গোলরক্ষক (প্রায়শই যিনি কিপার, রক্ষক, গোলকিপার বা সংক্ষিপ্তভাবে গোলি হিসেবে পরিচিত) হচ্ছে ফুটবলের অন্যতম প্রধান অবস্থান। এটি খেলাধুলায় সর্বাধিক বিশেষায়িত অবস্থান। গোলরক্ষকের প্রাথমিক ভূমিকা হচ্ছে প্রতিপক্ষ দলকে গোল করা হতে বিরত রাখা (গোলের ফ্রেমের মধ্যে গোল-লাইনের ওপরে বল সরিয়ে নিয়ে থাকেন)। গোলরক্ষক প্রতিপক্ষের আক্রমণের বিরুদ্ধে সর্বশেষ ধাপের প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করে এবং নিজেদের গোলপোস্ট সুরক্ষিত রাখে। গোলরক্ষকের মূল কাজ হচ্ছে নিজেদের দলের গোলপোস্ট সুরক্ষিত রাখা এবং বিপক্ষ দলকে গোলদানে বিধিসম্মত বাধা দেয়া। দলের একমাত্র সদস্য হিসেবে শুধুমাত্র গোলরক্ষকই পেনাল্টি এরিয়ায় তাদের হাত দ্বারা (থ্রো-ইন ব্যতীত) বল ধরার বৈধ অধিকার রাখেন। গোলরক্ষকের বিশেষ অবস্থান তাদের সতীর্থদের থেকে বিভিন্ন বর্ণের পোশাক দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।

উয়েফা ইউরো ২০১২-এ একটি গোল রক্ষা করছেন ইকার ক্যাসিয়াস

ব্যাক-পাস নিয়ম গোলরক্ষকদের সতীর্থদের কাছ থেকে সরাসরি পাস নেওয়া হতে বাধা প্রদান করে। গোলরক্ষক সাধারণত গোল কিক করে থাকে; এছাড়াও গোলরক্ষক কর্নার কিক, প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ ফ্রি কিক এবং চিহ্নিতকরণের সময় তার দলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের নির্দেশাবলী প্রদান করে থাকে। গোলরক্ষক মাঠের দিকে পরিচালিত করতে কৌশল পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, কেননা তাদের পুরো পিচ সম্পর্কে একটি সীমাহীন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, যা গোলরক্ষককে খেলার উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।

গোলরক্ষক যেকোন দলের একটি অতীব প্রয়োজনীয় অবস্থান। যদি কোনক্রমে গোলরক্ষক আঘাতপ্রাপ্ত বা লাল কার্ডের মাধ্যমে প্রেরিত হয়, তবে বিকল্প গোলরক্ষককে তার জায়গাটি নিতে হয় নয়তো দলের অন্য একজন খেলোয়াড়কে গোলরক্ষকের ভূমিকা পালন করতে হয়। প্রেরিত গোলরক্ষককে প্রতিস্থাপনের জন্য, একটি দল সাধারণত ব্যাকআপ গোলরক্ষককে অন্য একজন খেলোয়াড় দ্বারা প্রতিস্থাপন করে থাকে (এর ফলে কার্যকরভাবে লাল কার্ড এবং প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে ম্যাচের শুরুতে একাদশে বিদ্যমান দুইজন খেলোয়াড় মাঠ থেকে বেরিয়ে আসে)। তারপরে দলটি নয়জন মাঠের প্রান্তবর্তী অংশ বা আউটফিল্ড খেলোয়াড়ের সাথে ম্যাচের বাকি অংশ খেলে থাকে। যদি কোনও দলের বিকল্প গোলরক্ষক না থাকে, বা তারা ইতোমধ্যে ম্যাচের জন্য তাদের অনুমতিপ্রাপ্ত সকল বদলি খেলোয়াড় ব্যবহার করে ফেলে, তবে মাঠের প্রান্তবর্তী অংশের একজন খেলোয়াড়কে বরখাস্ত গোলরক্ষকের জায়গা নিয়ে গোলরক্ষকের শার্ট পরিধান করে গোলরক্ষকের ভূমিকা পালন করতে হয়।

সাধারণত প্রথম পছন্দের গোলরক্ষকের জন্য দল নম্বরটি ১ হয়ে থাকে, যদিও তারা ১ ও ৯৯-এর মধ্যে যে কোনও জার্সি নম্বর পরিধান করতে পারেন।[১] এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হচ্ছেন উবালদো ফিলোল, যিনি ১৯৭৮ এবং ১৯৮২ ফিফা বিশ্বকাপে যথাক্রমে ৫ এবং ৭ নং জার্সি পরিধান করে খেলেছিলেন।

ইতিহাস সম্পাদনা

 
১৯০৫ সালে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বল রক্ষা করছেন গোলরক্ষক

বিভিন্ন খেলার মতো ফুটবল, কৌশল অবলম্বনের দিক থেকে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে, যার ফলে বিভিন্ন প্রজন্মে বিভিন্ন অবস্থানের বিলোপ ঘটেছে। কিন্তু গোলরক্ষক হচ্ছে একমাত্র অবস্থান, যা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, এটি ফুটবল খেলার শুরু হতে আজ পর্যন্ত বিদ্যমান রয়েছে। এমনকি সংগঠিত ফুটবলের প্রথম দিনগুলোতে, যখন এই খেলার সকল নিয়মকানুন সীমিত বা অস্তিত্বহীন ছিল এবং খেলোয়াড়গণের জন্য বিপরীত দলের গোলপোস্ট আক্রমণ করা এবং নিজের দলের গোলপোস্ট রক্ষা করাই মূল ধারণা ছিল, দলে গোলরক্ষক হিসেবে একজন বিশেষ সদস্য ছিল।

খেলোয়াড়ের অবস্থান বিষয়ে ফুটবল দলগুলোর প্রথম দিকের বিবরণটি ১৫৮১ সালে রিচার্ড মুলকাস্টার থেকে পাওয়া যায় এবং তখন গোলরক্ষক নির্দিষ্ট করা ছিল না। গোলরক্ষক বিষয়ে সরবচেয়ে পুরাতন তথ্য পাওয়া যায় ১৬০২ সালে কর্নিশ হার্লিং হতে। ক্যারুর মতে: "তারা মাঠে দুইটি বাঁশ মাটিতে স্থাপন করা হয়েছিল, যেগুলো পরস্পর হতে প্রায় ৮ হতে ১০ ফুট দুরত্বে অবস্থান করছিল; এবং এর বিপরীত পাশে (যা অন্য দলের জন্য ব্যবহৃত) আরও দুটি বাঁশ মাটিতে স্থাপন করা ছিল, যেগুলোও পরস্পর হতে একই দুরত্বে অবস্থান করছিল; তার এগুলোর নাম দিয়েছিল "গোল"। এই দুই পাশে বাঁশ দ্বারা ব্যবহৃত গোলগুলোর মধ্যে একটি এক দল ব্যবহার করতো এবং বিপরীতটি অন্য এক দল ব্যবহার করতো। এই গোল রক্ষার ক্ষেত্রে একজন বিশেষ ব্যক্তি নিয়োজিত ছিল"।[২] ১৬শ শতাব্দীর শুরুর দিকে ইংরেজ সাহিত্যে গোল করার তথ্য পাওয়া যায়: উদাহরণস্বরূপ, জন ডের নাটক দ্য ব্লাইন্ড বেগার অভ বেথনাল গ্রিন (প্রায় ১৬০০ সালে মঞ্চস্থ হয়েছে এবং ১৬৫৯ সালে প্রকাশিত হয়েছে): "আমি ক্যাম্পিংয়ে (পূর্ব আংলিয়ায় জনপ্রিয় ফুটবল খেলার এক হিংসাত্মক প্রকার) গোলির দায়িত্ব পালন করবো। একইভাবে মাইকেল ড্রেয়টন ১৬১৩ সালে প্রকাশিত তার কবিতায় বলেছেন "যখন বলটি নিক্ষেপ করবে এবং গোলের দিকে চালিত করবে, দলের অন্যান্য সদস্যগণ তার দিকে এগিয়ে যাবে"। এটি অনিবার্য বলে মনে করা হয় যে, যেখানেই কোনও খেলার গোলের ধারণা ছিল সেখানেই গোলরক্ষকের কোন না কোন ধরনও ছিল। ডেভিড ওয়েডারবার্ন ১৯৩৩ সালে লাতিন ভাষা হতে "কিপ গোল" নামে একটি অনুবাদ করেছিলেন, সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন যে যদিও এটি একজন গোলরক্ষকের অবস্থান বোঝায় না।

টম ব্রাউন'স স্কুল ডেস (১৮৫৭ সালে প্রকাশিত, তবে ১৮৩০-এর দশকের পটভূমিতে রচিত) উপন্যাসটিতে "গোল-রক্ষক" শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। লেখক এখানে রাগবি ফুটবলের প্রথম দিকের ধরনের কথা উল্লেখ করছেন::

আপনি প্রথম স্থানে দেখতে পাবেন, ষষ্ঠ অবস্থানের ছেলেটি, যে গোলের দায়িত্বে রয়েছে, সে (গোল-রক্ষক) বল ছড়িয়ে দিচ্ছে যেন গোলের পোস্টগুলোর পিছনে পুরো জায়গাটি দখল করতে পারে, প্রায় পাঁচ গজ দূরত্বে; একটি সুরক্ষিত এবং ভালভাবে রক্ষিত গোল হচ্ছে ভালো খেলার ভিত্তি[৩]

"গোল- রক্ষক" শব্দটি ১৮৬৭ সালের শেফিল্ড নিয়মে প্রকাশিত হয়েছিল, তবে এই শব্দটি কোনও মনোনীত খেলোয়াড়কে বোঝায়নি, বরং "সেই খেলোয়াড় যিনি ঐ সময়ের জন্য তার নিজের গোল সবচেয়ে নিকটতম" তাকে বোঝানো হয়েছে। এভাবে সংজ্ঞায়িত, গোল-রক্ষক কোন বিশেষ কার্য পরিচালনার সুযোগ উপভোগ করেনি।[৪]

এফএ দ্বারা ১৮৬৩ সালে প্রকাশিত খেলার নিয়মকানুনে, গোলরক্ষকের জন্য কোনও বিশেষ নিয়ম বা বিধি তৈরি করে নি, এর বিপরীতে যেকোনও খেলোয়াড়কে বল ধরতে বা বলটিকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।[৫] ১৮৭০ সালে সকল খেলোয়াড়ের জন্য বলটিকে হাত দিয়ে ধরা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।[৬] পরের বছর, ১৮৭১ সালে, গোলরক্ষকের পরিচিতি প্রদান করার জন্য বেশ কিছু আইন সংশোধন করা হয়েছিল এবং নির্দিষ্ট করে শুধুমাতে গোলরক্ষককে "তার গোল সুরক্ষার জন্য" বলটি ধরা এবং বলটিকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয়েছিল।[৭] গোলরক্ষকের বলটি সামলানোর দক্ষতার উপর করা নিয়মগুলো পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা হয়েছে:

  • ১৮৭১: গোলরক্ষক শুধুমাত্র "নিজের গোল সুরক্ষার জন্য" বলটি ধরতে পারবে।
  • ১৮৭৩: গোলরক্ষক বলটি "বহন" নাও করতে পারেন।[৮]
  • ১৮৮৩: গোলরক্ষক বলটি দুটি ধাপের বেশি বহন করতে পারবে না।[৯]
  • ১৮৮৭: গোলরক্ষক বিরোধী দলের অর্ধে বলটি ধরতে পারবে না।[১০]
  • ১৯০১: গোলরক্ষক কোনও উদ্দেশ্যেই বলটি ধরতে করতে পারে (কেবলমাত্র গোলের প্রতিরক্ষা ব্যতীত)।[১১]
  • ১৯১২: গোলরক্ষক কেবল পেনাল্টি ক্ষেত্রে বলটি ধরতে পারবে।
  • ১৯৩১: গোলরক্ষক বলটি বহন করে কেবলমাত্র চারটি পদক্ষেপ নিতে (পূর্বে উল্লেখিত দুইটির বদলে) পারবে।[১২]
  • ১৯৯২: কোনও সতীর্থ তাকে উদ্দেশ্য করে ইচ্ছাকৃতভাবে বল প্রেরণ করলে গোলরক্ষক বলটি ধরতে পারবে না।
  • ১৯৯৭: গোলরক্ষক ছয় সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে বলটি ধরে রাখতে পারবে না।

প্রথমদিকে, গোলরক্ষক সাধারণত গোলপোস্টের মধ্যে খেলতেন এবং বিরোধী দলের শটগুলো সংরক্ষণ করার চেষ্টা ব্যতীত সীমিত আকারে পাস দিতেন। বছরের পর বছর ধরে, খেলোয়াড়দের নিয়মগুলো পরিবর্তনের কারণে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠার জন্য গোলরক্ষকের ভূমিকা বিকশিত হয়েছে। গোলরক্ষক ফুটবলের একমাত্র খেলোয়াড় যিনি বলটি নিয়ন্ত্রণ করতে হাত ব্যবহার করার অধিকার রাখেন (থ্রো-ইন ব্যতীত)।

১৯৩৫–৩৬ ইংরেজ ফুটবল মৌসুমে, রকার পার্কে আয়োজিত চেলসির বিপক্ষে একটি খেলায় ব্যাকপাসের পরে বল তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে মাথার ও বুকে কিক মারার ফলে সান্ডারল্যান্ড দলের তরুণ জিমি থর্প মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ম্যাচটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি অংশগ্রহণ অব্যাহত রেখেছিলেন, তবে তারপরে ঘরে লুটিয়ে পড়েন এবং চার দিন পরে হাসপাতালে বহুমূত্ররোগ এবং 'বিরোধী দলের রুক্ষ ব্যবহারে ত্বরান্বিত' হওয়ার ফলে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হওয়ায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন।[১৩] থর্পের ক্যারিয়ারে তার করুণ পরিণতির পর ফুটবলের নিয়মের পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল, যেখানে খেলোয়াড়দের কোনও গোলরক্ষকের কাছে পা বাড়ানোর অনুমতি ছিল না, যখন গোলরক্ষকের হাতে বলের নিয়ন্ত্রণ থাকে।[১৪]

গোলরক্ষকদের সময় নষ্ট করার বেশ কিছু কৌশলের কারণে (যেমন মাটিতে বল ছুঁড়ে মারা বা বাতাসে ফেলে দেওয়া এবং তারপরে আবার এটি ধরা) ১৯৬০-এর দশকে, খেলার নিয়মগুলো আরও সংশোধন করা হয়েছিল এবং গোলরক্ষক বলকে পুনরায় খেলার মধ্যে পাঠানোর পূর্বে বাতাসে বল ছুঁড়ে মারা ও ধরা, বাড়িয়ে দেওয়া বা নিক্ষেপ করার সময় এবং এটিকে আবার ধরার সময় সর্বোচ্চ চারটি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয়েছিল। ফিফা বোর্ড পরবর্তীতে একটি বিদ্রোহবিরোধী আইন প্রণয়ন করে বলেছিল যে আইনকে ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত বলটি ধরে রাখাও এর মধ্যে বিবেচনা করা হবে।[১৫]

 
দলের খেলোয়াড়ের জন্য বল ছুঁড়ে দিচ্ছেন গোলরক্ষক

১৯৯২ সালে, ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বোর্ড খেলার নিয়মগুলো পরিবর্তন করেছিল, যার ফলে গোলরক্ষকদের উপরও প্রভাব ফেলেছিল – বিশেষত ব্যাক-পাসের নিয়ম,[১৬] যা কোনও সতীর্থ দ্বারা গোলরক্ষককে উদ্দেশ্য করে ইচ্ছাকৃতভাবে বল প্রেরণ করলে হাত দিয়ে বল ধরতে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে। ১৯৯০ ফিফা বিশ্বকাপের পর সময় নষ্ট এবং অত্যধিক প্রতিরক্ষামূলকভাবে খেলাকে নিরুৎসাহিত করার জন্য এই নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছিল, যা ব্যাক-পাস দেওয়া এবং গোলরক্ষকদের বলটি ধরে রাখাকে অত্যন্ত নিস্তেজ, ঝঞ্ঝাট হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। এছাড়াও, গোলরক্ষকরা প্রায়শই বলটি ছুঁড়ে মারতেন এবং চারপাশে বলটি নিয়ে ড্রিবল করতেন এবং যখন বিরোধী দলের খেলোয়াড়দের চাপের মুখে পরতেন তখন পুনরায় বলটি হাতে তুলে নিতেন, যেটি সময় নষ্ট করার একটি একটি সাধারণ কৌশল ছিল। এর ফলে, ব্যাক-পাসের নিয়মের সাথে আরেকটি নতুন নিয়ম যুক্ত করা হয়েছিল। এই নিয়মটি গোলরক্ষককে একবার বলটি হাত থেকে ছেড়ে পা দিয়ে খেলা শুরু করার পর পুনরায় হাত দিয়ে ধরতে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে; এই নিয়ম ভঙ্গ করার অপরাধে বিরোধী দল একটি পরোক্ষ ফ্রি কিক পাবে। তদুপরি যে কোনও খেলোয়াড় নতুন নিয়মের অবহেলা করে, তাদের সম্ভবত প্রতিক্রিয়াবিহীন আচরণের জন্য সতর্ক করা হয় এবং পরোক্ষ ফ্রি-কিক দ্বারা শাস্তি দেওয়া হয়।[১৫]

১৯৯৭ সালের ১লা জুলাই তারিখে, ফিফা রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে তাদের নিজস্ব গোলরক্ষক পর্যন্ত বল নিক্ষেপ করার ক্ষেত্রে পূর্বে বিদ্যমান ব্যাক-পাসের নিয়মটি পরিমার্জন করার সিদ্ধান্ত নেয়; যা আরও সময় নষ্ট হওয়া রোধ করবে। ফিফা ঘোষণা করে যে, কোনও গোলরক্ষক যদি পাঁচ বা ছয় সেকেন্ডের বেশি সময় ধরে বল ধরে রাখেন, তবে রেফারিকে অবশ্যই সময় নষ্ট করার যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে, নয়তো রেফারি উক্ত সময়টুকু অতিরিক্ত সময়ের সাথে যুক্ত করার পাশাপাশি বিরোধী দলকে পরোক্ষ ফ্রি-কিক দিবে।[১৫]

নিয়ম সম্পাদনা

ফুটবল খেলায় খেলোয়াড়দের জন্য গোলরক্ষকই একমাত্র অবস্থান, যা সাধারণ খেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যদের থেকে প্রযুক্তিগতভাবে পৃথক। খেলার নিয়মগুলো খেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য খেলোয়াড়দের থেকে গোলরক্ষককে বিভিন্ন উপায়ে পৃথক করে; বল সামলানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার দিক থেকে গোলরক্ষকের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য, যদিও তাদের এই অধিকার কেবল তাদের নিজস্ব বাক্সের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।[১৭] একবার কোনও গোলরক্ষক বলটি নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার পর প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড় আর তাকে চ্যালেঞ্জ করে বলটি নিতে পারে না।[১৭] পেনাল্টি কিক এবং পেনাল্টি শুট-আউটের ক্ষেত্রে গোলরক্ষকদের একমাত্র রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।[১৭] গোলরক্ষককে অন্যান্য খেলোয়াড়দের থেকে পৃথক রঙের পোশাক পরিধান করতে হয়; এছাড়াও তাদের মাথায় ক্যাপ এবং শর্টসের বদলে ট্র্যাকসুট পরিধান করার অনুমতি রয়েছে।[১৭]

নিয়ম অনুসারে দলের একজন খেলোয়াড়কে সর্বদা গোলরক্ষকের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে হয়, এর অর্থ যদি কোনও গোলরক্ষককে মাঠ ত্যাগ করতে হলে অথবা আঘাতপ্রাপ্ত হলে অন্য খেলোয়াড়কে বদলি করে নতুন গোলরক্ষক মাঠে প্রবেশ করিয়ে অথবা অন্য খেলোয়াড় দ্বারা গোলরক্ষকের অবস্থান গ্রহণ করতে হয়।[১৭] নিয়ম অনুসারে একজন গোলরক্ষক খেলায় বিরতির সময় (থ্রো-ইন, গোল-কিক, কর্নার কিক, ফ্রি-কিক অথবা মধ্য বিরতির সময়) পরিবর্তিত হতে পারে,[১৭] তবে বাস্তবে এই নিয়মটি খুব কমই প্রয়োগ করা হয়।

কোন গোলরক্ষক তাদের পেনাল্টির অঞ্চল ছেড়ে দিয়ে একজন সাধারণ খেলোয়াড় হিসেবে খেলায় অংশগ্রহণ করার বিষয়ে খেলার নিয়মে কোন বিধিনিষেধ নেই, যদিও সাধারণত গোলরক্ষকগণ পুরো খেলা জুড়ে তাদের গোলপোস্টের কাছাকাছি অবস্থান করে।

গোলরক্ষকগণ নিয়মিতভাবে সামনের দিকে ঝাঁপ দিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে থাকেন। এই কাজটি সম্পাদন করার জন্য, গোলরক্ষকগণ নিজেকে অনুভূমিক অবস্থানে নিয়ে গিয়ে পা ব্যবহার করে যথাসম্ভব বলটি দূরে সরিয়ে দেয়। এই সময়ে, বলটি ধরা হতে পারে বা গোলপোস্ট থেকে দূরে সরে যেতে পারে। অন্যদিকে, একজন ভালো গোলরক্ষক নিশ্চিত করতে চেষ্টা করেন যে, প্রতিপক্ষ দলের কোন খেলোয়াড় যেন বলটি প্রতিক্ষেপ করতে না পারে, যদিও এটি সর্বদা সম্ভব হয় না।

দায়িত্ব সম্পাদনা

 
লাফ দিয়ে মুষ্ট্যাঘাত করার মাধ্যমে ম্যানুয়েল নয়্যার বলটি দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন

গোলরক্ষকদের কৌশলগত দায়িত্বগুলোর মধ্যে যা রয়েছে:

  • নিজের শরীরের যেকোনো অংশ দ্বারা বিপক্ষ দলের গোল হওয়া রোধ করা। গোলরক্ষকের মাঠের যেকোনো স্থান গিয়ে বল নিয়ে খেলার অধিকার রয়েছে, কিন্তু পেনাল্টি অঞ্চলের বাইরে গিয়ে হাত দিয়ে বল নিয়ন্ত্রণে আনা অথবা হাত দিয়ে বল স্পর্শ করার অধিকার নেই।
  • ফ্রি-কিক এবং কর্নারের মতো রক্ষণাত্মক সেট পিসের সময় দলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের সংগঠিত করা। ফ্রি-কিকের ক্ষেত্রে, একটি প্রতিরক্ষামূলক "প্রাচীর" সংগঠন করা এবং প্রাচীরে কতজন দাঁড়াতে তার সংখ্যা নির্ধারণ করা। এই প্রাচীরটি আগত বলটিকে শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার মাধ্যমে প্রতিহত করে থাকে, তবে কিছু গোলরক্ষকগণ প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে নির্দিষ্ট ধরনের শট নিতে উৎসাহ প্রদান করতে বিশেষ ধরনের প্রাচীর সৃষ্টি করে থাকে। মাঝেমধ্যে, গোলরক্ষকগণ প্রাচীরটি ছড়িয়ে দিতে পছন্দ করে থাকেন। কিছু গোলরক্ষক সেট পিসের সময় বল রক্ষণ করার ক্ষেত্রে প্রাচীরে দাঁড়ানো খেলোয়াড়দেরও বাছাইয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন।
  • ক্রস এবং দীর্ঘ পাস প্রতিহত করার ক্ষেত্রে বাতাসে ভাসমান অবস্থায় বলটি নিয়ন্ত্রণে আনা অথবা মুষ্ট্যাঘাত করার মাধ্যমে বলটি দূরে সরিয়ে দেওয়া (যদি প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের দ্বারা প্রবল চাপের সম্মুখীন হয়)।

পেনাল্টি অঞ্চলে বল পরিচালনা করার ক্ষমতাসম্পন্ন গোলরক্ষকদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা থাকলেও তারা অন্যান্য খেলোয়াড়দের মতো একই নিয়মের অধীনস্থ।

খেলা নিয়ন্ত্রণ এবং আক্রমণ সম্পাদনা

গোলরক্ষকদের সবসময় পেনাল্টি অঞ্চলে অবস্থান করতে হয় না; তারা সবসময় মাঠের যেকোন স্থানের খেলায় জড়িত থাকতে পারে এবং ম্যাচের নির্দিষ্ট অংশগুলোর সময়ে অতিরিক্ত রক্ষণভাগের খেলোয়াড় (অথবা 'সুইপার') হিসেবেও কাজ করতে পারে। দীর্ঘ দূরত্বের নিক্ষেপ অথবা সঠিক দূর-দূরত্বের শটসহ গোলরক্ষকগণ দ্রুত একটি দলের পক্ষে আক্রমণাত্মক অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হতে পারেন এবং প্রতিরক্ষামূলক পরিস্থিতি থেকে গোল করার সম্ভাবনা তৈরি করতে সক্ষম হন, এই কৌশলটি দীর্ঘ বল হিসেবে পরিচিত।

সুইপার সম্পাদনা

১৯৫০-এর দশকের হাঙ্গেরির "সুবর্ণ দল"-এর জুলা গ্রশিচ সর্বপ্রথম 'সুইপার-কিপার' হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।[১৮] টমি লরেন্সকে কার্যকরভাবে মাঠের প্রান্তভাগের ১১তম খেলোয়াড় হিসেবে কাজ করে গোলরক্ষকের ভূমিকায় বিপ্লব ঘটানোয় কৃতিত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।[১৯] ১৯৮০-এর দশকে লিভারপুলের কিংবদন্তি খেলোয়াড় ব্রুস গ্রবেলারের দ্রুতবেগে ধাবিত হত্তয়ার শৈলী তাকে আধুনিক যুগের অন্যতম মৌলিক সুইপার গোলরক্ষকে পরিণত করেছে করে তুলেছে।[২০] রেনে হিগিতা ছিলেন অন্য একজন গোলরক্ষক যিনি তাঁর অপ্রচলিত, দক্ষ কিন্তু কখনও কখনও বেপরোয়া কৌশলের জন্য পরিচিত ছিলেন।[২১] ২০১১ সালের হিসাবে, ম্যানুয়েল নয়্যার তার গতি এবং খেলার অনন্য শৈলীর কারণে একজন সুইপার-কিপার হিসেবে আখ্যায়িত হন, একই সাথে তিনি মাঝেমধ্যে তার দলের হয়ে একজন সুইপার হিসেবে কাজ করে প্রতিপক্ষের দলের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের গোল করার প্রত্যাশা নষ্ট করে দেয়ার জন্য তার লাইন থেকে ছুটে এসে অফসাইড ফাঁদে ফেলেন।[২২][২৩] তার দুর্দান্ত বল নিয়ন্ত্রণ এবং বিতরণ কৌশল তাকে রক্ষনভাগ হতে খেলা পরিচালনা করতে সাহায্য করে,[২২][২৩] তিনি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে তিনি চাইলে জার্মান তৃতীয় বিভাগের যেকোনো দলে একজন কেন্দ্রীয় রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে পারবেন।[২৪][২৫] এছাড়াও ফ্রান্স জাতীয় দল এবং টটেনহ্যাম হটস্পারের উগো লরিস এবং প্রাক্তন গোলরক্ষক ফাবিয়ঁ বার্থেজ এবং এডউইন ফন দের সার অন্যতম জনপ্রিয় সুইপার গোলরক্ষক।[২৬][২৭] অন্যদিকে, ম্যানচেস্টার সিটির ক্লাউদিও ব্রাভো এবং এদেরসন মোরায়েস গণমাধ্যমে প্লে-মেকার হিসেবে পরিচিত।[২৮][২৯][৩০]

গণমাধ্যমে "সুইপার-কিপার" হিসেবে চিহ্নিত অন্য খেলোয়াড়দের মধ্যে বার্সেলোনাজার্মানির মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন, প্রাক্তন স্পেনীয় গোলরক্ষক ভিক্তর ভালদেস এবং প্রাক্তন সোভিয়েত গোলরক্ষক লেভ ইয়াসিন অন্যতম। পরবর্তীকালে পন্ডিতরা প্রায়শই ইয়াসিনকে গোলরক্ষকের এই ভূমিকার প্রবর্তক হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।[৩১] সুইপার-গোলরক্ষকগণ সাধারণত ম্যানেজার (যারা টোটাল ফুটবল দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন) দ্বারা পরিচালিত কৌশলের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন; যেমন: ইয়োহান ক্রুইফ এবং পেপ গার্দিওলা। সুইপার গোলরক্ষকের কাজে নিয়োজিত খেলোয়াড়গণ শুধুমাত্র তাদের শট থামানো এবং গোলরক্ষকের দক্ষতার জন্যই নয়, তাদের পা-বলের দক্ষতা, তাদের সঠিক পাশ প্রদান করা, তাদের দলের আক্রমণে অবদান রাখার দক্ষতা এবং প্রতিপক্ষের গোল করার প্রত্যাশা প্রতিহত করার জন্য পেনাল্টি অঞ্চল থেকে বাইরে ছুটে এসে তা প্রতিহত করার জন্য নির্বাচিত হন, যা তাদের দলকে একটি উচ্চ প্রতিরক্ষামূলক রেখা বজায় রাখতে সাহায্য করে। সুইপার গোলরক্ষকগণ কদাচিৎঅদূরদর্শিতার সাথেও যুক্ত হয়ে যান, এর মাধ্যমে তারা নিজের দলকে বিপদে ফেলে দেন; উদাহরণস্বরূপ, ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপের গ্রুপ এফের দক্ষিণ কোরিয়ার সর্বশেষ খেলায় জার্মানির গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যার মাঠের মধ্যভাগে ছুটে আসার মাধ্যমে নিজের দলের গোলপোস্ট উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন, যার ফলে সোন হুং মিন বল ছিনিয়ে নিয়ে খুব সহজেই গোল করেছিলেন।[৩২]

 
গোলরক্ষক হিসেবে সর্বাধিক গোল করা রোজেরিও সেঁনি

গোলদাতা সম্পাদনা

ফুটবল খেলায় বেশ কিছু গোলরক্ষক রয়েছেন, যারা প্রতিপক্ষের গোল রক্ষা করার পাশাপাশি নিজের দলের হয়ে গোলও করেছেন। দুর্ঘটনা ব্যতীত যখন গোলরক্ষক দ্বারা বলটি লাথি মারার পর মাঠের অপর প্রান্তে পৌঁছে এবং শক্তিশালী বাতাস অথবা অপ্রত্যাশিত লাফের ফলে প্রতিপক্ষ দলে গোলরক্ষককে এড়িয়ে যায়, তখন সাধারণত এই ঘটনাটি ঘটে থাকে। এটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যখন কোনও গোলরক্ষক তার দলকে আক্রমণে একটি সংখ্যাগত সুবিধা দেওয়ার জন্য নিজের গোলপোস্টকে উন্মুক্ত করে দিয়ে মাঠের বিপরীত প্রান্তে ছুটে যায়। এই হিসেবে, এটি সাধারণত ম্যাচের প্রায় শেষের দিকে সেট-পিসগুলোতে সংগঠিত হয়ে থাকে, যেখানে গোল হজম করার চেয়ে একটি গোল প্রদান করা বেশি জরুরী হয়ে উঠে; যেমন: কোন প্রতিযোগিতার নকআউট পর্বে যখন কোন দল হারের কাছাকাছি থাকে।

হিগিতা, রোজেরিও সেঁনি, হান্স-ইয়র্ক বুট এবং হোসে লুইস শিলাবের্তের মতো গোলরক্ষকগণ ফ্রি-কিকে বিশেষজ্ঞ ছিলেন। এই সকল খেলোয়াড়গণ তাদের দলের আক্রমণাত্মক ফ্রি কিক অথবা পেনাল্টি কিক নিয়ে থাকেন। সেঁনি (যিনি সাও পাওলোর হয়ে দীর্ঘদিন যাবত গোলরক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন) তার ক্যারিয়ারে ১৩১টি গোল করেছেন, যা মাঠের প্রান্তভাগের বহু খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি।[৩৩][৩৪]

পোশাক সম্পাদনা

গোলরক্ষকদের অবশ্যই ফিফার নিয়ম অনুসারে এমন ধরনের পোশাক পরিধান করতে হবে, যা তাদেরকে অন্যান্য খেলোয়াড় এবং ম্যাচ কর্মকর্তাদের থেকে স্পষ্টভাবে পার্থক্য করে। কিছু গোলরক্ষক ম্যাচ পরিহিত তাদের পোশাকের জন্য পরিচিতি লাভ করেছেন, যেমন: সোভিয়েত ইউনিয়নের লেভ ইয়াশিন, যাকে তার কালো পোশাকের জন্য "ব্ল্যাক স্পাইডার" ডাকনামে অভিহিত করা হয়;[৩৫][৩৬] অস্ট্রিয়ার ক্লাউস লিন্ডেনবার্গার, যিনি জোকারের এক বৈচিত্র্যপূর্ণ পোশাক পরিধান করতেন; মেক্সিকোর হোর্হে কাম্পোস, যিনি তার রঙিন পোশাকের জন্য জনপ্রিয় ছিলেন;[৩৭] ক্রুজেইরোর রাউল প্লাসমান, যিনি হলুদ রঙের পোশাক পরিধান করতেন এবং হাঙ্গেরির গাবোর কিরালি, যিনি শর্টসের পরিবর্তে একজোড়া ধূসর রঙের সোয়েটপ্যান্ট পরিধান করতেন।[৩৮]

যদিও প্রাথমিকভাবে গোলরক্ষকদের লম্বা হাতাসহ জার্সি পরিধান করার চল ছিল, সম্প্রতি জিয়ানলুইজি বুফনের মতো বেশ কয়েকজন গোলরক্ষক হাতাকাটা জার্সি পরিধান করার জন্য পরিচিতি লাভ করেছেন।[৩৯][৪০][৪১][৪২]

অধিকাংশ গোলরক্ষক বলকে আরো শক্ত করে ধরতে এবং বলের আঘাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য গোলরক্ষকের দস্তানা পরিধান করেন। বর্তমানে কিছু দস্তানা প্রতিটি আঙ্গুলের নিচে শক্ত প্লাস্টিকের আবরণ অন্তর্ভুক্ত, যা জ্যাম, ভাঙ্গা, এবং কাটা আঙ্গুলের মত আঘাত প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। যদিও দস্তানা বাধ্যতামূলক পোশাক নয়, সুবিধার জন্য প্রায় সকল গোলরক্ষকই এটি ব্যবহার করে থাকেন। উয়েফা ইউরো ২০০৪-এ পর্তুগিজ গোলরক্ষক রিকার্দো ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনালে পেনাল্টি শুট আউটের সময় তার দস্তানা খুলে ফেলেছিলেন। এরপর তিনি তার খালি হাত ব্যবহার করে ড্যারিয়াস ভ্যাসেলের পেনাল্টি প্রতিহত করেছিলেন।[৪৩]

মাঝেমধ্যে গোলরক্ষকদের সূর্যালোকের উজ্জ্বলতা কমানোর জন্য মাথায় এক ধরনের টুপি (অনেকটা বেসবল টুপির মতো) অথবা ঠাণ্ডা আবহাওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য এক ধরনের বোনা টুপি পরিধান করার অনুমতি দেওয়া হয়; গোলরক্ষকগণ খেলার যেকোনো সময় এই ধরনের টুপি পরিধান করতে পারেন। ২০০৬ সালে একটি মারাত্মক খুলি ভাঙ্গা থেকে রক্ষা পাওয়ার পর, পেত্র চেক পরবর্তীতে তার ম্যাচ চলাকালীন রাগবি খেলার এক ধরনের টুপি পরিধান করতেন।[৪৪][৪৫]

আহত সম্পাদনা

গোলরক্ষকদের শারীরিকভাবে বেশ চাহিদা রয়েছে। তারাই মাঠের একমাত্র খেলোয়াড়, যারা তাদের হাত ব্যবহার করে বল ধরতে (শুধুমাত্র থ্রো-ইন ছাড়া) পারেন। এই কারণে, গোলরক্ষকরা প্রায়ই কর্নার কিক এবং ফ্রি কিক সময় আহত হন, কেননা তারা তাদের শরীর দিয়ে বলটি প্রতিহত করতে উদ্যত হন। বেশ কয়েকজন বিখ্যাত গোলরক্ষক এমনভাবে আহত হয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৬ সালে পেত্র চেক খেলার সময় অন্য এক খেলোয়াড়ের সাথে সংঘর্ষের পর মাথায় আঘাত পান। এর কয়েক মাস পর যখন তিনি মাঠে ফিরে আসেন, তখন থেকে তিনি রাগবি খেলার এক ধরনের টুপি পরিধান করতে শুরু করেছিলেন। তবে, অধিকাংশ গোলরক্ষক আঘাত এড়িয়ে খেলা চালিয়ে যান, যার ফলে অধিকাংশ গোলরক্ষক ত্রিশ বা চল্লিশ বছর বয়সের পূর্বে অবসর গ্রহণ করেন না। লক্ষণীয় যে, পিটার শিলটন ১৯৬৬ সাল হতে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩১ বছর ধরে খেলার পর ৪৭ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করেছিলেন।

সাধারণভাবে, গোলরক্ষকগণ যে কোন আঘাত হতে দূরে থাকেন, পক্ষান্তরে মাঠের অন্যান্য খেলোয়াড়গণ সেসকল আঘাত হতে অরক্ষিত। সাধারণ শরীরের নিম্ন এবং উপরের প্রান্তে আঘাতের মধ্যে আর্টিকুলার কার্টিজ ক্ষত, পূর্ববর্তী ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট ক্ষত এবং হাঁটুর ক্ষত অন্যতম। অন্যদিকে, গোলরক্ষকগণ খুব কমই ক্লান্তিজনিত আঘাতের শিকার হন, যেমন লেগ ক্র্যাম্প, টানা হ্যামস্ট্রিং এবং পানিশূন্যতা[৪৬]

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Khalil Garriot (২১ জুন ২০১৪)। "Mystery solved: Why do the best football players wear No. 10?"। Yahoo!। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "The Survey of Cornwall by Richard Carew"। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
  3. An Old Boy [Thomas Hughes] (১৮৫৭)। School Days at Rugby। Boston: Ticknor and Fields। পৃষ্ঠা 112। 
  4. Sheffield Football Association (১৮৬৭)। Sheffield Rules (March 1867)উইকিসংকলন-এর মাধ্যমে। 
  5. Football Association (১৮৬৩)। Laws of the Game (1863)উইকিসংকলন-এর মাধ্যমে। 
  6. Football Association (১৮৭০)। Laws of the Game (1870)উইকিসংকলন-এর মাধ্যমে। 
  7. Football Association (১৮৭১)। Laws of the Game (1871)উইকিসংকলন-এর মাধ্যমে। 
  8. Football Association (১৮৭৩)। Laws of the Game (1873)উইকিসংকলন-এর মাধ্যমে। 
  9. Football Association (১৮৮৩)। Laws of the Game (1883)উইকিসংকলন-এর মাধ্যমে। 
  10. International Football Association Board (১৮৮৭)। Laws of the Game (1887)উইকিসংকলন-এর মাধ্যমে। 
  11. International Football Association Board (১৯০১)। Laws of the Game (1901)উইকিসংকলন-এর মাধ্যমে। 
  12. "Football"। Carluke & Lanark Gazette: 3। ১৯ জুলাই ১৯৩১। 
  13. "Goalkeeper's Death"The Times। London। ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৬। 
  14. "On the run with dogs and a long-dead goalkeeper - Telegraph"। London। ১১ মার্চ ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  15. "Goalkeepers are not above the Law"। FIFA। ৩১ অক্টোবর ১৯৯৭। ৬ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জুলাই ২০১৭ 
  16. "From 1863 to the Present Day"। FIFA। ১১ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
  17. "Laws"International Football Association Board | IFABInternational Football Association Board। ২২ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  18. "The 50 Greatest Goalkeepers in History"Bleacher Report। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  19. James Lawton (২৭ নভেম্বর ২০০১)। "Fabien Barthez: The goalkeeper's fear of losing it"The Independent। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জানুয়ারি ২০১৮ 
  20. "Archived copy"। ৮ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ 
  21. Tim Vickery (10 February 2010). "The Legacy of Rene Higuita" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে. BBC. Retrieved 11 June 2014
  22. "Manuel Neuer and the evolution of the goalkeeper"FourFourTwo। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০১৫ 
  23. "Why Manuel Neuer should not win the Ballon d'Or"The Score। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০১৫ 
  24. "Why Manuel Neuer was the best player at the 2014 World Cup"The42। ১৪ জুলাই ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১৪ 
  25. Vipond, Paddy (১৬ জুলাই ২০১৪)। "How Manuel Neuer, Germany's 11th man, is revolutionising goalkeeping"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১৪ 
  26. Wilson, Jonathan (১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। "Tottenham's Hugo Lloris is Premier League's supreme sweeper-keeper"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ১১ মে ২০১৭ 
  27. Samuel Luckhurst (৩০ মার্চ ২০১৫)। "Manchester United: David de Gea has made goalkeeping cool"Manchester Evening News। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ 
  28. "'Man City's Claudio Bravo is a playmaker not sweeper-keeper'"। BBC। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  29. Jonathan Wilson (৭ ডিসেম্বর ২০১৮)। "Ederson leads way as a ball-playing Premier League midfielder in gloves"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৯ 
  30. Steve Douglas; Mauricio Savarese (১৮ অক্টোবর ২০১৭)। "'The Brick Wall': Ederson solving keeper issues at Man City"USA Today। সংগ্রহের তারিখ ২১ জানুয়ারি ২০১৯ 
  31. Burford, Harry (২৪ ডিসেম্বর ২০১৭)। "Football Tactics for Beginners- The Sweeper Keeper Explained"The False 9 (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৯ 
  32. "Manuel Neuer's ridiculous pitch map against South Korea"Mail Online। ২৮ জুন ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০১৯ 
  33. "Rogerio Ceni: Sao Paulo keeper into club record books"। BBC। ৪ জুন ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০১৬ 
  34. "They said it: Jose Luis Chilavert" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১২ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে. FIFA. 24 September 2010. Retrieved 13 March 2013.
  35. ""Yashin, the impregnable Spider"."। ২৮ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০২০  FIFA. Retrieved 23 November 2013
  36. Lomas, Mark (29 April 2010) ""Lev Yashin: Russian Revolutionary"."। Archived from the original on ২২ মে ২০১৪।  ESPN. Retrieved 21 May 2014
  37. "Mexico's Jorge Campos: 'I'm not crazy!'"। BBC World Service। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০১৮ 
  38. "Sportsworld – Euro 2016: Gabor Kiraly – Hungary's record breaker & his tracksuit bottoms?"। BBC World Service। 
  39. "Gianluigi Buffon"। BBC Sport। ১০ এপ্রিল ২০০২। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৬ 
  40. Matt Barker (২৪ মার্চ ২০১৭)। "Gianluigi Buffon, One-on-One: You have to be a real masochist to play in goal – and a bit perverse"FourFourTwo। ১২ জুন ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৭ 
  41. Gaetano Imparato (৫ মে ২০১২)। "Zoff: "Sereno Buffon Resti un grande""La Gazzetta dello Sport (ইতালীয় ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৭ 
  42. Paolo Bandini (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। "Still among football's elite, Juventus icon Buffon will be vital vs. Dortmund"The Score। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৭ 
  43. Portugal break England hearts; BBC Sport, 24 June 2004
  44. McNulty, Phil (২০ জানুয়ারি ২০০৭)। "Liverpool 2–0 Chelsea"। BBC Sport। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১২ 
  45. Benammar, Emily (২১ জুলাই ২০০৮)। "Petr Cech follows Zinedine Zidane in sponsorship deal"The Daily Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১২ 
  46. Burger, Rob; Fine, Kenneth। "Soccer Injuries"Stop Sports Injuries। ৯ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ নভেম্বর ২০১৫