গারন নদী

দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের প্রধানতম নদী, যা উত্তর-পূর্ব স্পেন থেকে উদ্ভূত হয়েছে

গারন নদী (ফরাসি: Garonne) বা গারোনা নদী (স্পেনীয়: Río Garona; লাতিন: Garumna গারুমনা) দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী। নদীটি পিরিনীয় পর্বতমালার মধ্যভাগে স্পেনীয় অংশের মালাদেতা পর্বতশ্রেণী থেকে উৎপত্তি লাভ করে দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের মধ্য দিয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে জিরোঁদ নামক মোহনার মাধ্যমে আটলান্টিক মহাসাগরে পতিত হয়েছে। নদীটি ৫৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ, শেষের জিরোঁদ মোহনাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৭২ কিলোমিটার।

গারন
বর্দো নগরীর পাশ দিয়ে প্রবাহিত গারন নদী
গারন নদীর মানচিত্র
স্থানীয় নামগারোনা (Garona) {{স্থানীয় নামের পরীক্ষক}} ত্রুটি: প্যারামিটারের মান ত্রুটিপূর্ণ (সাহায্য)
অবস্থান
দেশ / রাষ্ট্রফ্রান্স, স্পেন
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য
উৎস 
 • অবস্থানপিরিনীয় পর্বতমালা
 • স্থানাঙ্ক৪২°৩৬′২৬″ উত্তর ০°৫৭′৫৬″ পূর্ব / ৪২.৬০৭২৯৫° উত্তর ০.৯৬৫৪২৪° পূর্ব / 42.607295; 0.965424 (source Garonne)
 • উচ্চতা২,৬০০ মি (৮,৫০০ ফু)
মোহনা 
 • অবস্থান
জিরোঁদ মোহনা,
আটলান্টিক মহাসাগর
 • স্থানাঙ্ক
৪৫°২′২৯″ উত্তর ০°৩৬′২৪″ পশ্চিম / ৪৫.০৪১৩৯° উত্তর ০.৬০৬৬৭° পশ্চিম / 45.04139; -0.60667 (Gironde-Garonne)
দৈর্ঘ্য৬০২ কিমি (৩৭৪ মা)
অববাহিকার আকারদর্দইন নদীর অববাহিকাসহ: ৮৪,৮১১ কিমি (৩২,৭৪৬ মা)
নিষ্কাশন 
 • গড়৬৫০ মি/সে (২৩,০০০ ঘনফুট/সে)

উত্তর-পূর্ব স্পেনের আরাগন অঞ্চলের মালাদেতা পর্বতপুঞ্জে ৩০০০ মিটারের অধিক উচ্চতায় অবস্থিত হিমবাহ থেকে আগত দুইটি উৎসস্রোতের সম্মিলনে গারন নদীটির জন্ম হয়েছে। নদীটি প্রথমে স্পেনের সীমানার ভেতরে উত্তর দিকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে, এরপর একটি গিরিখাতের মধ্য উচ্চ পার্বত্য উপত্যকা ভাল-দারঁ অতিক্রম করে সংকীর্ণ গিরিসংকট পোঁ-দ্যু-রোয়া-র মধ্য দিয়ে ৫৮০ মিটার উচ্চতায় অতিক্রম করে ফ্রান্সের সীমানার ভেতরে ওত-গারন দেপার্ত্যমঁ (জেলা)-তে প্রবেশ করেছে। এরপর নদীটি পূর্বে প্রবাহিত হয়ে সাঁ-গোদঁ শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নিয়ে ফ্রান্সের অন্যতম বৃহৎ পলিময় সমভূমি অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এবং আরিয়েজ জেলার কাছে দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে আগত একটি উপনদীর সাথে মিলিত হয়েছে। তুলুজ নগরীর কাছে এসে এটি আরও বেশ কিছু উপনদীর সাথে মিলিত হয়েছে, যাদের মধ্যে নেস্ত ও সালা উল্লেখযোগ্য। এরপর এটি তুলুজ নগরীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করে উত্তর-পশ্চিম দিকে বাঁক নিয়ে বর্দো নগরীর দিকে প্রবাহিত হয়েছে। মোয়াসাক শহরের পশ্চিমে তার্ন নদীটি গারন নদীর সাথে মিলিত হয়েছে, এরপর এগিইয়োঁ শহরের ঠিক নিচে, মারমঁদের দক্ষিণ-পূর্বে লো নদীটিও এর সাথে মিলিত হয়েছে। বর্দো নগরী থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার উজানে গারন নদীটি কাস্তে নামক লোকালয় অতিক্রম করেছে, এটিই নদীটির সর্বোচ্চ জোয়ার বিন্দু। বর্দো নগরীতে এসে নদীটির প্রশস্ততা বৃদ্ধি পেয়ে ১৮০০ ফুট হয়েছে। এরপর নদীটি পূর্বে দ্রাক্ষাসুরা (ওয়াইন) উৎপাদনকারী অঁত্র-দ্যো-মের উপদ্বীপ এবং পশ্চিমে মেদক উপকূলীয় চিলতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বর্দো নগরী থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার উত্তরে, বেক দঁবেস লোকালয়ের কাছে দর্দইন নদীর সাথে মিলিত হয়ে বিশাল, অতিপ্রশস্ত জিরোঁদ মোহনা গঠন করেছে। সমুদ্রগামী জাহাজগুলি বর্দো নগরীর বন্দর পর্যন্ত গমন করতে পারে।

গারন নদীটির প্রবাহ ৫০টি লক (নদীর আবদ্ধ অংশ যার পানির তলের উচ্চতা যন্ত্রচালিত দরজা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়) দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নদীতে হঠাৎ বন্যা হয়ে থাকে ও এর ফলে ক্ষয়ক্ষতিও হয়। ১৭৭০, ১৮৫৬ ও ১৯৩০ সালে বিধ্বংসী বন্যার কথা লিপিবদ্ধ আছে। মৌসুমভেদে নদীতে পানির প্রবাহের পরিমাণ অনিয়মিত। বসন্তকালে পর্বতের বরফগলা পানির কারণে নদীর উচ্চতা বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে উচ্চতা সবচেয়ে কম থাকে। গারন নদীটি সম্পূর্ণ নাব্য (নৌ পরিবহনের উপযোগী) নয়। তুলুজ থেকে কাস্তে পর্যন্ত গারন নদীর পাশ দিয়ে একটি প্রাচীন ও স্বল্পব্যবহৃত খাল আছে (১৮৩৮-১৮৫৬ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল), যার উদ্দেশ্য ছিল বর্দো থেকে তুলুজ পর্যন্ত সরাসরি নৌপথ প্রদান করা। আবার তুলুজ থেকেই গারন নদী ও ভূমধ্যসাগরের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি প্রাচীন খাল আছে, যার নাম কানাল দ্যু মিদি। গারন নদীবিধৌত অঞ্চলের আয়তন প্রায় ৫৬ হাজার বর্গকিলোমিটার, যা বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এবং পশ্চিমবঙ্গের আয়তনের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। দর্দইন নদীকে ধরলে গারন নদীবিধৌত অঞ্চলের আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ৮৫ হাজার বর্গকিলোমিটার, যা সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের আয়তনের প্রায় সমান।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা