্সে স্থানান্তরিত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন, কেননা এই দলের হয়ে তিনি সবসময় খেলতে চাইতেন।[৩২] মারাদোনা ১৯৮১ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি তারিখে ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিময়ে বোকা জুনিয়র্সের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তিনি এর দুই দিন পর, তায়েরাস দে কর্দোবার বিরুদ্ধে ম্যাচে বোকা জুনিয়র্সের হয়ে অভিষেক করেন; উক্ত ম্যাচে তার ক্লাব ৩–১ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল, যেখানে তিনি দুটি গোল করেন। ১০ই এপ্রিল তারিখে, লা বোম্বোনেরা স্টেডিয়ামে রিভার প্লেতের বিরুদ্ধে খেলায় অংশগ্রহণ করার মারাদোনা তার প্রথম সুপারক্লাসিকো ম্যাচটি খেলেন। উক্ত ম্যাচে বোকা জুনিয়র্স রিভার প্লেতকে ৩–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করেছেন, যেখানে মারাদোনা আলবের্তো তারান্তিনি এবং ফিয়োলের পাশ দিয়ে ড্রিবল করার পর ম্যারাডোনার সাথে রিভারকে ৩-০ গোলে পরাজিত করে।[৩৩]

বোকা জুনিয়র্সে তার প্রথম মাসে, মারাদোনা বেশ কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে ম্যানেজার সিলবিও মারজোলিনির সাথে সম্পর্ক পুরোপুরি ভাল ছিল না,[৩৪] কারণ প্রশিক্ষণের দিক থেকে তার কিছু দাবি ছিল, যা মারাদোনা সহ্য করতে পারেননি। উপরন্তু, দলটি বোকার বারা ব্রাভার পক্ষ থেকে চাপে ছিল। একবার পরপর চারটি ম্যাচ ড্র করার পর, এল আবুয়েলো ডাকনামে পরিচিত হোসে বারিতা বারের প্রধান আরো ভালো ফলাফলের দাবিতে বেশ কয়েকজন সদস্যের সাথে সশস্ত্র হয়ে মাঠে প্রবেশ করে। সবশেষে বোকা জুনিয়র্স একটি সফল মৌসুম অতিবাহিত করেছিল, তারা রেসিং ক্লাবের বিরুদ্ধে একটি পয়েন্ট অর্জন করার পর লিগ শিরোপা জয়লাভ করে।[৩৫] আর্জেন্টিনার ঘরোয়া লিগে এটাই ছিল মারাদোনার একমাত্র শিরোপা।[৩৬]

বার্সেলোনা

সম্পাদনা

"তার বলের উপর সম্পূর্ণ আধিপত্য ছিল। যখন মারাদোনা বল নিয়ে দৌড়াতো অথবা রক্ষণভাগের ভিতর দিয়ে ড্রিবল করতো, তখন মনে হতো বলটি তার বুটের সাথে বাঁধা রয়েছে। আমার মনে আছে তার সাথে আমাদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণের কথা: দলের বাকি খেলোয়াড়গণ এতটাই বিস্মিত ছিল যে তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছিল। আমরা সবাই তার প্রতিভার সাক্ষী হতে পেরে সৌভাগ্যবান মনে করি।"

লোবো কারাস্কো, বার্সেলোনার খেলোয়াড়[৩৭]

১৯৮২ ফিফা বিশ্বকাপের পর জুন মাসে মারাদোনা স্থানান্তরের বিশ্ব রেকর্ড ৫ মিলিয়ন ইউরোর (৭.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিনিময়ে স্পেনীয় ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনায় যোগদান করেন।[৩৮] ১৯৮৩ সালে কোচ সেসার লুইস মেনোতির অধীনে বার্সেলোনা এবং মারাদোনা কোপা দেল রে (স্পেনের বার্ষিক জাতীয় কাপ প্রতিযোগিতা) জয়লাভ করে, রিয়াল মাদ্রিদকে পরাজিত করে এবং অ্যাথলেটিক বিলবাওকে পরাজিত করে স্পেনীয় সুপার কাপ জয়লাভ করে। ১৯৮৩ সালের ২৬শে জুন তারিখে বার্সেলোনা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ক্লাব খেলা, এল ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদকে পরাজিত করে। এই ম্যাচে বার্সেলোনার হয়ে করা মারাদোনার গোলটি প্রথম বার্সেলোনা খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছিল।[৩৯] মারাদোনা রিয়াল মাদ্রিদের গোলরক্ষক আগুস্তিনের পাশ দিয়ে ড্রিবল করেন এবং ফাঁকা গোলের কাছে আসতেই তিনি থেমে যান, ঠিক সে সময় রিয়াল মাদ্রিদের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হুয়ান হোসে শট আটকানোর মরিয়া চেষ্টায় এগিয়ে আসেন তবে শেষ পর্যন্ত মারাদোনা বলটি জালে জড়াতে সক্ষম হন।[৪০] গোলের এই ধরণটি স্টেডিয়ামে উপস্থিত অনেকে হাততালি দিয়ে সাধুবাদ জানায়; এর পরবর্তীতে বার্সেলোনা খেলোয়াড় হিসেবে শুধুমাত্র রোনালদিনহো (২০০৫ সালের নভেম্বর মাসে) এবং আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা (নভেম্বর ২০১৫ সালে) সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের দ্বারা প্রশংসিত হয়েছেন।[৩৯][৪১]

 
অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের আন্দোনি গোইকোয়েসেয়ার ট্যাকলের শিকার হয়ে মারাদোনার আহত হওয়ার মুহূর্ত

অসুস্থতা, আঘাত এবং মাঠে বিতর্কিত ঘটনার কারণে, মারাদোনা বার্সেলোনায় এক কঠিন সময় পার করেছিলেন।[৪২] প্রথমে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হন, অতঃপর ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাম্প ন্যুতে অনুষ্ঠিত লা লিগার একটি ম্যাচে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় আন্দোনি গোইকোয়েসেয়ার একটি ট্যাকলের ফলে মারাদোনার গোড়ালি ভেঙ্গে যায়, এই আঘাতের ফলে মারাদোনার খেলোয়াড়ি জীবন এক হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল, তবে দারুণ চিকিৎসার ফলে মাত্র তিন মাস পর তিনি মাঠে ফিরতে সক্ষম হয়েছিলেন।[২৪]

 
ভালেনসিয়ার বিরুদ্ধে বার্সেলোনার ম্যাচের পূর্বে মারিও কেম্পেসের সাথে মারাদোনা

১৯৮৩–৮৪ মৌসুম শেষে রিয়াল মাদ্রিদের সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অনুষ্ঠিত অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে ১৯৮৪ কোপা দেল রে-এর ফাইনালে মারাদোনা একটি হিংসাত্মক এবং বিশৃঙ্খল ঝগড়ায় জড়িয়ে পরেছিলেন।[৪৩] গোইকোয়েসেয়া দ্বারা পুনরায় একটি রুক্ষ ট্যাকলের শিকার হয়ে পায়ে আঘাত পাওয়ার পর, বিলবাও সমর্থকরা পুরো ম্যাচ জুড়ে তার বাবার পূর্বপুরুষদের আদি মার্কিন হওয়া বিষয়ে বর্ণবাদী স্লোগান দিতে থাকে। অতঃপর ম্যাচ শেষে বার্সেলোনা ১–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হওয়ার পর বিলবাওয়ের মিগেল সোলা দ্বারা উস্কে দেওয়ার ফলে মারাদোনা ঝগড়ায় জড়িয়ে পরেন।[৪৩] মারাদোনা আক্রমনাত্মকভাবে উঠে সোলার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বাক্য বিনিময় করেন। এর ফলে উভয় দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। অতঃপর সোলা একটি বিদ্বেষপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করে মারাদোনার প্রতি আগত দর্শকদের করা একটি অঙ্গভঙ্গি অনুকরণ করেন।[৪৪] যার ফলে মারাদোনা সোলার মাথায় আঘাত করেন, অন্য একজন বিলবাও খেলোয়াড়ের মুখে কনুই দিয়ে আঘাত করে এবং আরেকজন খেলোয়াড়ের মাথায় হাঁটু দিয়ে আঘাত করে অজ্ঞান করে ফেলেন।[৪৩] এরপর বিলবাও দল মারাদোনাকে ঘিরে ফেলে এবং গোইকোয়েসেয়া তার বুকে একটি লাথি দিতে উদ্যত হয়েছিল, তবে বার্সেলোনা দলের বাকি খেলোয়াড়গণ মারাদোনাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে। এরপর থেকে বার্সেলোনা এবং বিলবাওয়ের খেলোয়াড়গণ খেলার মাঠে মারাদোনাকে কেন্দ্র করে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় এবং বিলবাওয়ের শার্ট পরা যে কাউকে লাথি এবং ঘুষি মারতে শুরু করে।[৪৩]

এর কিছু দিন পর, স্পেনীয় রাজা হুয়ান কার্লোস এবং স্টেডিয়ামের ভেতরে ১,০০,০০০ সমর্থকের সামনে আরেকটি ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল, যা স্পেনের অর্ধেকেরও বেশি দর্শক টেলিভিশনে সরাসরি দেখছিল।[৪৫] মাঠে আগত সমর্থকরা খেলোয়াড়, প্রশিক্ষক এবং এমনকি আলোকচিত্ৰকরদের লক্ষ্য করে মাঠে শক্ত বস্তু ছুঁড়তে শুরু করে। এই ঘটনায় ষাট জন আহত হয় এবং এই ঘটনাই কার্যকরভাবে মারাদোনার বার্সেলোনা জীবনের ইতি টেনেছিল।[৪৪] এই ম্যাচটিই ছিল বার্সেলোনার জার্সি গায়ে মারাদোনার সর্বশেষ ম্যাচ। বার্সেলোনার একজন নির্বাহী কর্মকর্তা এই ঘটনা সম্পর্কে বলেছেন, "যখন আমি মারাদোনার লড়াই এবং বিশৃঙ্খলার দৃশ্য দেখলাম, তখন আমি বুঝতে পারলাম যে আমরা তার সাথে আর এগিয়ে যেতে পারব না।[৪৫] মারাদোনা বার্সেলোনার নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাথে ঘন ঘন বিবাদে জড়িয়ে পড়েন, বিশেষ করে ক্লাবের সভাপতি ইয়োসেপ লুইস নুনিয়েসের সাথে, যার ফলে ১৯৮৪ সালে কাম্প ন্যু থেকে স্থানান্তরের দাবি জানানো হয়েছিল। বার্সেলোনায় তার দুই আঘাত-সংঘাত মৌসুমে, মারাদোনা ৫৮ ম্যাচে ৩৮টি গোল করেছিলেন।[৪৬] অতঃপর মারাদোনা ইতালির শীর্ষ স্তরের ফুটবল লিগ সেরিয়ে আ-এর ক্লাব নাপোলিতে ৬.৯ মিলিয়ন ইউরোর (১০.৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিনিময়ে স্থানান্তরের আরেকটি বিশ্ব রেকর্ড করে যোগদান করেছিলেন।[১০]

নাপোলি

সম্পাদনা
 
১৯৮৪ সালের ৫ই জুলাই তারিখে নাপোলির সান পাওলো স্টেডিয়ামে দর্শকদের অভিবাদন জানাচ্ছেন মারাদোনা

১৯৮৪ সালের ৫ই জুলাই তারিখে, মারাদোনা নাপোলিতে আসেন এবং নাপোলির খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্ব প্রচার মাধ্যমে উপস্থাপিত হন, সান পাওলো স্টেডিয়ামে তার আগমনী অনুষ্ঠানে ৭৫,০০০ সমর্থক তাকে স্বাগত জানান।[৪৭] এই বিষয়ে ক্রীড়া লেখক ডেভিড গোল্ডব্লাট বলেছেন, "তারা [সমর্থকরা] নিশ্চিত ছিল যে [তাদের] ত্রাণকর্তা এসেছে"।[৪৮] একটি স্থানীয় সংবাদপত্র তাদের প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে, "মেয়র, বাড়ি, স্কুল, বাস, কর্মসংস্থান এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থার অভাব রয়েছে, তবে কোন মুখ্য বিষয় নয় কারণ আমাদের কাছে মারাদোনা আছে"।[৪৮] মারাদোনার আগমনের পূর্বে, ইতালীয় ফুটবলে দেশের উত্তর ও কেন্দ্র ভিত্তিক দলের আধিপত্য ছিল, যেমন এসি মিলান, ইয়ুভেন্তুস, ইন্টার মিলান এবং রোমা; তখন পর্যন্ত ইতালীয় উপদ্বীপের দক্ষিণের কোন দল কখনো লিগ শিরোপা জয়লাভ করতে পারেনি।[৪৮][৪৯]

নাপোলিতে মারাদোনা তার খেলোয়াড়ি জীবনের শিখরে পৌঁছেছিলেন: তিনি শীঘ্রই নাপোলির প্রবীণ রক্ষণভাগের খেলোয়াড় জুসেপ্পে ব্রুস্কোলত্তির কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে অধিনায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করেন[৫০] এবং দ্রুত ক্লাবের সমর্থকদের একজন প্রিয় তারকা হয়ে ওঠেন; উক্ত সময়ে তিনি নাপোলিকে দলের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল যুগ অতিবাহিত করতে সহায়তা করেন।[৪৮] মারাদোনা এমন এক সময়ে নাপোলির হয়ে খেলেছেন, যখন ইতালিতে উত্তর-দক্ষিণের উত্তেজনা বিভিন্ন বিষয়ের কারণে চরম পর্যায়ে ছিল, বিশেষ করে দুই অঞ্চলের মধ্যকার অর্থনৈতিক পার্থক্য।[৪৮] মারাদোনার নেতৃত্বে নাপোলি ১৯৮৬–৮৭ মৌসুমে ক্লাবের ইতিহাসে প্রথম সেরিয়ে আ ইতালীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জয়লাভ করে।[৪৮] এই বিষয়ে গোল্ডব্লাট লিখেছেন, "উদ্‌যাপন ছিল বিশৃঙ্খল। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এক উৎসবমুখর শহরে তাৎক্ষণিক রাস্তার পার্টি এবং অন্যান্য ছোট উৎসব চলমান ছিল। পৃথিবী উল্টে গেছে। নেয়াপলিতানরা ইয়ুভেন্তুস এবং মিলানের জন্য বিদ্রূপাত্মক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন করছে, তাদের কফিন পুড়িয়ে দিচ্ছে, 'মে ১৯৮৭, অন্য ইতালির পরাজয় হয়েছে। একটি নতুন সাম্রাজ্যের জন্ম হয়েছে' বলে তাদের মৃত্যুর বিজ্ঞপ্তি হিসেবে ঘোষণা করছে।"[৪৮] উক্ত সময়ে শহরের প্রাচীন ভবনগুলোতে মারাদোনার প্রাচীর আঁকার পাশাপাশি তার সম্মানে নবজাতক শিশুদের নাম তার নামে নামকরণ করা হয়েছিল।[৪৮] পরবর্তী মৌসুমে মারাদোনা, ব্রুনো জর্দানো এবং কারেকা দ্বারা গঠিত দলের প্রভাবশালী আক্রমণাত্মক ত্রয়ীকে পরবর্তীতে "মা-জি-কা" (জাদুকরী) হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।[৫১]

 
১৯৮৯ উয়েফা কাপ জয়ের পর সতীর্থদের সাথে মারাদোনা

নাপোলি ১৯৮৯–৯০ মৌসুমে তাদের দ্বিতীয় লিগ শিরোপা জয়লাভ করে এবং ১৯৮৭–৮৮১৯৮৮–৮৯ মৌসুমে দুইবার লিগে রানার-আপ হয়েছে।[৪৮] নাপোলিতে মারাদোনা যুগে অন্যান্য অর্জনের মধ্যে ১৯৮৬–৯৭ কোপ্পা ইতালিয়া, (সেই সাথে ১৯৮৮–৮৯ কোপ্পা ইতালিয়ায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করা), ১৯৮৯ উয়েফা কাপ এবং ১৯৯০ সুপারকোপ্পা ইতালিয়ানার শিরোপা অন্যতম।[৪৮] ১৯৮৯ সালে ভিএফবি স্টুটগার্টের বিরুদ্ধে উয়েফা কাপের ফাইনালের প্রথম লেগে ২–১ গোলের ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে মারাদোনা পেনাল্টি থেকে গোল এবং কারেকার ম্যাচ-বিজয়ী গোলে অ্যাসিস্ট করেছিলেন।[৫২][৫৩] অন্যদিকে, ১৭ই মে তারিখে দ্বিতীয় লেগে ৩–৩ গোলে ড্রয়ের ম্যাচে তিনি চিরো ফেরারার গোলে অ্যাসিস্ট করেছিলেন।[৫৪][৫৫] প্রাথমিকভাবে একজন আক্রমণাত্মক মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হিসেবে সৃজনশীল ভূমিকা পালন সত্ত্বেও, মারাদোনা ১৯৮৭–৮৮ মৌসুমে ১৫ গোল করার মাধ্যমে লিগের শীর্ষ গোলদাতা হয়েছিলেন। সর্বশেষে, তিনি নাপোলির হয়ে ১১৫টি গোল করার মাধ্যমে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতায় পরিণত হয়েছিলেন,[৫৬] ২০১৭ সালে মারেগ হামশিক তার এই রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেছেন।[৩৬][৫৭][৫৮] এসি মিলানের কেন্দ্রীয় রক্ষণভাগের খেলোয়াড় ফ্রাঙ্কো বারেসি বলেছেন, "আমি মারাদোনা এবং রোনালদোকে আমার জীবনের সেরা খেলোয়াড় মনে করি"। তিনি ২০০৮ সালে বলেছেন, "আমার সাথে খেলা খেলোয়াড়দের মধ্যে সেরা খেলোয়াড় হলেন মারাদোনা"।[৫৯][৬০]

ইতালিতে থাকাকালীন সময়ে যখন মারাদোনা মাঠে সফল হচ্ছিলেন, ঠিক তখনই তার ব্যক্তিগত সমস্যা বেড়ে যাচ্ছিল। উক্ত সময়ে তিনি তার কোকেইনের ব্যবহার অব্যাহত রাখেন। "মানসিক চাপের" কারণে খেলা এবং অনুশীলনে অনুপস্থিত থাকার কারণে তাকে ক্লাব থেকে ৭০,০০০ মার্কিন ডলার জরিমানা করা হয়েছিল।[৬১] তিনি সেখানে একটি অবৈধ পুত্র বিষয়ে এক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পরেন এবং তিনি কামোরার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ফলে কিছু ক্ষেত্রে সন্দেহের বিষয় হয়ে উঠেছিলেন।[৬২][৬৩][৬৪][৬৫] পরবর্তীতে নাপোলিতে মারাদোনার সম্মানে এবং নাপোলিতে তার খেলোয়াড়ি জীবনের সফলতার প্রতি সম্মান জানিয়ে নাপোলির ১০ নম্বর জার্সি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়।[৬৬]

সেভিয়া

সম্পাদনা

১৯৯২ সালের ১লা জুলাই তারিখে, মারাদোনার উপর ফিফা কর্তৃক আরোপিত ১৫ মাসের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ সমাপ্ত হয় এবং তখনো তিনি নাপোলির চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু মারাদোনা ইতালি থেকে অন্যত্র চলে যেতে চেয়েছিলেন, তিনি এমন একটি ক্লাবের হয়ে খেলতে চেয়েছিলেন, যেখানে তার খেলার উপর তেমন কোন চাপ থাকবে না।[৬৭] তার স্থানান্তর বিষয়ে সর্বপ্রথম সেভিয়া এবং মার্সেইয়ের সাথে আলোচনা হয়েছিল। অবশেষে ৭.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে মারাদোনা স্পেনীয় ফুটবল ক্লাব সেভিয়ায় যোগদান করেছিলেন, এই অর্থের অধিকাংশই সিলভিও বেরলুসকোনির অধীনস্থ মিডিয়াসেট কোম্পানি পরিশোধ করেছিল।[৬৮] তবে, নাপোলি এই স্থানান্তরের অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে স্থানান্তরে বাঁধা প্রদান করেছিল। অতঃপর ১৯৯২ সালের ২২শে সেপ্টেম্বর তারিখে ফিফা এই স্থানান্তরে নাপোলির অবরোধ মুক্ত করার জন্য অনুরোধ করেছিল।

সেভিয়ার তৎকালীন আর্জেন্টিনীয় কোচ কার্লোস বিলার্দো মারাদোনাকে সেভিয়ার সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তবে, তখনো ইতালি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য মারাদোনার বিচারিক আদালতের ছাড়পত্রের প্রয়োজন ছিল, কেননা পূর্ববর্তী বছরে কাবায়িতোয় বাড়ি সংক্রান্ত তার একটি সমস্যা ছিল। মামলার বিচারকের কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর, তিনি তার চুক্তিতে একটি সমঝোতা করতে সক্ষম হন, যার ফলে তিনি উক্ত মৌসুমের লিগ শুরু হওয়ার পর সেভিয়া দলের সাথে যোগদান করেছিলেন। অতঃপর ২৮শে সেপ্টেম্বর তারিখে, বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে এক প্রীতি ম্যাচে তিনি সেভিয়ার জার্সি গায়ে অভিষেক করেছিলেন। ১৯৯২ সালের ৪ঠা অক্টোবর তারিখে, তিনি লিগে সেভিয়ার পঞ্চম ম্যাচে আনুষ্ঠানিকভাবে সেভিয়ার হয়ে অভিষেক করেছিলেন; উক্ত ম্যাচে সেভিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল অ্যাথলেটিক বিলবাও, যে ক্লাবের সাথে তিনি আট বছর পূর্বে একটি দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিলেন।

সেভিয়ার সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকাকালীন তিনি তার হাঁটুর পুরানো সমস্যায় ভুগছিলেন, তাই তিনি বেশ কিছু খেলায় অনুপস্থিত ছিলেন। ১৯৯৩ সালের ১৩শে জুন তারিখে, রিয়াল বুর্গোসের বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রথমার্ধ মারাদোনা তার এই আঘাতের কারণে তাকে পরিবর্তন করার আহবান জানান, কিন্তু বিলার্দো তাকে খেলা চালিয়ে যেতে বলেন, তাই সে সময় ডাক্তার তাকে হাঁটুতে তিনটি ইনজেকশন দিয়েছিলেন। তবে, ৫৩ মিনিটের মধ্যে বিলার্দো তাকে বদল করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যা কোচকে প্রকাশ্যে অপমান করা খেলোয়াড়দের ক্ষোভ আরো উস্কে দিয়েছিল।

এটিই ছিল সেভিয়ার হয়ে তার শেষ ম্যাচ, কারণ দুই মাস পরে তিনি আর্জেন্টিনীয় ফুটবলে ফিরে যান। মারাদোনা সেভিয়ার হয়ে মোট ২৬টি লিগ ম্যাচ খেলেছিলেন, যেখানে তিনি ৫টি গোল করেছিলেন; এছাড়াও লিগে তিনি ৯টি অ্যাসিস্ট করেছিলেন।[৬৯] সেভিয়ার হয়ে তিনি সকল প্রতিযোগিতায় সর্বমোট ২৯ ম্যাচে ৬টি গোল এবং ৯টি অ্যাসিস্ট করেছিলেন। উক্ত মৌসুমে সেভিয়া ৪৩ পয়েন্ট (চ্যাম্পিয়ন দল বার্সেলোনা হতে ১৫ পয়েন্ট কম) নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের ৭ম স্থান অর্জন করেছিল।

নিওয়েল'স ওল্ড বয়েজ

সম্পাদনা

১৯৯৩ সালে নিওয়েল'স ওল্ড বয়েজ জার্সি পরে মারাদোনা আর্জেন্টিনীয় ফুটবলে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। কিন্তু তার স্থানান্তর বিষয়ক প্রাথমিক আলোচনায় মনে করা হয়েছিল যে, মারাদোনা পুনরায় তার বাল্যকালের দল আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সে যোগদান করবেন। পরবর্তীতে এমন একটি ঘটনা ঘটে যা আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের সাথে তার সকল আলোচনা নষ্ট করে দেয়; এমতাবস্থায় নিওয়েল'স ওল্ড বয়েজ তাকে দলের নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে।[৭০] এর পরিবর্তে, সান লরেন্সো আলমাগ্রো তার বন্ধু অস্কার রুগেরির (যিনি উক্ত সময়ে ক্লাবের একজন খেলোয়াড় ছিলেন) মাধ্যমে মারাদোনাকে দলে ধারে যোগদান করানোর উৎসাহ প্রদান করেছিল। তবে, ক্লাব সভাপতি ফের্নান্দো মিয়েলের সাথে মতপার্থক্যের কারণে শেষ মুহূর্তে এই আলোচনাও খারিজ হয়ে যায়।[৭১] অবশেষে তিনি নিওয়েল'স ওল্ড বয়েজে যোগদান করেছিলেন।

১৯৯৩ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর তারিখে, কোচ হোর্হে রাউল সোলারি দ্বারা আয়োজিত মৌসুমের প্রথম অনুশীলনে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন; যা দেখতে ৪০,০০০ মানুষ উপস্থিত হয়েছিল। ৭ই অক্টোবর তারিখে, ইকুয়েডরীয় ফুটবল ক্লাব এমেলকের বিরুদ্ধে এক প্রীতি ম্যাচে অংশগ্রহণের মাধ্যমে মারাদোনা নিওয়েল'স ওল্ড বয়েজের জার্সি গায়ে অভিষেক করেছিলেন। অতঃপর ১০ই অক্টোবর তারিখে, তিনি ইন্দেপেন্দিয়েন্তের বিরুদ্ধে ম্যাচে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিষেক করেন; উক্ত ম্যাচে নিওয়েল'স ওল্ড বয়েজ ৩–১ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল। অতঃপর মারাদোনা বেলগ্রানো, লা প্লাতা, বোকা জুনিয়র্স এবং উরাকানের বিরুদ্ধে ম্যাচে খেলেছেন।

১৯৯৩ সালের ২রা ডিসেম্বর তারিখে, নিওয়েল'স ওল্ড বয়েজের পরবর্তী ম্যাচে তিনি তার পেশীতে আঘাত পেয়েছিলেন, যার ফলে তিনি কয়েক সপ্তাহের জন্য মাঠ থেকে দূরে ছিলেন। সোলারি দলের প্রযুক্তিগত কাজকর্মের ক্ষেত্রে অসন্তোষ থাকায় দল ছেড়ে দিয়েছিলেন। নতুন কোচ হোর্হে কাস্তেয়ির সাথে মারাদোনার সম্পর্ক ভালো ছিল না, কেননা তিনি পূর্ববর্তী কোচের সাথে সম্মত কিছু ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করেছিলেন, এছাড়াও তিনি সান লরেন্সো আলমাগ্রোতে যোগদানে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন; এটিই ছিল মারাদোনার নিওয়েল'স ওল্ড বয়েজ ত্যাগের অন্যতম কারণ। ১৯৯৪ সালের ২৬শে জানুয়ারি তারিখে, ভাস্কো দা গামার বিরুদ্ধে একটি প্রীতি ম্যাচই ছিল এই ক্লাবে হয়ে মারাদোনার শেষ ম্যাচ। নিওয়েল'স ওল্ড বয়েজের হয়ে মারাদোনা সর্বমোট ৫টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছেন, তবে তিনি কোন গোল করতে সক্ষম হননি।

বোকা জুনিয়র্সে প্রত্যাবর্তন

সম্পাদনা

১৯৯৭ সালের ২১শে এপ্রিল তারিখে, মারাদোনা পুনরায় বোকা জুনিয়র্সে যোগদানের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন, তাকে এই ক্লাবের পুনরায় যোগদান করতে এক্তর রোদোলফো বেইরা (যিনি উক্ত সময়ে ক্লাবের প্রযুক্তিগত কর্মকর্তার প্রধান হিসেবে ক্লাব করছিলেন) উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। অতঃপর ৯ই জুলাই তারিখে নিওয়েল'স ওল্ড বয়েজের বিরুদ্ধে ম্যাচে তিনি বোকা জুনিয়র্সের জার্সি গায়ে দ্বিতীয় দফায় প্রথম ম্যাচে খেলেছিলেন। ২৪শে আগস্ট তারিখে, তিনি আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যেখানে তার দল ৪–২ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল। অতঃপর তাকে ডোপিং নিয়ন্ত্রণের একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়েছিল; উক্ত পরীক্ষায় তার দেহে বেনজোয়েলেকগোনিন, মিথাইলেকগোনিন এবং কোকেইনের উপস্থিতি পাওয়া যায়।[৭২][৭৩] এর ফলে আর্জেন্টিনীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন তাকে পরবর্তী পরীক্ষায় নেতিবাচক ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছিল; পরবর্তীতে পুনঃপরীক্ষায়ও মারাদোনার দেহে মাদকজাতীয় দ্রব্যের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল।[৭৪] অতঃপর জুলাই মাসে মারাদোনা পুলিশের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, যেখানে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে তার দেহে জোরপূর্বক মাদক দ্রব্য প্রবেশ করানোর এবং পরীক্ষায় ইতিবাচক ফলাফল প্রদর্শনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল।[৭৫] বিচারক কাউদিও বোনাদিও এই হুমকিগুলো খতিয়ে দেখে খেলোয়াড়ের আইনজীবী কর্তৃক অনুরোধ করার পর, আর্জেন্টিনীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে মারাদোনার উপর আরোপিত সাময়িক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন যতক্ষণ পর্যন্ত মূত্রের ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিতরূপে প্রমাণিত হয় যে নমুনাটি মারাদোনার।[৭৬] এর ফলে মারাদোনা ফুটবল খেলা চালিয়ে যেতে পারবেন, তবে বিচারক জানিয়েছেন যে প্রতি ম্যাচ শেষে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার ডোপিং নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক।

পরবর্তীতে সুদামেরিকানা সুপার কাপে কোলো-কোলোর বিরুদ্ধে ম্যাচে তিনি চোট পান, যার ফলে তাকে বেশ কয়েকদিন মাঠ থেকে দূরে থাকতে হয়েছিল। অতঃপর ১৯৯৭ সালের ২৫শে অক্টোবর তারিখে, রিভার প্লেতের ম্যাচে তিনি শেষবারের মতো বোকা জুনিয়র্সের জার্সি গায়ে ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিলেন, এই ম্যাচে তিনি প্রথমার্ধ শেষে হুয়ান রোমান রিকুয়েলমের বদলি খেলোয়াড় হিসেবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। উক্ত ম্যাচে তার দল ২–১ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল। ৩০শে অক্টোবর তারিখে, তার ৩৭তম জন্মদিনে তিন পেশাদার ফুটবল থেকে তার অবসরের ঘোষণা দেন।[৭৭]

আন্তর্জাতিক ফুটবল

সম্পাদনা
 
সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ১৯৭৯ ফিফা বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে মারাদোনা

আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে, মারাদোনা সর্বমোট ৯১ ম্যাচে ৩৪টি গোল করেছিলেন। তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে, ১৯৭৭ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি তারিখে, হাঙ্গেরির বিরুদ্ধে ম্যাচে বয়সভিত্তিক দলের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক করেছিলেন। ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত ১৯৭৮ ফিফা বিশ্বকাপে কোচ সেসার লুইস মেনোতি তাকে আর্জেন্টিনা দলের অন্তর্ভুক্ত করেননি।[৭৮] ১৮ বছর বয়সে মারাদোনা জাপানে অনুষ্ঠিত ১৯৭৯ ফিফা বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং প্রতিযোগিতার সেরা তারকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। উক্ত প্রতিযোগিতার ফাইনালে আর্জেন্টিনা সোভিয়েত ইউনিয়নকে ৩–১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করেছিল, যেখানে মারাদোনা দলের হয়ে তৃতীয় গোলটি করেছিলেন। এই প্রতিযোগিতায় ৬ ম্যাচে ৬টি গোল করে মারাদোনা গোল্ডেন বল জয়লাভ করেছিলেন।[৭৯] ১৯৭৯ সালের ২রা জুন তারিখে, হ্যাম্পডেন পার্কে অনুষ্ঠিত ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে ৩–১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করার ম্যাচে মারাদোনা জ্যেষ্ঠ দলের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক করেছিলেন।[৮০] ১৯৭৯ সালের আগস্ট মাসে তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকার দুটি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিলেন; যার মধ্যে একটিতে আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের কাছে ২–১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল এবং অন্যটিতে বলিভিয়ার সাথে ২–১ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল; যেখানে তিনি তার দলের তৃতীয় গোলটি করেছিলেন।[৮১]

১৯৭৯ সালে মারাদোনার খেলার প্রভাব সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ফিফার তৎকালীন সভাপতি সেপ ব্লাটার বলেছিলেন, "দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা সম্পর্কে সবারই ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে এবং তার খেলোয়াড়ি জীবন চলাকালীন সময় থেকে এই ঘটনা ঘটে আসছে। আমার কাছে সবচেয়ে উজ্জ্বল স্মৃতি হচ্ছে ১৯৭৯ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে এই অবিশ্বাস্য প্রতিভাবান ছেলেটির কীর্তি। যখনই বল তার নিয়ন্ত্রণে আসত, তখনই সে সবাইকে অবাক করে দিতো"।[৮২] মারাদোনা এবং তার স্বদেশী লিওনেল মেসি হলেন এমন খেলোয়াড়, যারা ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ এবং ফিফা বিশ্বকাপ উভয় প্রতিযোগিতায় গোল্ডেন বল জয়লাভ করেছিলেন; মারাদোনা ১৯৭৯ এবং ১৯৮৬ সালে এটি জয়লাভ করেছিলেন; অন্যদিকে, মেসি ২০০৫ এবং ২০১৪ সালে এটি জয়লাভ করেছিলেন।[৮৩]

১৯৮২ বিশ্বকাপ

সম্পাদনা
 
বাতিস্তার উপর ফাউল করার পর মারদোনাকে লাল কার্ড দেখাচ্ছেন রেফারি

স্পেনে অনুষ্ঠিত ১৯৮২ ফিফা বিশ্বকাপে মারাদোনা প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৮২ সালে বার্সেলোনার কাম্প ন্যুতে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী খেলায় আর্জেন্টিনা বেলজিয়ামের মুখোমুখি হয়েছিল। কাতালান জনতা স্থানান্তরের নতুন বিশ্বরেকর্ড করে তাদের দলে আগত মারাদোনাকে খেলতে দেখতে আগ্রহী ছিল, কিন্তু তিনি তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারেননি;[৮৪] যার ফলে আর্জেন্টিনা ১–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে আর্জেন্টিনা খুব সহজেই হাঙ্গেরি এবং এল সালভাদোরকে পরাজিত করে দ্বিতীয় পর্বে উত্তীর্ণ হয়েছিল, তবে দলের অভ্যন্তরে বেশ উত্তেজনা ছিল; কেননা তরুণ, কম অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সাথে পুরাতন, অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের মধ্যে বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছিল। যার ফলে, মারিও কেম্পেস, অসভাল্দো আর্দিলেস, রামোন দিয়াস, দানিয়েল বেরতোনি, আলবের্তো তারান্তিনি, উবালদো ফিজোল এবং দানিয়েল পাসারেয়া সংবলিত আর্জেন্টিনা দল দ্বিতীয় পর্বে ব্রাজিল এবং উক্ত আসরের চ্যাম্পিয়ন দল ইতালির কাছে পরাজিত হয়েছিল। ইতালির বিরুদ্ধে ম্যাচটি ক্লাউদিও গেন্তিলে মারাদোনাকে আক্রমণাত্মকভাবে ট্যাকল করার জন্য বিখ্যাত হয়েছে, যেখানে ইতালি বার্সেলোনার সারিয়া স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ২–১ গোলে পরাজিত করেছিল।[৮৫]

মারাদোনা এই প্রতিযোগিতায় সর্বমোট ৫টি ম্যাচ (যার মধ্যে একটিতেও তিনি বদলি হননি) খেলেছিলেন; যার মধ্যে তিনি হাঙ্গেরির বিপক্ষে দুটি গোল করেছিলেন। তাকে সব খেলায় বারবার ফাউল করা হয়েছিল, বিশেষ করে সারিয়াতে অনুষ্ঠিত ব্রাজিলের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে, যেখানে রেফারির খুবই হতাশাজনক পরিচালনা এবং হিংসাত্মক ফাউল লক্ষ্য করা গিয়েছে; উক্ত ম্যাচে আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের থেকে ৩–০ গোলে পিছিয়ে ছিল, এমন সময় মারাদোনার মেজাজ খুব খারাপ হয়ে যায়, অতঃপর তাকে বাতিস্তার উপর ফাউল করার ফলে ম্যাচ শেষের ৫ মিনিট পূর্বে লাল কার্ড দেখে মাঠ থেকে চলে যেতে হয়েছিল।[৮৬]

১৯৮৬ বিশ্বকাপ

সম্পাদনা
 
১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপের বিশ্বকাপ শিরোপা হাতে মারাদোনা

মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপে মারাদোনা আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করেছিলেন। ২৯শে জুন তারিখে, মেক্সিকো সিটিতে অনুষ্ঠিত ফাইনালে আর্জেন্টিনা পশ্চিম জার্মানিকে ২–১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জয়লাভ করেছিল।[৮৭] পুরো আসর জুড়ে, মারাদোনা আধিপত্য় বিস্তার করে খেলেছিলেন এবং প্রতিযোগিতার সবচেয়ে প্রগতিশীল খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে প্রতিটি খেলার প্রতিটি মিনিট খেলেছিলেন; যেখানে তিনি ৫টি গোল এবং ৫টি অ্যাসিস্ট করেছিলেন। মেক্সিকো সিটির অলিম্পিক বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে উদ্বোধনী ম্যাচে তিনি তিনটি গোল করেছিলেন। পুয়েবলায় অনুষ্ঠিত ইতালির বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে মারাদোনা এই প্রতিযোগিতার প্রথম গোলটি করেছিলেন।[৮৮] পুয়েবলায় অনুষ্ঠিত প্রথম নকআউট পর্বে আর্জেন্টিনা উরুগুয়েকে পরাজিত করেছিল, যার ফলে তারা মেক্সিকো সিটির আসতেকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার-ফাইনাল ম্যাচে আর্জেন্টিনা ২–১ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল; যেখানে মারাদোনা দুটি ঐতিহাসিক গোল করেছিলেন, যা তার কিংবদন্তির উপাধি অর্জন করতে সাহায্য করেছে।[৮৯] তার প্রথম গোলের কুখ্যাতি এবং দ্বিতীয় গোলের মহিমা সম্পর্কে ফরাসি সংবাদপত্র লেকুইপে মারাদোনাকে "অর্ধ-দেবদূত, অর্ধ-শয়তান" হিসেবে বর্ণনা করেছিল।[৯০] এই খেলাটিকে আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার ফকল্যান্ড যুদ্ধের পটভূমি হিসেবে হিসেবে মনে করা হয়।[৯১] পুনঃপ্রদর্শনে দেখা যায় যে, প্রথম গোলের পূর্বে বলটি তার স্পর্শ করেছিল, যা মারাদোনা প্রথমত অস্বীকার করেছিলেন। তিনি এটিকে "মারাদোনার মাথা হতে একটু এবং ঈশ্বরের হাত হতে একটু" হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।[৮৭] এটি পরবর্তীতে ঈশ্বরের হাত নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। অবশেষে ২২শে আগস্ট তারিখে, মারাদোনা তার টেলিভিশন অনুষ্ঠানে স্বীকার করেন যে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে হাত দ্বারা বলটি আঘাত করেছিলেন এবং বলটি তার মাথা স্পর্শ করেনি, একই সাথে তিনি জানান যে তিনি গোলটি হওয়ার মুহূর্তেই জানতেন যে গোলটি অবৈধ। এটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে একটি আন্তর্জাতিক ব্যর্থতা হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। ইংরেজ খেলোয়াড়দের বিরোধিতা সত্ত্বেও রেফারি গোলটিকে বৈধ বলে ঘোষণা করেছিলেন।[৯২]

"মারাদোনা, পাঁকাল মাছের মত পিছলে এগিয়ে যাচ্ছেন [তিনি] ধরাছোঁয়ার বাইরে, ছোটখাটো গাঁট্টাগোট্টা ব্যক্তি... কসাইয়ের কাছে আসে তার ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, ফেনউইককে পরাস্ত করে বলটি সামনে এগিয়ে দিয়েছেন... এবং এ কারণেই মারাদোনা বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়।"

—ব্রায়ন বাটলার, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গোল করার সময় বিবিসি রেডিও-এর ধারাভাষ্যকার[৯৩]

হাত দ্বারা করা বিতর্কিত গোলের মাত্র চার মিনিট পর ফিফার ভক্তগণ মারাদোনার করা দ্বিতীয় গোলটিকে ফিফা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ গোল হিসেবে ভোট দিয়েছে। তিনি তার নিজের দলের অর্ধে বলটি গ্রহণ করে বলটিতে ১১ বার স্পর্শ করে ড্রিবলিংয়ের ৫ জন ইংরেজ খেলোয়াড়কে (পিটার বেয়ার্ডসলি, স্টিভ হজ, পিটার রেইড, টেরি বুচার এবং টেরি ফেনউইক) অতিক্রম করে মাঠের দৈর্ঘ্যের অর্ধেকেরও বেশি অতিক্রম করে গোলরক্ষক পিটার শিলটনকে পেছনে ফেলে জালে বলটি জড়িয়ে দিয়েছিলেন।[৯৪] ফিফা কর্তৃক পরিচালিত ২০০২ সালের এক অনলাইন জরিপে এই গোলটি শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে সর্বাধিক ভোট পেয়েছিল।[১১] যুক্তরাজ্যের ২০০২ সালের চ্যানেল ৪-এর এক জরিপে, এই গোলটি ১০০টি সেরা ক্রীড়া মুহূর্তের তালিকায় ৬ষ্ঠ স্থান অধিকার করেছিল।[৯৫]

 
১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধের "শতাব্দীর সেরা গোল" করার পূর্ব মুহূর্তে মারাদোনা

মারাদোনা আসতেকা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে সেমি-ফাইনালে আরো দুটি গোল করেছিলেন, যার মধ্যে দ্বিতীয় গোলের ক্ষেত্রে তিনি আবারো এক মনোমুগ্ধকর ড্রিবলিং প্রদর্শন করেছিলেন। ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির দুইজন খেলোয়াড় মিলে তাকে আটকে রাখার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তারপরেও তিনি পশ্চিম জার্মান খেলোয়াড় লোথার মাথেউসকে ফাঁকি দিয়ে জয়সূচক গোলের জন্য হোর্হে বুরুচাগাকে বলটি এগিয়ে দেওয়ার জায়গা খুঁজে পেয়েছিলেন। আর্জেন্টিনা আসতেকা স্টেডিয়ামে ১,১৫,০০০ সমর্থকের সামনে পশ্চিম জার্মানিকে ৩–২ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে মারাদোনা অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ হাতে তুলে নেন।[৯০][৯৬]

এই আসর চলাকালীন মারাদোনা আর্জেন্টিনার হয়ে অর্ধেকেরও বেশি শট নিয়েছিলেন অথবা শট নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, এই আসরে তিনি সর্বোচ্চ ৯০টি ড্রিবল করার চেষ্টা করেছিলেন, যা অন্য যে কোন খেলোয়াড়ের চেয়ে তিন গুণ বেশি। একই সাথে তিনি এই আসরে রেকর্ড ৫৩ বার ফাউলের শিকার হয়েছেন, যা অন্য যে কোন খেলোয়াড়ের চেয়ে দুই গুণ বেশি।[৯৭][৯৮] মারাদোনা এই আসরে আর্জেন্টিনার ১৪টি গোলের মধ্যে ১০টি (৭১%) গোল অথবা অ্যাসিস্ট করেছিলেন, যার মধ্যে ফাইনালে বিজয়ী গোলের জন্য অ্যাসিস্টটি অন্যতম। যার ফলে তিনি ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা নাম হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন।[৯৮][৯৯] বিশ্বকাপ শেষে, মারাদোনা সর্বসম্মত ভোটে আসরের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জয়লাভ করেছিলেন। একই সাথে অনেকে মনে করেন যে, তিনি প্রায় এককভাবে বিশ্বকাপটি জয়লাভ করেছিলেন, যা সম্পর্কে তিনি পরবর্তীতে বলেন যে তিনি এই বক্তব্যের সাথে পুরোপুরি একমত নন।[৯৮][১০০][১০১][১০২] ১৪ বছর বয়সী জিনেদিন জিদান ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপটি এক দর্শক হিসেবে দেখেছিলেন, যা সম্পর্কে তিনি বলেছেন, "মারাদোনা [এই আসরে] এক অন্য পর্যায়ে ছিলেন"।[১০৩] তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসতেকা স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ "শতাব্দীর সেরা গোল" করার মুহূর্তে একটি মূর্তি নির্মাণ করেছে এবং এটিকে স্টেডিয়ামের প্রবেশদ্বারে স্থাপন করেছে।[১০৪]

২০১৪ সালে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে মারাদোনার খেলা সম্পর্কে ইএসপিএন এফসি-এর রজার বেনেট এটিকে "বিশ্বকাপের সবচেয়ে ভালো প্রদর্শন" হিসেবে[১০৫] এবং লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের কেভিন ব্যাক্সটার এটিকে "প্রতিযোগিতার [ফিফা বিশ্বকাপের] ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যক্তিগত প্রদর্শন" বলে অভিহিত করেছিলেন।[১০৬] অন্যদিকে, দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের স্টিভেন গোফ মারাদোনার খেলাকে "প্রতিযোগিতার [ফিফা বিশ্বকাপের] অন্যতম সেরা" আখ্যায়িত করেছিলেন।[১০৭]

২০০২ সালে দ্য গার্ডিয়ানের রাসেল টমাস ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মারাদোনার দ্বিতীয় গোলকে "যুক্তিসঙ্গতভাবে সর্বকালের সেরা ব্যক্তিগত গোল" হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।[১০৮] সিবিসি স্পোর্টসের জন্য লেখা ২০০৯ সালের একটি প্রবন্ধে জন মোলিনারো এই গোলকে "প্রতিযোগিতার [ফিফা বিশ্বকাপের] হয়তো ফুটবলে সর্বকালের সেরা গোল" হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।[১০৯] স্পোর্টসনেটের জন্য লেখা ২০১৮ সালের একটি প্রবন্ধে তিনি বলেছিলেন, "১৯৫৮ সালের পেলে অথবা ১৯৮২ সালের পাওলো রসসি কেউই মেক্সিকোতে মারাদোনার মতো এক প্রতিযোগিতায় এমন আধিপত্য বিস্তার করেনি"। মারাদোনার খেলা সম্পর্কে তিনি আরো বলেছিলেন: "আর্জেন্টিনার এই প্রতিভাবান শিল্পী একাই তার দেশকে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার দুটি স্মরণীয় গোল সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেন: "হ্যাঁ, এটা মারাদোনার হাত ছিল, ঈশ্বরের নয়, যা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম গোল করতে সাহায্য করেছে, 'ঈশ্বরের হাত' গোলটি এই প্রতিযোগিতার বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা গোল হিসেবে স্থান করে নেওয়া বিষয়ে কোন বিতর্ক নেই। তার গোলটি এতটা নিখুত ছিল যে তা সকল খেলাধুলাকে অতিক্রম করেছে।[১১০]

