হাঙ্গেরি জাতীয় ফুটবল দল

হাঙ্গেরির জাতীয় পুরুষ ফুটবল দল

হাঙ্গেরি জাতীয় ফুটবল দল (হাঙ্গেরীয়: Magyar labdarúgó-válogatott, ইংরেজি: Hungary national football team) হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফুটবলে হাঙ্গেরির প্রতিনিধিত্বকারী পুরুষদের জাতীয় দল, যার সকল কার্যক্রম হাঙ্গেরির ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা হাঙ্গেরীয় ফুটবল ফেডারেশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই দলটি ১৯০৭ সাল হতে ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার এবং ১৯৫৪ সাল হতে তাদের আঞ্চলিক সংস্থা উয়েফার সদস্য হিসেবে রয়েছে। ১৯০২ সালের ১২ই অক্টোবর তারিখে, হাঙ্গেরি প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক খেলায় অংশগ্রহণ করেছে; অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত উক্ত ম্যাচে হাঙ্গেরি অস্ট্রিয়ার কাছে ৫–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে।

হাঙ্গেরি
দলের লোগো
ডাকনামমাগিয়ারক (হাঙ্গেরীয়)
নেমজেতি তিজেনেগি (জাতীয় একাদশ)
অ্যাসোসিয়েশনহাঙ্গেরীয় ফুটবল ফেডারেশন
কনফেডারেশনউয়েফা (ইউরোপ)
প্রধান কোচমার্কো রসসি
অধিনায়কআদাম সালাই
সর্বাধিক ম্যাচগাবোর কিরায়
বালাজ জুজাক (১০৮)
শীর্ষ গোলদাতাফেরেন্তস পুশকাস (৮৪)
মাঠপুশকাস এরিনা
ফিফা কোডHUN
ওয়েবসাইটwww.mlsz.hu
প্রথম জার্সি
দ্বিতীয় জার্সি
ফিফা র‌্যাঙ্কিং
বর্তমান ৩৩ বৃদ্ধি ৩ (৬ এপ্রিল ২০২৩)[১]
সর্বোচ্চ১৮ (এপ্রিল–মে ২০১৬)
সর্বনিম্ন৮৭ (জুলাই ১৯৯৬)
এলো র‌্যাঙ্কিং
বর্তমান ৩৭ হ্রাস ২ (৩০ এপ্রিল ২০২২)[২]
সর্বোচ্চ(১৯৫৩–৫৭, ১৯৫৮, ১৯৬৪, ১৯৬৫)
সর্বনিম্ন৮০ (নভেম্বর ২০০৩)
প্রথম আন্তর্জাতিক খেলা
 অস্ট্রিয়া ৫–০ হাঙ্গেরি 
(ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া; ১২ অক্টোবর ১৯০২)
বৃহত্তম জয়
 হাঙ্গেরি ১৩–১ ফ্রান্স 
(বুদাপেস্ট, হাঙ্গেরি; ১২ জুন ১৯২৭)
বৃহত্তম পরাজয়
 নেদারল্যান্ডস ৮–১ হাঙ্গেরি 
(আমস্টারডাম, নেদারল্যান্ডস; ১১ অক্টোবর ২০১৩)
বিশ্বকাপ
অংশগ্রহণ৯ (১৯৩৪-এ প্রথম)
সেরা সাফল্যরানার-আপ (১৯৩৮, ১৯৫৪)
উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ
অংশগ্রহণ৪ (১৯৬৪-এ প্রথম)
সেরা সাফল্যতৃতীয় স্থান (১৯৬৪)

৬৭,২১৫ ধারণক্ষমতাবিশিষ্ট পুশকাশ এরিনায় মাগিয়ারক নামে পরিচিত এই দলটি তাদের সকল হোম ম্যাচ আয়োজন করে থাকে। এই দলের প্রধান কার্যালয় হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে অবস্থিত।[৩][৪] বর্তমানে এই দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন মার্কো রসসি এবং অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করছেন মাইনৎস ০৫-এর আক্রমণভাগের খেলোয়াড় আদাম সালাই

