ফ্রান্স
ফ্রান্স (ফরাসি: France, উচ্চারণ [fʁɑ̃s] ফ্রঁস) বা আনুষ্ঠানিকভাবে ফরাসি প্রজাতন্ত্র (République française, [ʁepyblik fʁɑ̃sɛːz] রেপ্যুব্লিক ফ্রঁসেজ) পশ্চিম ইউরোপে অবস্থিত একটি দেশ। এর সামুদ্রিক বিভাগ ও অঞ্চলগুলির মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার ফরাসি গায়ানা, উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত সাঁ পিয়ের ও মিকলোঁ দ্বীপপুঞ্জ, ফরাসি পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং ওশেনিয়া ও ভারত মহাসাগরের অসংখ্য দ্বীপ। এর ফলে দেশটি বিশ্বের অন্যতম বড় অসংলগ্ন একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের অধিকারী। ইউরোপের ফ্রান্সের ষড়ভুজাকৃতির মূল ভূখণ্ডের উত্তর-পূর্বে বেলজিয়াম ও লুক্সেমবুর্গ, পূর্বে জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, ইতালি ও মোনাকো, দক্ষিণ-পূর্বে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণ-পশ্চিমে অ্যান্ডোরা ও স্পেন, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর ও উত্তর-পশ্চিমে ইংলিশ চ্যানেল নামক সমুদ্র প্রণালীটি অবস্থিত। ফ্রান্সের আঠারোটি প্রশাসনিক অঞ্চলের (যার মধ্যে পাঁচটি সামুদ্রিক অঞ্চল) আয়তন ৬,৪৩,৮০১ বর্গকিলোমিটার (২,৪৮,৫৭৩ বর্গমাইল) এবং দেশটির মোট জনসংখ্যা ৬ কোটি ৮৪ লক্ষ।[১৩][১৪] ফ্রান্স একটি আধা-রাষ্ট্রপতিশাসিত প্রজাতন্ত্র। প্যারিস দেশটির রাজধানী, বৃহত্তম শহর এবং প্রধান সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
ফরাসি প্রজাতন্ত্র République française | |
---|---|
ফ্রান্স-এর অবস্থান (blue or dark green) – Europe-এ (green & dark grey) | |
রাজধানী | প্যারিস ৪৮°৫১′ উত্তর ২°২১′ পূর্ব / ৪৮.৮৫০° উত্তর ২.৩৫০° পূর্ব |
বৃহত্তম নগরী | capital |
সরকারী ভাষা এবং জাতীয় ভাষা | ফরাসি ভাষা[খ] |
জাতীয়তা (২০২১)[৩] | |
ধর্ম (২০২১)[৪] |
|
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | ফরাসি |
সরকার | একক অর্ধ-রাষ্ট্রপতি প্রজাতন্ত্র |
এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ | |
ফ্রাঁসোয়া বাইরু | |
জেরার্ড লার্শার | |
ইয়ায়েল ব্রাউন-পিভে | |
আইন-সভা | সংসদ |
• উচ্চকক্ষ | সেনেট |
জাতীয় পরিষদ | |
প্রতিষ্ঠা | |
১০ আগস্ট ৮৪৩ | |
২২ সেপ্টেম্বর ১৭৯২ | |
৪ অক্টোবর ১৯৫৮ | |
আয়তন | |
• মোট | ৬,৩২,৭০২.৩ কিমি২ (২,৪৪,২৮৭.৭ মা২) (metropolitan France এবং overseas France সহ, Terre Adelie বাদে)[৫] (৪২তম) |
• পানি (%) | ০.৮৬[৬] |
৫,৪৩,৯৪১ বর্গকিলোমিটার (২,১০,০১৭ বর্গমাইল)[৭] (৫০তম) | |
• Metropolitan France (INSEE) | ৫,৪৩,৯০৮.৩ বর্গকিলোমিটার (২,১০,০০৪.২ বর্গমাইল)[৫][গ] (৫০তম) |
জনসংখ্যা | |
• জানুয়ারি ২০২৫ আনুমানিক | ![]() |
• ঘনত্ব | 108/কিমি² (281/বর্গমাইল) (১০৬তম) |
• Metropolitan France, অনুমান জানুয়ারি ২০২৫-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ] | ![]() |
• ঘনত্ব | ১২২/কিমি২ (৩১৬.০/বর্গমাইল) (৮৯তম) |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০২৪ আনুমানিক |
• মোট | ![]() |
• মাথাপিছু | ![]() |
জিডিপি (মনোনীত) | ২০২৪ আনুমানিক |
• মোট | ![]() |
• মাথাপিছু | ![]() |
জিনি (২০২২) | ![]() নিম্ন |
মানব উন্নয়ন সূচক (২০২২) | ![]() অতি উচ্চ · ২৮তম |
মুদ্রা | |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+১ (CET[চ]) |
• গ্রীষ্মকালীন (ডিএসটি) | ইউটিসি+২ (CEST) |
গাড়ী চালনার দিক | ডান[১২] |
কলিং কোড | +৩৩[ছ] |
ইন্টারনেট টিএলডি | .fr[জ] |
... |
এই রাষ্ট্রটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতিগুলির একটি। ফ্রান্স আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে এবং বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই এর প্রাক্তন উপনিবেশগুলি ছড়িয়ে আছে। আটলান্টিক মহাসাগর, ভূমধ্যসাগর, আল্পস পর্বতমালা ও পিরিনীয় পর্বতমালা-বেষ্টিত ফ্রান্স বহুদিন ধরে উত্তর ও দক্ষিণ ইউরোপের মাঝে ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও ভাষিক সংযোগসূত্র হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে। আয়তনের দিক থেকে ফ্রান্স ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র; রাশিয়া ও ইউক্রেনের পরেই এর স্থান। জনসংখ্যার দিক থেকে এটি ইউরোপের চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র। মূল ভূখণ্ডের বাইরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এটির দশটি উপনিবেশ আছে, যার বেশিরভাগ প্রাক্তন ফরাসি সাম্রাজ্য থেকে প্রাপ্ত।
বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো জাতিরাষ্ট্রের মধ্যে একটি হল ফ্রান্স। মধ্যযুগে ডিউক এবং রাজপুত্রদের রাজ্যগুলি একত্র হয়ে একজন মাত্র শাসকের অধীনে এসে ফ্রান্স গঠিত হয়। বর্তমানে ফ্রান্স তার পঞ্চম প্রজাতন্ত্র পর্যায়ে রয়েছে। ১৯৫৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এই প্রজাতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় প্রবণতার উত্থান ও বেসরকারী খাতের উন্নয়ন নতুন ফ্রান্সের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম প্রধান সদস্য। ফ্রান্স জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যদেশের একটি এবং এর ভেটো প্রদানের ক্ষমতা রয়েছে।
ভূগোল
সম্পাদনাফ্রান্সের ভূপ্রকৃতি বিচিত্র। দেশটির উত্তরে উপকূলীয় নিম্নভূমি ও বিস্তৃত সমভূমি। দক্ষিণ-মধ্য ফ্রান্সে আছে পাহাড়ী উঁচুভূমি। আর পূর্বে আছে সবুজ উপত্যকা ও সুউচ্চ বরফাবৃত আল্পস পর্বতমালা। ফ্রান্সের সীমানার প্রায় সর্বত্রই পর্বতময়, ফলে কেবল উত্তর-পূর্বের সীমান্ত বাদে দেশটির প্রায় সর্বত্রই একটি প্রাকৃতিক সীমানা নির্ধারিত হয়েছে। ফ্রান্সের প্রধান নদীগুলি হল সেন, লোয়ার, গারন এবং রোন।
প্রশাসনিক অঞ্চলসমূহ
সম্পাদনাফ্রান্স একটি নগরভিত্তিক রাষ্ট্র, যার জনসংখ্যার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ শহরে বাস করে। প্যারিস (ফরাসি Paris পারি) ফ্রান্সের রাজধানী ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর। ফ্রান্সের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল প্যারিসের বৃহত্তর মহানগর এলাকাতে প্রায় এক কোটি ২৫ লক্ষ লোকের বাস। এটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ১৯শ শতকের মধ্যভাগে ব্যারন জর্জ ওজেনের সময় সড়কগুলির পরিবর্ধন করে, পুরাতন ভবন ধ্বংস করে ও নতুন নকশা মেনে বহু ভবন নির্মাণ করে পরিকল্পনামাফিক শহরটিকে