মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মধ্যভাগের দেশ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইংরেজি: United States of America; উচ্চারণ: ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা) উত্তর আমেরিকা মহাদেশে অবস্থিত পঞ্চাশটি অঙ্গরাজ্য, একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় জেলা ও পাঁচটি অঞ্চল এবং কিছু ক্ষুদ্র বহিঃস্থ দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত যুক্তরাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র। এই দেশটি "আমেরিকা" নামেও পরিচিত। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মধ্যভাগে অবস্থিত আটচল্লিশটি অঙ্গরাজ্যরাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি অঞ্চলসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডটি পশ্চিমে প্রশান্ত ও পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগরদ্বয়ের মধ্যস্থলে অবস্থিত; এই অঞ্চলের উত্তরে কানাডা ও দক্ষিণে মেক্সিকো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের উত্তর-পশ্চিম কোণে অবস্থিত; আলাস্কার পূর্ব সীমান্তে কানাডা ও পশ্চিমে বেরিং প্রণালী পেরিয়ে রাশিয়া অবস্থিত। হাওয়াই অঙ্গরাজ্যটি মধ্য-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত একটি দ্বীপপুঞ্জ। এছাড়াও ক্যারিবীয় সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে পাঁচটি টেরিটরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধীন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

আমেরিকার জাতীয় পতাকা
পতাকা
আমেরিকার জাতীয় প্রতীক
জাতীয় প্রতীক
নীতিবাক্য: 
Other traditional mottos:

রাজধানীওয়াশিংটন, ডি.সি.
৩৮°৫৩′ উত্তর ৭৭°০১′ পশ্চিম / ৩৮.৮৮৩° উত্তর ৭৭.০১৭° পশ্চিম / 38.883; -77.017
বৃহত্তম নগরীনিউ ইয়র্ক শহর
৪০°৪৩′ উত্তর ৭৪°০০′ পশ্চিম / ৪০.৭১৭° উত্তর ৭৪.০০০° পশ্চিম / 40.717; -74.000
সরকারি ভাষাযুক্তরাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নির্ধারিত নয়[]
জাতীয় ভাষাইংরেজি
নৃগোষ্ঠী
(২০২০)[][][১০]
বর্ণগতভাবে:

