কওমি মাদ্রাসা
কওমি মাদ্রাসা বাংলাদেশে প্রচলিত প্রধান দুই ধারার মাদ্রাসার মধ্যে একটি।[১] আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত ও দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শ, মূলনীতি ও মত-পথের অনুসরণে মুসলিম জনসাধারণের আর্থিক সহায়তায় আলেমদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ইসলামি শিক্ষাকেন্দ্রকে কওমি মাদ্রাসা বলা হয়।[২] ১৮৬৬ সালে দারুল উলুম দেওবন্দের গোড়াপত্তনের মাধ্যমে এধরনের শিক্ষা পদ্ধতির সূচনা হয়। দারুল উলুম দেওবন্দের অনুসরণে ১৯০১ সালে দারুল উলুম হাটহাজারী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার সূত্রপাত ঘটে। কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদান আইন, ২০১৮-র মাধ্যমে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাকে সরকারি স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ। এর অধীনে সরকার স্বীকৃত ছয়টি শিক্ষাবোর্ড আছে। ২০২২ সালে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির দেওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ১৯ হাজার ১৯৯টি।[৩]

সংজ্ঞাসম্পাদনা
কওমি ও মাদ্রাসা শব্দদ্বয় আরবি। কওম অর্থ জাতি, গোত্র, সম্প্রদায়, গোষ্ঠী ও জনগণ। কওমি শব্দের অর্থ জাতীয়।[৪] মাদ্রাসা অর্থ অধ্যয়নের স্থান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিদ্যাপীঠ। মুসলমানদের ধর্ম ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত উচ্চশিক্ষাকেন্দ্রকে মাদ্রাসা বলা হয়।[৫] সুতরাং কওমি মাদ্রাসা মানে জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেহেতু কওমি মাদ্রাসাগুলো সরকারি অনুদানের পরিবর্তে মুসলিম জাতির অর্থানুকূল্যে জনসাধারণের কল্যাণে পরিচালিত হয়, তাই এই ধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কওমি মাদ্রাসা বলা হয়।[৬] কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদান আইন, ২০১৮-তে কওমি মাদ্রাসার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, কওমি মাদ্রাসা অর্থ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত ও দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শ, মূলনীতি ও মত-পথের অনুসরণে মুসলিম জনসাধারণের আর্থিক সহায়তায় উলামায়ে কেরামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ইলমে ওহির শিক্ষাকেন্দ্র।[৭] কারী মুহাম্মদ তৈয়ব কওমি মাদ্রাসার পূর্ণাঙ্গ পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, এ মাদ্রাসার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধর্মীয় দিক থেকে মুসলমান। আকিদাগত দিক থেকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআত। মাযহাবের দিক থেকে হানাফি। দর্শনের দিক থেকে আশআরি ও মাতুরিদি। মাশরাবের দিক থেকে সুফি। তরিকার দিক থেকে চিশতি ও নকশবন্দি। চিন্তাধারার দিক থেকে ওয়ালিউল্লাহি। মূলনীতির দিক থেকে কাসেমি। শাখাগত দিক থেকে রশিদি। সামগ্রিকতার দিক থেকে মাহমুদি এবং কেন্দ্রীয় নিসবতের দিক থেকে দেওবন্দি।[৮] ইসহাক ফরিদী বলেন, ঈমান, ইসলাম ও ইহসানের এক সমন্বিত শিক্ষাকেন্দ্রের নাম কওমি মাদ্রাসা।[৮] বাংলাপিডিয়ায় বলা হয়েছে, সরকারি সাহায্য ও প্রভাবমুক্ত এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত মাদ্রাসাই কওমি মাদ্রাসা।[৯]
বৈশিষ্ট্যসম্পাদনা
কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদান আইন, ২০১৮-তে কওমি মাদ্রাসার ৬টি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করা হয়েছে। যথা:[১০]
- ঈমান, তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল (একমাত্র আল্লাহর উপর নিরংকুশ ভরসা) এবং সর্বাবস্থায় সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনকে জীবনের পরম ব্রত ও লক্ষ্য স্থির করে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সত্ত্বার সাথে ভয় ও আশার সম্পর্ক স্থাপন এবং তাতে অবিচল থাকা।
- মহানবি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বাণী ‘আমি ও আমার সাহাবীগণ যে মত-পথের উপর প্রতিষ্ঠিত’-এর আলোকে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মতাদর্শ অনুসরণে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের নিষ্পাপ হওয়ার বিশ্বাস এবং সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমের যথাযথ মার্যাদা ও তাঁদের সত্যের মাপকাঠি হওয়ার বিশ্বাস অন্তরে সুদৃঢ় করা ও তদনুসারে জীবন যাপন।
- চার মাযহাবের প্রতি শ্রদ্ধা ও পরমত সহিষ্ণুতার সহিত হানাফি মাযহাব অনুসরণ।
- সুলূক ও আধ্যাত্মিকতায় সুপরিচিত চার তরীকা (চিশতিয়া, সোহরাওয়ার্দিয়া, নকশবন্দিয়া-মুজাদ্দিদিয়া ও কাদেরিয়া) সহ সকল হকপন্থি ধারার প্রতি সহনশীল ও উদার মনোভাব পোষণ।
- উপমহাদেশে ইসলামি রেনেসাঁর অগ্রদূত হজরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি (রহ.)-এর চিন্তাধারার অনুসারী ও অনুগামী হজরত কাসেম নানুতুবি (রহ.) ও হজরত রশিদ আহমদ গাঙ্গুহি (রহ.) প্রমুখ আকাবিরে দেওবন্দের চিন্তা-চেতনার অনুসরণ এবং তালিম-তরবিয়াতসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে দারুল উলুম দেওবন্দের মূলনীতি, আদর্শ ও কর্মপদ্ধতি অনুসরণ।
- আল হাইআতুল উলয়া লিল জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ কর্তৃক প্রণীত পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি, শিক্ষা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, মাদ্রাসা পরিচালনা ইত্যাদিতে প্রভাবমুক্ত থেকে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য বজায় রাখা।
ইতিহাসসম্পাদনা
প্রেক্ষাপটসম্পাদনা
ক্রমবিকাশসম্পাদনা
শিক্ষা কমিশনসম্পাদনা
সরকারি স্বীকৃতিসম্পাদনা
শিক্ষাব্যবস্থাসম্পাদনা
শিক্ষাবোর্ডসম্পাদনা
পাঠ্যক্রমসম্পাদনা
পাঠ্যসূচিসম্পাদনা
নারীশিক্ষাসম্পাদনা
বিদেশে উচ্চশিক্ষাসম্পাদনা
সংগঠনসম্পাদনা
উল্লেখযোগ্য মাদ্রাসাসম্পাদনা
সমালোচনাসম্পাদনা
আরও দেখুনসম্পাদনা
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ ভট্টাচার্য, সঞ্চিতা (জুন ২০০৬)। "The Perspectives of Madrasa Education in Bangladesh" [বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি]। যাদবপুর জার্নাল অফ ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস (ইংরেজি ভাষায়)। ১০ (১): ২২৬। আইএসএসএন 0973-5984। ডিওআই:10.1177/0973598406110016।
- ↑ কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদান আইন, ২০১৮, ধারা ২
- ↑ "কওমি মাদ্রাসা নিয়ে সংসদে যা জানালেন শিক্ষামন্ত্রী"। দৈনিক যুগান্তর। ২৩ জানুয়ারি ২০২২।
- ↑ বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, পৃ.২০৫
- ↑ বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, পৃ.৯৭৫
- ↑ আশরাফি, আল আমিন (৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬)। "যেভাবে এলো কওমি মাদ্রাসা"। দৈনিক কালের কণ্ঠ।
- ↑ কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদান আইন, ২০১৮, ধারা ২
- ↑ ক খ ফরিদী, ইসহাক; খান, হাবীবুর রহমান (২০০৫)। কওমি মাদ্রাসা কী ও কেন?। বাংলাবাজার, ঢাকা: মাকতাবাতুল আশরাফ। পৃষ্ঠা ৬।
- ↑ আ.ব.ম সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী (২০১২)। "মাদ্রাসা"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদান আইন, ২০১৮, ধারা ২