ঢেলে সাজানো হয়। ফ্রান্সের অন্যান্য বড় শহরের মধ্যে আছে লিয়োঁ (Lyon), যা উত্তর সাগর ও ভূমধ্যসাগরকে সংযোগকারী প্রাচীন রোন উপত্যকায় অবস্থিত। আরও আছে মার্সেই (Marseille), যা ভূমধ্যসাগরের উপকূলে অবস্থিত একটি বহুজাতিক সমুদ্রবন্দর; গ্রিক ও কার্থেজীয় বণিকেরা খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে এ শহরের পত্তন করে। এছাড়া নঁত (Nantes) আটলান্টিক মহাসাগরের তীরে অবস্থিত একটি গভীর পানির পোতাশ্রয় ও শিল্পকেন্দ্র এবং বর্দো (Bordeaux) গারন নদীর উপর অবস্থিত দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের প্রধান শহর।
জনসংখ্যা
সম্পাদনাফরাসিরা বিশ্বের সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান, ধনী ও সুশিক্ষিত জাতিগুলির একটি। দেশটিতে একটি পূর্ণাঙ্গ সমাজকল্যাণ ব্যবস্থা রয়েছে, যা প্রতিটি ফরাসি নাগরিকের ন্যূনতম জীবনের মান ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে। বেশির ভাগ ফরাসি নাগরিক ফরাসি ভাষায় কথা বলেন। খ্রিস্টধর্মের রোমান ক্যাথলিক মণ্ডলী এখানকার মানুষের প্রধান ধর্ম।
- ক্যাথলিক (৪১%)
- নাস্তিক (৪০%)
- অন্যান্য (৪%)
- প্রোট্যাস্টান (২%)
- গ্রিক সনাতনপন্থী মণ্ডলী (২%)
- অন্যান্য খ্রিস্টান (২%)
- ইসলাম (৪%)
- বৌদ্ধ ধর্ম (৩%)
- ইহুদি (১%)
- অঘোষিত (১%)
সংস্কৃতি
সম্পাদনাফরাসি সংস্কৃতি জগদ্বিখ্যাত; শিল্পকলা, সাহিত্য, গণিত, বিজ্ঞান, প্রকৌশল, নৃবিজ্ঞান, দর্শন ও সমাজবিজ্ঞানের বিকাশে ও প্রসারে ফ্রান্সের সংস্কৃতি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। মধ্যযুগ থেকেই প্যারিস পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। ফরাসি রন্ধনশৈলী ও বেশভুষাশৈলী (ফ্যাশন) শুধু পশ্চিমা বিশ্বে নয়, সারা বিশ্বেও ব্যাপকভাবে আদৃত।ফ্রান্সের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে প্যারিস সুপরিচিত। শহরটি বহু শতাব্দী ধরে শিল্প, সাহিত্য, ফ্যাশন ও রন্ধনশিল্পের কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছে। এখানে অসংখ্য বিখ্যাত জাদুঘর, গ্যালারি, থিয়েটার এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্য বিদ্যমান, যা এটিকে সংস্কৃতির এক প্রাণকেন্দ্রে পরিণত করেছে।
রাজনীতি
সম্পাদনাএই অনুচ্ছেদ অংশটির রচনাশৈলী সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। |
ফ্রান্সের আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা ফরাসি বিপ্লব এবং ১৭৮৯ সালে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি তৈরির সময় থেকে শুরু করে। এটি ছিল ফ্রান্সে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাজনীতির সূচনা।
যাইহোক, প্রজাতন্ত্র এবং রাজতান্ত্রিক শাসনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ১৯ শতকের একটি উত্তাল ছিল দেশটি, এবং ১৭৮১ সালে একটি সংক্ষিপ্ত সময় যেখানে একটি শ্রমিক কমিউনিটি প্যারিসে সরাসরি গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। এর পঞ্চম প্রজাতন্ত্র 1958 সালে চার্লস ডি গলের অধীনে শুরু হয়েছিল, একটি নতুন সংবিধান যা দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আধা-রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা চালু করেছিল এবং ফরাসি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে শক্তিশালী করেছিল। পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের প্রারম্ভিক রাষ্ট্রপতিরা সাত বছরের মেয়াদে শাসন করেছিলেন, তবে ২০০০ সালে তা কমিয়ে পাঁচ করা হয়েছিল।
পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের সময় ফ্রান্স একটি স্থিতিশীল গণতন্ত্র রয়ে গেছে। তাতে বলা হয়েছে, ফরাসি সরকার ১৯৬৮ সালের বিক্ষোভের মতো সঙ্কটের সময় অনুভব করেছে যা প্রায় ডি গল প্রেসিডেন্সির অবসান ঘটিয়েছিল। যুক্তরাজ্যের মতো, এটি যুদ্ধ-পরবর্তী বছরগুলিতে তার বিদেশী সাম্রাজ্যের পতন দেখেছিল। এটির আলজেরিয়ান উপনিবেশে একটি নৃশংস যুদ্ধ অন্তর্ভুক্ত ছিল যা চতুর্থ প্রজাতন্ত্রের পতনের অন্যতম প্রধান অনুঘটক ছিল।
ফরাসি আধুনিক যুগে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্র-ডান এবং কেন্দ্র-বাম সরকার এবং রাষ্ট্রপতিদের মধ্যে পরিবর্তিত হয়েছে, প্রায়শই আরও ফ্রেঞ্জ দলগুলির অংশগ্রহণের সাথে জড়িত।
সরকারী ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও ফ্রান্স প্রভাব রেখেছে; ১৭৮৯ সাল থেকে আধুনিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে, ফ্রান্স আধুনিক গণতন্ত্রের অন্যতম জন্মস্থান। বর্তমান ফরাসি সরকার পঞ্চম প্রজাতন্ত্রের সংবিধান অনুযায়ী চলে, যা ১৯৫৮ সালে প্রণীত হয়েছিল। ফ্রান্স একটি প্রজাতন্ত্র এবং একটি সংসদীয় গণতন্ত্র এবং একটি হাইব্রিড রাষ্ট্রপতি/সংসদীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা রয়েছে। ফরাসি পার্লামেন্ট দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট। নিম্ন কক্ষ হল ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি (Assemblée Nationale) যা প্যালাইস বোরবনে ৫৭৭ জন নির্বাচিত ডিপুটে নিয়ে বসে। উপরের কক্ষটি হল সেনেট (Sénat) যা লুক্সেমবার্গ প্রাসাদের ভিতরে বসে। প্রতিনিধিদের একটি নির্বাচনী কলেজ দ্বারা নির্বাচিত ৩৪৮ জন সিনেটর রয়েছে। সেনেট সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিকভাবে রক্ষণশীল হয়েছে, ১৯৫৮ সাল থেকে তিন বছরের মধ্যে একটি ডানপন্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। যদিও দুটি চেম্বার একই রকমের ক্ষমতা রাখে, তবে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি দুটির মধ্যে বেশি বিশিষ্ট। কেন্দ্রীয় ফরাসি সরকার ফ্রান্সের প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা এবং স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মতো ক্ষেত্রে নীতি উন্নয়নের তত্ত্বাবধান করে। যাইহোক, জাতীয় সরকারের নীচে তিনটি স্তরের সরকার রয়েছে যেগুলি বিভিন্ন প্রশাসনিক এবং আইনি কার্য সম্পাদন করে: পাঁচটি বিদেশী অঞ্চল সহ ১৮টি অঞ্চল; ৯৬ বিভাগ; এবং প্রায় ৩৫,০০০ কমিউন।
ফরাসি সরকার গঠন:
জাতীয় নির্বাচনের পর, নব নির্বাচিত ফরাসি রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন (সাধারণত পার্টির নেতা, বা সবচেয়ে বেশি বিধানসভা আসন সহ দলগুলির জোট) যিনি তারপর একটি নতুন সরকার গঠন করবেন। এটি মন্ত্রী পরিষদ এবং অন্যান্য মন্ত্রী এবং রাজ্য সচিবদের নিয়ে গঠিত। প্রতিটি মন্ত্রী নিয়োগ রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে।
ফরাসি সরকারে বর্তমানে ১৬টি মন্ত্রণালয় রয়েছে। যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলির বিপরীতে, ফ্রান্সে সরকারের গঠন সাধারণত বহুদলীয় হয়, এমনকি যদি একটি দল বিধানসভায় সামগ্রিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। প্রধানমন্ত্রীরা প্রায়ই সমর্থক দল থেকে রাজনীতিবিদদের মন্ত্রী পদে নিয়োগ করবেন।
রাষ্ট্রপ্রধান হলেন ফরাসি রাষ্ট্রপতি যিনি প্রধানমন্ত্রীকে সরকার প্রধান হিসেবে নিয়োগ করেন। ফ্রান্সই প্রথম বিশ্বকে ফরাসি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র উপহার দেয়। ফরাসি বিপ্লবের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে বহু প্রজন্ম ধরে বিশ্বের অন্যত্র অনেক সংস্কারবাদী ও বিপ্লবী আন্দোলন ঘটে।
বৈদেশিক সম্পর্ক
সম্পাদনাদেশটির সঙ্গে অন্যান্য দেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। এই দেশের পাসপোর্টে ১২৫টি দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমণ করা যায়, যা পাসপোর্ট শক্তি সূচকে ৩য় স্থানে রয়েছে। [১৬]
অর্থনীতি
সম্পাদনাএই অনুচ্ছেদ অংশটির রচনাশৈলী সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। |
ফ্রান্সের মোট দেশজ উৎপাদনের মূল্য ২৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি। ফলে ফ্রান্স ইউরোপের তৃতীয় বৃহত্তম ও বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতি । কৃষিদ্রব্য উৎপাদনে ফ্রান্স ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশ; এটি মূলত খাদ্যশস্য, ওয়াইন, পনির ও অন্যান্য কৃষিদ্রব্য ইউরোপ ও সারা বিশ্বে রপ্তানি করে। ফ্রান্স ভারী শিল্পের দিক থেকেও বিশ্বের প্রথম সারির দেশ; এখানে মোটরযান, ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি, ও রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন করা হয়। তবে ইদানীংকার দশকগুলিতে সেবামূলক শিল্প যেমন ব্যাংকিং, পাইকারী ও খুচরা বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যটন ফরাসি অর্থনীতিতে ব্যাপক ও প্রধান ভূমিকা রাখা শুরু করেছে। ফ্রান্স সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা ২৯ লক্ষ।[১৭] সেই হিসেবে দেশটিতে প্রতি বারো জনের জন্য একটি করে কোম্পানি রয়েছে।
ফ্রান্সের অর্থনীতির অবস্থা:
ফ্রান্স একটি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় বাজার-ভিত্তিক অর্থনীতির সাথে একটি প্রধান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক শক্তি। এটির বর্তমানে 3.4 ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট (জিডিপি) রয়েছে, যা ক্রয় ক্ষমতার সমতা সামঞ্জস্য করার পর মাথাপিছু US$50,541-এ কাজ করে। ফ্রান্সে জিনি সহগ হল 32.4, যা মাঝারি মাত্রার বৈষম্য প্রকাশ করে। সেবা খাতের আউটপুট জিডিপির প্রায় 79%, এবং পর্যটনও শক্তিশালী, ফ্রান্স 2020 (ইউনাইটেড নেশনস ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন) হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরিদর্শনকারী দেশ হিসাবে অবশিষ্ট রয়েছে।
যাইহোক, COVID-19 মহামারি 2020 সালে ফরাসি অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছিল, আউটপুট 8.3% কমেছে। এটি বলেছে, বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে এটি 2021 সালে 5.8% পুনরুদ্ধার করবে। সামগ্রিক পুনরুদ্ধার ধীর এবং অসম হয়েছে এবং সমাজের দরিদ্রতম অংশগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যাইহোক, গত কয়েক বছরে বেকারত্ব মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে এবং বর্তমানে 8.1% এ দাঁড়িয়েছে।
ইতিহাস
সম্পাদনাফ্রান্স পশ্চিমা বিশ্বের প্রাচীনতম রাষ্ট্রগুলির একটি। এর ইতিহাস সমৃদ্ধ ও বিচিত্র। ফ্রান্সের সর্বপ্রথম অধিবাসীদের সম্পর্কে তেমন বিশেষ কিছু জানা যায় না। দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের গুহায় পাওয়া ছবিগুলি প্রায় ১৫,০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের বলে অনুমান করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতক থেকে কেল্টীয় ও অন্যান্য গোত্রের লোকেরা ফ্রান্সে প্রবেশ করতে ও এখানে বসবাস করতে শুরু করে। প্রাচীনকালে ফ্রান্স অঞ্চল কেল্টীয় গল (Gaul) নামে পরিচিত ছিল। প্রাচীন রোমানরা খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতকে ফ্রান্সের দখল নেয় এবং খ্রিস্টীয় ৫ম শতকে রোমান সাম্রাজ্যের পতন হওয়ার আগ পর্যন্ত অঞ্চলটি শাসন করে।
রোমের পতনের পর অনেকগুলি রাজবংশ ধারাবাহিকভাবে ফ্রান্স শাসন করে। মধ্যযুগে রাজতন্ত্রের প্রভাব খর্ব হয় এবং স্থানীয় শাসকভিত্তিক সামন্তবাদের উত্থান ঘটে। ১৪শ শতক থেকে ১৮শ শতক পর্যন্ত আবার রাজতন্ত্রের ক্ষমতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়; এসময় ফ্রান্সের রাজারা ও তাদের মন্ত্রীরা ধীরে ধীরে একটি কেন্দ্রীয় আমলাতন্ত্র ও বড় আকারের সামরিক বাহিনী গড়ে তোলেন। ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবে রাজতন্ত্রের পতন ঘটে এবং এর পর বহু দশক ধরে ফ্রান্স রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত হয়। এ সত্ত্বেও নেপোলিয়ন বোনাপার্টের (স্থানীয় ফরাসি উচ্চারণ নাপোলেওঁ বোনাপার্ত) এর শাসনামলে ফ্রান্স একটি সংহত প্রশাসনিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভ করে।
১৯শ শতকে ও ২০শ শতকের শুরুতে ফরাসি শক্তি ও আর্থিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। এসময় ফ্রান্স বিশ্বজুড়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী একটি সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রায় পুরোটাই ফ্রান্সের মাটিতে সংঘটিত হয় এবং এর ফলে দেশটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি উত্তর ফ্রান্স দখল করলে মধ্য ফ্রান্সের ভিশিতে (Vichy) একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্স তার ধূলিস্যাৎ অর্থনীতিকে আবার গড়ে তোলে এবং বিশ্বের একটি প্রধান শিল্পরাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ফ্রান্সের উপনিবেশগুলিতে সাম্রাজ্যবিরোধী আন্দোলন জেগে ওঠে এবং এর ফলে ফ্রান্স অচিরেই তার বেশির ভাগ উপনিবেশ হারায়।
১৯৫৮ সালে আলজেরিয়ায় ফরাসিবিরোধী আন্দোলন ফ্রান্সকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল। এসময় ফরাসি সরকার ২য় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম ফরাসি নেতা শার্ল দ্য গোল-কে (Charles de Gaulle) একনায়কের ক্ষমতা দান করে। দ্য গোল বিশ্ব রাজনৈতিক অঙ্গনে ফ্রান্সকে অন্যতম প্রধান শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। সাম্প্রতিককালে ফ্রান্স জার্মানির সাথে একত্রে মিলে গোটা ইউরোপের অর্থনীতি ও রাজনীতির সমন্বয়ে প্রধান ভূমিকা রেখে চলেছে।
যোগাযোগ
সম্পাদনাশার্ল দ্য গোল বিমানবন্দর এই দেশের মুখ্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটি ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম বিমানবন্দর।
ছবিতে ফ্রান্স
সম্পাদনা-
মোঁসোরো প্রাসাদ, মোঁসোরো (Château de Montsoreau)
-
নোত্র্-দাম দ্য লা গার্দ গির্জা, মার্সেই
-
ফরাসি পলিনেশিয়া-র বোরা-বোরা দ্বীপ
-
মার্তিনিক (সৈকত)
-
নিস-এর পোতাশ্রয়
-
কার্কাসন ও এর প্রাচীর
-
শীতকালীন সাঁ-পিয়ের-এ-মিকলোঁ
পাদটীকা
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Article II of the Constitution of Constitution of (1958)
- ↑ "THE LICTOR'S FASCES"। ১৫ ডিসেম্বর ২০২২। ৭ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০২৪।
- ↑ "L'essentiel sur... les immigrés et les étrangers"। Insee। ২৬ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- ↑ টেমপ্লেট:Cite web ...
- ↑ ক খ টেমপ্লেট:Cite web ...
- ↑ টেমপ্লেট:Cite web ...
- ↑ টেমপ্লেট:Cite web ...
- ↑ ক খ টেমপ্লেট:Cite web ...
- ↑ ক খ গ ঘ টেমপ্লেট:Cite web ...
- ↑ টেমপ্লেট:Cite web ...
- ↑ টেমপ্লেট:Cite web ...
- ↑ টেমপ্লেট:Cite web ...
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;Field Listing :: Area
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;pop_est
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়;ec.europa.eu
নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি - ↑ "Passport Power"।
- ↑ "Number of companies in France"।
আরও দেখুন
সম্পাদনাবহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- সরকারি
- Official site of the French public service – Links to various administrations and institutions
- Frenchculturenow.com: French society, culture, politics news[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- Official site of the French Embassy in the United Kingdom
- Chief of State and Cabinet Members
- সাধারণ তথ্য
- France, from the BBC
- France, from the Encyclopædia Britannica
- সিআইএ প্রণীত দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক-এ France-এর ভুক্তি
- France at UCB Libraries GovPubs
- কার্লিতে ফ্রান্স (ইংরেজি)
- উইকিমিডিয়া অ্যাটলাসে France
- সংস্কৃতি
- Cocorico! French culture ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ এপ্রিল ২০০৮ তারিখে
- Contemporary French Civilization ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ মার্চ ২০১২ তারিখে, journal, University of Illinois.
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |
উদ্ধৃতি ত্রুটি: "upper-roman" নামক গ্রুপের জন্য <ref>
ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="upper-roman"/>
ট্যাগ পাওয়া যায়নি