জাতিগতভাবে:
জাতীয়তাসূচক বিশেষণমার্কিন, মার্কিনী, আমেরিকান
সরকারযুক্তরাষ্ট্রীয় রাষ্ট্রপতি-শাসিত সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র
জো বাইডেন (D)
কমলা হ্যারিস (D)
মাইক জনসন (R)
জন রবার্টস
আইন-সভাকংগ্রেস
সিনেট
হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস
স্বাধীনতা 
৪ জুলাই, ১৭৭৬
১ মার্চ, ১৭৮১
৩ সেপ্টেম্বর, ১৭৮৩
২১ জুন, ১৭৮৮
২৫ সেপ্টেম্বর, ১৭৮৯
• সর্বশেষ প্রদেশ সংযুক্তি
২১ আগস্ট, ১৯৫৯
৫ মে, ১৯৯২
আয়তন
• মোট আয়তন
৯৮,৩৩,৫১৬ কিমি (৩৭,৯৬,৭৪২ মা)[][১১] (৩য়/৪র্থ)
• পানি (%)
৪.৬৬ (২০১৫ অনুযায়ী)[১২]
• মোট স্থলজ আয়তন
৩৫,৩১,৯০৫ মা (৯১,৪৭,৫৯০ কিমি)
জনসংখ্যা
• ২০২০ আদমশুমারি
৩৩,১৪,৪৯,২৮১[][১৩] (৩য়)
• ঘনত্ব
৩৫.০/কিমি (৯০.৬/বর্গমাইল) (১৪৬তম)
জিডিপি (পিপিপি)২০২২ আনুমানিক
• মোট
বৃদ্ধি $২৫.৩৫ ট্রিলিয়ন[১৪] (২য়)
• মাথাপিছু
বৃদ্ধি $৭৬,০২৭[১৪] (৮ম)
জিডিপি (মনোনীত)২০২২ আনুমানিক
• মোট
বৃদ্ধি $২৫.৩৫ ট্রিলিয়ন[১৪] (১ম)
• মাথাপিছু
বৃদ্ধি $৭৬০২৭[১৪] (৮ম)
জিনি (২০২২)নেতিবাচক বৃদ্ধি ৪৬.৯[১৫]
উচ্চ
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৯)বৃদ্ধি ০.৯২১[১৬]
অতি উচ্চ · ১৭তম
মুদ্রামার্কিন ডলার ($) (USD)
সময় অঞ্চলইউটিসি−৪ থেকে −১২, +১০, +১১
• গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি)
ইউটিসি-৪ থেকে -১০[]
তারিখ বিন্যাস
  • mm/dd/yyyy
  • yyyy-mm-dd
গাড়ী চালনার দিকডান[]
কলিং কোড+১
আইএসও ৩১৬৬ কোডUS
ইন্টারনেট টিএলডি
জেনেরিক টপ-লেভেল ডোমেইন
[১৭] .com, .org, .net, .edu, .gov, .mil
ccTLD (যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত ব্যবহৃত হয় না)
.us, .pr, .as, .gu, .mp, .vi এবং, পূর্বে, .um (২০০৮ সালে ICANN কর্তৃক অপসারিত হয়েছে, কিন্তু এখনও ccTLD হিসাবে মার্কিন সরকার কর্তৃক স্বীকৃত)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আয়তন প্রায় ৯৮.৩ লক্ষ বর্গকিলোমিটার (৩৭.৯ লক্ষ বর্গমাইল)। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৩২ কোটি ৮২ লক্ষ[১৮] । সামগ্রিক আয়তনের হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের তৃতীয় অথবা চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র। আবার স্থলভূমির আয়তন ও জনসংখ্যার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বৈচিত্র্যমণ্ডিত বহুজাতিক সমাজব্যবস্থা। বহু দেশ থেকে বিভিন্ন জাতির মানুষের অভিবাসনের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ একটি বহুসংস্কৃতিবাদী দেশ।[১৯] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বিশ্বের বৃহত্তম জাতীয় অর্থনীতি। ২০০৮ সালে দেশের আনুমানিক জিডিপি হার ছিল ১৪.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (নামমাত্র বিশ্ব জিডিপির এক চতুর্থাংশ এবং ক্রয় ক্ষমতা সমতায় বিশ্ব জিডিপির এক পঞ্চমাংশ)।[২০][২১]

আমেরিকার আদিম অধিবাসীরা সম্ভবত এশীয় বংশোদ্ভুত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে এরা কয়েক হাজার বছর ধরে বসবাস করছে। তবে নেটিভ আমেরিকানদের জনসংখ্যা ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের পর থেকে মহামারী ও যুদ্ধবিগ্রহের প্রকোপে ব্যাপক হ্রাস পায়। প্রাথমিক পর্যায়ে আটলান্টিক মহাসাগর তীরস্থ উত্তর আমেরিকার তেরোটি ব্রিটিশ উপনিবেশ নিয়ে গঠিত হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই এই উপনিবেশগুলি একটি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করে। এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে উপনিবেশগুলি তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ঘোষণা করে এবং একটি সমবায় সংঘের প্রতিষ্ঠা করে। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে এই বিদ্রোহী রাজ্যগুলি গ্রেট ব্রিটেনকে পরাস্ত করে। এই যুদ্ধ ছিল ঔপনিবেশিকতার ইতিহাসে প্রথম সফল ঔপনিবেশিক স্বাধীনতা যুদ্ধ।[২২] ১৭৮৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ক্যালিফোর্নিয়া কনভেনশন বর্তমান মার্কিন সংবিধানটি গ্রহণ করে। পরের বছর এই সংবিধান সাক্ষরিত হলে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার সহ একক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। ১৭৯১ সালে সাক্ষরিত এবং দশটি সংবিধান সংশোধনী সংবলিত বিল অফ রাইটস একাধিক মৌলিক নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করে।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য, মেক্সিকো ও রাশিয়ার থেকে জমি অধিগ্রহণ করে এবং টেক্সাস প্রজাতন্ত্র ও হাওয়াই প্রজাতন্ত্র অধিকার করে নেয়। ১৮৬০-এর দশকে রাজ্যসমূহের অধিকার ও দাসপ্রথার বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ দক্ষিণাঞ্চল ও শিল্পোন্নত উত্তরাঞ্চলের বিবাদ এক গৃহযুদ্ধের জন্ম দেয়। উত্তরাঞ্চলের বিজয়ের ফলে দেশের চিরস্থায়ী বিভাজন রোধ করা সম্ভব হয়। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা আইনত রদ করা হয়। ১৮৭০-এর দশকেই মার্কিন অর্থনীতি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির শিরোপা পায়।[২৩] স্পেন-মার্কিন যুদ্ধপ্রথম বিশ্বযুদ্ধ সামরিক শক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠা দান করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই দেশ প্রথম পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ লাভ করে। শীতল যুদ্ধের শেষভাগে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একমাত্র মহাশক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়। বিশ্বের মোট সামরিক ব্যয়ের দুই-পঞ্চমাংশ খরচ করে এই দেশ। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক শক্তিধর রাষ্ট্র।[২৪] ১৯৩০ এর দশকে ও একবিংশ শতকের প্রথম দশকের শেষে আমেরিকার অর্থনীতি 'অর্থনেতিক মহামন্দা' বা 'গ্রেট ডিপ্রেশন'র শিকার হয়।

নামকরণ

১৫০৭ সালে জার্মান মানচিত্রকর মার্টিন ওয়াল্ডসিম্যুলার বিশ্বের একটি মানচিত্র প্রকাশ করেন। এই মানচিত্রে তিনি ইতালীয় আবিষ্কারক ও মানচিত্রকর আমেরিগো ভেসপুচির নামানুসারে পশ্চিম গোলার্ধের নামকরণ করেন "আমেরিকা"[২৫] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে পূর্বতন ব্রিটিশ উপনিবেশগুলি প্রথম দেশের আধুনিক নামটি ব্যবহার করে। ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই "unanimous Declaration of the thirteen united States of America" নামে এই ঘোষণাপত্রটি "Representatives of the united States of America" কর্তৃক গৃহীত হয়।[২৬] ১৭৭৭ সালের ১৫ নভেম্বর দ্বিতীয় মহাদেশীয় কংগ্রেসে আর্টিকলস অফ কনফেডারেশন বিধিবদ্ধকরণের মাধ্যমে বর্তমান নামটি চূড়ান্ত হয়। এই আর্টিকেলে বলা হয়েছিল: "The Stile of this Confederacy shall be 'The United States of America.'" সংক্ষিপ্ত নাম হিসেবে the United States নামটি প্রামাণ্য। অন্যান্য প্রচলিত নামগুলি হল the U.S., the USA, ও America। কথ্য নামগুলি হল the U.S. of A.the Statesক্রিস্টোফার কলম্বাসের নামানুসারে কলম্বিয়া নামটি এককালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হত। "ডিস্ট্রিক্ট অফ কলম্বিয়া" নামের মধ্যে এই নামটির আজও অস্তিত্ব রয়েছে।

মার্কিন নাগরিকেরা বাংলা ভাষায় "মার্কিনী" নামে পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সংক্রান্ত বিশেষণ হিসেবে "মার্কিন" শব্দটি ব্যবহার করা হয়।[২৭]

ইতিহাস

আদি আমেরিকান ও ইউরোপীয় উপনিবেশ

 
১১৯০ থেকে ১২৬০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আমেরিকান পিউব্লোয়ানদের দ্বারা নির্মিত ক্লিফ প্যালেস

যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূমি এবং আলাস্কাতে বর্তমানে যে আদিবাসীরা বাস করে তারা এশিয়া থেকে অভিবাসী হয়ে এ অঞ্চলে এসেছিল। তারা আজ থেকে প্রায় ৪০,০০০ বছর আগে থেকে আসা শুরু করেছিল বলে ধারণা করা হয়। কমপক্ষে ১২,০০০ বছর আগে তাদের আসার ব্যাপারটি তো প্রায় নিশ্চিত। প্রাক-কলাম্বীয় যুগের অনেক আদিবাসী সম্প্রদায়ই অগ্রসর কৃষি, স্থাপত্য এবং রাজ্য-সদৃশ সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। ইউরোপীয় অভিযাত্রী ক্রিস্টোফার কলম্বাস ১৪৯২ সালের নভেম্বর ১৯ তারিখে আমেরিকা অঞ্চলের পুয়ের্তো রিকোতে এসেছিলেন। এর মাধ্যমে আদিবাসী আমেরিকানদের সাথে ইউরোপীয়দের প্রথম পরিচয় হয়। এর পর অধিকাংশ আমেরিকান আদিবাসীরাই ইউরেশিয়া অঞ্চলের মহামারী রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

ঔপনিবেশিক আমেরিকা

সে সময় আমেরিকায় ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনকারীদের বাসস্থান ছিল মূল ফ্লোরিডায়। সেই ঔপরিবেশিক উপনিবেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে কেবল ১৫৬৫ সালে স্থাপিত সেন্ট অগাস্টিন উপনিবেশটিই টিকে আছে। এছাড়া ফরাসি পশুর লোম ব্যবসায়ীরা গ্রেট লেক্‌সের নিকটে নিউ ফ্রান্স নামক একটি বাসস্থল গড়ে তুলেছিল। এর পরে স্পেনীয়রা বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে বিস্তৃত উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে। এই অঞ্চল বর্তমান মেক্সিকোর অন্তর্গত। প্রথম সফল ইংরেজ উপনিবেশ ছিল ১৬০৭ সালে জেম্‌সটাউনে প্রতিষ্ঠিত ভার্জিনিয়া উপনিবেশ এবং ১৬২০ সালে প্রতিষ্ঠিত প্লিমাথ (ইংরেজি: Plymouth) উপনিবেশ। ১৬২৮ সালে ম্যাসাচুসেট্‌স বে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে উপর্যুপরি অর্থায়নের পর ইংরেজদের মধ্যে অভিবাসনের জোয়ার বয়ে যায়। ১৬৩৪ সালের মধ্যে নিউ ইংল্যান্ডে প্রায় ১০,০০০ পিউরিটান বাসস্থান গড়ে তোলে। ১৬১০-এর দশকের শেষ দিকে ব্রিটিশ সেদেশের বিপ্লবীদের মধ্যে ৫০,০০০ জনকে আমেরিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশসমূহে স্থানান্তর করে। ১৬১৪ সাল থেকে নেদারল্যান্ডের উপনিবেশিকরা হাডসন নদীর নিম্নভূমি জুড়ে এবং ম্যানহাটন দ্বীপ ও নিউ আমস্টারডামে বসতি গড়ে তুলেছিল। ১৬৩৮ সালে সুয়েডীয়রা ডেলওয়্যার নদীর পাশ জুড়ে ছোট একটি উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল যার নাম ছিল নিউ সুইডেন। কিন্তু ১৬৫৫ সালে ওলন্দাজরা তা অধিকার করে নেয়।