১৯৯০ বিশ্বকাপ

সম্পাদনা

ইতালিতে অনুষ্ঠিত ১৯৯০ ফিফা বিশ্বকাপেও মারাদোনা আর্জেন্টিনার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন; এই আসরেও আর্জেন্টিনা ফাইনালে পৌঁছেছিল। গোড়ালির আঘাত এই আসরে তার সামগ্রিক খেলাকে প্রভাবিত করেছিল, যার ফলে আর্জেন্টিনার হয়ে তিনি চার বছর পূর্বে তুলনায় অনেক কম প্রভাবশালী ছিলেন। মিলানের সান সিরোতে অনুষ্ঠিত ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনা উদ্বোধনী ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর, আর্জেন্টিনা প্রথম রাউন্ডেই আসর হতে বিদায় হওয়ার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। অবশেষে গ্রুপ পর্ব শেষে আর্জেন্টিনা পয়েন্ট তালিকার ৩য় দল হিসেবে পরবর্তী পর্বে উত্তীর্ণ হয়েছিল। তুরিনে অনুষ্ঠিত ১৬ দলের পর্বে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ম্যাচে মারাদোনার কল্যাণে কাউদিও কানিজ্ঞিয়া ম্যাচে একমাত্র গোলটি করেছিলেন।[১১১]

ফ্লোরেন্সে অনুষ্ঠিত কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা যুগোস্লাভিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল; ১২০ মিনিট পরও ম্যাচটি ০–০ গোলে শেষ হয়েছিল। যদিও পেনাল্টি শুট-আউটে গোলপোস্টের ডান দিকে করা মারাদোনা একটি দুর্বল শট গোলরক্ষক প্রতিহত করে দিয়েছিলেন, তবে ৩–২ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে পরবর্তী পর্বে উত্তীর্ণ হয়। নাপোলিতে অনুষ্ঠিত সেমি-ফাইনালে আর্জেন্টিনা স্বাগতিক দেশ ইতালির মুখোমুখি হয়েছিল; ১২০ মিনিট পর ১–১ গোলের সমতায় থাকার ফলে এই ম্যাচটিও পেনাল্টি শুট-আউটে গড়ায়। তবে এবার মারাদোনা তার প্রচেষ্টায় সফল হন, সাহসের সাথে তিনি বলটি জালে জড়িয়ে দিয়েছিলেন। রোমে অনুষ্ঠিত ফাইনালে আর্জেন্টিনা পশ্চিম জার্মানির কাছে ১–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল, ৮৫তম মিনিটে রুডি ফোলারের উপর একটি বিতর্কিত ফাউলের পর পশ্চিম জার্মানির মধ্যমাঠের খেলোয়াড় আন্ড্রেয়াস ব্রেহমে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেছিলেন।[১১১]

১৯৯৪ বিশ্বকাপ

সম্পাদনা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ১৯৯৪ ফিফা বিশ্বকাপে মারাদোনা মাত্র দুটি খেলায় (উভয়ই বস্টনের ফক্সবোরো স্টেডিয়ামে) অংশগ্রহণ করেছিলেন। এফিড্রিন ডোপিংয়ের জন্য মাদক পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পর তাকে দেশে পাঠানোর পূর্বে তিনি গ্রিসের বিরুদ্ধে ম্যাচে একটি গোল করেছিলেন।[১১২] গ্রিসের বিপক্ষে গোল করার পর মারাদোনা বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা গোল উদ্‌যাপন করেছেন, যেখানে তিনি পার্শ্বরেখার পাশে ক্যামেরার দিকে দৌড়ে গিয়ে বিকৃত মুখ এবং চোখ দিয়ে চিৎকার করেছিলেন।[১১৩] আর্জেন্টিনার হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এটিই মারাদোনা শেষ গোল ছিল।[১১৩] বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ২–১ গোলে জয়লাভের ম্যাচটি আর্জেন্টিনার হয়ে তার শেষ ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল, তিনি ফ্রি কিক থেকে বল এগিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে দলের উভয় গোলের নেপথ্যে ছিলেন।

তার আত্মজীবনীতে, মারাদোনা যুক্তি দেখান যে তার ব্যক্তিগত প্রশিক্ষকের দেওয়া পাওয়ার ড্রিংক রিপ ফুয়েল পান করার কারণে ডোপিং পরীক্ষার তার ফলাফল নেতিবাচক এসেছিল। তার দাবি ছিল যে উক্ত পানীয়-এর মার্কিন সংস্করণ আর্জেন্টিনার মতো ছিল না, যাতে এফিড্রিন নামক রাসায়নিক দ্রব্যটি ছিল। তার আর্জেন্টিনীয় পানীয় শেষ হয়ে যাওয়ার পর, তার প্রশিক্ষক অজ্ঞাতসারে তার জন্য মার্কিন সংস্করণটি নিয়ে এসেছিল। এর জন্যই ফিফা তাকে ১৯৯৪ ফিফা বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার করে এবং তার অনুপস্থিতিতে আর্জেন্টিনা রোমানিয়ার কাছে ৩–২ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। মারাদোনা এছাড়াও পৃথকভাবে দাবি করেছিলেন যে ফিফার সাথে তার একটি চুক্তি ছিল, যেন তিনি প্রতিযোগিতার আগে ওজন কমানোর জন্য ঔষধ ব্যবহার করতে সক্ষম হন; যা তারা অমান্য করেছিল। ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপে তার ব্যর্থ মাদক পরীক্ষাই মূল তার আন্তর্জাতিক কর্মজীবনের সমাপ্তির প্রথম ইঙ্গিত ছিল। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার খেলোয়াড়ি জীবন ১৭ বছর স্থায়ী হয়েছিল, যেখানে তিনি ৯১ ম্যাচে ৩৪টি গোল করেছিলেন। এছাড়াও তিনি ১টি বিশ্বকাপ এবং ১ বার বিশ্বকাপের রৌপ্য পদক জয়লাভ করেছিলেন।[১১৪]

খেলার ধরন

সম্পাদনা

"দিয়েগো এমন কিছু করতে সক্ষম ছিলেন, যার সমকক্ষ কেউ নেই। আমি ফুটবল নিয়ে যা করতে পারি, সে তা শুধুমাত্র কমলা দিয়ে করতে পারে।"

মিশেল প্লাতিনি, সাবেক ফরাসি মধ্যমাঠের খেলোয়াড়[১১৫]

 
১৯৮৬ সালে গোলরক্ষককে পরাস্ত করে বল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন মারাদোনা

গণমাধ্যমে "চিরায়ত নম্বর ১০" পরিচিত মারাদোনা একজন চিরায়ত সৃজনশীল খেলোয়াড় ছিলেন,[১১৬] যিনি সাধারণত আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের পেছনে একজন আক্রমণাত্মক মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হিসেবে অথবা দ্বিতীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও তিনি ৪–৪–২ বিন্যাসে একজন আক্রমণাত্মক ধাঁচের কেন্দ্রীয় মধ্যমাঠের খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে দেখা গিয়েছে।[১১৭][১১৮][১১৯][১২০] মারাদোনা তার ড্রিবলিং ক্ষমতা, দৃষ্টি, বলের নিয়ন্ত্রণ, পাস প্রদান করা এবং সৃজনশীলতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন এবং খেলার সবচেয়ে দক্ষ খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন হিসেবে বিবেচিত হন।[১০২][১২১][১২২] তার এক দৃঢ় শরীর ছিল এবং কম উচ্চতা সত্ত্বেও তার শক্তিশালী পা, দেহের নিম্নাংশে মাধ্যাকর্ষণ কেন্দ্রের অবস্থান এবং ভারসাম্য ফলে তিনি বল নিয়ে দৌড়ানোর সময় শারীরিক চাপ ভালোভাবে সহ্য করতে পারতেন।[১০৫][১২৩][১২৪] এছাড়াও তার ত্বরণ, পায়ের দ্রুত চলন, তৎপরতা, ড্রিবলিং দক্ষতা এবং গতির নিয়ন্ত্রণ তাকে দ্রুত দিক পরিবর্তন করতে এবং প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে ছিদ্র তৈরি করতে সহায়তা করতো।[১২৫][১২৬][১২৭][১২৮]

ফুটবল খেলার ইতিহাসে অন্যতম সেরা ড্রিবল হিসেবে মারাদোনাকে বিবেচনা করা হয়।[১০৫][১২৩][১২৯][১৩০] সাবেক ওলন্দাজ খেলোয়াড় ইয়োহান ক্রুইফ ড্রিবল করার ক্ষেত্রে শরীরের কাছাকাছি বলটি রাখার দিক থেকে মারাদোনা এবং লিওনেল মেসির মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ্য করেছিলেন।[১৩১] ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে বেলজিয়ামের বিরুদ্ধে তার গোল দুটি দ্বারা তার শারীরিক শক্তি ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে। যদিও তিনি বল নিয়ে একাই এগিয়ে যাওয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন,[১৩২] তিনি একজন কৌশলবিদ এবং বুদ্ধিমান দলগত খেলোয়াড় ছিলেন, অবস্থান সম্পর্কে সচেতনতার পাশাপাশি বল নিয়েও তিনি অত্যন্ত প্রায়োগিক ছিল। তিনি সীমিত স্থানে কার্যকরভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন, রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের আকর্ষণ করে নিজের দিকে এনে তাদের অতিক্রম করে এগিয়ে যেতেন (যেমনটি তিনি ১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গোলের ক্ষেত্রে করেছিলেন)[১৩৩][১৩৪][১৩৫][১৩৬] অথবা প্রতিপক্ষ দলের রক্ষণভাগের জাল হতে মুক্ত একজন খেলোয়াড়কে অ্যাসিস্ট করতেন। কম উচ্চতাবিশিষ্ট তবে শক্তিশালী হওয়ার ফলে তিনি রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের পেছনে ফেলে সতীর্থদের পাস প্রদান করতে পারতেন অথবা দ্রুত শট নেওয়ার জন্য ফাঁকা স্থান খুঁজে পেতে পারতেন। তিনি মাঠে নেতৃত্বের গুণাবলী প্রদর্শন করেছিলেন; ১৯৮৬, ১৯৯০ এবং ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ অভিযানে আর্জেন্টিনার অধিনায়কত্ব করেছিলেন।[১৩৭][১৩৮] মারাদোনা প্রাথমিকভাবে একজন সৃজনশীল খেলোয়াড় ছিলেন, তবে তিনি তার গোল করার ক্ষমতার জন্য সুপরিচিত ছিলেন।[১০২][১৩৯] এসি মিলানের সাবেক ম্যানেজার আররিগো সাচ্চি ২০১০ সালে ইল কোরিয়েরে দেয়ো স্পোর্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রক্ষণভাগে মারাদোনার খেলার প্রশংসা করেছিলেন।[১৪০]

দলের অধিনায়ক মাঠে এবং মাঠের বাইরে খেলোয়াড়দের পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে তিনি কথা বলতেন; একজন খেলোয়াড় হিসেবে মারাদোনার ক্ষমতা এবং তার শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব তার দলের উপর একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল, যা সম্পর্কে ১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপে তার সতীর্থ হোর্হে ভালদানো বলেছেন:

মারাদোনা একজন প্রযুক্তিগত অধিনায়ক ছিলেন: তিনি এমন একজন ব্যক্তি, যিনি মাঠে আগত সকল সমস্যার সমাধান করেছিলেন। প্রথমত, তিনি অলৌকিক ঘটনা ঘটানোর দায়িত্বে ছিলেন, এটা এমন কিছু যা তার সতীর্থদের অনেক আত্মবিশ্বাস জোগাতো। দ্বিতীয়ত, তার সুনামের পরিধি এত ছিল যে তিনি তার সতীর্থদের সকল চাপ শুষে নিতেন। আমি বলতে চাচ্ছি: একটি খেলার আগের রাতে একজন ভালোভাবে ঘুমিয়েছিল, এজন্য নয় যে তিনি জানতেন যে তিনি দিয়েগোর পাশে খেলেছেন এবং দিয়েগো এমন কিছু করতে পারবেন যা বিশ্বের অন্য কোন খেলোয়াড় করতে পারবে না, বরং এজন্য যে আমরা জানতাম যে যদি আমরা হেরে যাই তবে আমাদের চেয়ে মারাদোনাকে আরো বেশি বোঝা কাঁধে তুলে নিতে হবে। দলের উপর তার এই ধরনের প্রভাব ছিল।[১৪১]

মারাদোনার অসাধারণ প্রতিভা প্রশংসা করে আর্জেন্টিনার আরেক সতীর্থ, প্রখ্যাত আক্রমণভাগের খেলোয়াড় গাব্রিয়েল বাতিস্তুতা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "দিয়েগো একাই একটি স্টেডিয়ামে খেলা পরিচালনা করতে পারে, যেখান সবার নজর তার দিকেই থাকবে। আমি তার সাথে খেলেছি এবং আমি আপনাকে বলতে পারি প্রযুক্তিগত দিক থেকে সে দলের জন্য একজন নির্ণায়ক ছিল"।[১৪২] নাপোলির সাবেক সভাপতি কোররাদো ফেরলাইনো ২০০৮ সালে ক্লাবের সাথে থাকাকালীন সময়ে মারাদোনার নেতৃত্বের গুণাবলী বিষয়ে মন্তব্য করেছিলেন, যেখানে তিনি তাকে "পিচের একজন কোচ" আখ্যায়িত করেছিলেন।[১৪৩]

"আমি ১০ লক্ষ বছর যাবত খেললেও আমি কখনোই মারাদোনার কাছাকাছি আসতে পারতাম না। এমনটি নয় যে আমি চাই না। সে সর্বকালের সেরা।"

লিওনেল মেসি, "নতুন মারাদোনা" খেতাবের সাথে সম্পর্কযুক্ত ফুটবলার[৮২]

মারাদোনার একটি ট্রেডমার্ক চলন ছিল ডান দিকে ড্রিবল করে প্রতিপক্ষের গোল লাইনে পৌঁছানো এবং তার সতীর্থদের উদ্দেশ্যে সঠিক পাস প্রদান করা। আরেকটি ট্রেডমার্ক ছিল রাবোনা নামক পায়ের পিছনে একটি রিভার্স ক্রস পাস শট।[১৪৪] এই কৌশল বেশ কিছু অ্যাসিস্ট তৈরি করে, উদাহরণস্বরূপ ১৯৮০ সালে সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে রামোন দিয়াসের হেডারের ক্রস।[১৪৫] এছাড়াও তিনি একজন অসাধারণ ফ্রি কিক এবং পেনাল্টি কিক গ্রহণকারী ছিলেন, যিনি কর্নার এবং সেট পিস থেকে বল বাঁকানোর ক্ষমতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন।.[১৪৬][১৪৭][১৪৮] মারাদোনাকে সর্বকালের অন্যতম সেরা ডেড-বল বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[১৪৯][১৫০][১৫১][১৫২] তার ফ্রি কিক নেওয়ার কৌশল (যা তাকে প্রায়ই হাঁটু উচু করে বলে আঘাত করে প্রত্যক্ষ ফ্রি-ফিকের ক্ষেত্রে মানব দেওয়ালের উপর দিয়ে বল জালে জড়াতে সাহায্য করেছিল) কম দূরত্বের ফ্রি-কিক (১৭ হতে ২২ গজ অথবা ১৬ হতে ২০ মিটার দূরত্ব) অথবা পেনাল্টি অঞ্চলের কাছাকাছি স্থান থেকে তাকে গোল করতে সাহায্য করেছিল।[১৫৩] তার ফ্রি কিক নেওয়ার কৌশল জিয়ানফ্রাঙ্কো জোলা,[১৫১] আন্দ্রেয়া পিরলো[১৫৪] এবং লিওনেল মেসিসহ বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়কে প্রভাবিত করেছে।[১৫৫]

 
দ্য সিস্টাইন চ্যাপেল অফ ফুটবল চিত্রকর্মে মারাদোনা (ডানে) এবং লিওনেল মেসি (বামে)

মারাদোনা তার চতুর ব্যক্তিত্বের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।[১৫৬] কিছু সমালোচক ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে তার বিতর্কিত "ঈশ্বরের হাত" গোলকে এক চতুর কৌশল হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন, এমনকি বিরোধী দলের অন্যতম খেলোয়াড় গ্লেন হডল স্বীকার করেছিলেন যে উক্ত গোলের ক্ষেত্রে মারাদোনা বলটি তার হাত লাগার বিষয়টি একই সময়ে মাথা নাড়িয়ে গোপন করেছিলেন।[১৫৭] এই গোলটিকে বুয়েনোস আইরেসের শহরের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয় (যেখানে মারাদোনা তার শৈশব অতিবাহিত করেছিলেন) এবং এর বিষয়বস্তু হচ্ছে "বিবেসা ক্রিওয়ো"–"ক্রিওয়োসের চতুরতা"।[১৫৮] প্রথম গোলের বৈধতা নিয়ে সমালোচনা করলেও ইংল্যান্ডের আক্রমণভাগের খেলোয়াড় গ্যারি লিনেকার স্বীকার করেছিলেন, "যখন দিয়েগো আমাদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গোলটি করেন, তখন আমি মন থেকে হাততালি অনুভব করি। আমি আগে কখনো এরকম অনুভব করিনি, কিন্তু এটা সত্য... এবং শুধু এই কারণে নয় যে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ খেলা ছিল। এত সুন্দর গোল করা অসম্ভব ছিল। তিনি সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়। একটা সত্যিকারের বিস্ময়।[১১৫] ১৯৯০ বিশ্বকাপে মারাদোনা পুনরায় হাত ব্যবহার করেছিল, এবার সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে গোল ঠেকাতে তিনি হাত ব্যবহার করেছিলেন। পূর্ববর্তী ঘটনার মতো এবারো তিনি হাত দ্বারা বল স্পর্শ করার ফলে কোন শাস্তির সম্মুখীন হননি।[১৫৯] বেশ কিছু প্রকাশনা মারাদোনাকে চার্লস ডিকেন্সের অলিভার টুইস্ট-এর পকেটমার আর্টফুল ডোজার হিসেবে উল্লেখ করেছে।[১৬০][১৬১][১৬২][১৬৩]

ম্যারাডোনা প্রধানত একজন বাম পায়ের খেলোয়াড় ছিলেন, প্রায়ই তিনি তার বাম পা ব্যবহার করতেন এমনকি যখন বলটি ডান পায়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা অধিকতর সহজ ছিল তখনও।[১৬৪] ১৯৮৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বেলজিয়ামের বিপক্ষে তার প্রথম গোলটি এর এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ; তিনি একটি পাস পেতে মাঠের ডান দিক দিয়ে দৌড়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি বলটিকে তার ডান পা অতিক্রম করে বাম পায়ে আশা পর্যন্ত স্পর্শ করেননি। "শতাব্দীর সেরা গোল"-এর পূর্বে ইংল্যান্ডের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের অতিক্রম করার জন্য দৌড়ের সময় তিনি মাঠের ডান পাশে প্রায় পুরো সময় ব্যয় করা সত্ত্বেও একবারও তার ডান পা ব্যবহার করেননি। ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বের খেলায় তিনি তার ডান পা ব্যবহার করে কাউদিও কানিজ্ঞিয়ার উদ্দেশ্যে জয়সূচক গোলটি তৈরি করেছিলেন, কেননা ব্রাজিলীয় রক্ষণভাগের দুইজন খেলোয়াড় তাকে এমন একটি অবস্থানে নিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল, যেখানে তার বাম পা ব্যবহার করা প্রায় অসম্ভব ছিল।[১৬৫]

অবসর ও শ্রদ্ধাঞ্জলি

সম্পাদনা
 
ফুটবল ক্লাব জাদুঘরে বিদ্যমান মারাদনার বার্সেলোনা জার্সি

বছরের পর বছর ধরে গণমাধ্যমের সমালোচনার শিকার মারাদোনা একবার সাংবাদিকদের দিকে একটি সংকুচিত এয়ার রাইফেল নির্দেশ করে, যাকে তিনি দাবি করেছিলেন যে তারা তার গোপনীয়তা ভঙ্গ করেছে। প্রাক্তন সতীর্থ হোর্হে ভালদানোর একটি উক্তিতে বহুজনের অনুভূতির সারসংক্ষেপ রয়েছে:

তিনি এমন একজন ব্যক্তি যাকে অনেকে অনুকরণ করতে চায়, তিনি একজন বিতর্কিত, জনপ্রিয়, ঘৃণিত ব্যক্তিত্ব, যিনি গণমাধ্যমে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন, বিশেষ করে আর্জেন্টিনায়... তার ব্যক্তিগত জীবনের উপর জোর দেওয়া একটা ভুল। মারাদোনা সমকক্ষ ব্যক্তি মাঠের মধ্যে নেই, তবে তিনি তার জীবনকে একটি প্রদর্শনীতে পরিণত করেছেন এবং বর্তমানে তিনি ব্যক্তিগত জীবনে এক অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, যা অনুকরণ করা উচিত নয়।[১৬৬]

১৯৯০ সালে আর্জেন্টিনার কোনেক্স ফাউন্ডেশন তাকে গত এক দশকে আর্জেন্টিনার ক্রীড়াক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সাংস্কৃতিক পুরস্কার ডায়মন্ড কোনেক্স পুরস্কার প্রদান করে। ১৯৮৬ সালের এপ্রিল মাসে, মারাদোনা দাতব্য সংস্থার জন্য সান্তোস লাসিয়ারের সাথে একটি তিন পর্বের প্রীতি বক্সিং ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[১৬৭] ২০০০ সালে মারাদোনা তার আত্মজীবনী ইয়ো সো এল দিয়েগো ("আমি দিয়েগো") প্রকাশ করেন, যা আর্জেন্টিনার সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ে পরিণত হয়েছিল।[১৬৮] দুই বছর পর মারাদোনা তার বই "কিউবার জনগণ এবং ফিদেল" হতে আগত অর্থ কিউবীয় রাজ্যে দান করেছিলেন।[১৬৯]

২০০০ সালে তিনি ফিফা শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয়লাভ করেছিলেন, যা ফিফার প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সাময়িকী এবং একটি বিচারকের ভোটের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছিল। মারাদোনা ইন্টারনেট ভিত্তিক এক জরিপেও জয়লাভ করেছিলেন, যেখানে পেলের ১৮.৫৩%-এর বিপরীতে তিনি ৫৩.৬% ভোট পেয়েছিলেন।[১৭০] তা সত্ত্বেও অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ পূর্বে ফিফা একটি দ্বিতীয় পুরস্কার যোগ করেছিল এবং ফুটবল সাংবাদিকদের নিয়ে গঠিত একটি "ফুটবল পরিবার" কমিটি নিযুক্ত করেছিল, যারা পেলেকেও শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব প্রদান করেছিল। আইএফএফএইচএস (ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ফুটবল হিস্টোরি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্স) ভোটেও পঞ্চম হয়েছেন মারাদোনা।[১৭১] ২০০১ সালে আর্জেন্টিনীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) মারাদোনার জন্য ১০ নম্বর জার্সি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ফিফার কাছে অনুমতি চেয়েছিল। ফিফা এই অনুরোধ মঞ্জুর করেনি, যদিও আর্জেন্টিনার কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে ফিফা প্রথমে ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তারা তা করবে।[১৭২]

মারাদোনা বেশ কয়েকটি ভক্তদের জরিপে শীর্ষ স্থান অর্জন করেছিলেন, যার মধ্যে ২০০২ সালের ফিফার একটি জরিপ রয়েছে, যেখানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার দ্বিতীয় গোলটি বিশ্বকাপে সর্বকালের সেরা গোল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল; এছাড়াও তিনি সর্বকালের চূড়ান্ত বিশ্বকাপ দল নির্ধারণের জন্য আয়োজিত একটি জরিপে সর্বাধিক ভোট পেয়েছিলেন। ২০১০ সালের ২২শে মার্চ তারিখে লন্ডন ভিত্তিক সংবাদপত্র দ্য টাইমস কর্তৃক 'বিশ্বকাপে সর্বকালের সেরা ১০ খেলোয়াড়' হিসেবে মারাদোনাকে এক নম্বর নির্বাচিত করা হয়েছিল।[১৭৩] ২০০৩ সালের ২৬শে ডিসেম্বর তারিখে আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্স মারাদোনার নামানুসারে তাদের স্টেডিয়ামের নামকরণ করেছে। ২০০৩ সালে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির তৃতীয় পুত্র লিবীয় ফুটবলার আল-সাদি গাদ্দাফি মারাদোনাকে দলের প্রযুক্তিগড় তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়গ দিয়েছিলেন; উক্ত সময় আল-সাদি ইতালীয় ক্লাব পেরুজিয়ার হয়ে খেলছিলেন।[১৭৪]

 
২০০৮ সালে ভারতের কলকাতায় শহরের পূর্ব শহরতলীতে একটি ফুটবল একাডেমির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার সময় মারাদোনা, যেখানে তাকে দেখতে প্রায় ১,০০,০০০-এর অধিক মানুষ উপস্থিত হয়েছিল[১৭৫]

২০০৫ সালের ২২শে জুন তারিখে এক ঘোষণায় জানানো হয়েছিল যে, মারাদোনা তার সাবেক ক্লাব বোকা জুনিয়র্সে ফিরে আসবেন, যেখানে তিনি প্রথম বিভাগের অংশগ্রহণকারী দলের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ক্রীড়া সহ-সভাপতি হিসেবে (২০০৪–০৫ মৌসুমে হতাশাজনক ফলাফলের পর, যা বোকা জুনিয়র্সের শতবর্ষের সাথে মিলে যায়) নিযুক্ত হয়েছিলেন।[১৭৬] তার চুক্তি ২০০৫ সালে ১লা আগস্ট তারিখে শুরু হয়েছিল এবং দলে তার অন্তর্ভুক্তি প্রথমে খুবই কার্যকর প্রমাণিত হয়েছিল: যেখানে তিনি ক্লাবকে আলফিও বাসিলকে নতুন কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। মারাদোনা খেলোয়াড়দের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার সাথ পাশাপাশি বোকা জুনিয়র্সের হয়ে তিনি ২০০৫ সালে আপের্তুরা, ২০০৬ সালে ক্লাউসুরা, ২০০৫ সুদামেরিকানা কাপ এবং ২০০৫ রেকোপা সুদামেরিকানা শিরোপা জয়লাভ করেছিলেন।

২০০৫ সালের ১৫ই আগস্ট তারিখে মারাদোনা আর্জেন্টিনার টেলিভিশন অনুষ্ঠান লা নোচে দেল ১০ ("১০ নম্বরের রাত") নামক একটি টক শো-এর উপস্থাপক হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে টেলিভিশন জগতে অভিষেক করেছিলেন। উদ্বোধনী রাতে তার প্রধান অতিথি ছিলেন পেলে; উক্ত অনুষ্ঠানে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আড্ডা হয়েছিল, যেখানে অতীতে তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের ছাপ লক্ষ্য করা যায়নি। তবে, অনুষ্ঠানে খলনায়ক হিসেবে পেলের সাথে শারীরিক সাদৃশ্যপূর্ণ একটি কার্টুন অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই অনুষ্ঠানে আগত অতিথিদের মধ্যে অধিকাংশ ছিলেন ফুটবল বিশ্ব এবং ব্যবসায় মাধ্যম হতে; যার মধ্যে রোনালদো এবং জিনেদিন জিদান অন্যতম ছিলেন। এছাড়াও এই অনুষ্ঠানে কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রো এবং মুষ্টিযোদ্ধা রবের্তো দুরান এবং মাইক টাইসনের মত ব্যক্তিত্বদের সাক্ষাৎকার অন্তর্ভুক্ত ছিল।[১৭৭] মারাদোনা তার প্রত্যেক অতিথিকে একটি আর্জেন্টিনার স্বাক্ষরিত জার্সি উপহার দিতেন, যেটি টাইসন পরিধান করেছিলেন যখন তিনি আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলে পদার্পণ করেছিলেন।[১৭৮] তবে ২০০৫ সালের নভেম্বর মাসে মারাদোনা আর্জেন্টিনার জাতীয় ফুটবল দলের সাথে কাজ করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।[১৭৯]

২০০৬ সালের মে মাসে ম্যারাডোনা যুক্তরাজ্যের সকারএইডে (যা ইউনিসেফের জন্য অর্থ সংগ্রহের একটি কার্যক্রম) অংশগ্রহণ করতে সম্মত হয়েছিলেন।[১৮০] ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ম্যারাডোনা তার বিখ্যাত নীল-সাদা নম্বর ১০ পরিধান করে স্পেনে অনুষ্ঠিত ইন্ডোর ফুটবল প্রতিযোগিতায় আর্জেন্টিনার অধিনায়ক ছিলেন। ২০০৬ সালের ২৬শে আগস্ট তারিখে, আর্জেন্টিনীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাথে মতবিরোধের কারণে ম্যারাডোনা বোকা জুনিয়র্সে তার অবস্থান হতে পদত্যাগ করেছিলেন; এএফএ আলফিও বাসিলকে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের নতুন কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল।[১৮১] ২০০৮ সালে সার্বীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা এমির কুস্তুরিকা মারাদোনা নামে মারাদোনার জীবন নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছিলেন।[১৮২]

২০১৪ সালের ১লা সেপ্টেম্বর তারিখে বেশ কয়েকজন বর্তমান এবং সাবেক ফুটবল তারকাদের রোমের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত "শান্তির জন্য খেলা" অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[১৮৩] উক্ত ম্যাচের প্রথমার্ধে ম্যারাডোনা তার বাম পায়ের বাইরের পাশ দিয়ে প্রতিপক্ষ দলের রক্ষণভাগ অতিক্রম করে রবের্তো বাজ্ঞিওর গোলে অ্যাসিট করেছিলেন।[১৮৪] অস্বাভাবিকভাবে, একই দলে খেলা সত্ত্বেও রাজ্ঞিও এবং ম্যারাডোনা উভয়েই ১০ নম্বর জার্সি পরিধান করেছিলেন।[১৮৪] ২০১৫ সালের ১৭ই আগস্ট তারিখে ম্যারাডোনা ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের (যে ম্যাচে মারাদোনা "ঈশ্বরের হাত" গোলটি করেছিলেন) রেফারির দায়িত্ব পালনকারী আলি বিন নাসিরের সাথে দেখা করে তাকে আর্জেন্টিনার একটি স্বাক্ষরিত জার্সি দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন।[১৮৫][১৮৬]

অভ্যর্থনা

সম্পাদনা

পেলে [মারাদোনা থেকে] অধিক গোল করেছেন। লিওনেল মেসি [মারাদোনা থেকে] অধিক শিরোপা জয়লাভ করেছেন। উভয়ই এই অধিক ওজনধারী কোকেইনে আসক্ত ব্যক্তির চেয়ে স্থিতিশীল জীবন যাপন করেছেন, যিনি এই তালিকার শীর্ষে রয়েছেন, যার ফুটবলের সাথে সম্পর্ক ক্রমশ টানটান হয়ে উঠেছে। যদি তুমি দিয়েগো মারাদোনাকে ফুটবল খেলতে দেখে থাকো, তবে তুমি তা বুঝতে পারবে।

— অ্যান্ড্রু মারে, ফোরফোরটু সাময়িকীর "সর্বকালের সেরা ১০০ ফুটবলার" তালিকায় মারাদোনার শীর্ষস্থান প্রসঙ্গে[১৮৭]

মারাদোনা ব্যাপকভাবে তার প্রজন্মের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত হন[১৩৪] এবং একই সাথে বেশ কয়েকজন ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ, খেলোয়াড় এবং ম্যানেজার তাকে ফুটবলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা করেন।[১৮][৮২][১৮৮] অন্যদিকে, কেউ কেউ তাকে ফুটবল খেলার ইতিহাসে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনে করেন।[১৮৭][১৮৯][১৯০][১৯১] তিনি ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম দক্ষ খেলোয়াড়,[১০২][১২১][১২২] অন্যতম সেরা ড্রিবলার[১০৫][১২৩][১২৯][১৩০] এবং অন্যতম সেরা ফ্রি কিক গ্রহণকারী হিসেবে সুপরিচিত।[১৪৯][১৫০][১৫১][১৫২] তিনি যুব পর্যায়ে খেলার সময়েই তাকে এক অসাধারণ প্রতিভা হিসেবে বিবেচনা করা হতো,[] তার খেলার ক্ষমতা ছাড়াও, মারাদোনা তার প্রাক্তন ম্যানেজার মেনোতির তার নিষ্ঠা, দৃঢ়সংকল্পে প্রশংসা করেছিলেন। তার জন্মগত প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও খেলার প্রযুক্তিগত দিক থেকে নিজেকে উন্নত করার ক্ষেত্রে তার কর্ম-নৈতিকতাও মেনোতির প্রশংসা প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এই সম্পর্কে তার ম্যানেজার বলেছিলেন, "আমি সবসময় 'প্রতিভাবান' শব্দটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকি। এমনকি মোৎসার্তের ক্ষেত্রেও এটা প্রয়োগ করা আমার পক্ষে কঠিন ছিল। দিয়েগোর খেলার সৌন্দর্যে এক বংশানুক্রমিক উপাদান রয়েছে – বলের সাথে তার স্বাভাবিক স্বাচ্ছন্দ্য – কিন্তু এখানে প্রতিনিয়ত অনেক কিছু শিখতে হয়: আসলে অনেক ব্রাশস্ট্রোক, 'প্রতিভাবান' স্ট্রোক, তার কঠোর পরিশ্রমের ফসল। দিয়েগো সেরা হতে কঠোর পরিশ্রমী"।[১৯২] মারাদোনার সাবেক নাপোলি ম্যানেজার অত্তাভিও বিয়ানচিও প্রশিক্ষণে তার শৃঙ্খলার প্রশংসা করেছিলেন। তিনি মন্তব্য করেছিলেন: "দিয়েগো তাদের চিত্রায়ন হতে সম্পূর্ণ আলাদা। যখন তুমি তার সন্ধান পেয়েছিলে তখন সে খুব ভালো ছেলে ছিল। তার খেলা দেখা এবং তাকে প্রশিক্ষণ করা খুব সুন্দর ছিল। তারা সবাই কথা বলে যে তিনি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতেন না, কিন্তু এটা সত্য ছিল না, কারণ দিয়েগোই শেষ ব্যক্তি থাকতেন যিনি মাঠ ছেড়ে চলে যেতেন, তাকে মাঠ দূরে পাঠানোর প্রয়োজন ছিল অন্যথায় তিনি নতুন ধরনের ফ্রি কিক আবিষ্কারের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা মাঠে সময় দিতেন।[১৯৩] যদিও বিয়ানচি উল্লেখ করেছিলেন, মারাদোনা প্রশিক্ষণ চলাকালীন বল নিয়ে "অকল্পনীয়" এবং "অবিশ্বাস্য কাজ" করার জন্য পরিচিত ছিলেন[১৯৪][১৯৫][১৯৬] এবং এমনকি কঠোর ব্যায়ামের মধ্যে দিয়ে যেতেও তিনি সমানভাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি বল ছাড়া প্রশিক্ষণে তার সীমিত কর্মহারের জন্যও পরিচিত ছিলেন এবং এমনকি নাপোলির সঙ্গে প্রশিক্ষণে অনুপস্থিত থাকার জন্য ইতালিতে তার কুখ্যাতি ছড়ানোর সময়ও তিনি প্রায়ই এককভাবে নিজেদের প্রশিক্ষণ চালিয়ে যেতেন।[১৯৪][১৯৭][১৯৮][১৯৯]

দিয়েগো মারাদোনা তার জীবন নিয়ে ২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দিয়েগো মারাদোনা নামক একটি প্রামাণ্যচিত্রে জানিয়েছেন যে তার সাপ্তাহিক সময়সূচি ছিল "রবিবারে একটি ম্যাচ খেলা, বুধবার পর্যন্ত বাইরে ঘুরে বেড়ানো, তারপর বৃহস্পতিবার শরীরচর্চা সময় ব্যয় করা"। তার অসঙ্গতিপূর্ণ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা সম্পর্কে চলচ্চিত্রটির পরিচালক আসিফ কাপাডিয়া ২০২০ সালে মন্তব্য করেছিলেন: "তার মেটাবলিজম ছিল। ম্যাচের কয়েকদিন পূর্বে তাকে খুব অবিশ্বাস্যভাবে মোটা দেখাতো, কিন্তু ম্যাচের দিন আসার সাথে সাথে সে পাগলের মতো ট্রেনিং করতো আর ঘাম ঝরাতো। তার শরীরের আকৃতি অন্য কয়েকজন ফুটবলারের মতো মনে হতো না, তবে খেলায় তার ক্ষমতা এবং ভারসাম্য ছিল। তার জীবনযাপন করার একটি পন্থা ছিল, আর তার সাথে কথা বলার পর জানতে পারলাম কীভাবে তার একটা সাধারণ সপ্তাহ কেটে যেত"। তিনি আরো জানিয়েছেন যে মারাদোনা সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন, যার জন্য ফের্নান্দো সিয়নোরিনি নামে তার একজন ব্যক্তিগত ফিটনেস কোচ ছিলেন, যিনি তাকে বিভিন্ন স্থানে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা দেখাশোনা সম্পর্কে বলেছিলেন: "যখন তিনি [মারাদোনা] একটি ফুটবল দলে ছিলেন,সেখানে তার নিজস্ব শাসনব্যবস্থা ছিল। কয়জন খেলোয়াড় এমনটা করবে? কয়জন খেলোয়াড় এভাবে ভাবতেও জানে? 'আমি অন্যদের থেকে আলাদা, তাই আমি যেখানে ভালো এবং যেখানে দুর্বল তা নিয়ে আমাকে প্রশিক্ষণ করতে হবে।' সিয়নোরিনি খুব বুদ্ধিমান এবং সে ভালো প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। তিনি আক্ষরিক অর্থে এমনটি বলতেন, 'এভাবেই আমি তোমাকে প্রশিক্ষণ দিতে যাচ্ছি, এই বইটা পড়ো।' তিনি নিজেকে মানসিকভাবে সাহায্য করতেন, দর্শন এবং এই ধরনের বিষয়ে কথা বলতেন"।[২০০][২০১] উপরন্তু, মারাদোনা তার দুর্বল খাদ্যতালিকা এবং চরম জীবনযাত্রার জন্য কুখ্যাত ছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে অবৈধ মাদক দ্রব্য এবং অ্যালকোহলের অপব্যবহার। একই সাথে তার ব্যক্তিগত বিষয়, বিপাকক্রিয়া, ওষুধ (যা তার জন্য নির্ধারণ করা হতো), আঘাত এবং নিষেধাজ্ঞার সময় শরীরচর্চায় নিষ্ক্রিয়তা, ব্যক্তিগত জীবনে শৃঙ্খলার অভাব এবং শারীরিক অবস্থা তার খেলোয়াড়ি জীবনের পরবর্তী বছরগুলোতে তার অভিনয় এবং দীর্ঘায়ুকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে বলে মনে করা হয়।[১৯২][২০২][২০৩]

ক্রীড়াঙ্গনের একজন বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে তিনি একদিকে তার খেলার শৈলী সম্পর্কে খেলোয়াড়, বিশেষজ্ঞ এবং ম্যানেজারদের কাছ থেকে প্রশংসা অর্জন করেছিলেন, অন্যদিকে তিনি তার মেজাজ এবং সংঘাতপূর্ণ আচরণের জন্য গণমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় তুলেছিলেন।[২০৪][২০৫][২০৬] তবে ২০০৫ সালে পাওলো মালদিনি মারাদোনাকে তার দেখা সেরা খেলোয়াড় হিসেবে উলেক্ষ করার পাশাপাশি সবচেয়ে সৎ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছিলেন: "তিনি মাঠে ভালো আচরণের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ ছিলেন – তিনি মহান খেলোয়াড় থেকে শুরু করে দলের সাধারণ সদস্য পর্যন্ত সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তাকে সবসময় এখানে সেখানে পরিবর্তন করা হতো তবে তিনি সে কখনো অভিযোগ করেনি (যা বর্তমান সময়ে আক্রমণভাগের খেলোয়াড়গণ করে থাকেন)"[২০৭] তার ক্লাব এবং আন্তর্জাতিক দলের সতীর্থ রক্ষণভাগের খেলোয়াড় বারেসি বলেছিলেন যে যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হতো তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী কে তিনি উত্তরে বলতেন, "মারাদোনা; যখন তিনি ফর্মে ছিলেন, তখন তাকে থামানোর কোন উপায় ছিল না"। অন্যদিকে ২০১৮ সালে, ইতালির প্রাক্তন রক্ষণভাগের খেলোয়াড় জুসেপ্পে বেরগোমি মারাদোনাকে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।[২০৮]

১৯৯৯ সালে ওয়ার্ল্ড সকার দ্বারা প্রকাশিত "বিংশ শতাব্দীর ১০০ সেরা খেলোয়াড়"-এর তালিকায় মারাদোনা দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছিলেন (যেখানে পেলে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন)।[২০৯] মারাদোনা ২০০০ সালে "ফিফা শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়" পুরস্কারের দুই যুগ্ম বিজয়ীদের একজন ছিলেন (অন্যজন ছিলেন পেলে)[১৭] এবং "আইএফএফএইচএস শতাব্দী নির্বাচন"-এ পঞ্চম স্থান অর্জন করেছিলেন।[১৭১] ২০১৪ সালের ফিফার এক জরিপে মারাদোনাকে সর্বকালের সেরা নম্বর ১০ খেলোয়াড় নির্বাচিত করা হয়েছিল (যেখানে তার পূর্বে শুধুমাত্র পেলে ছিলেন)[২১০] এবং একই বছরের শেষের দিকে, ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের ১০০ জন সেরা খেলোয়াড়ের তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন।[২১১] ২০১৭ সালে ফোরফোরটু দ্বারা প্রকাশিত "১০০ জন সেরা খেলোয়াড়"-এর তালিকায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন[১৮৭] এবং ২০১৮ সালে তিনি "বিশ্বকাপের ইতিহাসের সেরা ফুটবল খেলোয়াড়"-এর তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন;[২১২] ২০২০ সালের মার্চ মাসে ৯০মিন.কম-এর জ্যাক গ্যালাহার দ্বারা প্রকাশিত "সর্বকালের সেরা ৫০ খেলোয়াড়" তালিকায় তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।[২১৩] ২০২০ সালের মে মাসে স্কাই স্পোর্টস তাকে সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল, যিনি কখনো চ্যাম্পিয়নস লিগ লিগ বা ইউরোপীয় কাপ জয়লাভ করতে পারেননি।.[২১৪]

ম্যানেজার

সম্পাদনা
 
২০১১ সালে আল ওয়াসলের ম্যানেজার হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর দুবাইয়ে মারাদোনা

মারাদোনা তার সাবেক ক্লাব আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের সতীর্থ মধ্যমাঠের খেলোয়াড় কার্লোস ফ্রেনের সাথে কাজ করার মাধ্যমে ফুটবল জগতে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করা শুরু করেছিলেন। এই জুটি সামান্য সফলতার সাথে ১৯৯৪ সালে তেক্সতিল মান্দিয়ু এবং ১৯৯৫ সালে রেসিং ক্লাবের দায়িত্ব পালন করেছিল। ২০১১ সালের মে মাসে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ভিত্তিক ক্লাব আল-ওয়াসলের ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। অতঃপর ২০১২ সালের ১০ই জুলাই তারিখে, ক্লাবটি মারাদোনাকে বরখাস্ত করে দিয়েছিল।[২১৫][২১৬] ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে মারাদোনা আর্জেন্টিনীয় ক্লাব দেপোর্তিবো রিয়েস্ত্রা সহকারী ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেছিলেন। শীর্ষ স্তরের লিগে ক্লাবে উন্নতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে মৌসুম শেষে দল ছেড়ে চলে যাওয়ার পূর্বে মারাদোনা ২০১৭ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বিতীয় স্তরের লিগ ফুজাইরাহের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।[১২] ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি মেক্সিকোর দ্বিতীয় স্তরের ক্লাব দোরাদোস সিনালোয়ায় ম্যানেজার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।[১৩] ২০১৮ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর তারিখে কাফেতালেরোস তাপাচুলার বিরুদ্ধে ৪–১ গোলের ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে তিনি দোরাদোস সিনালোয়ার হয়ে ম্যানেজার হিসেবে অভিষেক করেছিলেন।[২১৭] ২০১৯ সালের ১৩ই জুন তারিখে দোরাদোস সিনালোয়া মেক্সিকোর শীর্ষ স্তরের লিগে উন্নীত হতে ব্যর্থ হওয়ার পর মারাদোনার আইনজীবী ঘোষণা করেন যে তিনি তার এই ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়াবেন।[২১৮]

২০১৯ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর তারিখে, এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে লা প্লাতা মারাদোনাকে তাদের নতুন প্রধান কোচ হিসেবে উন্মোচন করেছিল, যেখানে তিনি মৌসুম শেষ হওয়া পর্যন্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন।[১৬] দুই মাস দায়িত্বে থাকার পর ১৯শে নভেম্বর তারিখে তিনি ক্লাব ত্যাগ করেছিলেন।[২১৯] তবে দুই দিন পর মারাদোনা পুনরায় ম্যানেজার হিসেবে ক্লাবে যোগদান করে বলেছিলেন, "অবশেষে আমরা ক্লাবে রাজনৈতিক ঐক্য অর্জন করেছি"।[২২০] মারাদোনা জোর দিয়ে বলেছিলেন যে যদি তিনি ক্লাবের সাথে সংযুক্ত থাকেন তবে গাব্রিয়েল পেলেগ্রিনো ক্লাবের সভাপতি পদে থাকবেন।[২২১][২২২] তবে এটা তখনো পরিষ্কার ছিল না যে পেলেগ্রিনো (যিনি পুনর্নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন)[২২১][২২২] ক্লাবের সভাপতি হিসেবে থাকবেন কিনা।[২২১][২২২] মূলত ২০১৯ সালের ২৩শে নভেম্বর তারিখে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল,[২২১] তা ১৫ দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।[২২২] ২০১৯ সালের ১৫ই ডিসেম্বর তারিখে মারাদোনা দ্বারা পুনর্নির্বাচনে উৎসাহিত করা পেলেগ্রিনো তিন বছরের মেয়াদে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।[২২৩] ২০১৯–২০ মৌসুমে খারাপ ফলাফল থাকা সত্ত্বেও, ২০২০ সালের ৩রা জুন তারিখে তিনি লা প্লাতার সাথে ২০২০–২১ মৌসুমের জন্য চুক্তি নবায়ন করেছিলেন।[২২৪]

আন্তর্জাতিক

সম্পাদনা

২০০৮ সালে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ আলফিও বাসিলের পদত্যাগের পর মারাদোনাকে অবিলম্বে শূন্য পদটিতে যোগদান করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের সূত্র মতে, উক্ত পদে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে ছিলেন দিয়েগো সিমিওনে, কার্লোস বিয়াঞ্চি, মিগুয়েল আনহেল রুসসো এবং সের্হিও বাতিস্তা। অতঃপর ২০০৮ সালের ২৯শে অক্টোবর তারিখে আর্জেন্টিনীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জুলিও গ্রোন্দোনা নিশ্চিত করেছিলেন যে মারাদোনা জাতীয় দলের পরবর্তী প্রধান কোচ হবেন। ২০০৮ সালের ১৯শে নভেম্বর তারিখে মারাদোনা প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনার হয়ে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন; স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর হ্যাম্পডেন পার্কে অনুষ্ঠিত স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে উক্ত ম্যাচে আর্জেন্টিনা ১–০ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল।[২২৫]

 
২০০৯ সালে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ হিসেবে মারাদোনা

জাতীয় দলের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম তিন ম্যাচ জয়লাভ করার পর তিনি বলিভিয়ার কাছে ৬–১ গোলে গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন, যা দলের সর্বকালের বৃহত্তম পরাজয়ের সমান। ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের দুই ম্যাচ বাকি থাকা অবস্থায় আর্জেন্টিনা পঞ্চম স্থানে ছিল এবং ফিফা বিশ্বকাপে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনার সম্মুখীন হয়েছিল, কিন্তু শেষ দুই ম্যাচে জয়লাভ করে আর্জেন্টিনা ২০১০ ফিফা বিশ্বকাপে উত্তীর্ণ হয়েছিল।.[২২৬][২২৭] আর্জেন্টিনা উত্তীর্ণ হওয়ার পর মারাদোনা সরাসরি সংবাদ সম্মেলনে আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার করে প্রচার মাধ্যমের সদস্যদের বলেছিলেন, "এটা চুষ এবং চুষতে থাকো"।[২২৮] অতঃপর ফিফা মারাদোনাকে সকল ধরনের ফুটবল কর্মকাণ্ডের উপর দুই মাসের জন্য নিষিদ্ধ এবং ২৫,০০০ সুইস ফ্রাংক জরিমানা করা হয়েছিল।[২২৯] নিষেধাজ্ঞার সময় ১৫ই ডিসেম্বর তারিখে চেক প্রজাতন্ত্রের মাঠে অনুষ্ঠিত প্রীতি ম্যাচটি বাতিল করা হয়েছিল। মারাদোনার নিষেধাজ্ঞার সময় আর্জেন্টিনা শুধুমাত্র একটি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিল, যা ছিল কাতালোনিয়ার বিরুদ্ধে। উক্ত ম্যাচে আর্জেন্টিনা ৪–২ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল।

২০১০ সালের জুন মাসে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ১–০ গোলে জয়লাভ করে। পরবর্তী ম্যাচে গঞ্জালো ইগুয়াইনের হ্যাট্রিকের ফলে আর্জেন্টিনা দক্ষিণ কোরিয়াকে ৪–২ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করেছিল।[২৩০][২৩১] গ্রুপ পর্বের চূড়ান্ত খেলায় আর্জেন্টিনা গ্রিসের বিপক্ষে ২–০ গোলে জয়লাভ করে এবং দ্বিতীয় পর্বে মেক্সিকোর মুখোমুখি হয়েছিল।[২৩২] মেক্সিকোকে ৩–১ গোলে পরাজিত করার পর কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা জার্মানির কাছে ৪–০ গোলে পরাজিত হয়ে উক্ত আসর হতে বিদায় নিয়েছিল।[২৩৩] আর্জেন্টিনা উক্ত আসরে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিল। জার্মানির কাছে পরাজয়ের পর মারাদোনা স্বীকার করেছিলেন যে তিনি আর্জেন্টিনার কোচ হিসেবে তার ভবিষ্যৎ বিবেচনা করছেন। তিনি আরো বলেছিলেন, "আমি আগামীকাল চলে যেতে পারি"।[২৩৪] ২০১০ সালের ১৫ই জুলাই তারিখে আর্জেন্টিনীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছিল যে তাকে চার বছরের জন্য একটি নতুন চুক্তির প্রস্তাব দেয়া হবে, যার ফলে তিনি ২০১৪ সালের গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত আর্জেন্টিনার ম্যানেজারের দায়িত্ব নিয়োজিত থাকবেন।[২৩৫] তবে ২৭শে জুলাই তারিখে আর্জেন্টিনীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এক ঘোষণায় জানিয়েছিল যে তাদের বোর্ড সর্বসম্মতিক্রমে তার চুক্তি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।[২৩৬] অতঃপর ২৯শে জুলাই তারিখে মারাদোনা দাবি করেছিলেন যে আর্জেন্টিনীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জুলিও গ্রোন্দোনা এবং জাতীয় দলের পরিচালক (সেই সাথে তার প্রাক্তন আর্জেন্টিনা জাতীয় দল এবং সেভিয়ার কোচ) কার্লোস বিলার্দো তার সাথে "মিথ্যা বলেছেন" এবং "বিশ্বাসঘাতকতা" করে কার্যকরভাবে তাকে এই পদ থেকে বরখাস্ত করেছিলেন। তিনি আরো বলেছিলেন, "তারা চেয়েছিল আমি [ম্যানেজার হিসেবে কাজ] চালিয়ে যাই, কিন্তু আমার সাতজন কর্মচারী [কাজ] আমার সাথে কাজ করবে না, যদি তিনি আমাকে এটা বলেন, এর মানে তিনি চান না যে আমি কাজ চালিয়ে যাই"।[২৩৭]

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

পরিবার

সম্পাদনা

মারাদোনা র‍্যোমান ক্যাথলিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তার পিতামাতা ছিলেন দিয়েগো মারাদোনা সিনিয়র (যিনি একজন মার্কিন ছিলেন[২৩৮][২৩৯]) এবং দালমা সালবাদোরা ফ্রাঙ্কো (যিনি ক্রোয়েশীয় বংশোদ্ভূত ছিলেন[২৪০])। মারাদোনা ১৯৮৯ সালের ৭ই নভেম্বর তারিখে বুয়েনোস আইরেসে দীর্ঘদিনের বাগদত্তা ক্লাউদিয়া বিয়াফানিয়ের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।[২৪১] তাদের দুই কন্যা ছিল, দালমা নেরিয়া (জন্ম:২ এপ্রিল ১৯৮৭) এবং জিয়ানিন্না দিনোরাহ (জন্ম: ১৬ মে ১৯৮৯)। জিয়ানিন্না আর্জেন্টিনীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় সার্হিও আগুয়েরোর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। অতঃপর ২০০৯ সালে জিয়ানিন্না এবং আগুয়েরোর ঘরে সন্তান জন্মের পর তিনি নানা হয়েছিলেন।[২৪২] মারাদোনার ভাগ্নে এর্নান লোপেস একজন পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়, যিনি এক সময় আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের হয়ে খেলেছেন।[২৪৩]

২০০৪ সালে মারাদোনা এবং বিয়াফানিয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছিল। এরপর থেকে তার কন্যা দালমা দাবি করেছিলেন যে এই বিবাহ বিচ্ছেদ সবার জন্য সবচেয়ে ভালো সমাধান ছিল এবং তার বাবা-মা বিবাহ বিচ্ছেদের পরও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে রয়েছেন। ২০০৫ সালের জুন মাসে, তারা উভয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নাপোলিতে ভ্রমণ করেছিলেন এবং ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপের সময় আর্জেন্টিনার খেলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একসাথে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[২৪৪] বিবাহ বিচ্ছেদের পর, ক্লাউদিয়া একটি মঞ্চনাট্য প্রযোজক হিসেবে এবং দালমা একজন অভিনেত্রী তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন; তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসের অ্যাক্টর'স স্টুডিওতে কাজ করার ইচ্ছা ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।[২৪৫][২৪৬]

বিবাহ বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলাকালে মারাদোনা স্বীকার করেছিলেন যে তিনি দিয়েগো সিনাগ্রার পিতা (যিনি ১৯৮৬ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর তারিখে নাপোলিতে জন্মগ্রহণ করেছেন)। ইতালির আদালত ইতিমধ্যে ১৯৯৩ সালে এই সম্পর্কে রায় দিয়েছিল, কেননা মারাদোনা তার পিতৃত্ব প্রমাণ বা অস্বীকার করার জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। দিয়েগো জুনিয়র ২০০৩ সালের মে মাসে ইতালির একটি গলফ কোর্সে মারাদোনার সাথে প্রথম সাক্ষাৎ করেছিলেন।[২৪৭] অতঃপর ২০০৫ সালে সিনাগ্রা ফুটবল খেলায় অভিষেক করেছিলেন।[২৪৮] ২০১৪ সালে মারাদোনার বিরুদ্ধে তার বান্ধবী রোসিও ওলিবা তার উপর নির্যাতনের অভিযোগ এনেছিলেন, যা তিনি অস্বীকার করেছিলেন।[২৪৯][২৫০]

তার পরিবারের সাথে মারাদোনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং ১৯৯০ সালে স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেডের সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি তার ফোন বিল দেখিয়েছিলেন, যেখানে তিনি তার বাবা-মা এবং ভাইবোনদের ফোন করে প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ১৫,০০০ মার্কিন ডলার ব্যয় করেছিলেন।[২৫১] মারাদোনার মা দালমা ২০১১ সালের ১৯শে নভেম্বর তারিখে ৮১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তিনি তখন দুবাইয়ে অবস্থান করছিলেন এবং মরিয়া হয়ে তাকে দেখার জন্য সময়মতো আসার চেষ্টা করেছিলেন, তবে তিনি শেষ পর্যন্ত সময় মতো পৌঁছাতে পারেননি। তার পিতা, "ডন" দিয়েগো ২০১৫ সালের ২৫শে জুন তারিখে ৮৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।[২৫২]

মাদকাসক্তি

সম্পাদনা
 
রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপে মারাদোনা, যেখানে নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার বিজয়ের পর তার চিকিৎসা করা হয়েছিল[২৫৩]

১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মারাদোনা কোকেইনের প্রতি আসক্ত ছিলেন। অনেকে মনে করেন যে, তিনি ১৯৮৩ সালে বার্সেলোনায় মাদক দ্রব্য ব্যবহার শুরু করেছিলেন।[২৫৪] যখন তিনি নাপোলির হয়ে খেলছিলেন, তখন তিনি এর উপর পূর্ণরূপে আসক্ত হয়ে পরেছিলেন, যা তার ফুটবল খেলার দক্ষতায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে শুরু করেছিল।[২৫৫] ১৯৯১ সালে মাদক সমস্যা চলাকালীন সাংবাদিকরা মারাদোনাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে জনপ্রিয় গান মি এনফেরমেদাদ (আমার রোগ) তাকে উৎসর্গ করে তৈরি করা হয়েছিল কিনা।[২৫৬]

মারাদোনার প্রায় সবসময়ই তার ওজন কমানোর প্রবণতা ছিল এবং তিনি অতিস্থূলতায় ভুগছিলেন; এক পর্যায়ে তার ওজন ছিল ২৮০ পাউন্ড (১৩০ কেজি)। ২০০৫ সালের ৬ই মার্চ তারিখে, কলম্বিয়ার কারতাগেনা দে ইন্দিয়াসের একটি ক্লিনিকে গ্যাস্ট্রিক বাইপাস সার্জারি না হওয়া পর্যন্ত তিনি মোটা ছিলেন। তার শল্যচিকিৎসক বলেছিলেন যে মারাদোনাকে তার স্বাভাবিক ওজন ফিরে পেতে তিন মাসের জন্য তরল খাদ্যের এই সময়সূচি অনুসরণ করতে হবে।[২৫৭] এর কিছুদিন পরে যখন মারাদোনা আবার প্রকাশ্যে আসেন, তখন তিনি তুলনামূলকভাবে চিকন এবং স্বাস্থ্যবান ছিলেন।[২৫৮]

২০০৭ সালের ২৯শে মার্চ তারিখে মারাদোনাকে বুয়েনোস আইরেসের একটি হাসপাতালে পুনরায় ভর্তি করা হয়েছিল, সেখানে তিনি হেপাটাইটিস এবং অ্যালকোহলের অপব্যবহারের প্রভাবের জন্য তাকে চিকিৎসা করা হয়েছিল। চিকিৎসা শেষে ১১ই এপ্রিল তারিখে তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেছিলেন, কিন্তু দুই দিন পরে তাকে পুনরায় ভর্তি হতে হয়েছিল।[২৫৯] পরবর্তী দিনগুলোতে তার স্বাস্থ্য নিয়ে ক্রমাগত গুজব ছড়িয়ে পড়ে, যার মধ্যে এক মাসের মধ্যে তার মৃত্যুর তিনটি মিথ্যা দাবি অন্যতম।[২৬০] অ্যালকোহল সংক্রান্ত সমস্যার বিশেষজ্ঞ একটি সাইকিয়াট্রিক ক্লিনিকে স্থানান্তরের পর ৭ই মে তারিখে ছাড়া পেয়েছিলেন।[২৬১] ২০০৭ সালের ৮ই মে তারিখে মারাদোনা আর্জেন্টিনার টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন যে তিনি মদ্যপান ছেড়ে দিয়েছেন এবং আড়াই বছরে মাদক দ্রব্য গ্রহণ করেননি।[২৬২] ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপের সময় আর্জেন্টিনা ও নাইজেরিয়ার মধ্যে ম্যাচের সময় মারাদোনাকে টিভি ক্যামেরায় অত্যন্ত খারাপ আচরণ করতে দেখা গিয়েছিল, একই সাথে স্ট্যান্ডে তার সিটের সামনের কাঁচের উপর প্রচুর সাদা অবশিষ্টাংশ দেখা গিয়েছিল; ময়লাগুলো আঙ্গুলের ছাপ হতে পারে। পরবর্তীতে তিনি প্রচুর মদ খাওয়ার ফলে এমন আচরণ করেছিলেন বলে জানিয়েছিলেন।[২৬৩] ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে পেটে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হওয়ার পর মারাদোনার অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল।[২৬৪]

রাজনৈতিক মতাদর্শ

সম্পাদনা
 
২০০৭ সালে মারাদোনা আর্জেন্টিনার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি নেস্তর কির্চনেরকে একটি স্বাক্ষরিত জার্সি উপহার দিচ্ছেন মারাদোনা

মারাদোনা বামপন্থী মতাদর্শের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন।[২৬৫] তিনি স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করেছিলেন এবং ২০১৪ ইসরায়েল-গাজা দ্বন্দ্বের সময় গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছিলেন: "ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের সাথে যা করছে তা লজ্জাজনক।[২৬৬] তিনি দ্বীপে চিকিৎসা গ্রহণের সময় কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। মারাদোনা সম্পর্কে কাস্ত্রো বলেছিলেন, "দিয়েগো একজন ভালো বন্ধু, তিনি উন্নত চরিত্রের অধিকারী। তার একজন চমৎকার ক্রীড়াবিদ হওয়া বিষয়ে কোন প্রশ্ন নেই এবং কিউবার সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্কে তার নিজের কোন বস্তুগত লাভ নেই।[৮২] মারাদোনার বাঁ পায়ে কাস্ত্রোর উল্কি এবং ডান হাতে আর্জেন্টিনার চে গুয়েভারার ছবি আঁকা ছিল।[২৬৭] তার আত্মজীবনী এল দিয়েগো-টি তিনি কাস্ত্রোসহ বেশ কিছু মানুষের জন্য বইটি উৎসর্গ করেছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, "[এটি] ফিদেল কাস্ত্রো এবং তার মাধ্যমে কিউবার সকল জনগণের জন্য [উৎসর্গকৃত]"।[২৬৮]

 
২০১০ সালে আর্জেন্টিনার পূর্ববর্তী রাষ্ট্রপতি নেস্তর কির্চনেরের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ক্রিস্তিয়ান কির্চনের এবং ইবো মোরালেসের সাথে মারাদোনা

মারাদোনা বলিভিয়ার ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপতি ইভো মোরালেসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন[২৬৯] এবং ভেনেজুয়েলার সাবেক রাষ্ট্রপতি উগো চাবেসের সমর্থক ছিলেন। ২০০৫ সালে তিনি ভেনেজুয়েলায় উগো চাবেসের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন, যিনি তাকে মিরাফ্লোরেস প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সাক্ষাতের পর মারাদোনা বলেছিলেন যে তিনি একজন "মহান মানুষ"-এর (একজন বড় মানুষ) সাথে দেখা করতে এসেছিলেন, কিন্তু তার বদলে তিনি একজন বিশাল ব্যক্তির (দৈত্য) মানুষের সাথে দেখা করেছিলেন। তিনি আরো বলেছিলেন, "আমার উগো চাবেসের উপর বিশ্বাস রয়েছে , আমি একজন চাবিস্তা। ফিদেল যা করে, চাবেস যা করে, আমার জন্য এটাই সেরা"।[২৭০] ভেনেজুয়েলায় অনুষ্ঠিত ২০০৭ কোপা আমেরিকার উদ্বোধনী খেলায় মারাদোনা চাবেসের অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন।[২৭১]

২০০৪ সালে, তিনি ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[২৬৫] মারাদোনা তার বিরোধিতা ঘোষণা করেছিলেন, যা তিনি সাম্রাজ্যবাদ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন, বিশেষ করে ২০০৫ সালে আর্জেন্টিনার মার দেল প্লাতায় অনুষ্ঠিত মার দেল প্লাতা মার্কিন শীর্ষ সম্মেলনের সময়; সেখানে তিনি ইংরেজি "স্টপ বুশ" লেখা (যেখানে বুশের ইংরেজি বানানের এস অক্ষরটি স্বস্তিকা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছিল) টি-শার্ট পরিধান করে আর্জেন্টিনায় জর্জ ডব্লিউ. বুশের উপস্থিতির প্রতিবাদ এবং বুশকে "মানব আবর্জনা" বলে উল্লেখ করেছিলেন।[২৭২][২৭৩] ২০০৭ সালের আগস্ট মাসে মারাদোনা চাবেসের সাপ্তাহিক টেলিভিশন অনুষ্ঠান আলো প্রেসিদেন্তে-এ উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন, "আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগত সবকিছুকে ঘৃণা করি। আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে ঘৃণা করি"।[২৭৪] তবে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মারাদোনা আরো যুক্তরাষ্ট্রপন্থী মনোভাব গ্রহণ করেছিলেনন এবং বুশের উত্তরসূরি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলেন।[১৭৫]

""আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম, "এই লোকটা কে? কে এই ফুটবল জাদুকর, আন্তর্জাতিক ফুটবলের এই সেক্স পিস্তল, এই কোকেইনে আসক্ত ব্যক্তি, যিনি তার এই অভ্যাসটি নিয়ে বসবাস করছেন, তাকে ফ্যালস্টাফের মতো দেখাচ্ছিল এবং তিনি স্প্যাগেটির মত দুর্বল ছিলেন? যদি অ্যান্ডি ওয়ারহল বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি অবশ্যই ম্যারাডোনাকে মেরিলিন মনরো এবং মাও ৎসে-তুংয়ের পাশাপাশি রাখতেন। আমি নিশ্চিত যে যদি তিনি ফুটবলার না হতেন, তবে তিনি একজন বিপ্লবী হয়ে উঠতেন।"

এমির কুস্তুরিকা, চলচ্চিত্র পরিচালক[৮২]

 
পোপ ফ্রান্সিসকে প্রদান করা মারাদোনার স্বাক্ষরকৃত আর্জেন্টিনার জার্সি, যা বর্তমানে ভ্যাটিকান জাদুঘরে রয়েছে

ছোট দরিদ্র শহরে লালিত-পালিত মারাদোনা মানবদরদি ব্যক্তি হিসেবে বড় হয়েছিলেন।[২৭৫] ১৯৮৭ সালে ভ্যাটিকান সিটিতে পোপ দ্বিতীয় জন পলের সাথে এক বৈঠকে তারা সম্পদের বৈষম্য বিষয়ক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়েছিল। এ সম্পর্কে মারাদোনা বলেছিলেন, "আমি তার সাথে তর্ক করেছিলাম, কারণ আমি ভ্যাটিক্যানে ছিলাম এবং আমি এই সব সুবর্ণ ছাদ দেখেছি এবং পরে আমি পোপকে বলতে শুনেছি যে গির্জা দরিদ্র শিশুদের কল্যাণে নিয়োজিত। তোমাদের দালান বিক্রি করো, তারপর আমিগো, কিছু একটা করো!"[২৭৫] ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মারাদোনা রোমে পোপ ফ্রান্সিসের সাথে সাক্ষাৎ শেষ তিনি বলেছিলেন, "আমাদের সকলের পোপ ফ্রান্সিসকে অনুকরণ করা উচিত। আমরা প্রত্যেকেই যদি অন্য কাউকে কিছু দান করি, তাহলে পৃথিবীর কেউ অনাহারে থাকবে না"।[২৭৬]

২০০৭ সালের ডিসেম্বর মাসে মারাদোনা ইরানের জনগণের প্রতি সমর্থনের বার্তাসহ একটি স্বাক্ষরিত শার্ট উপহার দিয়েছিলেন: এটি বর্তমানে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাদুঘরে রয়েছে।[২৭৭] ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে মারাদোনা উগো চাবেসের সমাধি পরিদর্শন করেছিলেন এবং সমাজতান্ত্রিক নেতার উত্তরাধিকার অব্যাহত রেখে প্রয়াত নেতার মনোনীত উত্তরসূরি নিকোলাস মাদুরোকে নির্বাচিত করার জন্য ভেনেজুয়েলার জনগণকে আহবান জানিয়ে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন; "সংগ্রাম চালিয়ে যাও"।[২৭৮] মারাদোনা কারাকাসে মাদুরোর সর্বশেষ প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলেন, যেখানে তিনি ফুটবলে স্বাক্ষর করে আগত মানুষদের দেওয়ার পাশাপাশি মাদুরোকে আর্জেন্টিনার একটি জার্সি উপহার দিয়েছিলেন। মারাদোনার সাথে চাবেসের সমাধি পরিদর্শনের পর মাদুরো বলেছিলেন, "দিয়েগোর সাথে কথা বলা খুবই আবেগপ্রবণ ছিল, কারণ কমান্ডেন্ট চাবেসও তাকে খুব ভালবাসতেন।[২৭৮] ২০১৮ ভেনেজুয়েলীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় মারাদোনা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করে নৃত্য পরিবেশন করেছিলেন।[২৭৯][২৮০] ২০১৯ সালের ভেনেজুয়েলীয় রাষ্ট্রপতি সংকটের সময়, নিকোলাস মাদুরোকে তাদের নৈতিক আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সমর্থন করা এবং দলের বিজয় উৎসর্গ করার জন্য মেক্সিকীয় ফুটবল ফেডারেশন মারাদোনাকে জরিমানা করেছিল।[২৮১]

 
২০১৯ সালে আর্জেন্টিনার নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আলবের্তো ফের্নান্দেসের (ডানে) সাথে মারাদোনা

মারাদোনা ২০০০ সালে প্রকাশিত তার আত্মজীবনী ইয়ো সোয় এল দিয়েগো-এ ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে "ঈশ্বরের হাত" গোলকে ফকল্যান্ড যুদ্ধের সাথে সংযুক্ত করে বলেছিলেন: "যদিও খেলার পূর্বে আমরা বলেছিলাম যে মালভিনাস [ফকল্যান্ড] যুদ্ধের সাথে ফুটবলের কোন সম্পর্ক নেই, তবে আমরা জানতাম যে তারা সেখানে অনেক আর্জেন্টিনার ছেলেকে হত্যা করেছে। আর এটা ছিল প্রতিশোধ।[২৮২] ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে মারাদোনা একটি সংগঠনের প্রধান হিসেবে তরুণ শিশুদের সাহায্য করার লক্ষ্যে তাকে "সত্যিকারের ন্যায়বিচার" প্রদানের সুযোগ দেয়ার জন্য লন্ডনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং সংসদ ভবনকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।[২৮৩] তার ফেসবুক পাতায় প্রকাশিত একটি ভিডিওতে মারাদোনা নিশ্চিত করেছিলেন যে তিনি বেসরকারী সংস্থা ফুটবল ফর ইউনিটি-এর লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের পরিচালক হওয়ার জন্য তাদের মনোনয়ন গ্রহণ করবেন।[২৮৩]

আর্থিক সমস্যা

সম্পাদনা

২০০৯ সালের মার্চ মাসে ইতালীয় কর্মকর্তারা ঘোষণা করেছিলেন যে ইতালীয় সরকারের কাছে মারাদোনার এখনো ৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ রয়েছে, যার মধ্যে ২৩.৫ মিলিয়ন ডলার তার মূল ঋণের উপর সুদ ছিল। তারা জানিয়েছিল যে উক্ত সময় মারাদোনা মাত্র ৪২,০০০ মার্কিন ডলার, দুটি বিলাসবহুল ঘড়ি এবং এক জোড়া কানের দুল পরিশোধ করেছিলেন।[২৮৪][২৮৫]

গ্রেপ্তার

সম্পাদনা

২০১৯ সালের ২৩শে মে তারিখে, বান্ধবী অলিভার দায়ের করা মামলার ফলে মারাদোনা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাদের ছয় বছরের সম্পর্ক বিচ্ছেদের পর আর্থিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৭৬ কোটি টাকার মামলা করেছিলেন অলিভা। উক্ত মামলায় মেক্সিকো থেকে ফেরার পথে মারাদোনা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।[২৮৬]

মৃত্যু

সম্পাদনা

২০২০ সালের ২রা নভেম্বর তারিখে মানসিক কারণে মারাদোনাকে লা প্লাতার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল; সে সময় প্রাক্তন ফুটবলারের একজন প্রতিনিধি দল জানিয়েছিল যে তার অবস্থা গুরুতর নয়।[২৮৭] একদিন পর, সাবডুরাল হেমাটোমার চিকিৎসার জন্য তার মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল।[২৮৮] সফল অস্ত্রোপচারের পর ১২ই নভেম্বর তারিখে তাকে হাসপাতাল হতে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছিল এবং বহির্বিভাগের রোগী হিসেবে ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন।[২৮৯] ২০২০ সালের ২৫শে নভেম্বর তারিখে ৬০ বছর বয়সে মারাদোনা আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আয়ার্স প্রদেশের তিগ্রেতে তার নিজ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।[২৯০] মৃত্যুর পর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আর্জেন্টিনার জাতীয় পতাকা এবং মারাদোনার তিনটি ১০ নম্বর জার্সি (আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্স, বোকা জুনিয়র্স এবং আর্জেন্টিনা) দ্বারা মারাদোনার কফিন মুড়িয়ে রাষ্ট্রপতি প্রাসাদ কাসা রোসাদায় রাখা হয়েছিল।[২৯১] ২৬শে নভেম্বর তারিখে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিততে মারাদোনার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানটিতে ভক্তদের দ্বারা উক্ত স্থানের একটি অভ্যন্তরীণ উঠান দখল হওয়ার পর তাদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে পর তার পরিবার কর্তৃক অনুষ্ঠানটি সংক্ষিপ্ত করে তার কফিনটি রাষ্ট্রপতি প্রাসাদের রোতুন্দা থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।[২৯২][২৯৩] একই দিনে ব্যক্তিগতভাবে মারাদোনার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং বুয়েনোস আইরেসের বেলা বিস্তার হারদিন দে বেয়া বিস্তা কবরস্থানে মারাদোনাকে তার বাবা-মায়ের পাশে সমাহিত করা হয়েছে।[২৯৪]

শ্রদ্ধাঞ্জলি

সম্পাদনা

"আমি একজন মহান বন্ধুকে হারিয়েছি এবং পৃথিবী হারিয়েছে এক কিংবদন্তি। এখনো অনেক কিছু বলার আছে, কিন্তু আপাতত ঈশ্বর তার পরিবারের সদস্যদের শক্তি দান করুন। আমি আশা করি একদিন আমরা স্বর্গে একসাথে ফুটবল খেলতে পারব।"

পেলে, মারাদোনার মৃত্যুর পর দেওয়া এক বক্তব্য[২৯৫]

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বিবৃতিতে আর্জেন্টিনীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছিল যে, "আমাদের কিংবদন্তির মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোক প্রকাশ করছি", তিনি আরো বলা হয়েছিল: "আপনি সবসময় আমাদের হৃদয়ে থাকবেন"।[২৯৬] আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি আলবের্তো ফের্নান্দেস তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছিলেন।[২৯৭] উয়েফা এবং কনমেবল পৃথক পৃথক ঘোষণায় জানিয়েছিল যে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, উয়েফা ইউরোপা লিগ, কোপা লিবের্তোদোরেস, এবং সুদামেরিকানা কাপের প্রতিটি ম্যাচ শুরুর পূর্বে এক মুহূর্ত নীরবতা পালন করা হবে।[২৯৮][২৯৯] মারাদোনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বোকা জুনিয়র্সের খেলা স্থগিত করা হয়েছিল।[৩০০] পরবর্তীতে, সারা বিশ্বের অন্যান্য কনফেডারেশনগুলোও তার সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করেছিল, যা ২০২০ এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের খেলা থেকে শুরু হয়েছিল।[৩০১] ইতালির শীর্ষ স্তরের ফুটবল লিগ সেরিয়ে আ একটি মিনিটের নীরবতা পালন ছাড়াও খেলার ১০ম মিনিটে স্টেডিয়ামের পর্দায় মারাদোনার একটি ছবি প্রদর্শন করেছিল।[৩০২]

নাপোলিতে মারাদোনার সম্মানে রাতে স্টেডিয়াম সান পাওলোকে আলোকিত করা হয়েছিল। নাপোলির মালিক আউরেলিও দে লাউরেন্তিস এবং নাপোলির মেয়র লুইজি দে মাগিস্ত্রিস উভয়েই মারাদোনার নামে তাদের স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। মারাদোনার মৃত্যুর পরের দিন রিয়েকার বিরুদ্ধে নাপোলির ইউরোপা লিগের ম্যাচের পূর্বে নাপোলির সকল খেলোয়াড় "মারাদোনা ১০" দেখা জার্সি পরিধান করার পাশাপাশি এক মিনিট নীরবতা পালন করেছিলেন।[৩০৩] সারা বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনের ব্যক্তিত্বরাও তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।[২৯৫][৩০৪] ফুটবলের বাইরেও স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ এবং অন্যান্য খেলাধুলার ক্রীড়াব্যক্তিরাও মারাদোনার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।[৩০৫][৩০৬][৩০৭][৩০৮][৩০৯]

২০২০ সালের ২৭শে নভেম্বর তারিখে ভারতের কলকাতার বারাসাতের আদিত্য স্কুল অফ স্পোর্টস মারাদোনার নামে তাদের ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নামকরণ করেছে।[৩১০] তিন বছর পূর্বে মারাদোনা এই স্টেডিয়ামে ১০০ জন শিশুকে নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করেছিলেন এবং প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে একই মাঠে একটি দাতব্য ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিলেন।[৩১০] আর্জেন্টিনীয় ফুটবল ফেডারেশন এক ঘোষণায় জানিয়েছিল যে ২০২০ কোপা দে লা লিগা প্রফেসিওনাল, যা কোপা দে লা লিগা প্রফেসিওনালের প্রথম মৌসুম, তার নাম পরিবর্তন করে কোপা দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা রাখা হবে।[৩১১] ২৮শে নভেম্বর তারিখে পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশন জানিয়েছিল যে তাদের দ্বারা আয়োজিত প্রধান প্রতিযোগিতা পিএফএফ জাতীয় চ্যালেঞ্জ কাপে ওয়ালি মোহাম্মদের সাথে মারাদোনাকে সম্মান প্রদর্শন করা হবে।[৩১২][৩১৩] একই দিনে, আর্জেন্টিনা নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার রাগবি ম্যাচে হাকা পরিবেশন করার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে নিউজিল্যান্ড দলের অধিনায়ক স্যাম কেন মারাদোনার নাম এবং তার ১০ নম্বর জার্সি প্রদর্শন করেছিলেন।[৩১৪] ২৯শে নভেম্বর তারিখে লা লিগায় বার্সেলোনাে ৪–০ গোলে জয়লাভ করার ম্যাচে মেসি তার গোলটি মারাদোনার জন্য উৎসর্গ করেছিলেন।[৩১৫]

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে

সম্পাদনা

মার্কিন সংবাদপত্র হিউস্টন ক্রনিকল মারাদোনা সম্পর্কে লিখেছিল:

মারাদোনার তার ফুটবল-পাগল মাতৃভূমির উপর যে বিশাল ছায়া রয়েছে, তা বুঝতে হলে মাইকেল জর্ডানের ক্রীড়াশৈলী, ব্যাব রুথের শক্তি এবং মাইক টাইসনের মানবিক ব্যর্থতা তুলে ধরতে হবে। তোমাদের কাছে এল দিয়েগো রয়েছে, যিনি কালো চুল ওয়ালা এক ফাঁপা বুকের মানুষ, যিনি লক্ষ লক্ষ মানুষের আদর্শ, যারা তাকে ডি১০এস (যা তার খেলার সংখ্যার এবং স্পেনীয় ভাষায় ঈশ্বর শব্দের মিশ্রণ) বলে ডাকে।[৩১৬]

আর্জেন্টিনায় মারাদোনাকে এক আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার দেশে বিদ্যমান মূর্তিপূজা সম্পর্কে সাবেক সতীর্থ হোর্হে ভালদানো বলেছিলেন, "যখন মারাদোনা ফুটবল থেকে অবসর নেন, তখন তিনি আর্জেন্টিনা ছেড়ে চলে যান। মারাদোনা একজন মহান ফুটবলারের চেয়ে বেশি কিছু ছিলেন। এটি একটি দেশের জন্য একটি বিশেষ প্রতিদান বিষয়বস্তু ছিল, তিনি মাত্র কয়েক বছর ধরে সামরিক ক্ষেত্রে একনায়কতন্ত্র এবং সব ধরনের সামাজিক হতাশার মধ্য দিয়ে বসবাস করেহেন। ভালদানো এর সাথে আরো যোগ করেছিলেন যে "মারাদোনা আর্জেন্টিনাকে তাদের সম্মিলিত হতাশা থেকে বেরিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছেন, আর এজন্যই সেখানকার মানুষ তাকে ঐশ্বরিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে ভালবাসত।[৩১৭] ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে তার দেশের নেতৃত্ব, বিশেষ করে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে তার দুর্দান্ত খেলা এবং দুটি গোল সম্পর্কে গুইয়েম বালাগুয়ে লিখেছিলেন: "সেই রবিবার মেক্সিকো সিটিতে বিশ্ব এক ব্যক্তির এককভাবে খেলা দেখেছে, যিনি এক বিষণ্ণ এবং অধঃপতিত জাতির মানসিক অবস্থা ভালো করে দিয়েছে। চার মিনিটের ব্যবধানে দুটি গোল করে তিনি তাদের স্বপ্ন দেখার সাহস করে দিয়েছেন যেন তারা তার মতো বিশ্বের সেরা হতে পারে। সে প্রথমে জঘন্য এবং তারপর একটি চমৎকার উপায়ে এমন কাজটি করেছে। ঠিক সেই মুহূর্তে তিনি তারকা খেলোয়াড় থেকে কিংবদন্তি পর্যায়ে চলে গিয়েছেন"।[৮৯]

১৯৮৬ সাল থেকে বিদেশে এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলে মারাদোনা আর্জেন্টিনার প্রতীক হিসেবে পরিচিত।[৪২] টার্টান সেনাবাহিনী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঈশ্বরের হাত গোলের সম্মানে হকি কোকির একটি সংস্করণ প্রকাশ করেছিল।[৩১৮] আর্জেন্টিনায়, মারাদোনাকে প্রায়ই এক অন্য স্তরের কিংবদন্তিদের মধ্যে গণনা করা হয়। এল ইগো দে লা নোবিয়া ("কনের পুত্র") নামক আর্জেন্টিনার চলচ্চিত্রে ক্যাথলিক যাজকের চরিত্রে অভিনয় করা বারের একজন পৃষ্ঠপোষককে বলেছিলেন, "তারা প্রথমে তাকে আদর্শ হিসেবে মনে করে এবং তারপর তাকে ক্রুশবিদ্ধ করে।" যখন তার এক বন্ধু তাকে বিদ্রুপ করার জন্য তিরস্কার করে, তখন উক্ত যাজক উত্তর দিয়েছিল, "কিন্তু আমি মারাদোনার কথা বলছি।" তিনি এল কামিনো দে সান দিয়েগো নামক চলচ্চিত্রেরও বিষয়বস্তু ছিলেন, যদিও তিনি নিজে শুধুমাত্র আর্কাইভ ফুটেজের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে উপস্থিত হয়েছিলেন।[৩১৯]

আর্জেন্টিনীয় কমিক বই এল কাসাদোর দে আবেন্তুরাস-এ বেশ কয়েকবার মারাদোনাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই বইটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর লেখকগণ এল দিয়ে শিরোনামে স্বল্পস্থায়ী একটি নতুন কমিক বই শুরু করেছিলেন, যেখানে মারাদোনাকে প্রধান চরিত্রে প্রদর্শন করা হয়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি অনলাইন ফ্ল্যাশ গেমে মারাদোনাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণরূপে তার খেলোয়াড়ি জীবনকে উৎসর্গ করা হয়েছে।[৩২০] আর্জেন্টিনার রোজারিওতে স্থানীয়রা মারাদোনীয় ধর্ম নামে একটি ধর্মের আয়োজন করেছিল। এই সংগঠনটি খ্রিস্টান ঐতিহ্য থেকে অনেক উপাদান পুনর্গঠন করে এখানে যুক্ত করেছে, যেমন: বড়দিন অথবা প্রার্থনা, যেখানে মারাদোনার বিস্তারিত বিবরণ সংযুক্ত করা হয়েছে। এই সংগঠনের ২০০ জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিল এবং পরবর্তীতে হাজার হাজার মানুষ গির্জার প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এর সদস্য হয়েছেন।[৩২১]

 
১৯৮১ সালে দক্ষিণ আমেরিকা সফরের সময় রক ব্যান্ড কুইনের সাথে ম্যারাডোনা (মাঝে)

আর্জেন্টিনার বেশ কয়েকজন শিল্পী দিয়েগোর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গান পরিবেশন করেছেন, যার মধ্যে এল পত্রো রদ্রিগোর "লা মানো দে দিওস", আন্দ্রেস কালামারোর "মারাদোনা", লস রাতোনেস পারানোইকোসের "পারা সিয়েমপ্রে দিয়েগো", আতাকুয়ে ৭৭-এর "ফ্রাঙ্কোতিরাদোর", চার্লি গার্সিয়ার "মারাদোনা ব্লুজ", মানো নেগ্রার "সান্তা মারাদোনা" এবং মানু চাওয়ের "লা বিদা তোম্বোলা" অন্যতম। এছাড়াও মারাদোনা সম্পর্কে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে; যার মধ্যে মারাদোনা, লা মানো দে দিওস, আমান্দো আ মারাদোনা এবং মারাদোনা বাই কুস্তুরিকা অন্যতম।[১৮২]

১৯৮২ সাল পর্যন্ত, মারাদোনা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ক্রীড়া তারকা হয়ে ওঠেন এবং পুমা এবং কোকা-কোলাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তার সাথে পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল, যার মাধ্যমে তিনি তার ক্লাব বেতনের পরেও বছরে অতিরিক্ত ১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছিলেন।[৩২২] ১৯৮২ সালে তিনি কোকা-কোলার জন্য একটি বিশ্বকাপ বিজ্ঞাপন এবং পুমার জন্য একটি জাপানি বিজ্ঞাপনে উপস্থিত হয়েছিলেন।[৩২২] ২০১০ সালে তিনি ফরাসি প্রতিষ্ঠান লুই ভুইতোঁর একটি বিজ্ঞাপনে উপস্থিত হয়েছিলেন, যেখানে বিশ্বকাপ বিজয়ী খেলোয়াড় পেলে এবং জিনেদিন জিদানকে তার সাথে টেবিল ফুটবল খেলতে দেখা গিয়েছিল।[৩২৩] মারাদোনা শাকিরার ২০১০ সালের বিশ্বকাপ গান ওয়াকা ওয়াকা-এ উপস্থিত হয়েছিলেন, যেখানে তাকে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জয় উদ্‌যাপন করতে দেখা গিয়েছে।[৩২৪]

 
রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপের লিওনেল মেসির পাশাপাশি মারাদোনা সংবলিত এই ধরনের ব্যানার প্রায়ই আর্জেন্টিনার খেলায় দেখা গিয়েছে

ব্রাজিলের কোমল পানীয় গুয়ারানা অ্যান্টার্কটিকার জন্য ২০০৬ সালের একটি টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে মারাদোনাকে হলুদ জার্সি পরিধান করে ব্রাজিলীয় খেলোয়াড় রোনালদো এবং কাকার সাথে ব্রাজিলের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া অবস্থায় ব্রাজিল জাতীয় দলের সদস্য হিসেবে দেখা গিয়েছিল।[৩২৫] পরবর্তীতে বিজ্ঞাপনে তিনি ঘুম থেকে উঠে উপলব্ধি করেন যে অতিরিক্ত পানীয় খাওয়ার ফলে তিনি এমন দুঃস্বপ্ন দেখেছিলেন। এই বিজ্ঞাপনটি মুক্তির পর আর্জেন্টিনার গণমাধ্যমে বেশ বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল (যদিও বিজ্ঞাপনটি আর্জেন্টিনার বাজারে প্রচারিত হওয়ার কথা ছিল না, ভক্তরা এটি অনলাইনে দেখেছিল)। উত্তরে মারাদোনা বলেছিলেন যে আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিলের ফুটবলে উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকা সত্ত্বেও ব্রাজিলের জাতীয় দলের জার্সি পরতে তার কোন সমস্যা নেই, তবে তিনি কখনোই বোকা জুনিয়র্সের ঐতিহ্যবাহী প্রতিদ্বন্দ্বী রিভার প্লেতের জার্সি পরিধান করবেন না।[৩২৬] মারাদোনার সম্মানে ব্রাজিলীয়রা তাদের নাম দিয়েগো রাখতেন;[৩২৭] যার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে দিয়েগো কোস্তা[৩২৮]

২০১৭ সালে, মারাদোনা ফুটবল ভিত্তিক ভিডিও গেম ফিফা ১৮ এবং প্রো ইভোলুশন সকার ২০১৮-এ একটি কিংবদন্তি খেলোয়াড় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন।[৩২৯] ২০১৯ সালে দিয়েগো মারাদোনা নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র মুক্তি পেয়েছিল, যা একাডেমি পুরস্কারব্রিটিশ একাডেমি চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা আসিফ কাপাডিয়া পরিচালনা করেছেন; যিনি ইতিপূর্বে এমি (সঙ্গীতশিল্পী এমি ওয়াইনহাউজের উপর নির্মিত চলচ্চিত্র) এবং সেনা (মোটর রেসিং ড্রাইভার আয়র্তন সেনার উপর নির্মিত চলচ্চিত্র) নামক চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। কাপাডিয়া বলেছিলেন, "মারাদোনা শিশু প্রতিভা এবং খ্যাতি নিয়ে নির্মিত একটি ত্রয়ী প্রামাণ্যচিত্রের তৃতীয় অংশ ছিল।[৩৩০] তিনি আরো বলেছিলেন, "আমি তার খেলোয়াড়ি জীবনে মুগ্ধ হয়েছিলাম, তিনি যেখানেই যেতেন সেখানেই তিনি তার অবিশ্বাস্য প্রতিভা প্রদর্শন করতেন। তিনি এমন একজন নেতা ছিলেন, যিনি তার দলকে একেবারে শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন, তবে তিনি তার খেলোয়াড়ি জীবনে বেশ কিছু বার পতন দেখেছিলেন। তিনি সবসময় নিয়মকানুনের বিরুদ্ধে লড়াই করা একজন ক্ষুদ্র দৈর্ঘ্যের লোক ছিল... এবং তিনি সকল চালাকি এবং বুদ্ধিমত্তাকে জয় করার জন্য যে কোন কিছু করতে ইচ্ছুক ছিলেন"।[৩৩১]

পরিসংখ্যান

সম্পাদনা
ক্লাব মৌসুম লিগ কাপ মহাদেশীয় অন্যান্য মোট
বিভাগ ম্যাচ গোল ম্যাচ গোল ম্যাচ গোল ম্যাচ গোল ম্যাচ গোল
আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্স[৫৬][৩৩২] ১৯৭৬ প্রিমিয়ার বিভাগ ১১ ১১
১৯৭৭ ৪৯ ১৯ ৪৯ ১৯
১৯৭৮ ৩৫ ২৬ ৩৫ ২৬
১৯৭৯ ২৬ ২৬ ২৬ ২৬
১৯৮০ ৪৫ ৪৩ ৪৫ ৪৩
মোট ১৬৬ ১১৬ ১৬৬ ১১৬
বোকা জুনিয়র্স[৫৬][৩৩২] ১৯৮১ প্রিমিয়ার বিভাগ ৪০ ২৮ ৪০ ২৮
বার্সেলোনা[৫৬] ১৯৮২–৮৩ লা লিগা ২০ ১১ [] [] [] ৩৫ ২৩
১৯৮৩–৮৪ ১৬ ১১ [] [] ২৩ ১৫
মোট ৩৬ ২২ ৫৮ ৩৮
নাপোলি[৫৬] ১৯৮৪–৮৫ সেরিয়ে আ ৩০ ১৪ [] ৩৬ ১৭
১৯৮৫–৮৬ ২৯ ১১ [] ৩১ ১৩
১৯৮৬–৮৭ ২৯ ১০ ১০[] [] ৪১ ১৭
১৯৮৭–৮৮ ২৮ ১৫ [] [] ৩৯ ২১
১৯৮৮–৮৯ ২৬ ১২[] ১২[] ৫০ ১৯
১৯৮৯–৯০ ২৮ ১৬ [] [] ৩৬ ১৮
১৯৯০–৯১ ১৮ [] [] [] ২৬ ১০
মোট ১৮৮ ৮১ ৪৫ ২৯ ২৫ ২৫৯ ১১৫
সেভিয়া[৫৬] ১৯৯২–৯৩ লা লিগা ২৬ [] ২৯
নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ[৫৬][৩৩২] ১৯৯৩–৯৪ প্রিমিয়ার বিভাগ
বোকা জুনিয়র্স[৫৬][৩৩২] ১৯৯৫–৯৬ ২৪ ২৪
১৯৯৬–৯৭ []
১৯৯৭–৯৮
মোট ৭০ ৩৫ ৭১ ৩৫
সর্বমোট ৪৯১ ২৫৯ ৫৭ ৩৬ ৩২ ১৩ ৫৮৮ ৩১২