হাঙ্গেরি এপর্যন্ত ৯ বার ফিফা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছে, যার মধ্যে সেরা সাফল্য হচ্ছে ১৯৩৮ এবং ১৯৫৪ ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালে পৌঁছানো। অন্যদিকে, উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে হাঙ্গেরি এপর্যন্ত ৪ বার অংশগ্রহণ করেছে, যার মধ্যে সেরা সাফল্য হচ্ছে ১৯৬৪ ইউরোপিয়ান নেশন্স কাপে তৃতীয় স্থান অর্জন করা, যেখানে তারা অতিরিক্ত সময় ডেনমার্কের কাছে ৩–১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে।

বালাজ জুজাক, গাবোর কিরায়, ইয়োজেফ বোজিক, ফেরেন্তস পুশকাস এবং শান্দোর কোচিসের মতো খেলোয়াড়গণ হাঙ্গেরির জার্সি গায়ে মাঠ কাঁপিয়েছেন।

ইতিহাসসম্পাদনা

যদিও অস্ট্রিয়া এবং হাঙ্গেরি দ্বৈত রাজতন্ত্রের অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য হিসেবে পরিচিত দেশগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল, তবে তারা বিংশ শতাব্দীর শুরুতে পৃথক ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এবং দল গঠন করে।

১৯১০-এর দশকসম্পাদনা

১৯১২ সালে সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসে জাতীয় দল প্রথম অংশ গ্রহণ করে। গেমসে যাওয়ার জন্য দলটিকে অনুদানের জন্য আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। হাঙ্গেরি ইংল্যান্ডের কাছে ৭–০ গোলে হেরে বিদায় নেয়। অলিম্পিক গেমসের পরে হাঙ্গেরি মস্কোয় রাশিয়ার বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলে। প্রথম ম্যাচে ৯–০ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ১২–০ গোলে জয়লাভ করে তারা। দুটি ম্যাচের শীর্ষ গোলদাতা ছিলেন ইমরে শ্লোসার। তিনি সাতটি গোল করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা সমৃদ্ধ হাঙ্গেরীয় ফুটবলে গভীর প্রভাব ফেলে। দেশ এবং ক্লাব উভয়ই আর্থিক সমস্যায় ভুগে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হাঙ্গেরি ১৬ বার অস্ট্রিয়ার সাথে খেলে। ১৯১৯ সালে ইংল্যান্ড কেন্দ্রীয় শক্তির (হাঙ্গেরিসহ) দেশগুলোকে ফিফা থেকে বাদ দেওয়ার দাবি করে। ফিফা ইংল্যান্ডের আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে, ব্রিটিশ (ইংরেজ, স্কটিশ, ওয়েলস এবং আইরিশ) অ্যাসোসিয়েশন ফিফা থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

১৯২০-এর দশকসম্পাদনা

বেলজিয়ামে অনুষ্ঠিত ১৯২০ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের জন্য বুদাপেস্টকে আয়োজক হওয়ার সুযোগ প্রদান করা হয়নি। কেন্দ্রীয় শক্তির দেশগুলি (জার্মানি, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি, উসমানীয় সাম্রাজ্য এবং বুলগেরিয়া) অলিম্পিক থেকে বাদ পড়ে। এই সময়ে ফোগল ভাইদ্বয় (জোসেফ এবং ক্যারোলি ফোগল) জাতীয় দলে খেলেছে। হাঙ্গেরিয়ানরা এসময়ে ২–৩–৫ পদ্ধতিতে খেলত যা তখনকার সময়ে অনন্য ছিল। জাতীয় দল ফ্রান্সের প্যারিসে অনুষ্ঠিত ১৯২৪ গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে খেলে। প্রথম ম্যাচে হাঙ্গেরি পোল্যান্ডকে হারায় কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে তারা মিশরের কাছে হেরে যায়। ফলস্বরূপ, প্রধান কোচ এবং হাঙ্গেরির ফুটবল ফেডারেশনের প্রধান উভয়ই পদত্যাগ করেন।

১৯২৭ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে হাঙ্গেরি প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হিসাবে বিবেচিত ইউরোপা কাপে অংশ নেয়, এতে অংশ নেওয়া অন্যান্য দেশগুলো ছিল অস্ট্রিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, সুইজারল্যান্ড, রাশিয়া এবং যুগোস্লাভিয়া। ফাইনালে হাঙ্গেরি রাশিয়ার কাছে হারে। ১৯২৭ সালের ১২ জুন হাঙ্গেরি ফ্রান্সকে ১৩–১ গোলে হারায়, যা এখনও রেকর্ড। জোসেফ তাকাস ছয় গোল করেন।

১৯৩০-এর দশকসম্পাদনা

প্রথম ফিফা বিশ্বকাপ ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত হয়, তবে হাঙ্গেরি আমন্ত্রিত পায়নি এবং টুর্নামেন্টে অংশ নেয়নি; সেবার কোন বাছাই পর্ব ছিল না। হাঙ্গেরি ১৯৩৪ সালে ইতালিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে প্রথম বারের মতো অংশ নেয়। বিশ্বকাপে হাঙ্গেরির প্রথম ম্যাচ খেলে ১৯৩৪ সালের ২৭শে মে তারিখে মিশরের বিপক্ষে, এতে তারা ৪–২ গোলের ব্যবধানে জয় লাভ করে। গোল করেন পল তেলেকি, গেজা টল্ডি (২) এবং জেনো ভিনজে। কোয়ার্টার ফাইনালে হাঙ্গেরি প্রতিবেশী শক্ত-প্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রিয়ার মুখোমুখি হয়, তবে ২–১ গোলে হেরে যায়, গিওর্গি সেরোসি হাঙ্গেরির পক্ষে একমাত্র গোলটি করেন।

হাঙ্গেরি ১৯৩৬ সালের অলিম্পিকে অংশ নেয়, সেখানে প্রথম রাউন্ডে তারা পোল্যান্ডের কাছে ০–৩ গোলে পরাজিত হয়ে বিদায় নেয়।

১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপ ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম ম্যাচটি ডাচ ইস্ট ইন্ডিজের (বর্তমান ইন্দোনেশিয়া) বিপক্ষে খেলে এবং হাঙ্গেরি ৬–০ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করে। সেরোসি এবং জিউলা জেসেঙ্গেলার দুটি করে এবং ভিলমোস কোহাট এবং তোলদি একটি করে গোল করেন। কোয়ার্টার ফাইনালে হাঙ্গেরি সুইজারল্যান্ডকে সেরোসি এবং জেসেঙ্গেলারের গোলে ২–০ গোলে হারায়। প্যারিসের পার্ক ডেস প্রিন্সেস মাঠে অনুষ্ঠিত সেমিফাইনালে হাঙ্গেরি সুইডেনকে ৫–১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠে, ফেরেন্ক সাস এবং সেরোসি একটি করে গোল করেন আর জেসেঙ্গেলার করেন হ্যাট্রিক। প্যারিসের স্টেড অলিম্পিক ডি কলম্বেসে অনুষ্ঠিত ফাইনালে হাঙ্গেরি  ইতালির মুখোমুখি হয়, তবে ৪–২ গোলে তারা হেরে যায়। হাঙ্গেরির পক্ষে গোল দুটি করেন পল টিটিকোস এবং সেরোসি।

র‌্যাঙ্কিংসম্পাদনা

ফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়ে হাঙ্গেরি তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ অবস্থান (১৮তম) অর্জন করে এবং ১৯৯৬ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়ে তারা ৮৭তম স্থান অধিকার করে, যা তাদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। অন্যদিকে, বিশ্ব ফুটবল এলো রেটিংয়ে হাঙ্গেরির সর্বোচ্চ অবস্থান হচ্ছে ১ম (যা তারা সর্বপ্রথম ১৯৫৩ সালে অর্জন করেছিল) এবং সর্বনিম্ন অবস্থান হচ্ছে ৮০। নিম্নে বর্তমানে ফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং এবং বিশ্ব ফুটবল এলো রেটিংয়ে অবস্থান উল্লেখ করা হলো:

ফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং
৬ এপ্রিল ২০২৩ অনুযায়ী ফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং[১]
অবস্থান পরিবর্তন দল পয়েন্ট
৩১     চিলি ১৫১১.৩২
৩২     অস্ট্রিয়া ১৫০৮.২৪
৩৩     হাঙ্গেরি ১৫০৪.২৪
৩৪     আলজেরিয়া ১৫০৪.১৯
৩৫     মিশর ১৫০০.৬৭
বিশ্ব ফুটবল এলো রেটিং
৩০ এপ্রিল ২০২২ অনুযায়ী বিশ্ব ফুটবল এলো রেটিং[২]
অবস্থান পরিবর্তন দল পয়েন্ট
৩৫     স্কটল্যান্ড ১৭৩০
৩৬     সেনেগাল ১৭২৯
৩৭   ১০   প্যারাগুয়ে ১৭২৭
৩৭     হাঙ্গেরি ১৭২৭
৩৯     অস্ট্রিয়া ১৭১৯

প্রতিযোগিতামূলক তথ্যসম্পাদনা

ফিফা বিশ্বকাপসম্পাদনা

ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব
সাল পর্ব অবস্থান ম্যাচ জয় ড্র হার স্বগো বিগো ম্যাচ জয় ড্র হার স্বগো বিগো
  ১৯৩০ অংশগ্রহণ করেনি আমন্ত্রণ করা হয়নি
  ১৯৩৪ কোয়ার্টার-ফাইনাল ৬ষ্ঠ
  ১৯৩৮ ফাইনাল ২য় ১৫ ১১
  ১৯৫০ অংশগ্রহণ করেনি অংশগ্রহণ করেনি
  ১৯৫৪ ফাইনাল ২য় ২৭ ১০ স্বয়ংক্রিয়ভাবে উত্তীর্ণ
  ১৯৫৮ গ্রুপ পর্ব ১০ম ১২
  ১৯৬২ কোয়ার্টার-ফাইনাল ৫ম ১১
  ১৯৬৬ কোয়ার্টার-ফাইনাল ৬ষ্ঠ
  ১৯৭০ উত্তীর্ণ হয়নি ১৭ ১১
  ১৯৭৪ ১২
  ১৯৭৮ গ্রুপ পর্ব ১৫তম ১৫
  ১৯৮২ গ্রুপ পর্ব ১৪তম ১২ ১৩
  ১৯৮৬ গ্রুপ পর্ব ১৮তম ১২
  ১৯৯০ উত্তীর্ণ হয়নি ১২
  ১৯৯৪ ১১
  ১৯৯৮ ১০ ১১ ২০
    ২০০২ ১৪ ১৩
  ২০০৬ ১০ ১৩ ১৪
  ২০১০ ১০ ১০
  ২০১৪ ১০ ২১ ২০
  ২০১৮ ১০ ১৪ ১৪
  ২০২২ অনির্ধারিত অনির্ধারিত
মোট ফাইনাল ৯/২৩ ৩২ ১৫ ১৪ ৮৭ ৫৭ ১২২ ৫৮ ২৬ ৩৮ ২১৬ ১৬৩

অর্জনসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "ফিফা/কোকা-কোলা বিশ্ব র‍্যাঙ্কিং"ফিফা। ৬ এপ্রিল ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০২৩ 
  2. গত এক বছরে এলো রেটিং পরিবর্তন "বিশ্ব ফুটবল এলো রেটিং"eloratings.net। ৩০ এপ্রিল ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ৩০ এপ্রিল ২০২২ 
  3. Veronika Gulyas। "Hungary's Soccer Tsar to Strike Current System"WSJ 
  4. "A kick at regaining Hungary's football glory"। ২৯ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ 

বহিঃসংযোগসম্পাদনা