ফরাসি এবং রেড ইন্ডিয়ান যুদ্ধের মাধ্যমে প্রায় ৭ বছর ধরে ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণ চলতে থাকে। ব্রিটেন ফ্রান্সের কাছ থেকে কানাডা দখল করে নেয়। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলীয় উপনিবেশসমূহ থেকে ফ্রাঙ্কোফোনের জনগণরা রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন ছিল। ১৬৭৪ সালে ইঙ্গ-ডেনীয় যুদ্ধে ওলন্দাজদেরকে পরাজিত করে ব্রিটেন প্রাক্তন ওলন্দাজ উপনিবেশসমূহ দখল করে নেয়। এর পর প্রাক্তন নিউ নেদারল্যান্ডের নাম রাখা হয় নিউ ইয়র্ক১৭২৯ সালে ক্যারোলিনাসমূহের বিভাজন এবং ১৭৩২ সালে জর্জিয়ার উপনিবেশিকীকরণের পর ১৩টি পৃথক পৃথক ব্রিটিশ উপনিবেশ সৃষ্টি হয়। এই ১৩টি উপনিবেশ মিলেই পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করেছিল। যাহোক, এই রাজ্যগুলোর প্রত্যেকটিতে সক্রিয় স্থানীয় এবং উপনিবেশিক সরকার ছিল যা স্বাধীন মানুষদের নির্বাচনের মাধ্যমে জন্ম লাভ করেছিল। রাজ্যগুলোর চেতনার মূলে ছিল ইংরেজদের প্রাচীন অধিকারের প্রতি আত্ম নিবেদন এবং স্ব-নিয়ন্ত্রিত সরকার পদ্ধতির অনুপ্রেরণা যা পরবর্তীকালে প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্ম দেয়। সবগুলো রাজ্যেই আফ্রিকান দাসদের নিয়ে বাণিজ্য করা বৈধতা পেয়েছিল। উচ্চ জন্ম হার, নিম্ন মৃত্যু হার এবং চিরস্থায়ী অভিভাবসনের কারণে উপনিবেশগুলোর জনসংখ্যা প্রতি ২৫ বছরে দ্বিগুণ হয়ে যেতে থাকে।

স্বাধীনতা সংগ্রাম

সরকার ব্যবস্থা

 
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যসমূহ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতিশাসিত যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধান। আইনসভা দ্বিকাক্ষিক, নিম্নকক্ষের নাম হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং এর সদস্যসংখ্যা ৪৩৫। উচ্চকক্ষের নাম সিনেট এবং এর সদস্যসংখ্যা ১০০। ভোট প্রদানের যোগ্যতা অর্জনের বয়স ১৮। ১৭৮৭ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়ন করা হয় এবং ১৭৮৯ সালের ৪ঠা মার্চ থেকে এটি কার্যকর করা হয়। মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়।

প্রায় চার শতাব্দী আগে প্রণীত মার্কিন সরকার ব্যবস্থা সারা বিশ্বের প্রশংসা লাভ করেছে। মার্কিন জীবনের সাথে এটি ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। মার্কিন সরকারব্যবস্থা শুরু থেকেই গণতন্ত্রকে শাসনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করেছে।

মার্কিন সরকার ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রীয়, অঙ্গরাজ্যীয় ও স্থানীয় আইন, এবং এগুলিকে নির্বাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত। ফেডারেল যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের কেন্দ্র ওয়াশিংটন ডিসি-তে অবস্থিত।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের একটি মূলনীতি হল প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র। এই ব্যবস্থায় লোকেরা তাদের নিজেদের নেতা নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের শাসন করে। মার্কিন গণতন্ত্র বেশ কিছু আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত। জনগণকে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত মেনে নিতে হবে। সংখ্যালঘুদের অধিকার সংরক্ষণ করতে হবে। নাগরিকদেরকে আইনি শাসন ব্যবস্থায় বাস করার জন্য সম্মত হতে হবে। মতামত ও ধারণার উন্মুক্ত আদানপ্রদানে কোন বাধার সৃষ্টি করা যাবে না। আইনের চোখে সবাই সমান। সরকার জনগণের সেবায় নিয়োজিত হবে এবং এর ক্ষমতা জনগণের কাছ থেকেই আসবে।

এই আদর্শগুলি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারব্যবস্থা চারটি উপাদান দিয়ে গঠন করা হয়েছে। ১)জনগণের সার্বভৌমত্ব, ২)প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার, ৩)ক্ষমতার পরীক্ষা ও ভারসাম্য (checks and balances) এবং ৪)ফেডারেলবাদ, যেখানে সরকারের বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন ধরনের ক্ষমতা অংশীদারী করা হয়।