টীকা

  1. এখানে ১৯৮২–৮৩ কোপা দেল রে অন্তর্ভুক্ত
  2. এখানে ১৯৮২–৮৩ ইউরোপীয় কাপ উইনার্স কাপ অন্তর্ভুক্ত
  3. এখানে ১৯৮৩ কোপা দে লা লিগা অন্তর্ভুক্ত
  4. এখানে ১৯৮৩–৮৪ কোপা দেল রে অন্তর্ভুক্ত
  5. এখানে ১৯৮৩–৮৪ ইউরোপীয় কাপ উইনার্স কাপ অন্তর্ভুক্ত
  6. এখানে ১৯৮৪–৮৫ কোপ্পা ইতালিয়া অন্তর্ভুক্ত
  7. এখানে ১৯৮৫–৮৬ কোপ্পা ইতালিয়া অন্তর্ভুক্ত
  8. এখানে ১৯৮৬–৮৭ কোপ্পা ইতালিয়া অন্তর্ভুক্ত
  9. এখানে ১৯৮৬–৮৭ উয়েফা কাপ অন্তর্ভুক্ত
  10. এখানে ১৯৮৭–৮৮ কোপ্পা ইতালিয়া অন্তর্ভুক্ত
  11. এখানে ১৯৮৭–৮৮ ইউরোপীয় কাপ অন্তর্ভুক্ত
  12. এখানে ১৯৮৮–৮৯ কোপ্পা ইতালিয়া অন্তর্ভুক্ত
  13. এখানে ১৯৮৮–৮৯ উয়েফা কাপ অন্তর্ভুক্ত
  14. এখানে ১৯৮৯–৯০ কোপ্পা ইতালিয়া অন্তর্ভুক্ত
  15. এখানে ১৯৮৯–৯০ উয়েফা কাপ অন্তর্ভুক্ত
  16. এখানে ১৯৯০–৯১ কোপ্পা ইতালিয়া অন্তর্ভুক্ত
  17. এখানে ১৯৯০–৯১ ইউরোপীয় কাপ অন্তর্ভুক্ত
  18. এখানে ১৯৯০ সুপারকোপ্পা ইতালিয়ানা অন্তর্ভুক্ত
  19. এখানে ১৯৯২–৯৩ কোপা দেল রে অন্তর্ভুক্ত
  20. এখানে ১৯৮৯–৯০ সুপারকোপা লিবের্তাদোরেস অন্তর্ভুক্ত

আন্তর্জাতিক

সম্পাদনা
দল সাল প্রতিযোগিতামূলক প্রীতি মোট
ম্যাচ গোল ম্যাচ গোল ম্যাচ গোল
আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০[৩৩৩] ১৯৭৭ []
১৯৭৮
১৯৭৯ ১১[] ১২
মোট ১৪ ১৫
আর্জেন্টিনা[৫৬][৮১] ১৯৭৭
১৯৭৮
১৯৭৯ []
১৯৮০ ১০ ১০
১৯৮১ []
১৯৮২ [] ১০
১৯৮৩
১৯৮৪
১৯৮৫ [] ১০
১৯৮৬ [] ১০
১৯৮৭ []
১৯৮৮ []
১৯৮৯ []
১৯৯০ [] ১০
১৯৯১
১৯৯২
১৯৯৩ []
১৯৯৪ []
মোট ৪৬ ১৭ ৪৫ ১৭ ৯১ ৩৪
সর্বমোট ৬০ ২৪ ৪৬ ১৮ ১০৬ ৪২

টীকা

  1. এখানে ১৯৭৭ দক্ষিণ আমেরিকান অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ অন্তর্ভুক্ত
  2. এখানে ১৯৭৯ দক্ষিণ আমেরিকান অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ, ফিফা যুব চ্যাম্পিয়নশিপ অন্তর্ভুক্ত
  3. এখানে ১৯৭৯ কোপা আমেরিকা অন্তর্ভুক্ত
  4. এখানে ১৯৮০ মুন্দিয়ালিতো অন্তর্ভুক্ত
  5. এখানে ১৯৮২ ফিফা বিশ্বকাপ অন্তর্ভুক্ত
  6. এখানে ১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব অন্তর্ভুক্ত
  7. এখানে ১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপ অন্তর্ভুক্ত
  8. এখানে ১৯৮৭ কোপা আমেরিকা অন্তর্ভুক্ত
  9. এখানে ১৯৮৮ চার দেশীয় প্রতিযোগিতা অন্তর্ভুক্ত
  10. এখানে ১৯৮৯ কোপা আমেরিকা অন্তর্ভুক্ত
  11. এখানে ১৯৯০ ফিফা বিশ্বকাপ অন্তর্ভুক্ত
  12. এখানে আরতেমিও ফ্রাংকি শিরোপা এবং ১৯৯৪ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব অন্তর্ভুক্ত
  13. এখানে ১৯৯৪ ফিফা বিশ্বকাপ অন্তর্ভুক্ত

আন্তর্জাতিক গোল

সম্পাদনা
গোল তারিখ মাঠ প্রতিপক্ষ স্কোর ফলাফল প্রতিযোগিতা সূত্র
২ জুন ১৯৭৯ হ্যাম্পডেন পার্ক, গ্লাসগো, স্কটল্যান্ড   স্কটল্যান্ড –০ ৩–১ প্রীতি ম্যাচ [৮১]
২৫ জুন ১৯৭৯ এস্তাদিও মনুমেন্তাল, বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা   ফিফা একাদশ –০ ১–২ [৮১]
৮ আগস্ট ১৯৭৯ হোসে আমালফিতানি স্টেডিয়াম, বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা   বলিভিয়া –০ ৩–০ ১৯৭৯ কোপা আমেরিকা [৮১]
৩০ এপ্রিল ১৯৮০ এস্তাদিও মনুমেন্তাল, বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা   আয়ারল্যান্ড একাদশ –০ ১–০ প্রীতি ম্যাচ [৮১]
২১ মে ১৯৮০ আর্নস্ট-হাপেল স্টেডিয়াম, ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া   অস্ট্রিয়া –০ ৫–১ [৮১]
–১
–১
১২ অক্টোবর ১৯৮০ এস্তাদিও মনুমেন্তাল, বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা   পোল্যান্ড –১ ২–১ [৮১]
৪ ডিসেম্বর ১৯৮০ হোসে মারিয়া মিনেয়া স্টেডিয়াম, মার দেল প্লাতা, আর্জেন্টিনা   সোভিয়েত ইউনিয়ন –০ ১–১ [৮১]
১০ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৮০ কর্দোবা স্টেডিয়াম, কর্দোবা, আর্জেন্টিনা    সুইজারল্যান্ড –০ ৫–০ [৮১]
১১ ৪ জানুয়ারি ১৯৮১ সেন্সেনারিও স্টেডিয়াম, মোন্তেবিদেও, উরুগুয়ে   ব্রাজিল –০ ১–১ ১৯৮০ মুন্দিয়ালিতো [৮১]
১২ ১৮ জুন ১৯৮২ হোসে রিকো পেরেস স্টেডিয়াম, আলিকান্তে, স্পেন   হাঙ্গেরি –০ ৪–১ ১৯৮২ ফিফা বিশ্বকাপ [৮১]
১৩ –০
১৪ ৯ মে ১৯৮৫ এস্তাদিও মনুমেন্তাল, বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা   প্যারাগুয়ে –০ ১–১ প্রীতি ম্যাচ [৮১]
১৫ ১৪ মে ১৯৮৫   চিলি –০ ২–০ [৮১]
১৬ ২৬ মে ১৯৮৫ পোলিদেপোর্তিবো স্টেডিয়াম, সান ক্রিস্তোবাল, ভেনেজুয়েলা   ভেনেজুয়েলা –০ ৩–২ ১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব [৮১]
১৭ –১
১৮ ৯ জুন ১৯৮৫ এস্তাদিও মনুমেন্তাল, বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা   ভেনেজুয়েলা –০ ৩–০ [৮১]
১৯ ১৪ নভেম্বর ১৯৮৫ মেমোরিয়াল কলিসিয়াম, লস অ্যাঞ্জেলেস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   মেক্সিকো –১ ১–১ প্রীতি ম্যাচ [৮১]
২০ ৪ মে ১৯৮৬ রামাত গান স্টেডিয়াম, রামাত গান, ইসরায়েল   ইসরায়েল –০ ৭–২ [৮১]
২১ –২
২২ ৫ জুন ১৯৮৬ কুয়াউহতেমোক স্টেডিয়াম, পুয়েবলা, মেক্সিকো   ইতালি –১ ১–১ ১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপ [৮১]
২৩ ২২ জুন ১৯৮৬ আসতেকা স্টেডিয়াম, মেক্সিকো সিটি, মেক্সিকো   ইংল্যান্ড –০ ২–১ [৮১]
২৪ –০
২৫ ২৫ জুন ১৯৮৬   বেলজিয়াম –০ ২–০ [৮১]
২৬ –০
২৭ ১০ জুন ১৯৮৭ লেৎসিগ্রুন্ড, জুরিখ, সুইজারল্যান্ড   ইতালি –২ ১–৩ প্রীতি ম্যাচ [৮১]
২৮ ২৭ জুন ১৯৮৭ এস্তাদিও মনুমেন্তাল, বুয়েনোস আইরেস, আর্জেন্টিনা   পেরু –০ ১–১ ১৯৮৭ কোপা আমেরিকা [৮১]
২৯ ২ জুলাই ১৯৮৭   ইকুয়েডর –০ ৩–০ [৮১]
৩০ –০
৩১ ৩১ মার্চ ১৯৮৮ অলিম্পিক স্টেডিয়াম, বার্লিন, জার্মানি   সোভিয়েত ইউনিয়ন –৩ ২–৪ চার দেশীয় প্রতিযোগিতা [৮১]
৩২ ২২ মে ১৯৯০ রামাত গান স্টেডিয়াম, রামাত গান, ইসরায়েল   ইসরায়েল –০ ২–১ প্রীতি ম্যাচ [৮১]
৩৩ ২০ এপ্রিল ১৯৯৪ নোর্তে স্টেডিয়াম, সালতা, আর্জেন্টিনা   মরক্কো –১ ৩–১ [৮১]
৩৪ ২১ জুন ১৯৯৪ ফক্সবোরো স্টেডিয়াম, ফক্সবোরো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   গ্রিস –০ ৪–০ ১৯৯৪ ফিফা বিশ্বকাপ [৮১]

ম্যানেজার

সম্পাদনা
দল যোগদান প্রস্থান তথ্য
ম্যাচ জয় ড্র হার জয় %
তেক্সতিল মান্দিয়ু[৩৩৪] জানুয়ারি ১৯৯৪ জুন ১৯৯৪ ১২ ০০৮.৩৩
রেসিং ক্লাব[৩৩৪] মে ১৯৯৫ নভেম্বর ১৯৯৫ ১১ ১৮.১৮
আর্জেন্টিনা[৩৩৪] নভেম্বর ২০০৮ জুলাই ২০১০ ২৪ ১৮ ৭৫.০০
আল-ওয়াসল[৩৩৪] মে ২০১১ জুলাই ২০১২ ২৩ ১১ ৪৭.৮৩
ফুজাইরাহ[৩৩৪] এপ্রিল ২০১৭ এপ্রিল ২০১৮ ১১ ৬৩.৬৪
দোরাদোস সিনালোয়া[৩৩৪] সেপ্টেম্বর ২০১৮ জুন ২০১৯ ৩৮ ২০ ৫২.৬৩
লা প্লাতা[৩৩৪] সেপ্টেম্বর ২০১৯ নভেম্বর ২০২০ ২১ ৩৮.১০
সর্বমোট ১৪০ ৬৭ ৩১ ৪২ ৪৭.৮৬

ব্যক্তিগত

সম্পাদনা
 
মোনাকো রাজ্যের সমুদ্রতীরে "চ্যাম্পিয়ন প্রাঙ্গণ"-এ মারাদোনার গোল্ডেন ফুট পুরস্কার

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Decreto 936/2020 - Declárase Duelo Nacional en todo el territorio de la República Argentina" (পিডিএফ)Boletín Oficial de la República Argentina (স্পেনীয় ভাষায়)। ২৫ নভেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০২০ 
  2. "Diego Maradona: Profile"worldfootball.net। HEIM:SPIEL। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০২০ 
  3. "Small is beautiful"FIFA। ৮ মে ২০০৯। ১৩ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০২০ 
  4. Maradona tricks and skills videos of the best soccer, football players ever ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৫ জুন ২০১২ তারিখে. Football-tricks.com. Retrieved 31 March 2013.
  5. Diego Maradona dominated 1986 World Cup after position switch – Jonathan Wilson – SI.com ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে. Sportsillustrated.cnn.com (27 May 2010). Retrieved 31 March 2013.
  6. Diego Maradona: ‘The Soccer Guru’ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে. The Viewspaper (25 June 2010). Retrieved 31 March 2013.
  7. "La nuova vita del Pibe de Oro Maradona ct dell'Argentina"। la Repubblica। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  8. "The Best of The Best"Rec.Sport.Soccer Statistics Foundation.com। ১৯ জুন ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১৩ 
  9. "The 100 greatest players of all time"The Football Pantheon। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১১। ১০ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১৩ 
  10. "Snapshot: Maradona is toast of the town after signing for Napoli". The Times. Retrieved 30 March 2013
  11. "Diego Maradona goal voted the FIFA World Cup™ Goal of the Century"ফিফা। ৩০ মে ২০০২। ২৩ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১৩ 
  12. "Diego Maradona leaves job in UAE after failing to secure automatic promotion"। Sky Sports। ৬ মে ২০১৮। 
  13. "Diego Maradona's 'rebirth' at coaching job at Mexican side Dorados"। BBC। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ 
  14. “Yes, Diego is with us!” ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ মে ২০১৮ তারিখে. Dynamo Brest. Retrieved 23 July 2018
  15. “Diego Maradona presented as Dinamo Brest chairman”. BBC. Retrieved 23 July 2018
  16. "¡Diego, bienvenido al Lobo!"Gimnasia y Esgrima de La Plata (Spanish ভাষায়)। ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  17. "FIFA Player of the Century" (পিডিএফ)Touri.com। ২৬ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১৩ 
  18. "Maradona or Pele?"CNN Sports Illustrated। ১০ ডিসেম্বর ২০০০। ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১৩ 
  19. "Diego Maradona – I was there" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ জুন ২০১৫ তারিখে. FIFA.com. Retrieved 22 April 2014
  20. The greatest rags-to-riches stories ever James Dart, Paul Doyle and Jon Hill, 12 April 2006. Retrieved 18 August 2006.
  21. The Hand of God. Retrieved 18 August 2006.
  22. "Maradona hails 'inspirational' Best". RTE Sport. Retrieved 9 September 2013
  23. "Football's Greatest – Rivelino". Pitch International LLP. 2012. Retrieved 8 May 2014
  24. A SUMMARY OF MARADONA's LIFE ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে, vivadiego.com. Retrieved 18 August 2006.
  25. Maradona. Así empezó todo, El Gráfico, 25 April 2019
  26. "Diego, el de Argentinos" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে, Clarín, 11 April 2013
  27. “Murió Juan Domingo “el Chacho” Cabrera” ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ জুলাই ২০২০ তারিখে. Gustavo Farías on La Voz, 4 September 2007
  28. "Los primeros gritos de D10S" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে on La Selección website
  29. "Aquella jugada que llevó a Maradona a Boca" by Daniel Arcucchi ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে, Cancha Llena, 22 February 2011
  30. Yo Soy El Diego, autobiography of Diego A. Maradona – Editorial Planeta (2000) – আইএসবিএন ৯৮৭১১৪৪৬২৮
  31. "Un mes sin el 10. Maradona era de Independiente, quiso jugar en River, terminó enojado con Boca, fue DT de Racing y admiraba a San Lorenzo" La Nacion। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জানুয়ারি ২০২২"Ahora lo más firme parece ser lo de Boca. Lo de River quedó un poquito muerto por el ofrecimiento que hizo Aragón Cabrera de ganar lo mismo que Fillol y Passarella, que son los que más ganan. Yo le dije que no tenía problema, Dios quiera que ellos ganen 5 millones de dólares de contrato. Yo no tengo problemas, pero en caso de que me den lo que yo les pido. Y me dijo que no, porque se le iba a hacer muy embromado todo para poder pagarles a todos... Las tratativas las hace Jorge, pero me entero de todo. 
  32. "Fun Trivia : Diego Maradona" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ জুলাই ২০১৪ তারিখে. Trivia. Retrieved 24 April 2014
  33. "25 años de romance" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে, Clarín, 26 December 2009
  34. "Maradona por Maradona"[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], 24 September 2000
  35. Argentina 1981 by Osvaldo José Gorgazzi on RSSSF.com
  36. "The Albiceleste underdog who conquered the world" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৬ জুন ২০১৫ তারিখে. FIFA.com Retrieved 16 May 2014
  37. Jimmy Burns (2009). "Barca: A People's Passion". p. 251. Bloomsbury Publishing, 2009
  38. "Life and crimes of Diego Armando Maradona". The Telegraph. Retrieved 15 October 2015
  39. "Real Madrid 0 Barcelona 3: Bernabeu forced to pay homage as Ronaldinho soars above the galacticos". The Independent. Retrieved 29 November 2013
  40. "30 years since Maradona stunned the Santiago Bernabéu". FC Barcelona. Retrieved 2 October 2014
  41. "Real Madrid Fans Applaud Barcelona's Andres Iniesta In 'El Clasico'"। NESN। ২১ নভেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০১৬ 
  42. "That's one hell of a diet, Diego". 8 January 2006. Guardian Newspapers Limited. Retrieved 13 August 2006.
  43. "Diego Maradona gives hot, hot heat to The Butcher of Bilbao"The Guardian। ২৪ এপ্রিল ২০১৫। 
  44. Luca Caioli (2013). "Messi: The Inside Story of the Boy Who Became a Legend"
  45. Jimmy Burns. (2011). "Maradona: The Hand of God". pp.121–122. A&C Black
  46. "Backgrounder: Diego Maradona". CBC Sports. Retrieved 14 December 2012
  47. "Cristiano Ronaldo welcomed by 80,000 fans at Real Madrid unveiling"The Guardian। London। ৬ জুলাই ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুলাই ২০০৯ 
  48. "Maradona brings success to Napoli". ESPN. Retrieved 16 May 2014
  49. Clemente A. Lisi (2011). "A History of the World Cup: 1930–2010". p. 193. Scarecrow Press
  50. Nicola Sellitti (৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "Bruscolotti, una vita in azzurro: "Napoli, ricorda quella partita dell'86""La Repubblica (Italian ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৬ 
  51. Richardson, James (৩ এপ্রিল ২০০৭)। "Serie A's comeback kid eyes another miracle"Guardian Unlimited। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১৬ 
  52. "Napoli–Stuttgart"। UEFA.com। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০২০ 
  53. Sica, Jvan (১৮ এপ্রিল ২০১৯)। "Quando il Napoli vinse la Coppa UEFA" (Italian ভাষায়)। L'Ultimo Uomo। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০২০ 
  54. "1988/89: Maradona leads the way for Napoli"। UEFA.com। ১ জুন ১৯৮৯। ২৪ জুন ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০২০ 
  55. Mocciaro, Gaetano (১৭ মে ২০১৬)। "17 maggio 1989, Napoli trionfa in Europa: a Stoccarda arriva la Coppa Uefa" (Italian ভাষায়)। Tutto Mercato Web। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০২০ 
  56. De Calò, Alessandro (২০১১)। Il calcio di Maradona ai raggi X (Italian ভাষায়)। La Gazzetta dello Sport। পৃষ্ঠা 94–95। 
  57. "Diego Maradona Has Appealed to European Union". The Guardian. Retrieved 21 May 2014
  58. "Marek Hamsik breaks Diego Maradona's Napoli scoring record"। ESPN FC। ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  59. "Franco Baresi: One-on-One"। Four Four Two। ১ নভেম্বর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ 
  60. Landolina, Salvatore (৪ অক্টোবর ২০০৮)। "Maradona and Ronaldo Best Ever"। Goal.com। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ 
  61. "SPORTS PEOPLE; Maradona Fined"The New York Times। ১৩ জানুয়ারি ১৯৯১। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১০ 
  62. May, John (১৯ এপ্রিল ২০০৪)। "Maradona's fall from grace"BBC News। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১০ 
  63. "After the fall: The World Cup dream is over for Diego Maradona, but there may be worse to come – a little matter of pounds 500,000-worth of smuggled cocaine, and the Naples mafia. Paul Greengrass and Toby Follett report"The Independent। London। ৫ জুলাই ১৯৯৪। ১৫ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১০ 
  64. "Camorra, arrestato il boss amico di Maradona"Corriere della Sera। ২৪ ডিসেম্বর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১০ 
  65. Telander, Rick (১৪ জানুয়ারি ২০০২)। "At his best, Diego Maradona can be as graceful as Michael Jordan. At his worst, he can be as disgraceful as John McEnroe. The question is, which Maradona will show for the World Cup?"। CNN। ৩ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০২০ 
  66. Landolina, Salvatore (১৪ জানুয়ারি ২০১১)। "Diego Maradona Backs Ezequiel Lavezzi To Earn Napoli Number 10 Shirt"। Goal.com। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০১৩ 
  67. মারাদোনা (২০০০); পৃষ্ঠা: ২০০–২০১।
  68. "El mejor amigo de la pelota"। ২৬ ডিসেম্বর ২০০৯। ৩০ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২০ 
  69. "Sport in Short: Football – Sport"দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। যুক্তরাজ্য। ১৫ জুলাই ১৯৯২। ১১ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১৩ 
  70. মারাদোনা (২০০০); পৃষ্ঠা: ২৪০।
  71. "¿Cuántas veces Maradona estuvo cerca de llegar a San Lorenzo?"। ৮ অক্টোবর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২০ 
  72. "Dio positivo el control antidoping a Diego Maradona"। ২৮ আগস্ট ১৯৯৭। ২৬ জুলাই ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২০ 
  73. "La historia secreta del regreso de Maradona"। ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭। ২২ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২০ 
  74. "La contraprueba confirmó el doping de Maradona"। ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭। ৪ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২০ 
  75. "El lado oscuro de una vida a puro vértigo"। ৩০ অক্টোবর ১৯৯৭। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২০ 
  76. "Un juez ordenó no innovar y Diego podrá jugar"। ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭। ২০ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২০ 
  77. "The Diego Maradona"steemit.com। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২০ 
  78. এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় দিয়েগো মারাদোনা
  79. "FIFA World Youth Tournament 1979 Technical Study Report" (পিডিএফ)FIFA। পৃষ্ঠা 97–109। ১২ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ অক্টোবর ২০২০ 
  80. MacPherson, Graeme (30 October 2008). Maradona to receive Hampden welcome, The Herald.
  81. Pierrend, José Luis (৩০ জুলাই ২০০১)। "Diego Armando Maradona – International Appearances"Rec.Sport.Soccer Statistics Foundation। ২ নভেম্বর ২০০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০১৮ 
  82. "Maradona, as others see him" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে. FIFA.com. Retrieved 17 November 2013
  83. "FIFA Under-20 World Championships Awards" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে. RSSSF. Retrieved 20 March 2015
  84. 1982 – Story of Spain '82. Planet World Cup. Retrieved 31 March 2013.
  85. Brewin, John (9 June 2010) "Diego Maradona: God's gift" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ নভেম্বর ২০১২ তারিখে. ESPN Soccernet.
  86. "Castrol World Cup Legends: Diego Maradona – 1986". Goal.com (10 June 2010). Retrieved 14 December 2012
  87. "World Cup 1986". ESPN. Retrieved 24 April 2014
  88. "1986 FIFA World Cup Mexico: Italy – Argentina" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে. FIFA. Retrieved 14 December 2012
  89. "Diego Maradona dies: Guillem Balague on 'the magician, the cheat, the god, the flawed genius'"BBC Sport। BBC। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০২০ 
  90. "Maradona lights up the world – with a helping hand"[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]. FIFA.com. Retrieved 13 May 2014
  91. "The reason we English dislike Maradona so much is because we've never got over the Falklands War"The Independent। ২৭ জুন ২০১৮। 
  92. McCarthy, David (18 November 2008). Terry Butcher: Maradona robbed England of World Cup glory ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৭ মে ২০১০ তারিখে. Daily Record.
  93. Motson, John (2006). Motson's World Cup Extravaganza. p.103. Robson, 2006
  94. "Top 10 World Cup goals". The Telegraph. Retrieved 19 August 2014
  95. "100 Greatest Sporting Moments – Results"। London: Channel 4। ২০০২। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৯ 
  96. Clive Gammon (7 July 1986). "Tango Argentino!" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ মে ২০১৪ তারিখে. Sports Illustrated. Retrieved 13 May 2014
  97. Castrol Worldcup Statistics – Diego Maradona. Castrolfootball.com. Retrieved 31 March 2013.
  98. Darby, James. (10 June 2010) WorldCup Legends: Maradona. Goal.com. Retrieved 31 March 2013.
  99. "Spain's 2010 conquerors in numbers"। FIFA.com। ২২ আগস্ট ২০১৭। ১১ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০২০ 
  100. "Argentina's Road to the World Title" (পিডিএফ)fifa.com। FIFA। পৃষ্ঠা 228। ১৪ জুন ২০১০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০২০ 
  101. "Adidas Golden Ball Winners" from ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ মে ২০১২ তারিখে. FIFA.com (14 November 2012). Retrieved 31 March 2013.
  102. Pelé and Maradona – two very different number tens ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ জুলাই ২০১৪ তারিখে. FIFA.com (25 January 2001). Retrieved 31 March 2013.
  103. "Maradona was on another level – Zidane"Goal। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০১৮ 
  104. Messi’s Goal Better Than Maradona's Goal of the Century? ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ জুন ২০১০ তারিখে worldrec.info. Retrieved 29 January 2009.
  105. "From spectacular to scandalous: Maradona's World Cup legacy". ESPN. Retrieved 14 May 2014
  106. Baxter, Kevin (৪ জুলাই ২০১৪)। "Argentina's Lionel Messi still has one man to beat"The Los Angeles Times। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০২০ 
  107. Goff, Steven (৪ জুলাই ২০১৪)। "It's Argentina vs. Belgium in the World Cup, but always Lionel Messi vs. Diego Maradona"The Washington Post। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০২০ 
  108. Thomas, Russell (৬ জুন ২০০২)। "England's past four World Cup clashes with Argentina"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০২০ 
  109. Molinaro, John F. (২১ নভেম্বর ২০০৯)। "1986 World Cup: The Diego Maradona Show"CBC Sports। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০২০ 
  110. Molinaro, John (৯ জুন ২০১৮)। "History of the World Cup: 1986 – Maradona puts on a show in Mexico"। Sportsnet। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০২০ 
  111. "World Cup 1990".ESPN. Retrieved 24 April 2014
  112. "After Second Test, Maradona Is Out of World Cup"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  113. Jon Carter (26 May 2010)। "First XI: World Cup celebrations"ESPN। 3 –June 2010 তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |আর্কাইভের-তারিখ= (সাহায্য)
  114. "Argentina's tribute to Maradona". BBC. Retrieved 14 May 2014
  115. "Diego Maradona – I was there" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ জুন ২০১৫ তারিখে. FIFA.com. Retrieved 23 June 2014
  116. Siregar, Cady (১১ জুন ২০১৯)। "What is a false nine? Messi, Hazard & how the attacking role works"। Goal.com। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২০ 
  117. Wilson, Jonathan (২৭ মে ২০১০)। "Maradona the coach can learn from experience of Maradona the player"। Sports Illustrated। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২০ 
  118. Wilson, Jonathan (১৯ নভেম্বর ২০০৮)। "The Question: is 3-5-2 dead?"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২০ 
  119. Doyle, John (২৯ জুন ২০১৮)। "Lionel Messi plays for Argentina but he is not a traditional Argentine player"The Globe and Mail। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২০ 
  120. Barra, Allen (১২ জুলাই ২০১৪)। "Germany, Argentina, and What Really Makes a World Cup Team"The Atlantic। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২০ 
  121. David Patrick Houghton (2008). "Political Psychology: Situations, Individuals, and Cases". p. 43. Routledge, 2008
  122. Susan Ratcliffe (2001). "People on People: The Oxford Dictionary of Biographical Quotations". p. 234. Oxford University Press, 2001
  123. Gullit, Ruud (১৪ মে ২০১০)। "Perfect 10s"। ESPN FC। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০২০ 
  124. Khazan, Olga (১২ জুন ২০১৪)। "Why Being Short Can Help in Soccer"The Atlantic। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০২০ 
  125. "Maradona? Really?"Montreal Gazette। ২৯ অক্টোবর ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২০ 
  126. Burns, Jimmy (৯ জুলাই ২০১৪)। "World Cup Legends #1: Diego Maradona"Esquire। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২০ 
  127. Yannis, Alex (২৩ জুন ১৯৯৪)। "WORLD CUP '94; Maradona Lets Feet Talk for Him"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২০ 
  128. Gorney, Cynthia (৯ আগস্ট ১৯৮১)। "!Maradona!"The Washington Post। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২০ 
  129. Allan Jiang (২৫ জানুয়ারি ২০১২)। "50 Greatest Dribblers in World Football History"Bleacher Report। সংগ্রহের তারিখ ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  130. Scott Murray (১৫ অক্টোবর ২০১০)। "The Joy of Six: Great dribbles"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ 
  131. "Messi's a world treasure says Johan Cruyff" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ এপ্রিল ২০১২ তারিখে. The Mirror. Retrieved 1 August 2014
  132. "We Missed the Premier League, Too: The Legendary Career of Thierry Henry"NBC4 Washington। ২৪ জুন ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০২০ 
  133. Maradona's World Cup magic. BBC Sport (19 April 2004). Retrieved 18 August 2006.
  134. Staff, Guardian (১৯ এপ্রিল ২০০৪)। "Recall the best not the worst of Maradona, says David Lacey"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০২০ 
  135. Doyle, Mark (২৭ মার্চ ২০২০)। "Mythbuster: 'Messi is not Maradona' - Did Diego win the World Cup on his own?"। Goal.com। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০২০ 
  136. Lowenstein, Stephen (২০০৯)। My First Movie, Take Two: Ten Celebrated Directors Talk About Their First Film (ইংরেজি ভাষায়)। Knopf Doubleday Publishing Group। পৃষ্ঠা xi। আইএসবিএন 978-1-4000-7990-2। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০২০ 
  137. "World Cup’s top 100 footballers: how to choose between Pelé and Maradona?". The Guardian. Retrieved 24 June 2014
  138. John H Kerr (2004). "Motivation And Emotion in Sport". p. 2. Taylor & Francis,
  139. Zavala, Steve (১৭ আগস্ট ২০১৭)। "Top 20 Soccer Players of All-Time"। Medium। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২০ 
  140. "Sacchi: "Maradona il più grande Il Milan voleva prenderlo""Il Corriere dello Sport (Italian ভাষায়)। ৩০ অক্টোবর ২০১০। ২৬ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২০ 
  141. "Does Diego still have the touch of a leader?"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুলাই ২০১৮ 
  142. "Messi lacks Maradona's charisma, claims Batistuta"Four Four Two। ২৩ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৫ আগস্ট ২০১৮ 
  143. Genta, Carlo (৩০ অক্টোবর ২০০৮)। "Maradona, il ct dei sogni che può vincere il Mondiale"Il Sole 24 Ore (Italian ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২০ 
  144. "Enraptured by 'rabonas'"। FIFA.com। ২৪ অক্টোবর ২০১৪। ৮ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০১৬ 
  145. Robin Hackett (১৭ জানুয়ারি ২০১৩)। "The art of rabona"। ESPN FC। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০১৬ 
  146. "Free kick expert Maradona leads by example" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে. Reuters. Retrieved 19 May 2014
  147. "Tension from 12 yards"। FIFA.com। ৩১ জুলাই ২০০৯। ৮ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০১৬ 
  148. Hersh, Phil (২৫ জুন ১৯৮৬)। "Soccer Celebrates its 'San' Diego"The Chicago Tribune। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০২০ 
  149. "Kings of the free-kick" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ মে ২০১৫ তারিখে. FIFA.com. Retrieved 20 May 2014
  150. Matchett, Karl (৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। "Where Does Lionel Messi Rank Among the Greatest Free-Kick Takers of All Time?"। bleacherreport.com। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০১৯ 
  151. Giancarlo, Galavotti (২৬ জানুয়ারি ১৯৯৯)। "Zola applaude Mihajlovic: "E' il piu' completo"" [Zola applauds Mihajlovic: "He is the most complete"]। La Gazzetta dello Sport (Italian ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০২০ 
  152. Lara, Lorenzo; Mogollo, Álvaro; Wilson, Emily (২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮)। "Messi and the other best freekick takers in football history"। Marca। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০২০ 
  153. "Del Piero? Tira alla Platini" (Italian ভাষায়)। Il Corriere della Sera। ২৪ অক্টোবর ১৯৯৫। পৃষ্ঠা 44। ৬ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  154. Cetta, Luca (১৯ মার্চ ২০১৪)। "Free-kick master Pirlo"। Football Italia। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০২০ 
  155. Sanderson, Tom (১০ নভেম্বর ২০১৯)। "Dead Ball Genius: How Messi Learned From Maradona, Ronaldinho And Deco To Become The Game's Greatest Free-Kick Taker"Forbes। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০২০ 
  156. "El maestro Maradona: football legend to be Argentina manager". The Guardian. Retrieved 19 May 2014
  157. Geoff Tibballs (2003). "Great Sporting Scandals". p. 227. Robson, 2003
  158. "Maradona scores $1800-a-seat ticket sales, proving the bad boys of sport are hard to match". Sydney Morning Herald. Retrieved 19 May 2014
  159. "13 June 1990: Diego Maradona's other World Cup handball". The Guardian. Retrieved 3 February 2015
  160. "World Cup Legends #1: Diego Maradona" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে. Esquire. Retrieved 3 February 2015
  161. "Argentina coach Diego Maradona writes another chapter in a turbulent life". The Telegraph. Retrieved 3 February 2015
  162. Taylor, Chris (9 November 2005). "A Big Hand". The Guardian. Retrieved 3 February 2015
  163. Jimmy Burns (2011). "Maradona: The Hand of God". p. 17. A&C Black
  164. Marco Azzi (১৩ নভেম্বর ২০০৬)। "Rabona, ' o tocco magico di Diego" [Rabona, Diego's magic touch]। La Repubblica (Italian ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৯ এপ্রিল ২০১৬ 
  165. Brian Glanville (2010). "The Story of the World Cup: The Essential Companion to South Africa 2010". p. 320. Faber & Faber
  166. Interview with Jorge Valdano. el-mundo.es (2001) (in Spanish).
  167. "ICON: When Diego Maradona fought an exhibition boxing match for charity back in 1996 and jokingly attacked the referee"talksport.com। ২৫ নভেম্বর ২০২০। 
  168. Maradona 'tells all' in autobiography. Associated Press. 20 December 2000.
  169. Garcia, Anne-Marie (21 February 2002) Maradona donates royalties from Cuban edition of his book. granma.cu.
  170. "Maradona or Pele?" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে. CNN Sports Illustrated. Retrieved 26 June 2014
  171. IFFHS' Century Elections. Rec.Sport.Soccer Statistics Foundation.com (30 January 2000). Retrieved 31 March 2013.
  172. Argentina can't retire Maradona's shirt ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৫ মার্চ ২০০৩ তারিখে ESPNsoccernet.com, 26 May 2002. Retrieved 18 August 2006.
  173. Hamilton, Fiona (২২ মার্চ ২০১০)। "The ten greatest World Cup playersbr No 1 Diego Maradona Argentina"The Times। London। ৩০ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১০ 
  174. White, Duncan (29 October 2011). "Jay Bothroyd puts good times with playboy Saadi Gaddafi, son of dead Libya tyrant Colonel Gaddafi, behind him". National Post. Retrieved 31 March 2012
  175. "Maradona sends Calcutta into frenzy". BBC. Retrieved 26 June 2014
  176. 'El Diez emprende dos nuevos desafíos', ESPN Deportes (28 July 2005). Retrieved 17 August 2005.
  177. "Roberto Durán estuvo con Diego Maradona" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে. Prensa.com. Retrieved 2 September 2014
  178. "Tyson Must Return to Brazil for Trial". Washington Post. Retrieved 13 May 2014
  179. "Maradona Rejects Role With Argentina Team"The New York Times। Reuters। ১০ নভেম্বর ২০০৫। 
  180. "Maradona scores but England win UNICEF match ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ মার্চ ২০০৭ তারিখে", Yahoo!-FIFA
  181. 'El Diego quits his beloved Boca', FIFA News (26 August 2006). Retrieved 26 August 2006 . [অকার্যকর সংযোগ]
  182. "Maradona by Kusturica".. The Independent. Retrieved 2 June 2014
  183. "Interreligious Match for Peace: 1/9/2014"। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  184. "Il Papa a Maradona: "Ti aspettavo". Diego show con Baggio, poi si infuria: "Icardi non-doveva giocare""La Gazzetta dello Sport। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  185. "29 Years on from the Infamous Argentina-England Match, Maradona holds up his hands in apology", Marca.com, ১৭ আগস্ট ২০১৫ 
  186. "Maradona visits Tunisian referee who awarded him 1986 "Hand of God" goal", El Pais, ১৮ আগস্ট ২০১৫ 
  187. Murray, Andrew (২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭)। "FourFourTwo's 100 Greatest Footballers EVER: No.1, Diego Maradona"। FourFourTwo। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  188. "Pele or Maradona, who is the greatest?"। BBC Sport। ২২ অক্টোবর ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০২০ 
  189. Brewin, Joe (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০)। "10 of Diego Maradona's best moments: the greatest player of all time?"। FourFourTwo। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০২০ 
  190. Vinay, Adarsh (১৬ জানুয়ারি ২০০৮)। "Pelé or Diego Maradona: Who is the Greatest Soccer Player of All Time?"। Bleacher Report। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০২০ 
  191. Kane, Desmond (২৩ মার্চ ২০১৬)। "The top five players of all time - where does Johan Cruyff rank on our list of greats?"। Eurosport। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০২০ 
  192. "That's one hell of a diet, Diego"The Guardian। ৮ জানুয়ারি ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২০ 
  193. Marino, Giovanni (৮ মে ২০১৮)। "I mille colori di Maradona in bianco e nero"La Repubblica (Italian ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২০ 
  194. "Napoli, Carnevale racconta: "Maradona una volta si presentò un'ora prima di giocare"" (Italian ভাষায়)। sport.sky.it। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২০ 
  195. Corbetta, Vincenzo (৪ অক্টোবর ২০১৮)। "Bianchi, passione e rigore di un vincente"Brescia Oggi (Italian ভাষায়)। ২৯ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০২০ 
  196. "Bianchi: "Messi? Gioca in un Barcellona perfetto, mentre Diego...""Tutto Napoli (Italian ভাষায়)। ৯ মার্চ ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০২০ 
  197. Vecsey, George (২৭ মে ১৯৯০)। "Soccer's Little Big Man"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২০ 
  198. Landolina, Salvatore (১০ জুন ২০১১)। "Diego Maradona made excuses to dodge Napoli training - Luciano Moggi"। Goal.com। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২০ 
  199. Moore, Nick (৩০ জুন ২০০৭)। "Marcel Desailly: Perfect XI"। FourFourTwo। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২০ 
  200. Hill, Steve (১০ এপ্রিল ২০২০)। "When the poorest city in Italy bought the world's most expensive player: What the Diego Maradona movie teaches us about one of football's greats"। FourFourTwo। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২০ 
  201. Tyers, Alan (২২ মার্চ ২০২০)। "Maradona, the magic, the madness: takeaways from Diego Maradona film on Channel 4"The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০২০ 
  202. Phull, Hardeep (২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯)। "How cocaine, fame and the Mafia destroyed Diego Maradona"The New York Post। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২০ 
  203. Alarcón, Daniel (১৩ অক্টোবর ২০১৯)। "The Tragedy of Diego Maradona, One of Soccer's Greatest Stars"The New Yorker। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২০ 
  204. Gore, Will (২৭ জুন ২০১৮)। "The reason we English dislike Maradona so much is because we've never got over the Falklands War"The Independent। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২০ 
  205. "Germany hammers Argentina 4-0 to reach World Cup semis"CTV News। ৩ জুলাই ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২০ 
  206. Pellizzari, Tommaso (২৯ নভেম্বর ২০১৯)। "Diego Maradona, fenomenologia del campione delle contraddizioni"Il Corriere della Sera (Italian ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২০ 
  207. Agnew, Paddy (১৮ জানুয়ারি ২০০৫)। "Evergreen Maldini still the soul of the Rossoneri"The Irish Times। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০২০ 
  208. "Ho pianto per Radice. Maradona il più forte di sempre, ma a Van Basten è stato ancora più difficile prendere la palla"Il Corriere dello Sport (Italian ভাষায়)। ২২ নভেম্বর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৯ 
  209. "World Soccer Players of the Century"। World Soccer। সংগ্রহের তারিখ ২৯ আগস্ট ২০১৪ 
  210. "Pelè è più forte di Maradona, Zidane 3°, Baggio 9°: i migliori 10 secondo la Fifa" [Pelè better than Maradona, Zidane 3rd, Baggio 9th: the best 10s according to FIFA]। La Gazzetta dello Sport (Italian ভাষায়)। ২ মার্চ ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ 
  211. George Arnett; Ami Sedghi (২৯ মে ২০১৪)। "The World Cup's top 100 footballers: by nationality, goals scored and votes"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  212. “Ranked! The 25 best World Cup players EVER” ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ জুন ২০১৮ তারিখে. Four Four Two. Retrieved 28 July 2018
  213. Gallagher, Jack (২৭ মার্চ ২০২০)। "Diego Maradona: The Extremes of Footballing Morality & the Greatest of All Time"। www.90min.com। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুন ২০২০ 
  214. Solhekol, Kaveh; Sheth, Dharmesh (৩০ মে ২০২০)। "Ronaldo, Eric Cantona, Zlatan Ibrahimovic: The best players never to win Champions League 25-1"। Sky Sports। সংগ্রহের তারিখ ১ জুন ২০২০ 
  215. "Diego Maradona fired as Al Wasl coach"San Francisco Chronicle। ১০ জুলাই ২০১২। ১২ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১২ 
  216. "Maradona wants to hold talks to save Al Wasl job"The Times of India। ১২ জুলাই ২০১২। 
  217. Staff। "Angulo hat-trick helps get Maradona off to winning start in Mexico"Channel NewsAsia। ২৯ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০২০ 
  218. "Maradona out as Dorados manager, cites health"ESPN। ১৪ জুন ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০১৯ 
  219. "Diego Maradona leaves Gimnasia de La Plata after just two months"Sky Sports। সংগ্রহের তারিখ ২০ নভেম্বর ২০১৯ 
  220. "Diego Maradona announces Gimnasia return - two days after quitting"। BBC। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৯ 
  221. Scandolo, Ramiro (২১ নভেম্বর ২০১৯)। "Maradona to stay on at Gimnasia"। Reuters। ২৮ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৯ 
  222. "Maradona returns as Gimnasia head coach, two days after stepping down"। Yahoo Sports। ২২ নভেম্বর ২০১৯। ২৯ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৯ 
  223. "Maradona pledges future to Gimnasia after club elections - Xinhua | English.news.cn"www.xinhuanet.com। ২৮ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০২০ 
  224. "Maradona keeps Gimnasia gig despite struggles"ESPN.com। ৩ জুন ২০২০। 
  225. Campbell, Andy (১৯ নভেম্বর ২০০৮)। "Scotland 0–1 Argentina"BBC Sport। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০১০ 
  226. "Last-gasp Palermo wins it in the rain"। ESPN। ১০ অক্টোবর ২০০৯। ২৩ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০০৯ 
  227. "Late winner puts Argentina in World Cup finals"। CNN। ১৪ অক্টোবর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০০৯ 
  228. World Cup 2010 (১৫ অক্টোবর ২০০৯)। "Diego Maradona Tells Press To 'Suck It' After Argentina Triumph Over Uruguay"। Goal.com। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১০ 
  229. "Maradona hit with two-month ban"BBC Sport। London। ১৫ নভেম্বর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০০৯ 
  230. Dawkes, Phil (১২ জুন ২০১০)। "Argentina 1–0 Nigeria"BBC Sport। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১০ 
  231. Stevenson, Jonathan (১৭ জুন ২০১০)। "Argentina 4–1 South Korea"BBC Sport। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১০ 
  232. "Maradona's men in top spot"ESPNsoccernetESPN। ২২ জুন ২০১০। ৪ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০১০ 
  233. Longman, Jeré (৩ জুন ২০১০)। "Germany Shows Its Strength"The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১০ 
  234. "Sad Maradona considers quitting"BBC Sport। ৪ জুলাই ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০১০ 
  235. "Argentina to offer Diego Maradona new four-year deal"BBC Sport। ১৫ জুলাই ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১৫ জুলাই ২০১০ 
  236. "Diego Maradona departs as manager of Argentina"The Guardian। London। Press Association। ২৭ জুলাই ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১০ 
  237. "'Betrayed' Maradona lashes out at AFA"ESPNsoccernetESPN। ২৯ জুলাই ২০১০। ৩ আগস্ট ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুলাই ২০১০ 
  238. "Hand of God: The Life of Diego Maradona, Soccer's Fallen Star"Globe Pequot। ৩ জুলাই ২০১০। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১৩ [পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
  239. "True Stories – Maradona 1/7"। YouTube। ৪ জুলাই ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১৩ 
  240. "MARADONA HRVAT: "Maradona je iz Praputnjaka, a ne s Korčule"" (ক্রোয়েশীয় ভাষায়)। ২৭ জুন ২০১০। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১৩ 
  241. Batson, Chris (২০২০-১১-২৫)। "Diego Maradona — his life in pictures"Financial Times। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-২৭ 
  242. La Liga (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯)। "Diego Maradona Becomes A Grandfather As Sergio Aguero Junior Is Born"। Goal.com। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১০ 
  243. "La historia del sobrino de Maradona que juega en River: su polémica llegada al club y su particular parecido con el tío"La Nación। ৩ মে ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১৯ 
  244. ESPN Deportes – "Llega en son de paz". ESPN. Retrieved 19 May 2006
  245. Clarin.com – "Había una vez... un elenco para la selección" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ এপ্রিল ২০২২ তারিখে. Clarin. Retrieved 19 May 2006
  246. Clarin.com – "Dalma Maradona: diario de una princesa" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩০ এপ্রিল ২০১০ তারিখে. Clarin. Retrieved 19 May 2006
  247. ESPN Deportes – "El amor al ídolo". ESPN. Retrieved 19 May 2006
  248. "Diego Maradona Junior"। Resport.it। ৬ অক্টোবর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১০ 
  249. "Diego Maradona secretly filmed 'beating' his girlfriend after row over mobile phone"ITV News। ২৭ নভেম্বর ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২০ 
  250. Smith, Joan (২৭ নভেম্বর ২০২০)। "Tributes to Diego Maradona show how easily violence against women is ignored"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২৭ নভেম্বর ২০২০ 
  251. "Prima Dona"Sports Illustrated। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৮ 
  252. “Diego Maradona’s father Don Diego dies aged 87”. The Guardian. Retrieved 19 August 2018
  253. "Diego Maradona treated by paramedics after appearing to collapse at Argentina vs Nigeria World Cup 2018 game"The Independent। ২৭ জুন ২০১৮। 
  254. Maradona's fall from grace John May, 19 April 2004, BBC Sport. Retrieved 18 August 2006.
  255. "The New York Times: SOCCER; Maradona Sentenced"AP via New York Times। ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯১। 
  256. Firpo, Hernán (২ এপ্রিল ২০২০)। "El éxito que llegó de España La extraña historia de Mi enfermedad, o cuando Fabiana Cantilo resucitó a Andrés Calamaro"Clarin (Spanish ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০২০ 
  257. "Maradona has surgery on stomach"। BBC। ৬ মার্চ ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০১০ 
  258. Associated Press। "Maradona's gastric bypass inspires obese Colombians"। ESPN। ৯ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০১০ 
  259. "Maradona treated for alcoholism". BBC. Retrieved 1 February 2015
  260. Calegari, Rodrigo (26 April 2007). "Malas lenguas" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯ তারিখে. Diario Olé (স্পেনীয়)
  261. "Maradona leaves alcoholism clinic"BBC News। ৭ মে ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০১০ 
  262. "Maradona says he no longer drinks" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