ভূগোল

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মধ্যভাগে অবস্থিত। এর উত্তরে কানাডা এবং দক্ষিণে সংযুক্ত মেক্সিকান রাষ্ট্রসমূহ অবস্থিত। পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর এবং পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর দ্বারা বেষ্টিত এই দেশ। এছাড়া হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, আলাস্কা অঙ্গরাজ্য এবং অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন ভূমি এই রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত।

মহাদেশীয় যুক্তরাষ্ট্রের ভূসংস্থানিক মানচিত্র

আয়তনের ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবী তৃতীয় অথবা চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র। এর আগে বা পরে চীনের অবস্থান। কিন্তু একটি অঞ্চল নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে মতবিরোধ থাকায় এই বিষয়ের সুরাহা করা সম্ভব হয়নি। কেবল স্থলভাগের দিক দিয়ে চিন্তা করলে যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র যার আগে কেবল রাশিয়া ও চীন, আর পরে রয়েছে কানাডা। মহাদেশীয় যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা অতি বিস্তৃত, আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত, উত্তরে কানাডা থেকে দক্ষিণে মেক্সিকোমেক্সিকো উপসাগর পর্যন্ত এর সীমার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। আয়তনের ভিত্তিতে এর বৃহত্তম অঙ্গরাজ্য হচ্ছে আলাস্কা। কানাডার মাধ্যমে পৃথকীকৃত এই রাজ্যটি প্রশান্ত ও আর্কটিক মহাসাগরকে স্পর্শ করেছে। উত্তর আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরের বুক অবস্থিত হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ এই দেশেরই অন্তর্ভুক্ত। দেশটির বৃহত্তম এবং সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল পুয়ের্তো রিকো ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলে পাওয়া যায় সবুজ ভূমি ও কৃষি ফসল আবাদের উর্বর অঞ্চল, পাথুরে পাহাড়, তৃণাচ্ছাদিত সামান্য ঢেউ খেলানো বিস্তীর্ণ ভূমি, উত্তর বায়ুর সাথে সামঞ্জস্যশীল বনভূমি দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হচ্ছে পশ্চিমাঞ্চল, আর দক্ষিণ-পশ্চিমে কেবল বিরান মরুভূমি। উত্তর-পশ্চিমে আটলান্টিকের কোল ঘেঁষে অবস্থিত বৃহৎ হ্রদ এলাকায়ই দেশটির অধিকাংশ মানুষের বসতি। গুয়াম অঞ্চল এবং আলাস্কার সবচেয়ে পশ্চিম প্রান্তের কিছু অঞ্চল ছাড়া পুরো দেশটাই উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত।

জনসংখ্যার উপাত্ত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি

  • অস্থায়ী কর্মী ভিসা : এইচ-1A, এইচ -1 B, এইচ-1B1, এইচ-1C, এইচ-2A, এইচ-2B, এইচ-2R, এইচ -3, এইচ -4
  • সাংস্কৃতিক বিনিময় : জে -1, জে-2
  • মার্কিন কর্পোরেশনগুলির বিদেশী কর্মচারী : এল-1, এল- 2

পরিমাপ পদ্ধতি

যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ একক ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। তারা ব্রিটিশদের ব্যবহৃত একক হিসেবে মাইল, গজ এবং ফারেনহাইট ইত্যাদি এককগুলো ব্যবহার করে না।[২৮] এর পরিবর্তে ইউ.এস গ্যালন এবং ইউ.এস পিন্ট পরিমাণের একক হিসেবে ব্যবহার করে। এছাড়াও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর তিনটি দেশের মধ্যে একটি, যারা আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতি ব্যবহার করে না। মেট্রিক পদ্ধতিকে একক হিসেবে ধরে বিজ্ঞান, চিকিৎসা এবং অনেক শিল্পখাতে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করছে।[২৯]

তথ্যসূত্র

  1. টেমপ্লেট:USC
  2. "The Great Seal of the United States" (পিডিএফ)U.S. Department of State, Bureau of Public Affairs। ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০ 
  3. "An Act To make The Star-Spangled Banner the national anthem of the United States of America"। March 3, 1931-এর H.R. 14, আইন71st United States Congress 
  4. Kidder ও Oppenheim 2007, পৃ. 91।
  5. "uscode.house.gov"Public Law 105-225। uscode.house.gov। আগস্ট ১২, ১৯৯৯। পৃষ্ঠা 112 Stat. 1263। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৭Section 304. "The composition by John Philip Sousa entitled 'The Stars and Stripes Forever' is the national march." 
  6. Cobarrubias 1983, পৃ. 195।
  7. García 2011, পৃ. 167।
  8. "2020 Census Illuminates Racial and Ethnic Composition of the Country"United States Census। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৩, ২০২১ 
  9. "Race and Ethnicity in the United States: 2010 Census and 2020 Census"United States Census। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৩, ২০২১ 
  10. "A Breakdown of 2020 Census Demographic Data"NPR। আগস্ট ১৩, ২০২১। 
  11. Areas of the 50 states and the District of Columbia but not Puerto Rico nor other island territories per "State Area Measurements and Internal Point Coordinates"Census.gov। আগস্ট ২০১০। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ৩১, ২০২০reflect base feature updates made in the MAF/TIGER database through August, 2010. 
  12. "Surface water and surface water change"Organisation for Economic Co-operation and Development (OECD)। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১১, ২০২০ 
  13. "Census Bureau's 2020 Population Count"United States Census। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ২৬, ২০২১  The 2020 census is as of April 1, 2020.
  14. "World Economic Outlook Database, October 2020"IMF.orgInternational Monetary Fund। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ৩০, ২০২০ 
  15. "Income inequality in America is the highest it's been since Census Bureau started tracking it, data shows"The Washington Post। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২৭, ২০২০ 
  16. "Human Development Report 2020: The Next Frontier: Human Development and the Anthropocene" (পিডিএফ) (ইংরেজি ভাষায়)। United Nations Development Programme। ডিসেম্বর ১৫, ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ১৫, ২০২০ 
  17. OECD (2004), "Generic Top Level Domain Names: Market Development and Allocation Issues", OECD Digital Economy Papers, No. 84, OECD Publishing, Paris, https://doi.org/10.1787/232630011251.
  18. https://www.census.gov/quickfacts/fact/table/US/PST045219
  19. Adams, J.Q., and Pearlie Strother-Adams (2001). Dealing with Diversity. Chicago: Kendall/Hunt. আইএসবিএন ০-৭৮৭২-৮১৪৫-X.
  20. "World Economic Outlook Database"। International Monetary Fund। ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১০-২৭  অজানা প্যারামিটার |month= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  21. The European Union has a larger collective economy, but is not a single nation.
  22. Dull, Jonathan R. (2003). "Diplomacy of the Revolution, to 1783," p. 352, chap. in A Companion to the American Revolution, ed. Jack P. Greene and J. R. Pole. Maiden, Mass.: Blackwell, pp. 352–361. আইএসবিএন ১-৪০৫১-১৬৭৪-৯.
  23. Maddison, Angus (২০০৬)। "Historical Statistics for the World Economy"। The Groningen Growth and Development Centre, Economics Department of the University of Groningen। ২০২০-১২-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-০৬ 
  24. Cohen, Eliot A. (July/August 2004)। "History and the Hyperpower"Foreign Affairs। ২০০৬-০৮-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 2006-07-14  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য) "Country Profile: United States of America"। BBC News। ২০০৮-০৪-২২। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-০৫-১৮ 
  25. "Cartographer Put 'America' on the Map 500 years Ago"USA Today। ২০০৭-০৪-২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০০৮-১১-৩০ 
  26. "The Charters of Freedom"। National Archives। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৬-২০ 
  27. "Meaning of মার্কিন" 
  28. "English units of measurement". The Columbia Encyclopedia 6th ed. 2001–2007. archived copy.
  29. "Appendix G: Weights and Measures"The World Factbook। CIA। ২০১১-০৪-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৪-০১ 

বহিঃসংযোগ

সরকারী সংযুক্তি
উপাত্ত
History
মানচিত্র


উদ্ধৃতি ত্রুটি: "lower-alpha" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="lower-alpha"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি